নবীনান্বেষা
লিখেছেন লিখেছেন আফফান কান্দুরী ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:১৫:১০ রাত
সময়ের জলস্রোত চলছে, তরঙ্গায়িত হচ্ছে...
প্রভাত গড়িয়ে বৈকাল। রাতের ডানায় চড়ে দিনের আলো হাওয়ায়। সময়ের জলস্রোত তার প্রসন্নতায় এভাবেই চলছে। তবু প্রতিদিনের নতুন সূর্যালোকের মিষ্টি রোদে দাঁড়িয়ে সবকিছুতেই নতুন কিছু খুঁজে বেড়াই। কিছু সংকল্প-ছাওয়া, কিছু স্বপ্নমাখা মুহূর্ত, বুকপকেটে অনুভবের চেষ্টা করি। প্রতিদিনের গাঢ় নিশার অবসান হলে আগত ভোরটাকে নতুন দৃষ্টিতে খুঁজি। পরিচিত মণ্ডলে দাঁড়িয়ে অবচেতনে ভাবি: আজকের ভোরটা নিশ্চয়ই অন্যরকম এক ভোর হবে। হৃদয়ে প্রশান্তির পাপড়ি মেলে ধরবে। উপলব্ধির অট্টালিকায় শ্রেষ্ঠত্বের রঙ মাখবে। এই ভোরটা চেতনা-জাগানিয়া হবে। আমার চেতনাশূন্য মেরুদণ্ডে বিপ্লবী আগুন ঢালবে..... কিন্তু এই ভোরগুলো আমাকে নিরাশ করে বরাবরই!
তবু আমি আশাহত হই না- ভোরের আকাশে নতুন রবির প্রতীক্ষায় থাকি। আমার দেহ-আঙিনায় ঝলমলে রোদ এসে লাগে, হলুদের এই উষ্ণ পরশ মিষ্টি মধুর আবহ তৈরি করে আমার পুরো অঙ্গে। আমার অন্তর্নিহিত অনুভবে কোমলতার ছোঁয়া পাই তখন। ঝরঝরে কলেবরে সবকিছু স্বচ্ছ লাগে। অল্প মেয়াদে প্রকৃতি তার শান্তশিষ্ট রূপমাধুরী নিয়ে হাজির হয় আমার কাছে। আমার অতি নিকটে বসে তার সৌন্দর্য জাহির করে। আমিও এই স্বল্পমেয়াদী স্নিগ্ধ পরশে আন্দোলিত হই!
প্রভাতের এই আলোকরশ্মি আমার কাছে একটি ফুটন্ত কদম ফুলের মতো লাগে। আমার উপলব্ধি হয় নির্মল ওই নীল আকাশে নিরভিমান একটি মনোহারিণী ঝলমল করছে! যাকে সবাই দেখতে পায়, তামাম দুনিয়ায় কোনো না কোনো একজন তার উপস্থিতি টের পাচ্ছে সর্বদাই!
কাউকেই সে বঞ্চিত করে না, জড়, জীব, উদ্ভিদ নির্বিশেষে সবকিছুই আলো ঝলমলে হয় তার উষ্ণ কিরণে!..... কিন্তু এই গুণ প্রকৃতি মুহূর্ত পরেই আমার কাছে পুরনো ঠেকতে শুরু করে । মনে হয় এটা তো প্রতিদিনকার সেই চেনা-পরিচিত রূপই। এটাই তো তার প্রাত্যহিক রুটিন। এই চিত্র সাথে নিয়েই সে রোজ আবর্তিত হয়। তার এই রূপ চিত্র মহিমা সর্ব দিন আমি প্রত্যক্ষ করি। তবে কি আজও কোনো অভিনবত্ব তার মাঝে আমি পাব না! ......
তবু আমি আশার গুড়ে বালি দিই না, বরং
বাসনার গুড়ে চিনি ঢালার প্রত্যয় নিয়ে থাকি! আমি কী করব! আমার আশা প্রত্যাশাগুলো সব প্লাবন আকার ধারণ করে আছে! অনাকাঙ্ক্ষা, অনভিলাষ এসবই আমার কাছে তুচ্ছ। পুরোপুরি নিঃস্বার্থ এখনো হতে পারিনি। তবে অনভিপ্রেত কিছুর প্রত্যাশী নই আমি; তাই আশা-আকাঙ্ক্ষার চোরাবালিতে এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে.. আমার প্রত্যাশার শেকড় কেহ ওপড়াতে পারবে না। প্রতিনিয়ত আশার বীজ বুনে যাব। প্রকৃতির সমীপে এই ছড়ানো অভিলাষ আমার মজ্জাগত। যতদিন অস্তিত্ব স্থীর আছে, ততদিন আশা প্রত্যাশা আকাঙ্ক্ষা অভিলাষ আর এসবের প্রতি আমার অনুরাগ স্নেহ দয়া ভালবাসা নব উদ্যমে লহরি তুলবে..
এখন আমি নতুন প্রহরের প্রত্যাশায় অধীর থাকি।-অতঃপর.... দুপুরটা আসে খুবই গড়িমসি করে আর আলস্য ভাব নিয়ে। নিরন্তর চলবে এমন একটা ঘুম জড়ানো উন্মাদনা সওয়ার হয় আমার ওপর। প্রবৃত্তির এই বিক্ষোভ আমার চিত্তে অমৃততুল্য স্বাদ এনে দেয়। যদিও এই স্বাদ অমৃত নয় তবু হামেশাই এটাকে অমন করে ভাবি, এতে ক্ষণিকের জন্য অন্যরকম একটা স্বস্তি কাজ করে আমার ভেতর, সবকিছুকেই অমন করে ভাবি।
শান্ত নিভৃত এই অলস দুপুরে নিসর্গ যেন তার অলস বাহু মেলে ধরে । আমার ঘরের জানালা ডিঙিয়ে বাইরের অলস দুষ্টু বাতাসগুলো সব হু হু করে এসে ঢুকে! বাইরের আকাশটা ফকফকা ঝকঝকে পরিষ্কার, আকাশের গায়ে চলে ফেরে গুচ্ছ গুচ্ছ ধবল মেঘ, টুকরো টুকরো মেঘগুলো কী নিস্তেজ ভঙ্গিতে ভেসে বেড়ায়!
দ্বিপ্রহরের এই রূপদর্শন আনমনা করে দেয় মন, চৈতন্যে ঔদাসীন্যের উষ্ণতা ভর করে! মস্তিষ্কের কোষগুলো একে একে ঝিমিয়ে পড়ে। একটা সময় আর কিছু শুনতে পাই না, দেহ নিস্তেজ হয়ে আসে। আমার নীরবতার এই সময়টাতে কত কিছুই না ঘটে যায়! কেউ হয়তো এখনো প্রকৃতির এই রূপ দেখাতে ব্যস্ত, কেউ হয়তো বা আমার মতোই বিছানায় ছুড়ে দিয়েছে নিজেকে...
এমনি করে দিবসের এই স্তরটাও বিদায় নেয়; সেই পূর্ব রূপেই, তার কিছু অভিনব চমৎকার মসলা উপহার না দিয়েই!
আর আমি দিগন্তবিস্তৃত উদ্যম নিয়ে অভিনব কিছু একটা তালাশ করে ফিরি....
বিষয়: সাহিত্য
৭১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন