**ঘটকালি**

লিখেছেন লিখেছেন চাঁদ রাত ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪:৫৮ রাত

আমি নসু মুন্সি আজকে ১৩ বছর ধইরা ঘটকালি করি। এই মেয়ের ছবিটা আরেকটু ফর্সা কইরা আর একটা শাড়ি পরাইয়া ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে দিয়ো।

বসে আছি বন্ধু হৃদয়ের দোকানে। সকাল থেকে তার দোকানে একটা কাস্টমারও নাকি আসেনি। দু'জন বসে বসে ছোট্ট মিনি বক্সে গান শুনছি। হঠাৎ কোথা থেকে দু'জন লোক আসে। একজন বলে, ভাই ছবি বের করা যাইব? হৃদয় বলে, জি যাবে। আমি চেয়ার থেকে উঠে বেঞ্চে গিয়ে বসে একজনকে চেয়ারে বসতে বললাম। উনারা বললেন আপনি চেয়ারেই বসুন, আমরা দু'জন বেঞ্চে বসছি। হৃদয় ছবি ফটোশপ ওপেন করে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা দু'জন বেঞ্চে বসে কথোপকথন শুরু করে। একজন হালকা দাড়িওয়ালা, মাথায় টুপি পরা। উনি উনার সঙ্গে থাকা অন্য লোকটাকে বলতেছে, 'আমি নসু মুন্সি আজকে ১৩ বছর ধইরা ঘটকালি করি। যেইভাবে আপনি মেয়ে চাইবেন সেইভাবেই ব্যবস্থা করে দিমু'- বলেই হৃদয়কে বলতেছে, এই মেয়ের ছবিটা আরেকটু ফর্সা কইরা আর একটা শাড়ি পরাইয়া ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে দিয়ো।

ঘটকের পাশের জন ঘটককে জিজ্ঞেস করল, এই পাত্রী কার জন্য? ঘটক সাহেব উত্তর দিলেন, প্রবাসী এক ছেলের জন্য। মেলা সম্পত্তির মালিক ছেলেটা। বিয়েটা নামাইতেছি খুব কষ্টে। ছেলেটি অবশ্য একটু কালো আর মেয়েটা দেখছেন কত ফর্সা? শুধু টাকার ব্যাপার-স্যাপার।

আমি হাঁ করে তাদের কথাবার্তা শুনতেছি। ঘটক উনাকে আবার বলতে শুরু করে, তা আপনার ছেলের জন্য যে পাত্রী দেখলাম তা পছন্দ হইছে তো?

'জি হইছে!'

'এখন যৌতুক হিসেবে কী চান সেইটা বলেন।'

তখন তিনি বলেন, 'আমার যৌতুক কিছুই লাগবে না। শুধু ছেলেটাকে একটা গাড়ি দিলেই হবে।'

ঘটক সাহেব উত্তর দিলেন, সমস্যা নাই। গাড়ি লইয়া দিতে পারমু। তবে আমারে ১০ হাজার টাকা বকশিশ দিতে হইব। আর যদি গাড়ি ছাড়া টাকা নেন তাহলে পাঁচ লাখ টাকা লইয়া দিতে পারমু। তবে শর্ত হইল, প্রতি হাজারে আমারে ১০০ টাকা দিতে হইব। ঘটকের কথা শোনে উনি তখন কাশতে কাশতে বলেন, আপনি তো মিয়া আজব এক ঘটক। এটা কেমন শর্ত? যান মিয়া বিয়াই করামু না- এই বলে তিনি চলে যাচ্ছেন। ঘটক পেছন থেকে ডাকতেছেন, ভাই শুনে যান। হাজারে ৫০ টাকা দিয়েন।

এই শুনে আমার মাথাও ভাজ পড়ে গেল। শালা বাবু আপন এবং খালাতো,মামাতো সবাই মিলে ৬/৭ জন আর শালী আছে এক হালি। ভাবছি পেশাটা কেবলই মন্ধ না। বউকে বিষয়টা জানাতে ফোন করলাম।সে বললঃ-ফোন কি তুমি আমার কাছে করলে না অন্য কারো কাছে?

গলার আওয়াজ শুনেই বুঝলাম মাথা খুব গরম আছে। যাক্-কথা হলো দেশ

খুব উন্নত হইছে ডিজিটাল হয়েছে। ঘটকেরাও এখন সাথে এসিষ্টেন(সেক্রেটারী) রাখে। তা ছাড়া সাইকেল রিক্সা তারা অনেক আগেই উঠিয়ে দিয়েছে। এখন প্রাইভেট গাড়ীতে চলে। এরপর মোবাইল হাতে একটা পকেটে তিনটা। ভাব সাব দেখে মনে হলো এতো ঘটক নয়, যেন দেশের প্রধান মন্ত্রী। কেন যে এই পেশায় মেড়াম চেইত্যা উটলো বুঝলাম না।

বিষয়: বিবিধ

৪৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File