কারিগরী শিক্ষা এবং বেকারত্ব।

লিখেছেন লিখেছেন তানভীর তুর্য্য ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:১১:০০ রাত

বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি ও জাতীয় অভিশাপ। এ বেকারত্ব থেকে জন্ম নেয় হতাশা। আর হতাশা থেকে সৃষ্টি হয় ক্রোধ, ঘৃণা, অবহেলা, কাজে অনীহা, দাম্পত্য জীবনে কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, মাদকাসক্ত, হত্যা, আত্মহত্যা, গুম ও এসিড নিক্ষেপ, নারী নির্যাতন, দৃষ্টিভঙ্গির নেতিবাচক পরিবর্তন ইত্যাদি। এতে মানবিক গুণাবলী বিনষ্ট হয়। মানুষের আচরণ হয় হিংস্র বন্য পশু ও বিষাক্ত সাপের মতো যখন যাকে পায় তাকে দংশন করে। বেকারত্বকে পরিবেশ দূষণ ও দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। একজন বেকার মানুষ কখনও স্বাধীনচেতা হয় না, তার থাকে না আত্মসম্মানবোধ। অন্যের শ্রদ্ধা পাওয়া যেমন তার জন্য কঠিন তেমনি তার দেয়া শ্রদ্ধা, স্নেহ ও ভালবাসা মূল্যায়িত হয় না। পরিবার, সমাজ তথা দেশে তাদের অবস্থান আগাছা কিংবা বোঝার মতো। তবে সুযোগ ও সুবিধা মতো তারা রাজনৈতিক নেতা কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এইভাবে স্বাধীনতার ৪৬ বছরে পিতা-মাতা-নিজ সন্তান ৪৬টি প্রজন্মকে হতাশায় ফেলার খেসারত আমরা প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছি। অথচ এই তরুণদের এসএসসি পাশের পর ডিপ্লোমা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ করে দিতে পারলে নিজ পরিবার গ্রাম সমাজ জাতির নৈতিক স্থলন থেকে রক্ষা পেত। কর্মের মাধ্যমে স্বনির্ভর গ্রাম প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারতো। ডিপ্লোমা শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ যেকোনো দেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের বর্তমান সময়ে শুধু কায়িক শ্রমের মূল্য প্রায় নেই বললেই চলে। ন্যূনতম ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলেই শুধু কারো পক্ষে শ্রমবাজারের বর্তমান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব। আমাদের দুর্ভাগ্য, দীর্ঘদিন ধরে ডিপ্লোমা শিক্ষা উন্নয়নে রাষ্ট্রের সীমাহীন অবহেলাই আমরা দেখে এসেছি। ফলে আমাদের জনশক্তির প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষতা প্রায় শূন্যের কোটায়। আর জনশক্তি সম্পদ না হয়ে ক্রমেই বোঝার পরিণত হয়েছে।

প্রতিবছর প্রায় ১৪ লাখ ছেলে-মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এই বিপুল সংখ্যক তরুণদের ডিপ্লোমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যবস্থায় কোন সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেনি। তরুণদের ব্যাপকভাবে ডিপ্লোমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে ১০টি সরকারি/বেসরকারিভাবে কৃষি, ভেটেরিনারি, লেদার, পলিটেকনিক, টেক্সটাইল, মেডিক্যাল টেকনোলজি, নার্সিং, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মেডিকেল ও ডেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

রাবার, মোবাইল ব্যাংকিং, এয়ারহোস্টেজ, পর্যটন, সাংবাদিকতা, বিমান পরিচালনা, সাবমেরিন, মহাকাশযান, নিউক্লিয়ার ইত্যাদি বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্সসহ সকল পণ্য ও পেশায় কমপক্ষে ৫০০ (পাঁচশত) নতুন ডিপ্লোমা কোর্স চালু করতে হবে। ডিপ্লোমা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ ও ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে বিদেশীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

ভিলেজ ভিশন ২০৫০ অনুসারে প্রতিটি গ্রামে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী দক্ষজনবলের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে গড়ে নিম্নোক্ত হারে মোট জনশক্তির প্রয়োজন হবে। খাদ্য উৎপাদনে- ৫২, কৃষি ব্যবস্থাপনা- ৩২, প্রকৌশল উন্নয়ন- ৮৮, চিকিৎসা নিরাপত্তা- ১১২, যোগাযোগ ক্ষেত্রে- ৩২, শিক্ষা সম্ভাবনায়- ৭২, বস্ত্র খাতে- ২১, শিল্প খাতে- ১১০, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স- ২০, বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থায়- ৪০, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে- ৯০, ক্রীড়া সাফল্যে- ৩০০, জনগুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদে- ৫৫, অন্যান্য- ৫০, জননিরাপত্তায়- ৫০। মোট এক হাজার ১২৪ জন ডিপ্লোমা ডিগ্রি ধারীদের মেধা ও শ্রমে প্রতিটি গ্রাম খাদ্য, কৃষি, চিকিৎসা, যোগাযোগ, শিক্ষা, বস্ত্র, শিল্প, দুর্যোগ, বর্জ নিষ্কাশন, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, জননিরাপত্তায় মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে। প্রতিটি গ্রামে এক একটি আধুনিক উপশহরে পরিণত হবে। মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৫০-৬০ হাজার ডলারে উন্নতি ঘটবে। গড় আয়ু শত বছর অতিক্রম করে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র।

বিষয়: বিবিধ

৪৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File