[b]সময়ের হেফাযত[/b]
লিখেছেন লিখেছেন উবায়দুল্লাহ জামিল ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:২৯:২৯ রাত
بسم الله الرحمان الرحيم الحمد
الحمد لله وكفى و سلام على عباده الذين المصطفى
ব্যবস্থাপনা বিদ্যাঃ-(ব্যক্তিগত সময়) সময় হল আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের মধ্যে একটি নেয়ামত।একে যথাযথ ভাবে কাজে না লাগালে জীবনে কখনোই সফলতা আসে না।এর থেকে একটু গাফেল হয়ে যাওয়াই ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। হাদীসে আছে (نعمتان مغبون فيهما كثير من الناس الصحة و الفراغ))[{অনুবাধ}"দুইটি নেয়ামত,অধিকাংশ মানুষি যার থেকে গাফেল ১)সুস্ততা ২)অবসরতা()] যে ব্যক্তি সুস্থতা ও অবসরতা দুইটি নেয়ামত পেল সে অবশ্যই এমন নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েছে যা তাকে জান্নাতে নিয়া যাবে,কিভাবে অবসরকে কাজে লাগাব? কিভাবে সময়কে ভাগ করব? তারই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলঃ-
দুইটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে (১) সকালে ঘুম থেকে উঠেই আল্লাহ্'র কাছে সময়ের বারাকাহ্ এর জন্য দোয়া করা। (২)সর্বদা সময়ের সদ্বব্যবহারের জন্য সংগ্রাম করা। অর্থাৎ আমার এক মুহুর্তও নষ্ট হবে না।
==>কিছু বিষয় নির্দিষ্ট ঃ- কিছু বিষয় আছে যা আল্লাহ্'র পক্ষ থেকে একদম নির্দিষ্ট। সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা চিন্তা না করলেও চলবে।যেমন ঃ- রিজিক। এর জন্যই আমরা সারাটা দিন ব্যয় করে দিব না। তবে যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকুই আমরা এখানে ব্যয় করব।একইভাবে সাস্থ ও সুস্থতাও।এগুলোর পেছনেও সময় অপচয় করা যাবে না।অর্থাৎ প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্য সময়ের যথাযথ ব্যনস্থাপনা প্রয়োজন।কেননা,যখন কোন ব্যক্তি রূটিন মেনে চলে না তখন সে নিয়মনুবর্তিতার সংকটে পড়ে,এই সমস্যা থেকে তার ব্যক্তিত্ত্বেও সমস্যা দেখা যায়।একইভাবে, কোন ব্যক্তি যখন তার সময়কে এবং কাজকে একই সুতোয় গাতঁতে পারে না তখন তার মাঝে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা চলে আসে, যার ফলে সে আস্তে আস্তে দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তিতে পরিণত হয়।(نعوذ بالله)
>>দুইটি কারণে সময়ের ব্যবস্থাপনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হয়। (১) প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেক দিন একটি নির্দিষ্ট সময়ই পায় এর বেশী বা কম করার কোন সুযোগ থাকে না। (২) সময়ই একমাত্র সম্পদ যা কখনোই ফিরে আসে না।
একবার এটা চলে যাওয়া মানে তা কখনোই আর ফিরে আসবে না।আরেকটি বিষয় হল , " সময় এমন এক বিষয় যা একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলাই নির্ধারণ করেন। কোন মানুষের সময় কখন শেষ হবে তা আল্লাহ্ তা'আলা ছাড়া কেউই বলতে পারেন না। সুতরাং সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহারই ব্যক্তিকেই সফলতার চূড়ায় নিয়ে যাবে।আর এর বিপরীতটা তাকে ধ্বংসের কিনারে পৌঁছে দিবে।কিভাবে আমরা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় করব যেখানে প্রয়োজন কাজের জন্যই পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না??
সময় বাচাঁনোর পন্থাঃ- সময়কে হেফাযত করতে, তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে আমাদের অবশ্যই তার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে হবে।এরপর একে হেফাযত করার বিভিন্ন কৌশল অধ্যায়ন করতে হবে।একটা দিন মানে ২৪ ঘন্টা, একটা সপ্তাহ মানে ৭ দিন।এইটা এত নির্দিষ্ট যে,এর ব্যতিক্রম কখনোই সম্ভব নয়। সুতরাং এই নির্দিষ্ট সময়টাকে আমাদেরকে আমাদের প্রয়োজন অনুসারে ভাগ করে নিতে হবে। যথাযথভাবে সাজাতে হবে, নিচে এর কিছু পন্থা তুলে ধরা হলঃ-
(১) একটি সঠিক উদ্দেশ্য ঠিক করাঃ- আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ আমাদের সৃষ্টির পেছনে আল্লাহ্ তা'আলারই একটি উদ্দেশ্য আছে। সুতরাং আমাদেরকেও আল্লাহ্'রই ইবাদত করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্য যা যা প্রয়োজন সবই সন্তুষ্টচিত্তে করে যেতে হবে। ইসলামের সব বিধানই একটি নির্দিষ্ট সময় বাধা। বিশৃঙ্খল কোন ধর্ম ইসলাম নয়। যেমনঃ- নামায, পাচঁ ওয়াক্ত নামাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট সময় আছে। রমজানের জন্য একটি নির্দিষ্ট মাস আছে। হজ্জ এর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় ও স্থান আছে। এভাবে সব বিষয় নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পৃক্ত। প্রত্যেক ইবাদত এর জন্য যথাযথ প্রস্তুতির সুযোগ রয়েছে।এই বিষয়গুলোই মানুষকে দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলে। আমাদেরকেও আমাদের প্রত্যহিক,সাপ্তাহিক ইত্যাদি জীবণের জন্য একটি উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে এবং এউ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
কিছু উদ্দেশ্য যা আমাদের আল্লাহ্'র নিকটবর্তী করেঃ- (১) প্রতিদিন রাতের একটা অংশ {৩০মি°} সালাত আদায় করা। (২) প্রতিদিন কোরয়ান তেলোয়াত করা {১ পারা কমপক্ষে } (৩) সপ্তাহে একদিন সালাতুত্ তাসবীহ্ পড়া। (৪) প্রত্যেকদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক আযকার করা {১০০০ বার পড়ার চেষ্টা করা} (৫) সকাল-সন্ধ্যা, বাদ সলাত আযকার প্রতিদিন আদায় করা। (৬) প্রতিদিন কোরআনের কিছু অংশ হিফজ করা।
এই তো গেল ব্যক্তিগত। এছাড়াও আল্লাহ্ তা'আলা প্রদত্ত আমাদের আরেকটি মহান দায়িত্ব হল "দাওয়াহ্" দেওয়া এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় "ইলম" হাসিল করা।তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় আল্লাহ্ তা'আলার মারেফাহ্ সম্পর্কে ইলম শিক্ষা করা এবং মানুষকে দাওয়াহ্ দেওয়া।
এইভাবে আমরা একটি সংক্ষিপ্ত উদ্দেশ্য ঠিক করতে পারি যা আমরা পালন করব। অর্থাৎ, একদিন তথা ২৪ ঘন্টা সময়ে আমরা অবশ্যই উপরোক্ত কাজগুলো করব। প্রতিদিন করব ইনশাআল্লাহ।
কিভাবে লক্ষ্যে পৌছাঁব?? >>> উপরোক্ত লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য আমাদের প্রথমে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমনঃ-
* কুরআন হিফয।আমি যদি প্রতিদিন একপারা কুরআন মুখস্ত করার পরিকল্পনা করি তবে তা একদম অবাস্তব। আবার যদি প্রতিদিন ১০ জনকে দাওয়াত দিব চিন্তা করি তাও অবাস্তব। তাই প্রথমে আমাদেরকে আমাদের কতটুকু সামর্থ্য আছে তা বুঝতে হবে।তারপর উপরোক্ত লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে হবে।
>>> পাচঁটি বিষয় আমাদেরকে লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে।
(১) লক্ষ্য/উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করা ;-- যেমন আমার লক্ষ হল ১০ পারা হিফয করা। এটা নির্দিষ্ট করা। এমন না যে প্রতিদিন ৫ পারা করে, বরং তা হবে আমি প্রতিদিন কী পরিমাণ হিফয করতে পারব তার উপর ভিত্তি করে।তবে আমার লক্ষ্য / উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট, তা হল ১০ পারা হিফয।
(২) পরিমিত রাখা ;;- যেমন আমি এক সপ্তাহে দ্বীনের খদমতের ফজিলত সম্পর্কে ১০০০ পৃষ্ঠার একটা বই লিখব।এটা একটা অবাস্তব পরিকল্পনা যা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।কিন্তু আমি যদি তা " পরিমিত " করে ফেলি। আমি যদি এক সপ্তাহে একই বিষয়ে সাত পৃষ্ঠার একটা বই লিখার চিন্তা করি তাহলে তা সম্ভব। আমাদের লক্ষ্য রাকতে হবে যে, আমি যে উদ্দেশ্য ঠিক করেছি তা পূরণে আমি সক্ষম কিনা। সক্ষম না হলে, " কতটুকু করতে সক্ষম? " ঐ পরিমাপই আমার পরিমাণ।
(৩) সামর্থ্যের মধ্যে থাকা। আমার যে লক্ষ তা আমার সামর্থের মধ্যে আছে কিনা তা আমার বুঝতে হবে। যেমন ;- আমি চিন্তা করলাম, আমি মুজাহিদীনদের জন্য ১০ তলা দুইটি বিল্ডিং বানিয়ে দিব। এইটা অবাস্তব। সুতরাং এইটা আমার লক্ষ্য হতে পারে না। কিন্তু আমার লক্ষ্য যদি হয় এক বচরে দুইটি বিল্ডিংয়ের মালককে দাওয়াহ্ দিয়ে তাদেরকে আনসার বানাব তাহলে তা সম্ভব। অর্থাৎ যা আমার সামর্থ্যের মধ্যে আছে এর মধ্যেই আমি আমার লক্ষ্য ঠিক করব।
(৪) তবিয়তের সাথে মাননসই হওয়া ;--- এটা হল আমার লক্ষ্য- উদ্দেশ্য আমার তবিয়তের সাথে মাননসই হওয়া। যদি আমার প্রকৃতি এমন হয় যে, আমি মুখস্ত করতে পারি না, তাহলে প্রতিদিন ১০ টি করে হাদীস মুখস্ত করার মত লক্ষ্য ঠিক করা আমার জন্য বোকামি। কেননা, আমি তা ধরে রাখতে তো পারবই না বরং এক পর্যায়ে তার প্রতি চরম বিরক্ত চলে আসবে। তাই আমি কি পারব? এমন একটি সহজ লক্ষ্য আমাকে ঠিক করতে হবে। এমন হতে পারে যে, আমি মুখস্ত করব না, কিন্তু প্রতিদিন ১০ টা করে হাদীস অর্থসহ পড়ব এবং তার ব্যাখ্যা জানার চেষ্টা করব। এটা হবে আমার প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
(৫) সময়মত করা। সময়মত কাজ করা এমন এক গুন যা মানুষকে দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে,তাকে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে গড়ে তুলে। আর এর বিপরীত হল তাকে "দায়িত্বজ্ঞানহীন " ও "বিশৃঙ্খল " করে ফেলে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই সময়ের কাজ সময়মত করতে হবে। আর লক্ষ্য অর্জনে অবশ্যই একটি সময় নির্ধারণ করতে হবে যাতে আমরা সেই সময়ের মধ্যে কাজটি করতে পারি। যেমন ;- রিয়াদুস্ স্বলিহীন এ ১৯০৫ টি হাদীস আছে। আমি যদি তা পড়তে চাই তাহলে আমার সময় হবে তিন মাস। অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে আমি তা পড়ে শেষ করব। যার জন্য প্রতিদিন আমি ২০ থেকে ২২ টি হাদীস পড়ব।
এভাবে আমরা আমাদের সময়কে কাজে লাগাব।
এই কাজ করার আগে অবশ্যই দুইটি বিষয় ভেবে দেখব।
(১) আমাদের বর্তমান সময়টা আমরা কিভাবে ব্যয় করছি??
(২) কতটুকু সময় প্রতিদিন নষ্ট করছি??
এবার আমরা আমাদের "ব্যয় করা সময়" ও "নষ্ট করা সময়" থেকে সমন্বয় করে "সময়" বের কতে নিব। এবাই ওই সময়কেই আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণে কাজে লাগাব। এর ফলে আমাদের মূল কাজের কোন ক্ষতি হবে না বরং এর মাধ্যমে সময়ের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
পরপর তিনদিন আমরা সারাদিন কি কাজ করেছি তা যদি আমরা লিখে রাখি তাহলে তিনদিন পর আমরা আমাদের ব্যয়কৃত সময় দেখতে পাব। এরপর আমরা বুঝতে পারব যে, কতটুকু সময় আমরা নষ্ট করেছি ও কতটুকু সময় আমরা কাজে লাগিয়েছি।
ব্যবস্থাপনা ;-
আমাদের জীবনে যত কাজ তা সাধারণত তিন ধরণের
(১) জরুরি
(২) প্রয়োজনীয়
(৩) অপ্রয়োজনীয়
এবার আমরা দুইটি রুটিন বানাব। একটা সাপ্তাহিক, আরেকটা দৈনিক। আমরা আমাদের সব ধরণের কাজের একটা লিস্ট করব। যেমন ;;- দাওয়াহ্, পড়া-লেখা, টাইপিং, হাঠাঁহাঠিঁ, তেলোয়াত ইত্যাদি। এখন এগুলোর নির্দিষ্ট একটা সাপ্তাহিক লক্ষ্যমাত্রা সেট করব।যেমন,দাওয়াহ্ দিব দুইজনকে,লেখালেখি করব ২১ পৃষ্ঠা ইত্যাদি। এবার এই সাপ্তাহিক লিস্টকে হাসিল করার জন্য প্রতিদিন কি পরিমাণ মেহেনত করতে হবে তা বের করতে হবে।এভাবে দুইটা লিস্ট হবে।একটা সাপ্তাহিক আরেকটা দৈনিক। এখন এই দৈনিক লিস্টকে কাজের পাইরুটি অনুযায়ী সেট করব। যেমন ;- লেখা-- সকাল ১০ঃ০০ দাওয়াহ্ বাদ যুহর, ক্লাস -- ০২;৩০
বদ অভ্যাস বর্জন ;- نفسك ان لم تشغلها بالحق شغلتك بالباطل তোমার নফসকে তুমি যদি হক কাজে ব্যস্ত না কর, তাহলে সে তোমাকে বাতিল কাজে ব্যস্ত করে ফেলবে " আমরাই আমাদের সময় নষ্ট করি অথচ এটা মহামুল্যবাণ এক সম্পদ যার একটু ভুল ব্যবহার আমাদের দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্ব, ও দায়িত্বশীলতাকে নষ্ট করে দিবে। তাই আমাদেরকে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। । যে বিষয়গুলোর কারণে আমাদের সময় নষ্ট হয় তা খুঁজে বের করতে হবে। এরপর এই অভ্যাসগুলো বর্জন করতে হবে।এভাবে আমরা আস্তে আস্তে নিয়মানুবর্তীতা শিখতে পারব ও নিজেদেরকে দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। বদ অভ্যাস বর্জন ব্যতিত সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। নিচে বদ অভ্যাস বর্জনের কিছু পন্থা উল্লেখ্য করা হল;-
(১) বদ অভ্যাস চিন্থিত করতে হবে
(২) এবার একটা ভাল অভ্যাস বের করতে হবে যা এই বদ অভ্যাসের স্থলাভিষিক্ত হবে।
(৩) এবার ঐ বদ অভ্যাসের যায়গায় আজ থেকেই এই ভাল অভ্যাসকে সেট করা শুরু করতে হবে
(৪) এবার দৃঢ় থাকতে হবে যতক্ষন পর্যন্ত না এই ভাল অভ্যাসটি ওই বদ।অভ্যাসের যায়গা দখল করে নেয়।
(৫) এবার আমরা নিজেদের অন্য আরেকটা দোষের দিকে মনযোগ দিব এবং তাও সংশোধনের চেষ্টা করব।
বাস্তবতা হল বদ অভ্যাস দূর করা অনেক কঠিন এক কাজ কিন্তু অসম্ভব নয়। চারটি বিষয় একে দূর করতে সাহায্য করে ঃ-
(১) বদ অভ্যাসকে "বদ" বলে মেনে নেওয়া
(২) দৃঢ় সংকল্প।
(৩) ফোকাস ঠিক রাখা
(৪) নতুন প্ল্যান
সুতরাং আল্লাহ্'র কাছে সংশোধনের দোয়া করে আমাদেরকে মুজাহাদা শুরু করতে হবে।
স্বহবতে সলিহ;-
শয়তানের ধোঁকা থেকে বেচেঁ নিজেকে দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তুলতে হলে স্বহবতে সলিহ এর বিকল্প নাই।এর মাধ্যমে একজন মুমিন তার দোষগুলো সহজে বের করতে পারে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে সংশোধন করে আল্লাহ্'র মাহবুব হতে পারে।কয়েকটা পন্থায় তা হাসিল হয় ;-
(১)স্বলিহ ভাইকে নিজের দোষ জিজ্ঞেস করা
(২) এবার ভাইয়ের মুখ থেকে দোষ শুনে তাতে সবর করা
(৩) নিজেকে সব সময় ;;সরণঃ করিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবার ও স্বলিহ ভাইকে বলে রাখা।
(৪) দৃঢ় থাকা
(৫) এবার সে অনুযায়ী নিজেকে সংশোধন করা
(৬) আবার যেন ওই অভ্যাসে ডুবে না যায় সে জন্য প্ল্যান করা।
যে বিষয় সমূহ বর্জন করতে হবে ;;-
আমাদের মূল।কাজকে বাধাগ্রস্ত করে এমন সব কাজকেই আমাদের বর্জন করতে হবে।এর জন্য প্রথমে কোন কোন কাজ আমার "মূল কাজ" কে বাধাগ্রস্ত করছে তার একটা লিস্ট করতে হবে।এরপর এগুলো যদি বর্জনীয় হয় তাহলে বর্জন করতে হবে,আর যদি এগুলোর প্রয়োজন থাকে তাহলে যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকুই ব্যবহার করতে হবে। যেমন; স্যোশাল মিডিয়া, ফোন, সামাজিকতা ইত্যাদি। এগুলোর প্রয়োজন আছে।তাই এগুলো আমার জীবনে যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকুই ব্যবহার করব। সবচেয়ে ভাল হয় যদি এই বিষয়গুলোর জন্য কোন স্বলিহ ভাইয়ের কাছ থেকে একটা সময় নির্দিষ্ট করে নেওয়া যায়। এতে নফসেত চাহিদার নিয়ন্ত্রণ থাকে।
এর বাইরেও আরও কয়েকটি বিষয় আমাদের দেখতে হবে, তা হল ;-
(১) একসাথে একাধিক কাজ না করা। এটা এমন এক বদ অভ্যাস যা কাজের কোয়ালিটি নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে " চিন্তা " করে করতে হয় এমন কাজ একসাথে করলে কাজের মান, গুনাগুন ও মনযোগ সবগুলোই নষ্ট হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, যে সমস্ত কাজ করতে " চিন্তা ভাবনার " প্রয়োজন।হয় না তা একসাথে একাধিক করা যায়। যেমন রুম ঝাড়ু দেওয়ার সাথে সাথে একটা লেকচার শুনা ইত্যাদি। কিন্তু বই পড়া সাথে নাশিদ শুনা কখনোই যাবে না।
(২) কাজের বোঝা চাপিয়ে নেওয়া যাবে না। আল্লাহ তা'আলাই তো আমাদেরকে সামর্থ্যের বাইরে কাজ দেন নি, সেখানে আমরা কিভাবে নিজেরা নিজেদের উপর কাজের বোঝা চাপিয়ে নিতে পারি?। তাই নিজের যতটুকু সামর্থ্য শুধু ততটুকু কাজেই হাত দেওয়া এবং পাশাপাশি অবশ্যই এই সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য মুজাহাদা করা।
(৩) সর্বদা কাজের মধ্যে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে না যাওয়া। কাজের ফাকেঁ ফাকেঁ বিরতি নেওয়া। নিজেকে রিফ্রেশ এর সুযোগ দেওয়া। একটা নির্দিষ্ট সময় নফসকে রিল্যাক্স রাখা।এটা বিভিন্নভাবে হয়ে পারে। যেমন ;- গল্পের বই পড়া, কারও সাথে ফ্রেন্ডলি মেশা, নাশিদ শুনা, শুহাদাদের জীবনের ভিডিও দেখা, বাসায় যোগাযোগ করা, ভাল খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে রিফ্রেশ করা। নফসকে বৈধ বিষয়ের মাধ্যমে খুশি করা। নিজেকে পুরষ্কিত করার মাধ্যমেও নফসকে খুশি করা যায়। এভাবেই কিছু বিষয় বর্জন করার জন্য কিছু বিষয়কে গ্রহন করতে হবে।
উপসংহার ;-- সময় আল্লাহ্ প্রদত্ত এমন নিয়ামত যা মানুষের আওতার বাইরে।তাই একে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে তা আমার জন্য ফায়দা বয়ে আনে।এর চেয়ে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি যার মাধ্যমে আমরা আমাদেত সময়কে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা শুরু করতে পারি তা হল ''' আমি আমার আজকের দিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করব,তাহলে কালকের দিনটা আপনা আপনা আপনিই সঠিক হয়ে যাবে "''' প্রত্যেক কাজ শুরুর আগে কমপক্ষে ২ মিঃ চিন্তা করব যাতে কাজের সম্পর্কে (ভাল/খারাপ) আগে থেকেই ধারণা থাকে।এভাবে জীবণের প্রতিটি স্তরেই একটি নিয়মানুবর্তীতা ও শৃঙ্খলা নিয়ে আসব। الله مستعان
""" মানুষ যখন কোন কাজে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়, পৃথিবীর কোন বাতিল শক্তি তাকে রুখে দিতে পারে না """
বিষয়: বিবিধ
৩৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন