"আশুরা" শোক দিবসও না-আনন্দের দিনও না।
লিখেছেন লিখেছেন চাঁদ রাত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৪:৪৬:১১ রাত
আশুরা শোকের দিবস না,আনন্দের দিনও না। প্রকৃত অর্থে আশুরা শুকরিয়ার দিন বা আল্লাহর প্রশংসার দিন। আমরা ছোট থেকেই শুনে আসছি ১০এ মহাররম আশুরা বা কারবালার দিন। কিছু অজ্ঞ মুসলিম ও সার্থান্নাসি শিয়া গুষ্ঠি দৈর্ঘদিন থেকে এর ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে মুসলমাদের ভিভ্রান্ত করে আসছে।
তাই অতিগুরুত্বপূর্ণ এই মাসের ১০ তারিখের সঠিক ইতিহাস প্রতিটি মুসলমানের জেনে রাখা উচিত। আসুন আমরা আশুরার দিনে মূলত কি কি ঘটেছিলো তা সম্পর্কে অবগত হই। আপনি জানেন কি, আল্লাহ তায়ালা এই সুন্দর পৃথিবী কবে বানিয়েছেন? এই মহররম মাসের ১০ তারিখে! বাবা-আদম আ. কেও সৃষ্টি করেছেন বরকতময় আশুরায়! তাদের জান্নাত উপহার দিলেন এই দিনে। তারপর? মা হাওয়া ও বাবা আদমের গন্ধম খেলেন! দীর্ঘ বছর গন্ধম খাওয়ার দায়ে কাঁদছিলেন আমাদের আদি মা-বাবা! গন্ধম খাওয়ার দায় থেকে এই আশুরার দিনেই মুক্তি পেলেন তারা। হজরত ইব্রাহিমও আ. নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে রেহায় পান আজকের ১০ তারিখে। কুষ্ঠরোগ থেকে হজরত আইয়ুব আ.-এর সুস্থ হয়ে ওঠা এবং হজরত ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি পাওয়ার স্মরনীয় দিনটিও মহররমের দশ তারিখ। হজরত নুহ আ. এর কিস্তিও তীরে ভিড়ে এই দিনে। মহাপ্লাবনে আক্রান্ত হজরত নুহের অনুসারীরা এই দিনে মাটির স্পর্শ পায়। আশুরার এই দিনে রাজত্ব ফিরে পায় হজরত সুলাইমান আ.। হজরত মুসা আ. কে ধাওয়া করতে আসা ফেরাউন বাহিনী এই দিনেই সাগরে ডুবে মারা যায়।
আসল ঘটনা হচ্ছে এখানে--- ফেরাউন জলুম নির্যাতনের কবল থেকে তার জাতি যখন রক্ষাপেল তার শুকরিয়া স্বরুপ তার বংশদরেরা তখন থেকে এইদেনে রোজা রেখে আসছেন।
এবং পরবর্তিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দিনকে যেভাবে উদযাপন করেছেন এবং উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদেরও ঠিক সেভাবেই উদযাপন করতে হবে।
*আশুরার দিন রোজা রাখা খুবই ফজিলতের। তার আগে অথবা পরে আরেকটি রোজা সংযোগ করতে হবে। যাতে ইহুদিদের রোজা প্রথা থেকে মুসলমানদের আশুরা পালন ভিন্ন হয়। আল্লাহর রাসূল (সা) সবসময় বিধর্মীদের অনুকরণ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।
আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল কিছু ইহুদিকে দেখলেন আশুরা দিবসে তারা রোজা পালন করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কিসের রোজা? তারা বলল, এদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে সমুদ্রে ডুবে মরার হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। ফেরাউনকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তাই মুসা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এদিন রোজা পালন করেছিলেন। মহানবী (সা.) বললেন, আমি মুসার অনুসরণের বেশি উপযুক্ত এবং এ দিবসের রোজার বেশি হকদার। তিনি তার সাহাবাদের রোজা পালনের নির্দেশ দান করেন। -মুসনাদে আহমদ
আশুরার দিন রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন- ‘আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এক বছর আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ -মুসনাদে আহমদ
*আমাদের করনিয়- আশুরার দিন হজরত মুসা (আ.)-এর বিজয়ের ইতিহাস স্মরণ করতে হবে। তিনি যেভাবে আল্লাহর পথে অবিচল থেকে ফেরাউনের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন, ঠিক তেমনিভাবে আমাদেরও বাতিলের পথকে রুদ্ধ করে ইসলামের আলোয় আলোকিত সমাজ গঠনের প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতা গড়তে হবে।
*আশুরার বর্জনীয় বিষয়:-
আশুরার দিন ক্রন্দন-বিলাপ করা, বুকে চাপড়ানো, পিঠে চাবুক দিয়ে আঘাত করা, নিজেকে রক্তাক্ত করা ও শোক মিছিল করা কোনোটিই শরিয়তসম্মত কাজ নয়। কোরআন-হাদিসে এর কোনো ভিত্তি নেই। আশুরার দিন ভালো খাবারের আয়োজন করতে হবে, মুরগি জবাই করতে হবে- এমন ধারণা ও কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। ‘এদিন ভালো খেলে সারা বছর ভালো খাওয়া যাবে’-এ জাতীয় কথিত হাদিস শোনা গেলেও মূলত এ ধরনের কোনো বিশুদ্ধ হাদিস পাওয়া যায় না।
অতএব আশুরার দিন শোক, মাতম না করে এখান থেকে কী শিক্ষা নেয়া যায় সে চেষ্টাই করা উচিত। আমাদের আরও একটি কথা মনে রাখতে হবে, আশুরা মানে কারবালার ঘটনা নয়; এদিন ঐতিহাসিক অনেক ঘটনা ঘটেছে। কারবালার ঘটনা ওই ঘটনাগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক ঘটনা। যার মধ্যে মুসলমানের অনেক শিক্ষার বিষয় আছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দিন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৫৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন