কাব বিন মালিক (রা)'র হাদীসের ইবনে বাজ (রহ) ব্যাখ্যা অনুবাদ
লিখেছেন লিখেছেন উবায়দুল্লাহ জামিল ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ০১:২২:১৯ রাত
আব্দুর রহমান বিন আব্দুল্লাহ বিন কা‘ব বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কা‘ব বিন মালিকের পুত্রদের মধ্যে আব্দুল্লাহ তাঁর পিতা কা‘ব (রাঃ) অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সাহায্যকারী ও পথপ্রদর্শনকারী ছিলেন। আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি কা‘ব বিন মালিককে তাঁর তাবূক যুদ্ধে পেছনে থেকে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি’। কা‘ব (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যতগুলো যুদ্ধ করেছেন, তার মধ্যে তাবূক ও বদর ছাড়া আর কোন যুদ্ধেই আমি অনুপস্থিত থাকিনি। তবে বদর যুদ্ধে যারা পেছনে থেকে গিয়েছিলেন, তাদের কাউকে তিনি ভৎর্সনা করেননি। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শুধুমাত্র একটি কুরাইশ কাফেলার সন্ধানে বের হয়েছিলেন । অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের ও শত্রুদের মাঝে অঘোষিত এ যুদ্ধ সংঘটিত করেন। আর আকাবার রাতে আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তখন ইসলামের উপর দৃঢ়ভাবে কায়েম থাকার জন্য আমাদের কাছ থেকে শপথ গ্রহণ করেন। তাই আমি আকাবার বায়‘আতের চেয়ে বদরের যুদ্ধকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করতাম না। যদিও মানুষের মাঝে আকাবার ঘটনা অপেক্ষা বদর যুদ্ধ অধিক প্রসিদ্ধ ছিল।
যাহোক আমার ঘটনা এই যে, আমি যখন তাবূকের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলাম, সে সময়ের চেয়ে অন্য কোন সময়েই আমি অধিক শক্তিশালী ও সচ্ছল ছিলাম না। আল্লাহর কসম! ইতিপূর্বে আমার কাছে কখনো একসাথে দু’টো সওয়ারী ছিল না। অথচ এ যুদ্ধের সময় (যুদ্ধের পূর্বে) আমি তা সংগ্রহ করেছিলাম। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখনই কোন যুদ্ধের ইচ্ছা করতেন, তখন (যাতে শত্রুরা বুঝতে না পারে) সেজন্য বিপরীত পন্থা অবলম্বন করতেন। কিন্তু এ যুদ্ধের সময় যখন আসল, তখন ছিল ভীষণ গরম। পথ ছিল দীর্ঘ এবং স্থান ছিল বিশাল মরুভূমি। আর শত্রুর সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি। কাজেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যেদিকে যাত্রা করবেন, তা বলে দিলেন। যাতে তারা তাদের যুদ্ধের সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। তখন তার সাথে বিপুলসংখ্যক মুসলমান ছিলেন। তবে তাঁদের নাম কোন রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ ছিল না।
কা‘ব (রাঃ) বলেন, ফলে যদি কেউ যুদ্ধে না যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত, তাহ’লে সহজেই তা করতে পারত, যতক্ষণ না তার বিষয়ে অহি নাযিল হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এমন এক সময় এ অভিযান শুরু করেছিলেন, যখন ফলমূল পাকার ও গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়ার সময় ছিল। রাসূল (ছাঃ) এবং তাঁর সাথে সকল মুসলমান যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলেন। আমিও প্রত্যহ সকালে তাঁদের সাথে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে থাকি। কিন্তু ফিরে এসে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। শুধু মনে মনে বলতাম, ‘আমি তো যে কোন সময় প্রস্ত্তত হওয়ার ক্ষমতা রাখি। এভাবে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আমার সময় কেটে যেতে লাগল। পক্ষান্তরে লোকেরা পুরোদমে প্রস্ত্ততি নিয়ে ফেলল।
একদিন সকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুসলমানদের নিয়ে রওয়ানা দিলেন। অথচ তখনো আমি কোন প্রকার প্রস্ত্ততি নেইনি। মনে মনে ভাবলাম, ‘দু’এক দিন পরে প্রস্ত্ততি নিয়েও তাঁদের সঙ্গে মিলিত হ’তে পারব’। তারা চলে যাওয়ার পর একদা আমি মসজিদে গেলাম এবং প্রস্ত্ততি নেওয়ার পরিকল্পনা করলাম কিন্তু সিদ্ধান্তহীনভাবে ফিরে আসলাম। পরদিন সকালে যাওয়ার নিয়ত করলাম, কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত না নিয়েই ফিরে আসলাম। আমার এ দোদুল্যমনতার মাঝে মুসলিম সেনারা দ্রুত চলছিলেন এবং বহুদূর চলে গেলেন। আর আমি রওনা দিয়ে তাঁদের ধরে ফেলার ইচ্ছা পোষণ করতে থাকলাম। আফসোস! আমি যদি এমনটি করে ফেলতাম (তাহ’লে ভালই হ’ত)! কিন্তু তা আমার ভাগ্যে ছিল না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চলে যাওয়ার পর আমি যখন বাইরে বের হ’তাম, তখন পথে-ঘাটে মুনাফিকদেরকে অথবা দুর্বল হওয়ার কারণে আল্লাহ যাদেরকে অক্ষম করে দিয়েছেন, তাদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পেতাম না। আর এটা আমাকে চিন্তান্বিত করে তুলত।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাবূকে পৌঁছার আগে পর্যন্ত আমার কথা জিজ্ঞেস করলেন না, তবে তাবূকে পৌঁছে যখন তিনি সবাইকে নিয়ে বসলেন, তখন জিজ্ঞেস করলেন, ‘কা‘বের কি হ’ল’? বনী সালামার একজন ব্যক্তি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তাঁর বসন-ভূষণ ও অহংকারই তাঁকে বাধা দিয়েছে’। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বললেন, ‘তুমি নিতান্তই বাজে কথা বললে। আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা তার ব্যাপারে ভাল বৈ আর কিছুই জানি না’। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চুপ করে থাকলেন।
কা‘ব বিন মালিক (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে অবহিত হ’লাম, তখন আমি ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লাম। ভাবতে লাগলাম, কোন মিথ্যা তালবাহানা করা যায় কি-না? যার মাধ্যমে আগামীকাল আমি তাঁর ক্রোধ থেকে বাঁচতে পারি। এ ব্যাপারে পরিবারের কিছু বিচক্ষণ ব্যক্তির পরামর্শও চেয়েছিলাম। কিন্তু যখন বলা হ’ল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনার একেবারে নিকটে এসে পৌঁছে গেছেন, তখন আমার মন থেকে বাতিল ধ্যান-ধারণা বিদূরিত হয়ে গেল। আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, তাঁর নিকট মিথ্যা বলে আমি মুক্তি পাব না। সুতরাং সত্য বলার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী হ’লাম।
সকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় পৌঁছে গেলেন। আর তাঁর নিয়ম ছিল যখনই তিনি সফর থেকে ফিরে আসতেন, প্রথমে মসজিদে যেতেন এবং সেখানে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। তারপর লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বসে যেতেন। যখন তিনি ছালাত শেষ করে (মসজিদে নববীতে) বসে গেলেন, তখন তাবূক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকা লোকেরা আসতে লাগল। তাঁরা হলফ করে নিজেদের ওযর পেশ করতে লাগল। এদের সংখ্যা ছিল আশির ঊর্ধ্বে। বাহ্যিক অবস্থার বিচারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের ওযর কবুল করতঃ তাদের কাছ থেকে পুনরায় বায়‘আত নিয়ে তাদের মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করলেন এবং তাদের মনের গোপন বিষয় আল্লাহর নিকট সোপর্দ করলেন।
কা‘ব (রাঃ) বলেন, ‘আমিও আসলাম তার কাছে। আমি সালাম দিতেই তিনি বিরাগমিশ্রিত মুচকি হেসে বললেন, ‘এস এস’। আমি গিয়ে তাঁর সামনে বসে পড়লাম। অতঃপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি কারণে তুমি পিছনে পড়ে থাকলে? তুমি কি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বাহন ক্রয় করনি’? আমি বললাম হ্যাঁ, ক্রয় করেছি’। আরো বললাম, ‘আল্লাহর কসম! যদি আমি আপনার সামনে না বসে দুনিয়ার অন্য কোন লোকের সামনে বসতাম, তাহ’লে আমি নিশ্চিত যে, যে কোন ওযর পেশ করে তাঁর ক্রোধকে নির্বাপিত করতে পারতাম। আর আমি তর্কে পটু। কিন্তু আল্লাহর শপথ! আমি জানি, আজ যদি আপনার কাছে মিথ্যা বলে আপনাকে খুশী করে যায়, তাহ’লে অচিরেই আল্লাহ আপনাকে আমার উপর ক্রুদ্ধ করে দিবেন। আর যদি আজ আপনার সাথে সত্য কথা বলে যাই, তাতে আপনি নাখোশ হ’লেও আল্লাহর ক্ষমা লাভের আশা করা যায়। আল্লাহর কসম! আমার কোন ওযর ছিল না। আল্লাহর কসম! আমি যখন (অর্থাৎ তাবূক যুদ্ধে) আপনাদের থেকে পিছনে থেকে যাই, তখনকার মত আর কোন সময় আমি ততটা শক্তি-সামর্থ্যের ও সচ্ছলতার অধিকারী ছিলাম না’। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘যদি আসলে এরূপ হয়, তবে কা‘ব সত্য বলেছে। ঠিক আছে, চলে যাও, দেখ আল্লাহ তোমার ব্যাপারে কি ফায়ছালা দেন’।
আমি উঠে পড়লাম। বনী সালামার কিছু লোক আমাকে অনুসরণ করতে লাগল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহর কসম! ইতিপূর্বে তুমি কোন পাপ করেছ বলে তো আমরা জানি না। পেছনে থেকে যাওয়া অন্যান্য লোকদের মত তুমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট একটা বাহানা পেশ করতে পারলে না? তাহ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনাই তোমার পাপ মোচনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যেত। তারা আমাকে এমনভাবে তিরস্কার করতে লাগল যে, একপর্যায়ে আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে ফিরে গিয়ে আমার প্রথম কথাটিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার মনস্থ করলাম। অতঃপর তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা আমার মতো নিজের ভুল স্বীকার করেছে এমন আর কাউকেও কি তোমরা সেখানে দেখেছ’? তারা জবাব দিল, ‘হ্যাঁ, আরো দু’জন লোককে আমরা দেখেছি, যারা তোমার মত একই কথা বলেছে। আর তাদেরকেও তোমার মতো সেই একই কথা বলা হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? লোকেরা জবাব দিল, তারা দু’জন হচ্ছেন মুরারাহ বিন রাবী আল-‘আমরী এবং হিলাল বিন উমাইয়া আল-ওয়াকেফী। তারা আমার কাছে এমন দু’জন সৎ লোকের কথা বললেন, যাঁরা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং আদর্শস্থানীয় ছিলেন। তাঁদের দু’জনের কথা শুনে আমি চলতে শুরু করলাম।
এদিকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পেছনে থেকে যাওয়া লোকদের মধ্য থেকে আমাদের এ তিনজনের সাথে কথা বলা সমস্ত মুসলমানের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন। কাজেই লোকেরা আমাদেরকে এড়িয়ে চলতে লাগল এবং আমাদের প্রতি তাদের আচরণ পরিবর্তন করে ফেলল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হ’তে লাগল যে, চিরচেনা দুনিয়া যেন অচেনা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা ৫০ রাত অতিবাহিত করলাম। আমার সাথীদ্বয় নীরব হয়ে ঘরের মধ্যে বসে গেলেন এবং কান্নাকাটি করতে লাগলেন। তবে আমি ছিলাম খুব শক্তিশালী ও ধৈর্যশীল যুবক। তাই আমি বাইরে বের হয়ে মুসলমানদের সাথে ছালাতে যোগ দিতাম এবং বাজারে ঘুরাফিরা করতাম। কিন্তু কেউ আমার সাথে কথা বলত না। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে আসতাম। তিনি যখন ছালাতের পর মজলিসে বসতেন, আমি তাঁকে সালাম দিতাম। আমি মনে মনে বলতাম, আমার সালামের জবাবে তাঁর ঠোঁট নড়ল, কি নড়ল না? তারপর আমি তাঁর সন্নিকটে ছালাত আদায় করতাম। আমি আড়চোখে লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁকে দেখতাম। কাজেই দেখতে পেতাম যে, যখন আমি ছালাতে মশগূল থাকি, তখন তিনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। আবার আমি যখন তাঁর দিকে দৃষ্টি দিতাম, তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে আমার প্রতি লোকদের কঠোরতা ও এড়িয়ে চলা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকল।
একদিন আমার চাচাত ভাই আবূ ক্বাতাদাহর বাগানের প্রাচীর টপকে তার কাছে আসলাম। সে ছিল আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আমি তাকে সালাম দিলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! সে আমার সালামের জবাব দিল না। আমি তাকে বললাম, হে আবূ ক্বাতাদাহ! আল্লাহর দোহায় দিয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করি, তুমি কি জান না, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-কে ভালবাসি? সে চুপ করে থাকল। আমি আবার আল্লাহর নামে কসম করে তাকে এ প্রশ্ন করলাম। এবারও সে চুপ করে থাকল। আমি তৃতীয়বার তাকে একই প্রশ্ন করলাম। এবার সে জবাব দিল, ’(এ ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন’। (এতদশ্রবণে) আমার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। অতঃপর প্রাচীর টপকে পুনরায় ফিরে এলাম।
কা‘ব বলেন, ইত্যবসরে একদিন আমি মদীনার বাজারে হঁঁাটছিলাম। সিরিয়ার একজন খৃষ্টান কৃষক মদীনার বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি করতে এসেছিল। সে লোকদেরকে জিজ্ঞেস করছিল, কে আমাকে কা‘ব বিন মালিকের ঠিকানা বলে দিতে পারে? তখন লোকেরা তাকে ইশারা করে দেখিয়ে দিল। সে আমার কাছে এসে গাস্সানের রাজার একটি চিঠি আমার হাতে অর্পণ করল। তাতে লেখা ছিল, ‘পর সমাচার এই যে, আমি জানতে পেরেছি আপনার সাথী আপনার উপর যুলুম করেছেন। অথচ আল্লাহ আপনাকে লাঞ্ছনা ও অবমাননাকর অবস্থায় রাখেননি। আপনি আমাদের এখানে চলে আসুন। আমরা আপনাকে সাহায্য-সহযোগিতা করব’। চিঠিটা পড়ে আমি বললাম, এটাও আর একটি পরীক্ষা। কাজেই আমি চুলা খুঁজে চিঠিটা আগুনে জ্বালিয়ে দিলাম।
এভাবে ৫০ দিনের মধ্যে ৪০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। এমন সময় আমার কাছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একজন দূত এসে বললেন, রাসূল (ছাঃ) তোমাকে তোমার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বললাম, আমি কি তাকে তালাক দিব, না কি করব? তিনি বললেন, না, তালাক দিবে না। বরং তার থেকে পৃথক থাকবে এবং তার কাছে ঘেঁষবে না। আমার অন্য দু’জন সাথীর কাছেও এ মর্মে দূত পাঠানো হ’ল। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও। আর আল্লাহ আমার এ ব্যাপারে কোন ফায়ছালা না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে অবস্থান কর।
কা‘ব (রাঃ) বলেন, হিলাল বিন উমাইয়ার স্ত্রী রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! হিলাল বিন উমাইয়া অতিশয় বৃদ্ধ। তার কোন সেবক নেই। যদি আমি তার সেবা করি, তবে কি আপনি অপসন্দ করবেন? তিনি জবাব দিলেন, না, তবে সে যেন তোমার কাছে না ঘেঁষে। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তার মধ্যে এ কাজের প্রতি উৎসাহবোধ-ই নেই। আল্লাহর কসম! যেদিন থেকে এ ঘটনা ঘটেছে সেদিন থেকে অদ্যাবধি সে কাঁদছে।
কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমাকেও আমার পরিবারের কেউ কেউ বলল, তুমিও তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এস, যাতে সে তোমার সেবা করতে পারে, যেমন হিলাল বিন উমাইয়ার স্ত্রী তার স্বামীর সেবা করার ব্যাপারে অনুমতি নিয়ে এসেছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে কোন অনুমতি আনতে যাব না। জানি না যখন আমি এ ব্যাপারে অনুমতি চাইব, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি বলবেন। কারণ আমি একজন যুবক। এভাবে আরো দশদিন অতিবাহিত হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের সাথে কথাবার্তা বন্ধ করে দেওয়ার পর পঞ্চাশতম রাত্রিটিও অতিক্রম করল। ঐদিন সকালে ফজরের ছালাত আদায় করলাম এবং আমাদের এক ঘরের ছাদে বসেছিলাম, যে অবস্থার ব্যাপারে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন। মনে হচ্ছিল, জীবন ধারণ আমার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে এবং পৃথিবী যেন তার সমস্ত বিস্তীর্ণতা সত্ত্বেও আমার জন্য অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এমন সময় আমি সাল‘ (سلع) পর্বতের উপর উচ্চৈঃস্বরে চীৎকারকারী একজনের শব্দ শুনতে পেলাম। সে চীৎকার করে বলছে, হে কা‘ব বিন মালিক! সুসংবাদ গ্রহণ কর!
কা‘ব বলেন, আমি আল্লাহর দরবারে সিজদায় পড়ে গেলাম। আমি অনুধাবন করতে পারলাম যে, এবার সংকট কেটে গেছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফজরের ছালাতের পর ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে, আল্লাহ আমাদের তওবা কবুল করেছেন। কাজেই লোকেরা আমার ও আমার অপর দু’জন সাথীর কাছে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আসতে লাগল। একজন তো ঘোড়ায় চড়ে এক দৌড়ে আমার কাছে আসলেন এবং আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি দৌড়িয়ে পাহাড়ে উঠলেন। তার কথা অশ্বারোহীর চেয়েও দ্রুততর হ’ল। যার শব্দ আমি শুনেছিলাম সে যখন আমার কাছে সুসংবাদ প্রদান করতে আসল, তখন সুসংবাদ দেয়ার প্রতিদান স্বরূপ আমার পোশাক জোড়া খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম! তখন আমার কাছে ঐ পোশাক জোড়া ছাড়া আর কোন কাপড় ছিল না । তারপর আমি এক জোড়া পোষাক ধার করে নিলাম এবং তা পরিধান করে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের নিমিত্তে বের হ’লাম। পথে দলে দলে লোকজন আমার সাথে সাক্ষাৎ করছিল এবং তওবা কবুল হওয়ার জন্য তারা আমাকে মুবারকবাদ জানাচ্ছিল। তারা বলছিল, তোমার তওবা কবুল করে আল্লাহ তোমাকে যে পুরষ্কৃত করেছেন, এজন্য তোমাকে মুবারকবাদ। কা‘ব (রাঃ) বলেন, এভাবে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। সেখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লোকজন পরিবেষ্টিত হয়ে বসেছিলেন। ত্বালহা বিন ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) আমাকে দেখে দৌড়ে এসে মুছাফাহা করলেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন। আল্লাহর কমস! মুহাজিরদের মধ্য থেকে সে ব্যতীত অন্য কেউ এভাবে এসে আমাকে ধন্যবাদ জানায়নি। আমি কোনদিন তাঁর অনুগ্রহ ভুলব না।
কা‘ব (রাঃ) বলেন, তারপর আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দিলাম। তখন খুশীতে তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, (হে কা‘ব)! তোমার মা তোমাকে জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত অতিক্রান্ত দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল দিনের সুসংবাদ গ্রহণ কর! কা‘ব বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ (ক্ষমা) আপনার পক্ষ থেকে, না আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি বললেন, না, এ তো আল্লাহর পক্ষ থেকে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন খুশী হ’তেন, তখন তাঁর চেহারা এক ফালি চাঁদের মত উজ্জ্বল হয়ে উঠত। আমরা চেহারা দেখে তাঁর খুশী বুঝতে পারলাম। তারপর আমি তাঁর সামনে বসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার তওবা কবুলের জন্য শুকরিয়া স্বরূপ আমি আমার সমস্ত ধন-সম্পদ আল্লাহ ও রাসূলের পথে ছাদাক্বা করে দিতে চাই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমার সম্পদের কিছু অংশ নিজের জন্য রেখে দাও। তাতে তোমার কল্যাণ হবে। আমি বললাম, তাহ’লে আমি শুধু খায়বারের অংশটুকুই আমার জন্য রাখলাম। তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ এবার সত্য কথা বলার কারণে আমাকে মুক্তি দিয়েছেন। কাজেই আমার এ তওবা কবুল হওয়ার কারণে আমি জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলোতে সত্য কথাই বলতে থাকব। আল্লাহর কসম! আমি জানি না, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে সত্য কথা বলার কারণে সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আল্লাহ আমার প্রতি যে মেহেরবানী করেছেন, তেমনটি আর কোন মুসলমানের উপর করেছেন কি-না। আর রাসূল (ছাঃ)-কে যেদিন থেকে এ কথা বলেছি, সেদিন থেকে সজ্ঞানে মিথ্যা কথা বলিনি। জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহ আমাকে মিথ্যা থেকে বাঁচাবেন বলে আশা করি। আর আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেছেন, ‘আল্লাহ অবশ্যই অনুগ্রহপরায়ণ হ’লেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনছারদের প্রতি যারা তার অনুসরণ করেছিল সংকটকালে- এমনকি যখন তাদের এ দলের চিত্ত-বৈকল্যের উপক্রম হয়েছিল। পরে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। তিনি তো তাদের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু। এবং তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য তা সংকুচিত হয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিল এবং তারা উপলব্ধি করেছিল যা, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নেই, তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন ব্যতীত, পরে তিনি তাদের তওবা কবুল করলেন যাতে তারা তওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও’ (তওবা ১১৭-১১৯)।
আল্লাহর কসম! ইসলাম গ্রহণ করার পর এর চাইতে উৎকৃষ্ট আর কোন অনুগ্রহ আল্লাহ আমার উপর করেননি যে, রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে সত্য বলার তাওফীক্ব দান করে আমাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে। অন্যথা অন্যান্য মিথ্যাবাদীদের মত আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম। কারণ অহি যখন নাযিল হচ্ছিল (অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায়), সে সময় যারা মিথ্যা বলেছিল তাদের সম্পর্কে আল্লাহ যে মারাত্মক কথা বলেছিলেন, তা আর কারো সম্পর্কে বলেননি। মহান আল্লাহ বলেছিলেন, ‘তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে অচিরেই তারা আল্লাহর শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের উপেক্ষা কর। সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করবে। তারা অপবিত্র এবং তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ জাহান্নাম তাদের আবাসস্থল। তারা তোমাদের নিকট শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হ’লেও আল্লাহ তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না’ (তওবা ৯৫-৯৬)।
কা‘ব (রাঃ) বলেন, আর আমরা তিনজন সেসব লোকদের থেকে আলাদা, যারা তাদের যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে মিথ্যা শপথ করেছিল এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের কথা মেনে নিয়ে তাদেরকে বায়‘আত করিয়েছিলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু আমাদের ব্যাপারটি তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন (আল্লাহর উপর)। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ যে ব্যাপারে ফায়ছালা দিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, ‘সেই তিনজন, যারা পেছনে থেকে গিয়েছিল’ (তওবা ১১৮)। (অর্থাৎ আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছিলেন)। যারা জেনে বুঝে জিহাদ থেকে পেছনে থেকে গিয়েছিল, তাদের কথা এখানে বলা হয়নি। বরং এখানে কেবল আমাদের (তিনজনের) কথা বলা হয়েছিল। আর যারা হলফ করেছিল ও ওযর পেশ করেছিল এবং তাদের ওযর রাসূল (ছাঃ) গ্রহণ করেছিলেন তাদের থেকে আমাদের ব্যাপারে ফায়ছালাটি পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এই হাদীসের সার সংক্ষেপঃ- কোন শরয়ী ওজর ছাড়াই তাবূক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকা তিনজন সাহাবী কা'ব বিন মালিক এবং ওনার দুই সাথী হিলাল বিন উমাইয়্যাহ্ ও মুরারাহ্ ইবনে রাবী আমরী সম্পর্কে এই হাদীস।হিজরী ৯ম বর্ষে রাসূল রুমের বিরোদ্ধে জিহাদ ঘোষণা দিয়ে বলেন যে,তিনি অচিরেই রুমের বিরোদ্ধে যাত্রা শুরু করবেন।সেই সফরের সময় আবহাওয়া ছিল ভীষন গরম।তখন ছিল ফল পাকার মৌসম ও গাছের ছায়াও ছিল উৎকৃষ্ট(প্রিয়)। অতঃপর রাসূল মানুষকে জিহাদের স্পষ্ট ঘোষণা দেন এবং তিনি (সা) নিজেও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।ওনার সাথে ছিল বিপুল সংখ্যক সাহাবী যা প্রায় ৩০০০০ এরও বেশীতে পৌঁছে যায়।তারা সবাই-ই রোমের বিরুদ্ধে শামে যুদ্ধ করতে চাচ্ছিল।অন্যদিকে কা'ব বিন মালিক ও ওনার দুই সাথী তখনো শরয়ী কোন ওজর ছাড়া পিছনে পরে রয়েছিল অথচ নবী (সা) প্রত্যেককেই তখন ব্যাপকভাবে যুদ্ধে বের হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।এরপরও কা'ব বিন মালিক ও ওনার দুই সাথী কোন শরয়ী ওজর ছাড়াই পিছনে পরে রয়েছিলেন এর ফলে শেষ পর্যন্ত তারা যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করতে পারে নি।রাসূল (সা) আল্লাহর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাবূকে দৃড় অবস্তান নেন, এক পর্যায়ে আসবাবের সীমাবদ্ধতার কারনে আল্লাহ তা'আলা রাসূল (সা)তাবূক থেকে ফিরে আসার অনুমতি দেন।যার ফলে রাসূল (সা) দুশমন ও রোমদের সাথে প্রত্যক্ষভাবে মুখোমুখি হওয়া ছাড়ায় ফিরে আসেন।এদিকে কা'ব বিন মালিক ও তার সাথীদ্বয় শরয়ী কোন ওজর ছাড়াই মদিনাতেই রয়ে গিয়েছিল।যখন কা'ব বিল মালিক এর কাছে খবর পৌঁছে যে, রাসূল (সা) তাবূক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসতে শুরু করেছেন, তখন তার মনে কঠিন দুশ্চিন্তা এসে উপস্থিত হল।তিনি কিভাবে ওজর পেশ করবেন? তিনি ও তার সাথীদ্বয় কী বলবেন?? অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে সত্য বলার তৌসিক দান করলেন।অন্যদিকে বেদুঈনদের মধ্য থেকে যারা জিহাদ থেকে পিছনে থেকে গিয়েছিল তারা রাসূল (সা) এর কাছে এসে পিছনে পরে থাকার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাত পেশ করতে লাগল। রাসূল (সা) তাদের বাহ্যিক কথার উপর তাদের ওজর গ্রহণ করে নেন। তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে কঠিন শাস্তির ব্যাপারে আয়াত নাজিল করলেন ((তাওবাঃ ৯৬))। আমরা আল্লাহ্'র কাছে পানাহ্ চাই।আমিন।
এই হাদীসের উদ্দেশ্যঃ- উল্লেখ্য হাদীসে তিনজন সাহাবীই সত্য বলেছিলেন যে, তারা কোন শরয়ী ওজর ছাড়াই জিহাদ থেকে পিছনে থেকে গিয়েছিল।সেই কারণে রাসূল (সা) তাদেরকে বয়কটের আদেশ দিলেন। সমস্ত সাহাবী রাসূল (সা) নির্দেশ অনুযায়ী তাদেরকে বয়কট করেন যেহেতু কোন শরয়ী ওজর ছাড়া তারা জিহাদ থেকে পিছনে পরে রয়েছিল।সাহাবায়ে কেরাম তাদেরকে ৫০ রাত বয়কট করে রেকেছিল, সেই সময় এই তিনজনের নিকট এই প্রসস্ত জমিন সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল।এই নির্দেশ এত কঠোর ছিল যে,স্বয়ং রাসূল () এবং সাহাবায়ে কেরাম সহ কেউই তাদের সাথে কোন রকম কথা বলত না।এক সময় আল্লাহ্ তা'আলা তাদের একনিষ্ঠ তাওবা ও অনুতপ্ততার কারণে তাদের প্রতি দয়া পরবশ হন এবং সাত আসমানের উপর থেকে তাদের তাওবা কবুল করে নেন। এরপর তাদের সম্পর্কে নাজিল করেন (তাওবাঃ১১৮,১১৯)। আল্লাহ্ তা'আলা তাদের সততা, একনিষ্টতা এবং অকপটে তারা নিজেরা নিজেদের দোষ স্বীকার করার কারণেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।আর এই কথা প্রমাণ বহন করে যে,"যে ব্যক্তি কোন শরয়ী ওজর ছাড়াই জিহাদ থেকে পিছনে পরে থাকবে মুসলিম শাসক (চাইলে) তাকে বয়কটের আদেশ দিবেন।এর মাধ্যমেই ওলামাগণ শরয়ী প্রমাণ পেশ করেছেন যে,"যে ব্যক্তি কোন শরয়ী ওজর ছাড়াই প্রকাশ্য গুনাহ্ করবে তাকে বয়কট করা হবে""।এইটাই উপযুক্ত শাস্তি যে, তাকে বয়কট করা হবে যতক্ষন পর্যন্ত না সে তাওবা করে এবং আল্লাহ্ তার তাওবা কবুল করে নেন।
এই কারণেই নবী (সা) ও সাহাবাগণ এই তিনজনকে বয়কট করেছিলেন যতক্ষন না তারা তাওবা করে,অবশেষে আল্লাহ্ তা'আলা ও তাদের তাওবা কবুল করে নেন। (سبحان الله و بحمده)
এই ঘটনার মধ্যেই এই শিক্ষা রয়েছে যে,সত্যবাদীতার ফলাফল হল অত্যন্ত প্রসংশনীয়,উত্তম, নিরাপদ।অথএব, তোমরা আল্লাহ্'কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের <<<<সংজ্ঞী(সাথী)>>>> হও।আলাহ্ তা'আলা বলেন, ( মায়েদাঃ-১১৯) যেমনিভাবে সত্যবাদীতার ফলাফল উওম, নিরাপদ তেমনিভাবে মিথ্যার ফলাফলও ভয়াবহ, অনিরাপদ। অথএব যে গুনাহ্ করে তার উপর এইটা জরুরি যে,সে আল্লাহ্'র নিকট সত্যবাদী হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব সে তাওবা ও ইসলাহের দিকে ছুটে যাবে।আর আল্লাহ্ সুবানাহু তা'আলা তো তাওবাকারীদের উপর ক্ষমাপরবশ হন ও তাদের তাওবা কবুল করে নেন।
নিশ্চয় মিথ্যা এবং গুনাহ্'কে পুনরাবৃত্তি করার পরিণতি ভয়াবহ। نعوذ بالله من ذالك আমরা আল্লাহ্'র কাছে এর থেকে আশ্রয় চাই,।
আল্লাহ্ তা'আলার নিকট প্রত্যেকের জন্য হেদায়েত ও তৌফিক চাই।আমিন। و لا حول و لا قوة الا بالله
বিষয়: বিবিধ
২৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন