কোন ধরনের বিয়ে ভালো, প্রেমের বিয়ে না পারিবারিক?
লিখেছেন লিখেছেন চাঁদ রাত ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:৪৯:৪১ বিকাল
প্রেমের বিয়ে ভালো নাকি পারিবারিক বিয়ে তা নিয়ে অনেকেরই দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে কোন ধরনের বিয়ে ভালো, প্রেমের বিয়ে না পারিবারিক? এই প্রশ্নটা শুধু আমার না, বরং আরো অনেকেরই। বেশীর ভাগ মানুষ মনে করে যে প্রেম করে বিয়ে করাটা নিরাপদ। তাতে জেনে, শুনে, বুঝে একজনকে বিয়ে করা যায়। কিন্তু লাখ টাকা দামের প্রশ্ন হলো তাহলে প্রেমের বিয়েতে বিচ্ছেদের হার পারিবারিক বিয়ের দশগুন বেশী কেন?
* আসুন প্রথমে জেনে নিই বিয়ে কি?
বিয়ে হচ্ছে একটি সামাজিক প্রবিত্র বন্ধন। আর সে বন্ধন থেকেই শুরু হয় মানব জীবনের শুভ সূচনা।
* প্রেমের বিয়ে আর পারিবারিক বিয়ের মাঝে প্রর্থক্য-----
পারিবারিক বিয়ে- নিজে, মা-বাবা, ভাই-বোন সবার পছন্দ ও সম্মতিতে বিয়ে।
প্রেমের বিয়ে- একদিন দেখা, ভালো লাগা, ভালো বাসা বা প্রেম,তারপর পরিবারের অ-মতে বিয়ে। এক সময় মেয়েটি খালি হাতে এক কাপড়ে শ্বশুর বাড়ী উঠা।
* এক নজর দেখা যাক্ প্রেমের বিয়ের কুপল এবং পারিবারিক বিয়ে সুফল।
এখন যে বয়সে ছেলে মেয়েরা প্রেমে পড়ে,বা জীবন সঙ্গী নির্বাচন করতে চায়, সে বয়সে তাদের থাকে বাঁদ ভাঙ্গা আবেগ। পৃথিবীর সবকিছু তারা রঙ্গীন ভাবে। যার কারণে সঙ্গী-সঙ্গিনী নির্বাচনে তারা বহু ক্ষেত্রেই ভূল করে বসে। এজন্য দেখা যায় প্রেমের বিয়েতে ভাঙনের ঘটনাও অনেক। তারা যদি তাদের জীবন সঙ্গী নির্বচনের দায়িত্ব তাদের অভিভাবক কে দিত, আথবা সঙ্গী নির্বাচনের আগে অন্ততপক্ষে অভিভাবকের পরামর্শ নিত, তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আরো সুন্দর হতো।
বাঁধ ভাঙা আবেগের বয়সে একটা তরুণ বা তরুণী যে কাউকে যে কোন কারনে ভাল লেগে যেতে পারে। কেউ হতো রুপ দেখে, কেউ পোষাক দেখে, কেউ ভালো ব্যবহার দেখে, কেউ হয়তো স্মার্টনেস দেখে, কেউ হাসি দেখে, কেউ গান শুনে ইত্যাদি কারণে একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতা অন্যটা যাকে সারা জীবনের জন্য সঙ্গী নির্বাচন করবে, তার এই গুণগুলো কোন কাজেই লাগবে না।
যেগুলি সত্যিকারে পরবর্তী জীবনে কাজে লাগবে, সেটা হল তার, শিক্ষা, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, রুচি, আত্মসম্মানবোধ, আপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ইত্যদি। এই সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ঐ বয়সে কেউই খেয়াল করেনা বা খেয়ান করার মত যথেষ্ট জ্ঞান থাকে না। এক্ষেত্রে অভিভাবকের বিকল্প নেই। অভিভাবকেরা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে খুব সহজেই এই জিনিষগুলো যাচাই করতে পারেন।
১) অনেকের মতে প্রেমের বিয়ে অনেক ভালো-
কারণ দুজনের মধ্যে ভালোবাসা থাকে, যা সবকিছু সঠিক করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তা শুধুমাত্র দুজন মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না এবং শুধুই ভালোবাসা এখানে কাজ করে না। বিয়ে দুটি পরিবারের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং বিয়ের সম্পর্কের সফলতা শুধু ভালোবাসা নয় পারস্পারিক সমঝোতা, মানিয়ে নেয়ার মনোভাব, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান এই সবকিছুর উপরে নির্ভর করে একটি সম্পর্ক। আর এই সকল দিক বিবেচনা করে অনেক ক্ষেত্রেই প্রেমের বিয়েকে অনেকে সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করেন না। অনেকের মতে পারিবারিক বিয়েই সবদিক থেকে ভালো।
২) সম্মতি ছাড়া বিয়ে অশান্তির কারন-
রাসুল(সঃ)বলেছেন-অভিবাকের সম্মতি ছাড়া বিয়ে হয় না। আর সে খানে মা-বাবা বড় ভাই এর আনুমতি ছাড়া বিয়ে মানে আল্লাহ এবং রাসুল(সঃ) সরাসরি অমান্য করা। সুতরাং তাদের দাম্পত্য জীবনের শুরুটা হলো নাজায়েজ কাজের মাধ্যেমে। সে জন্যে প্রেমের বিয়েতে থাকে না আল্লাহর রমত, বরকত এবং দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা আর মহব্বত।
৩) সামাজিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে পারিবারিক বিয়ে-
যখন পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তখন দুই পরিবারের মানুষজন শুধু পাত্র বা পাত্রী দেখেন না। পুরো পরিবার এবং পারিবারিক সকল কিছু দেখেই বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এতে করে দুই পরিবারের জীবনযাপনের মান, একইভাবে বেড়ে উঠা পারিবারিক জীবনচর্চা, পারিবারিক স্ট্যাটাস, মূল্যবোধ এবং সংস্কার ও সংস্কৃতির অনেক মিল থাকে। ফলে পাত্র-পাত্রী এবং দুটি পরিবারের একে অপরের সাথে মানিয়ে নিতে খুব বেশি কষ্ট হয় না। সম্পর্ক গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় প্রেমের বিয়ের চাইতেও।
৪) পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও সম্মান বেশি থাকে
যখন দুটি পরিবার মিলে একটি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তখন স্বাভাবিকভাবেই পাত্র-পাত্রী একে অপরের প্রতি নিজেদের শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেন। কারণ এখানে শুধু দুজনের মান সম্মান নয় দুটি পরিবারের মান সম্মান জড়িত থাকে। অনেক প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখা গেলেও যখন পারিবারিক নানা অসামঞ্জস্য সামনে পড়ে তখন দুজনের মনোমালিন্য অনেকাংশেই দুজনের সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দেয় ও সম্পর্কে চির বা পাটল ধরতে থাকে।
৫) পারিবারিক বন্ধন মজবুত হয় পারিবারিক বিয়েতে -
পরিবারের সম্মতি এবং পারিবারিক ভাবে বিয়ে হলে পরিবারের সদস্যগণ খুব স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের নতুন সদস্যকে মেনে নেন এবং মানিয়ে নিতে সাহায্যও করেন। এতে সকলের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে। প্রেমের বিয়েতে মেনে নিলেও সম্মতি দেয়ার পরও ঝামেলা কোনো না কোনোভাবে তৈরি হয়ে যেতে পারে। যদিও সকলে একইরকম ভাবেন না তারপরও কিছু সমস্যা থেকে যায়।
৬) সন্তানেরাও একদিন সে পথে হাটে-
এটাও প্রমানিত সত্য, বাবা-মা যে পথে হাটে সন্তান ও একদিন সে পথে হাটে। বড় হয়ে একদিন সন্তানেরা তাদের কর্মে কথা শুলে ও জেনে পেলে এবং তারাও সে পথে হাটা শুরু করে এবং পালিয়ে বিয়ে করে।
৭) প্রেমের বিয়েতে শুধু সুন্দর্যটা দেখে গুনটা দেখা হয় না-
প্রেমের বিয়েতে ছেলেরা মেয়ের শিক্ষা, গুন, যোগ্যতা কিছুই দেখে না। শুধু দেখে সুন্দর্য আর মেয়ের ফিগার কেমন? আমাদের সমাজে মেয়ের চোখ, নাক, দাঁত দেখে ঠিক ই কিন্তু এটাও ঠিক যে সেই সাথে মেয়ের গুন, শিক্ষা, পরিবার দেখেও বিয়ে হয়।
পারিবারিক বিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের সম্মান, সামাজিক, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
৮) আমাদের সমাজে বা পরিবারে প্রেমের বিয়ে সহেজে মেনে নিতে চায় না- সবাই কানা চোখে দেখ। সবাই শুধু দুর দুর আর অবহেলা করে। পারিবারিক বিয়েতে মেয়ে এবং শ্বশুর বাড়ীর জামাই যে মার্যাদটা পায় প্রেমর বিয়েতে তা হয় না। না পায় মেয় শ্বশুরালয়ে মার্যাদা আর ছেলে না পায় শ্বশুর বাড়ীতে জামায়ের মার্যাদা। কিন্তু পারিবারিক বিয়েতে তারা পস্পরের ভুল ত্রুটি গুলোকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারে। কিছু সমস্যা তাঁরা পারিবারিকভাবে আলোচনা করে মিটিয়ে ফেলেন বা ফেলার চেষ্টা করেন।
৯) প্রেমের বিয়েতে ছেলে এবং মেয়ের প্রায় সমবয়সী হয়-
তাদের মানসিক বয়স সমান হয়না। তাই অনেক ক্ষেতে দেখা যায় ছেলেটি বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। আর প্রেমের বিয়েতে কিছু অপূর্ণতা থাকে। ছেলেমেয়ে দুজনেরই পারিবারিক সমস্যাগুলোকে জানা হয় না। নিজেদের বোঝাপড়াই যেন শেষ কথা। সামাজিকতার ধার ধারে না।
তাই যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরা পিছপা হন না। দায়িত্ববোধ তাঁদের মধ্যে ততটা গড়ে ওঠে না।
১০) প্রেমের বিয়েতে যৌনতা বড় ভূমিকা রাখে। দেখা যায় তারা এই প্রযোজন পূরনে দ্রুত বিয়ে করে ফেলে যখন তারা সংসার করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
১১) পারিবারিক সম্বন্ধের বিয়েতে মুরব্বিদের খোঁজ খবর নেওয়ার-
যে একটা সুফল পাওয়া যায়। প্রেমের বিয়েতে সে সুযোগ থাকে না। তাছাড়া অ্যারেঞ্জড বিয়েতে পাড়া–প্রতিবেশী, অফিস সহকর্মী—কোনো কিছু বাদ যায় না।
১২) প্রেমের বিয়েতে মা-বাবার মনে কষ্ট-
ছেলে/মেয়ে বড় হলে, মা-বাবার আশ্রস্থল একমাত্র সন্তান। সন্তানেরাই মা-বাবার মুখ উজ্জল করে আবার কোন কোন সময় মাটির সাথে মিটিয়ে দেয়। আনেক বাবা-মায়ের আশা থাকে ছেলে মেয়েকে তাদের পছন্দের পাত্রের সাথে বিয়ে দিবে। কিন্তু সেখানে দেখা গেছে মা-বাবার অ-মতেই তাদের তিলে তিলে গড়ে উঠা স্বপ্ন ভেঙে হঠাৎ করে কোথাকার মেয়েকে ঘরে তুলে নিয়ে এসেছে। তখন তাদের মনে প্রচন্ড় আগাত লাগে। অনেক সময় মা-বাবার সে আঘাতেই তাদের দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে তাদের অশান্তির ঝড়।
বুঝাগেল প্রেমের বিয়ের চেয়ে অভিভাবকের পছন্দের বিয়েই অনেক বেশি
সুখের। আর যদি সত্যিাকরের প্রেমকেই প্রাধান্য দেন,তবে অন্ততপক্ষে আপনার অভিভাবকের কাছ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব,তাকে যাচাই করিয়ে নিন। একদিন না একদিন আপনাকে অভিভাবকের মুখমুখি হতেই হব। সুতরাং প্রেমে পড়লে যত তাড়াতড়ি সম্ভব আপনার মা-বাবা কে খুলে বলুন। তাদের পরামর্শ নিন। তাদের চেয়ে বড় শুভাকাঙ্খী কোথাও পাবেন না।
আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য পারিবারিক বিয়ের সাফল্যের রহস্য কারন তার মূলেই আছে প্রেমের বিয়ের ব্যর্থতার কারন।
পরিশষে এই কথটি বলব-
বিয়ে মানে শুধু স্বামী-স্ত্রীর দু-জনের মাঝে সম্পর্ক নয়-দুটি পরিবারের মাঝেও সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝমেলা হলে পরিবারের সবার উচিৎ এগিয়ে আসা, তবে দুজনকে এক করতে, আলাদা করতে নয়।
নুরুল ইসলাম/ ব্লগার(চাঁদ রাত)
বিষয়: বিবিধ
১১৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন