*আলেম ওলামাদের ঐক্য-সময়ের অপরিহার্য দাবী*

লিখেছেন লিখেছেন চাঁদ রাত ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৫:১৩:০৩ বিকাল

ঐক্য ও সংহতি মুসলিম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আল্লাহতায়ালা ও শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ঈমানের অনিবার্য দাবি হচ্ছে- ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপন। তাওহিদের পরে মুমিনদেরকে যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে তা হলো- ঐক্য।

﴿وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّـهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾

"এবং তোমরা আল্লাহ্‌র রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধার কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ স্মরণ কর, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ্‌ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাতে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার।” (ইমরান:১০৩)

তোমরা (আল্লাহ্‌র) দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা কর এবং দ্বীনের ব্যাপারে পরস্পর বিভেদে লিপ্ত হয়ো না। (শুরা: ১৩)

সকল মুসলমান এক আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাসী, মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতের প্রতি সবাই আস্থাশীল, মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সকলেরই পবিত্র কিতাব এবং কাবার দিকে মুখ করে তারা সবাই নামায আদায় করে। সবাই রমজান মাসে রোযা রাখেন, একই পদ্ধতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, ছেলেমেয়েদের একই শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলে এবং একই পদ্ধতিতে মৃতের দাফন কাফন সস্পন্ন করে। এই মৌলিক বিষয়ের দিক দিয়ে সুন্দর ঐকমত্য রয়েছে।

জুরে আমীন বলা,

রফা ইয়াদাইন,

বুকে হাত বাদ।

কিন্তু এই সামান্য বিষয় নিয়ে নিয়ে আমরা মতবিরোধ করছি।

কারন-* আমাদের জ্ঞনের অভাব।

* পরস্পর ভূল বুঝাবুঝি।

* নিজের মতকে প্রধান্য দেয়া। এবং

* পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোদ না থাকার কারনে বিষেশ করে এই সমস্যাগুলি

হচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস।

ইতিহাসের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে এ কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে,

মুসলমান কখনো সফলকাম হতে পারেনি; যতক্ষণ না তাদের ঐক্য ও সংহতির সুদৃঢ় বন্ধন স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু যখন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজস্ব মত-পথ ও চিন্তাধারায় খেয়ালি বিচরণে গা ভাসিয়ে নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট মতপার্থক্য বিশাল আকারে রূপ নেবে; তখন সফলতার আর কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসবে না। বর্তমানে অনৈক্য ও অসংহতির মারাত্তক ব্যাধিতে আলেমরা আক্রান্ত।

এ অবস্থা হল কেন?

এর একমাত্র কারণ মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে পড়েছে অনৈক্যের বীজ। প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব মতের পূজায় লিপ্ত। নিজের গোত্র বা দলনেতার কথাই তিল তাবিজ করে গলায় ধারণ করে আছে। ফলে তারা দিন কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থায়। শুধু তাই নয় সব সফলতা পর্যবসিত হচ্ছে ব্যর্থতায়। পারস্পরিক অনৈক্য ও সংঘাত কোনো দিনও ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জন্য সহায়ক হতে পারে না। বর্তমান মুসলমানদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে তারা আজ বিচ্ছিন্ন, গঠনমূলক কাজের পরিবর্তে ধ্বংসাত্তক কাজে লিপ্ত। গড়ার চেয়ে ভাঙার ক্ষেত্রে বেশি উদ্যোগী। আফসোস ও আশ্চর্যের বিষয় আমরা ভাঙা ও নষ্টের দিকে এগোচ্ছি; অথচ স্থাপন ও গড়ার অলীক স্বপ্ন দেখছি।

যখন শত্র“রা সবাই ঐক্যবদ্ধ : চালাচ্ছে ইসলাম নির্মূলের সম্মিলিত প্রয়াস; বাতিলচক্র নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে এগোচ্ছে দৃঢ়গতিতে, তখন মুসলমান ভিবিন্ন দন্ধ কলহে লিপ্ত। হালকা এবং সাধারণ জিনিসকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে লিপ্ত। আল্লাহ মাফ করুন।

বর্তমানে রাজনৈতিক নেতাদের মাঝেও এত মতবিরোধ নেই, যতটা আছে ওলামায়ে কেরামের মাঝে। প্রত্যেকেই নিজস্ব পরিমণ্ডলে মসজিদ বানিয়ে বসে আছে। আহলে হাদীস মসজিদ, সুন্নি মসজিদ,তাবলীহ মসজিদ।

ধর্মপ্রাণ যুব সমাজের বন্ধুরা। বানের পানি দরজায় এসে চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এ সময়ও যদি আমরা নিজস্ব লেবাস পরে চলি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। ‘আল উলামাউ ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া’ এ বাণীর মাঝে কিছু দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। রাসূলে (সা.) ওলামায়ে কেরামকে আম্বিয়ায়ে কেরামের ওয়ারিশ সাব্যস্ত করেছেন। দেশ ও জাতির এমন এক চরম ক্লান্তিলগ্নে কোনো ঈমানদার দেশপ্রেমিক কখনও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না। তাই নিছক দ্বীন ও মিল্লাতের হেফাজতের তাগিদে সম্মিলিতভাবে গোটা জাতি আলেম ওলামা ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।

আমাদের দেশে অধিকাংশ ইসলামী দল সহীহ নিয়ত ও নেক উদ্দেশ্য নিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, এতে কোন সন্দেহ নাই। হয়তোবা পদ্ধতিগত দিক দিয়ে একটির সাথে অন্যটির কিছুটা পার্থক্য থাকার কারণে কারো কাছে কারোর পদ্ধতিগত বিষয়ে শুদ্ধ - অশুদ্ধের প্রশ্ন রয়েছে যা খুবিই স্বাভাবিক।

এদিকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিগত পার্থক্য থাকার কারণে আমরা কাউকে-

* ইহুদীর দালাল, *আমেরিকার দালাল *ভারতের দালাল *কাদিয়ানীর দালাল *বা ওয়াহাবী * লা-মাজহাবী,

*মাজারী এমনকি *কাফের *ফাসেক বলে ফতোয়া দিতে কার্পণ্য করি না।

আর একদল সহীই আকিদার দাবি করছি। আমার কাছে মনে হয় এটি একটি কাদিয়ানিদের নবুয়তী দাবির মতই। আপনার কি করে বুঝলেন আপনাদেরটা সঠিক আর সবগুলি ভ্রান্ত?? খাঁটি মধু শুধু আপনার দোকানেই পাওয়া যায়। অন্যদের কাছে নেই।

বাস্তবতা হলো একটি ইসলামী দলের সাথে অন্য ইসলামী দলের মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক তাদের দ্বারা ইসলামের খেদমত, দ্বীন প্রতিষ্ঠার খেদমত কিন্তু খাঁটো করে দেখলে চলবে না। অন্যেকে অবমূল্যায়ন তাদের খেদমত খাঁটো দেখার করনেই সে দিন ভোলায় মসজিদ ভাঙ্গার মত দুর্ঘটনা ঘটেছে। মানলাম তারা শেরেক বেদায়াত করছে। সত্যিই যদি আপনারা (আহলে হাদীস)সহীই আকিদার দাবিদার হয়ে থাকেন তা হলে তাদেরকে আন্তরিকতা নেক নিয়তে শত উদ্দেশ্যে বুঝানো উচিৎ ছিল। গতদিন ‍‍মতিউর রহমান মাদানীর ইউটিউবে একটি আলোচনা দেখছিলাম। উনি আহব্বান করছে-সাবাইকে এবং সরকারকে ঐ মসজিদ রক্ষার্থে এগিয়ে আসার জন্য। আমি উনাকে ব্যক্তিগাত ভাবে ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাই। যারা মসজিদে ভেঙ্গেছে তাদেরকে আমি ঘৃনা করি এবং তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্তা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আবেদন করছি।

তবে একটা কথা না বললেই নয়!

মসজিদ ভাঙ্গার ক্ষেত্রটা প্রথমে আপনাই তৈরী করেছেন। বাংলাদেশে মসজিদ ভাঙ্গা, কুরআন হাদীস পোড়ানো, আলেম হত্যা করা। আলেমদের উপর জেল, যুলম, অত্যাচান নতুন কিছু নয়। তখন কেন আপনারা চুপ করে ছিলেন কথা বলেননি???????

আমি বলবোঃ-একটি পরিপূর্ণ ইসলামী বিপ্লব রচনার জন্য যেমনি প্রয়োজন একটি প্রশিক্ষিত জনশক্তির তেমনি প্রয়োজন দেশের সকল ইসলামী দলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমরা কিন্তু আমাদের নিজস্ব চিন্তাধারা লালন করে আমাদের যার যার তরিকা ঠিক রেখে বৃহত্তর কল্যাণে আমাদের সবার মূল টার্গেট ইসলামী রাষ্ট্র বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারতাম।কিন্তু কোথায় যেন একটা বাধা,আমাদেরকে এক হতে দিচ্ছেনা।

এই সহজ দৃষ্টিভঙ্গি,সরল কনসেপ্ট আমরা কেনো যেনো বুঝতে চাইনা।

আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই সহজ বিষয়টা যত দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপলব্ধি করে উদার মন নিয়ে অপর ইসলামী দলের দিকে দু-হাত বাড়িয়ে দিতে পারবো তত তাড়াতাড়ি দেশ ও জাতীর কল্যাণ সাধিত হবে।

ভৌগোলিক অবস্থান এবং ৯১ ভাগ মুসলমানের এই দেশ ইসলামী ধারার রাজনীতি জাগরণের উর্বর ভূমি। ইঙ্গ-মার্কিন চানক্যনীতি ও হিল্লি-দিল্লির সাংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে এদেশে ইসলামী রাজনীতির জাগরণ ঠেকানোর চেষ্টা চলছে অনেকদিন থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় ইসলামী ধারার দলগুলোর বিরুদ্ধে অব্যাহত বিষোদ্গার এবং ইসলামী ধারার রাজনীতির সঙ্গে ‘ধর্মের ব্যবহার’ এবং 'জংগীবাদের ব্যবহার' একাকার করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নানা পন্থায় আলেম-ওলামাদের ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা, ঐক্যের চেষ্টা ভন্ডুল এবং দেশের মানুষকে ইসলামী শিক্ষায় নিরুৎসাহী করতে মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ শব্দগুলো দেশের ইসলামবিদ্বেষীরা যেন মাওকা হিসেবে পেয়ে গেছে।

আজ ইসলামের এই অবস্থার জন্য আমরা নিজেরাই কম বেশী দায়ী। ইসলাম কে ধ্বংশ করার জন্য কোন অস্র বা ইহুদী খৃষ্টান বি-ধর্মীর দরকার হবে না। আলেম ওলাদের পরস্পর মত প্রার্থক্যই এর জন্য যথেষ্ট। বাতিলরা এদেশে যতনা বেশি ইসলামের ক্ষতি করেছে তার চাইতে কম ক্ষতি করিনাই আমরা যারা ইসলাম বুঝেছি, অসংখ্যবার আমরা বাতিলের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছি এবং দিচ্ছি। আমাদের কাঁদে বন্দুক রেখে ওরা তাদের স্বার্থ হাসিল করছে আমরা বসে বসে ফতোয়ার পাতা উল্টাচ্ছি আর মুখোশ উম্মোচন করে যাচ্ছি। নিতান্তই ব্যক্তিস্বার্থে আজ আমরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছি।

মুসলমানের দেশে ইসলাম বিদ্বেষীরা বুক ফুলিয়ে আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, রাষ্টীয় যন্ত্রের সাহায্যে কোরাআনের খাদেমদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, আলেমদেরকে বিচারিক কায়দায় ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে অথচ ইসলামী দলগুলোর কেউ কেউ এ বিষয়ে টু শব্দ করছেননা, ঘুমিয়ে রয়েছেন।

ইসলামী ধারার দলগুলোর নেতা ও আলেম-ওলামাদের এ বিষয়টি ভাবা এখন সময়ের দাবী। কারণ বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি এবং তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগে দেশের ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামী ধারার রাজনীতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, আর ইসলামী দলগুলোর নেতারা নিজেরাই কামড়াকামড়ি করে নিজেদের শক্তি ক্ষয় করছে। যেটা সর্বশেষ ছাতকে কওমিপন্তি আর ফুলতলীপীড়ের অনুসারীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহতের ঘটনা।

ঐক্যের মাধ্যমে উন্নতি যেমন আসে তেমন আসে বিজয়। অন্যথায় অনৈক্যের মাধ্যমে হানাহানি আর পরাজয় নেমে আসে।

আজকে বিশ্বের মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ যদি আমরা অনুসন্ধান করি তাহলে আমরা দেখতে পাব, যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোত্রের সংঘাত নিরসন কল্পে আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা)গোত্র, বর্ণ, বংশ, আভিজাত্য প্রথা নির্মূল করে বৃহত্তর উম্মাহ গঠন করেছিলেন, দেয়ালে যেমন করে কালে কালে শেওলা পড়ে আস্তরণ ঢেকে ফেলে আমরা মুসলিমরাও মানব সৃষ্ট মতবাদ ক্ষুদ্র ফেরকাবাজীর কারণে উম্মাহর সেই চেতনা থেকে হাজার মাইল দূরে চলে এসেছি। আমরা আজ নানা ফেরকা ,নানা মাযহাবে, দল উপদলে বিভক্ত হয়ে এক জন অন্য জনকে ধ্বংস করতে মেতে উঠেছি। আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ইসলাম অরক্ষিত, ভিনদেশীদের চক্রান্তে ইসলামী শিক্ষা আজ চরম হুমকীর সম্মুখীন। শত অনৈক্যের মধ্যে দিয়েই ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। আমাদেরকে “যত মত তত পথ” “যার ব্যাখ্যা তার দায়”এই নীতিকে সামনে রেখে ঐক্যের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের নিজ কর্মের দায় আল্লাহর কাছে নিজেকে দিতে হবে, তাই আপনার দায় যেমন আমার উপর বর্তাবে না তেমনি আমার দায় আপনার উপর বর্তাবে না। আমাদের "ফেরকাগত বিবাদ" এই পয়েন্টে লাগাম দিয়ে সমস্ত বিচারের ভার মহান রবের হাতে সঁপে দিতে হবে। আমাদেরকে এখোন আর আমার মাযহাব আমার আকীদা ঠিক আপনারটি ভুল বলে নিজেদের মাঝে মাযহাব এবং ফেরকাগত দ্বন্দ রাখলে চলবেনা। যার যার ভুলের জবাব আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে শুধু "লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা)"এই মন্ত্রের মাধ্যমে বৃহত্তর ঐক্যে সৃষ্টি করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের প্রচলিত ইসলামী দলের মধ্যে একটি বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন। এরকম একটি আকাঙ্ক্ষা বা আগ্রহের কোন অভাব নেই আসল অভাব ত্যাগ, কুরবানীর মানসিকতা নিয়ে ঐকান্তিকতা ও নিষ্ঠা সহকারে এর উদ্যোগ গ্রহণের। আর কি প্রক্রিয়ায় সকলের প্রতি যৌক্তিক , ন্যায্য সম্মান ও গুরুত্ব দিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা যায় সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি এখনো উপস্থাপিত হয়নি।

সকলেই চান তার দল বা নেতার নেতৃত্বে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হোক বা সবাই যার যার দল ছেড়ে তার দলে চলে আসুক। এই ধরনের চিন্তা কখনই বাস্তব সম্মত বা বিজ্ঞান সম্মত নয়। আমরা কি নিজ নিজ দল ও নেতৃত্বের অধীন থেকে ভিন্নমতসহ ঐক্যবদ্ধ জোট গঠন করতে পারিনা?

রাসুল(স.) মদিনায় যে জোট গঠন করেছিলেন সেই জোটে যোগ দেয়ার জন্য সবগুলো গোত্রকে মুসলমান হতে হয় নাই,সেখানে ইহুদী এবং বেদুইনদের অনেকগুলো গোত্র ছিল এবং তারা নিজ নিজ স্বাতন্ত্র বজায় রেখেই রাসুল(স.) এর নেতৃত্বে মদীনায় রাস্ট্র গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। এখন কথা হচ্ছে যদি ভিন্ন ধর্মের এবং মুশরিকরা মুসলমানদের সাথে ঐক্যজোট গঠন করতে পারেন,তাহলে আমরা মুসলমানরা ভিন্ন ভিন্ন দলের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে কেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেনা? আমাদের মধ্যে তো মতপার্থক্য সেই তুলনায় অনেক কম।

যে-কোনো কাজের ক্ষেত্রেই ঐক্যের যৌক্তিকতা অনস্বীকার্য। পৃথিবীতে মানব বসতির প্রথম দিন থেকেই এটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে যে বিপদাপদ মোকাবেলা করার জন্যে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা সহজ এবং সর্বোত্তম।

পূর্ব যুগের সলফে সালেহীন ঐক্যবদ্ধ জামায়াত গঠনের স্বার্থে নিজেদের মতকে অনেক সময় ছোট করে দেখেছেন।

ইসলামী দলের দাবীদারদের উচিৎ ইসলাম বিরোধীদের মোকাবেলায় পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হওয়া,একে অন্যের বিরুদ্ধে গালি-গালাজ বা ফতোয়াবাজী করা কাম্য নয়। সুতরাং যে দল অনৈসলামি দলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম না করে অপর ইসলামী দলের বিরুদ্ধে মুখোশ উম্মোচন নামে ফতোয়াদান করে তারা ইসলামের ক্ষতি ছাড়া কোন কল্যাণ করেনা। আমাদেরকে একটা বিষয়ে মাথায় রাখতে হবে বাতিল সরকার এবং ধর্মনিরপেক্ষবাদী দল সমূহের স্থায়ী কর্মনীতির একটা হলো ইসলামী দলগুলোকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে দেশের ইসলামী আন্দোলনকে দূর্বল করা এবং এদেরকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করে ধ্বংস করা।এই সকল ধ্বংসাত্মক কাজে দেশী বিদেশী গোয়েন্দা বাহিনী সদা তৎপর। এমনও দেখা যায় একটি ইসলামী দলের সীরাত প্রোগ্রামে বা তাফসীর মাহফিলে অন্য ইসলামী দল বিরোধীতা করে মসজিদ পর্যন্ত অন্য ইসলামী দলের আলোচনা বা কোরআনের দারস দিতে বাধা দান করে। এই ধরনের আত্মঘাতী ভূমিকা প্রকৃত ইসলামী দলের হতে পারেনা।

কাজেই আজকের দিনের দাবী,বর্তমান পরিস্থিতির দাবী,সময়ের দাবী ও মুসলিম উম্মার দাবী একটাই সকল ইসলামী দল ও ব্যক্তির ঐক্য,শত্রুতা নয়। সকল নিষ্ঠাবান ইসলামী দল,ব্যক্তিত্ব ও জনগণ সকলের জন্য আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ইসলামী ঐক্যের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা এবং কোন ইসলামী দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজী না করা।

মানুষের সংগঠন ভূলত্রুটির উর্দ্ধে হবেনা।কোন দল বা কোন ব্যক্তিত্ব একটা সিদ্ধান্তগত ভূল করলে, কোন চিন্তাবিদ গবেষণা করতে গিয়ে কোন ভূল করলে অথবা সে দলের সিদ্ধান্ত ও গবেষণা আমার নিকট ভুল মনে হলেই সে দলের সকল ইসলামী কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যাবে এমনটি ইসলাম বলেনি। নবীর সাহাবীগণেরও গবেষণামূলক ভূল হয়েছে। এমনকি নবীর গবেষণামূলক কোন ভূল হয়ে গেলে সাথে সাথে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা অহীর মাধ্যমে সেটা সংশোধন করে দিয়েছেন। সুতরাং ভুলকে ভুলই মনে করতে হবে। তাছাড়া একজন যেটাকে ভুল মনে করেন, অপরজন সেটাকে সঠিক মনে করতে পারেন।

বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সব দলের কাছে গ্রহনযোগ্য কিছু সাধারণ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

১/ নিয়ত সঠিক হতে হবে।

২/ নেক উদ্দেশ্য গঠনমূল সমালোচনা(কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নয়)।

৩/ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে সবাই ঐক্যমত পুষন করা।

৪/ শরিয়তের মতবিরোধ পূন্য বিষয়ে- সুন্নত, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব বিষয়ে সবাই সহনিয় অবস্হানে থাকা।

৫/ একে অপরকে স্মান মার্যাদা দেয়া।

৬/ শুধু মাত্র নিজেদেরকে হক পন্থি বা সহীই আকিদার দাবিদার মনে না করা।

৭/ বিরোধপূন্য মাসলা-মাসায়েল ও জাতীয় বৃহত্তর ঐক্য লক্ষে একই মণ্চে বসে সকল আলেম ওলামা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা।

মহান আল্লাহ্‌ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তওফিক দিন ও অনৈক্যের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন! এবং সকল সত্যনিষ্ঠ দল ও ব্যক্তিদের ভুল বুঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন, আমীন।

বিষয়: বিবিধ

৬৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File