আল্লাহর ইহসান
লিখেছেন লিখেছেন আনাস ইবনে হাবীব ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৯:৪১:৩৪ সকাল
বিষয় : কুরআন মজীদে সূরা আল কাহ্ফে বর্ণিত হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত খিযির (আঃ) এর ঘটনা থেকে মানুষের জন্য শিক্ষনীয় বিষয় সমূহ।
আমি আলোচনার শুরুতে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে প্রশংসা জ্ঞাপন করছি আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি যিনি আলোচ্য বিষয়ে লিখার জন্য আমার অন্তরে অনুভূতি সৃষ্টি করেছেন এবং এ নিবন্ধন রচনার জন্য আমাকে মদদ করেছেন।
আমি দরূদ ও সালাম পেশ করছি আমার প্রিয় নবী ও রাসূল (সা এর প্রতি যিনি আল্লাহর দাসত্ব ও প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে বিশ্ববাসীর কাছে নিজেকে উত্তম আদর্শরূপে পেশ করেছেন।
রহমত ও বরকত কামনা করছি সাহাবা আযমাঈন ও তাবে-তাবেয়ীনদের প্রতি যারা রাসূল (সা কে অনুসরণের ব্যাপারে বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরনীয় আদর্শ হয়ে আছেন।
রহমত ও মাগফেরাত কামনা করছি শহীদ, সিদ্দিক, মুজাহিদ ও সালেহীনদের প্রতি যারা ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অনুসরন ও ইহাকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
পরিশেষে আমি রহমত ও মাগফিরাত কামনা করছি আল্লাহর ঐসব বান্দাদের জন্য যারা আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও তা রক্ষা করার এবং এদেশের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে ইসলামকে বিজয়ী-আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জিহাদ করেছেন এবং শাহাদাত বরন করেছেন।
সূচনা :
আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া তায়ালা বিশ্বের মানুষের হেদায়াতের জন্য কুরআন মজীদে বেশ কিছু ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত খিযির (আঃ) এর ঘটনা হলো একটি যা বিশ্বের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্মানিত পাঠকবৃন্দের অবগতির জন্য উক্ত ঘটনার বিবরণ কুরআন মজীদ থেকে উদৃত করা হলো।
ঘটনার বিবরণঃ
(হে নবী, তুমি এদের মূসার ঘটনা শোনাও) যখন মূসা তার খাদেমকে বললো, যতোক্ষন পর্যন্ত আমি দুটো সাগরের মিলন স্থলে না পৌছবো, ততোক্ষন পর্যন্ত আমি (আমার পরিকল্পনা থেকে) ফিরে আসবো না, কিংবা (প্রয়োজনে এ জন্যে) দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমি চলা অব্যাহত রাখবো। যখন তারা উভয়ে (সেই প্রত্যাশিত) দুটো সাগরের সংগমস্থলে পৌছলো, তখন তারা উভয়েই তাদের (খাবারের জন্য রাখা) মাছটির কথা ভুলে গেলো। অতপর সে মাছটি (ছুটে গিয়ে) সুড়ংয়ের মত একটি পথ করে ( সহজেই) সাগরে চলে গেলো। যখন তারা আরো কিছু দূর এগিয়ে গেলো তখন সে তার খাদেমকে বললো, (এবার) আমাদের নাশতা নিয়ে এসো, আমরা আজকের এ সফরে সত্যিই ভারী ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সে বললো, তুমি কি দেখোনি, আমরা যখন শিলাখন্ডের পাশে বিশ্রাম করছিলাম, সত্যিই আমি মাছের কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। (আসলে) শয়তানই উহার কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল, আর সে মাছটিও কি আশ্চর্যজনক পদ্ধতিতে নিজের পথ ধরে সাগরের দিকে নেমে গেলো। মূসা বললো (হ্যাঁ), এই তো হচ্ছে সে জায়গা যার আমরা সন্ধান করছিলাম (মাছটি চলে যাওয়ার জায়গাটি হচ্ছে সাগরের সেই মিলনস্থল), অত:পর তারা নিজেদের পদ চিহ্ন ধরে ফিরে চললো। এরপর তারা ( সেখানে পৌছলে ) আমার বান্দাদের মাঝ থেকে একজন (পূণ্যবান) বান্দাকে সেখানে পেলো, যাকে আমি আমার অনুগ্রহ দান করেছি, (উপরন্তু) তাকে আমি আমার কাছ থেকে (বিশেষ) জ্ঞান শিখিয়েছি। মূসা তাকে বললো, আমি কি তোমার অনুসরণ করতে পারি, যাতে করে (আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে) যে জ্ঞান তোমাকে শেখানো হয়েছে তার কিছু অংশ তুমি আমাকে শেখাতে পারো। সে বললো (হ্যাঁ পারো) তবে আমার সাথে থেকে তো তুমি কখনো ধৈর্য্য ধারন করতে পারবে না। (অবশ্য এটাও ঠিক) যে বিষয় তুমি (জ্ঞান দিয়ে) আয়ত্ত করতে পারোনি তার ওপর তুমি ধৈর্য্য ধরবেই বা কি করে? মূসা বললো, আল্লাহ তায়লা যদি চান তাহলে তুমি আমাকে ধৈর্য্যশীল হিসেবেই পাবে, আমি তোমার কোন আদেশেরই বরখেলাফ করবো না। সে বললো, আচ্ছা যদি তুমি আমাকে অনুসরন করোই তাহলে (মনে রাখবে) কোন বিষয় নিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না, যতক্ষন না সে কথা আমি নিজেই তোমাকে বলে দেবো। অতপর তারা দুজন পথ চলতে শুরু করলো। (নদীর পাড়ে এসে) উভয়ই একটা নৌকায় আরোহন করলো। (নৌকায় উঠেই) সে তাতে ছিদ্র করে দিলো, সে (মূসা) বললো, তুমি কি এ জন্যে তাতে ছিদ্র করে দিলে যেন এর আরোহীদের তুমি ডুবিয়ে দিতে পারো? তুমি সত্যিই এক গুরুতর (অন্যায়) কাজ করছো! (মূসার কথা শুনে) সে বললো, আমি কি তোমাকে একথা বলিনি, আমার সাথে থেকে তুমি কখনো ধৈর্য্য ধারন করতে পারবে না। মূসা বললো, আমি যে ভুল করেছি সে ব্যাপারে তুমি আমাকে পাকড়াও করো না এবং (এ ব্যাপারে) আমার ওপর বেশী কঠোরতা আরোপ করো না। আবার তারা পথ চলতে শুরু করলো। (কিছু দূর গিয়ে) তারা উভয়ে একটি (কিশোর) বালক পেলো। (সাথে সাথে সে তাকে হত্যা করে ফেললে, এক কাজ দেখে) সে বললো, তুমি তো কোন রকম হত্যার অপরাধ ছাড়াই একটি নিষ্পাপ জীবনকে বিনাশ করলে। তুমি (সত্যিই) একটা গুরুতর অন্যায় কাজ করে ফেলেছো। সে বললো, আমি কি তোমাকে একথা বলিনি তুমি আমার সাথে থেকে কখনো ধৈর্য্য ধরতে পারবে না। সে বললো, যদি এরপর আর একটি কথাও আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করি তাহলে তুমি আমাকে তোমার সাথে রেখোনা আমার ওযর-আপত্তি চূড়ান্ত হয়েছে। আবার তারা চলতে শুরু করলো। (কিছুদূর এগিয়ে) তারা জনপদের অধিবাসীদের কাছে কিছু খাবার চাইলো, কিন্তু তারা তাদের উভয়ের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করলো, অতপর সেখানে তারা একটি পতনোম্মুখ (পুরনো) প্রাচীর দেখতে পেলো। সে প্রাচীরটা সোজা করে দিলো। সে (মূসা) বললো, তুমি চাহিলে তো (এদের কাছ থেকে) এর ওপর কিছু পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতে। সে বললো (বেশ), এখানেই তোমার আমার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেলো, কিন্তু তার আগে যে সব কথার ব্যাপারে তুমি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারোনি- তার ব্যাখ্যা আমি তোমাকে বলে দিতে চাই। (প্রথম ঘটনাটি হচ্ছে) নৌকা সম্পর্কিত (মূলত তা ছিল কয়েকজন গরীব মানুষের (মালিকানাধীন), তারা (এটা দিয়ে) সমুদ্রে (জিবীকা অন্বেষনের) কাজ করতো, কিন্তু আমি (নৌকাটিকে ছিদ্র করে) তা ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। (কারন) তাদের পেছনেই ছিল (এমন) এক বাদশাহ যে (ত্রুটিবিহীন) যে নৌকাই পেতো, তা বল প্রয়োগে ছিনিয়ে নিতো। (আর হ্যা সে) কিশোরটির ঘটনা। তার পিতা-মাতা উভয়েই ছিলো মোমেন, আমি আশংকা করলাম, (বড় হয়ে) সে তাদের দুজনকেই বিদ্রোহাচরন ও কুফুরীর দ্বারা বিব্রত করবে। অতঃপর আমি চাইলাম যে, উহাদের প্রতিপালক যেন উহাদেরকে উহার পরিবর্তে এক নেক সন্তান দান করেন, সে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর। আর ঐ প্রাচীরটি, ইহা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের। ইহার নি¤œদেশে আছে উহাদের জন্য রক্ষিত গুপ্তধন এবং উহাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ন। (এ কারনেই) তোমার মালিক চাইলেন ওরা বয়োপ্রাপ্ত হোক এবং তাদের (সে ধনভান্ডার থেকে তারা) সম্পদ বের করে আনুক। (এ লক্ষ্যে আমি প্রাচীরটিকে তাদের বড় হওয়া পর্যন্ত দাড় করিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম)। এ ছিলো মূলতঃ তোমার মালিকের অনুগ্রহ (দ্বারা সম্পদিত কতিপয় কাজ), এর কোনটাই কিন্তু আমি আমার নিজ থেকে করিনি, আর এ হচ্ছে সেসব কাজের ব্যাখ্যা, যে ব্যাপারে তুমি (আমার সাথে থেকে) ধৈর্য্য ধারন করতে পারছিলেনা (১৮:৬০-৮২)।
ভাল হোক বা মন্দ হোক, এ পৃথিবীর একজন সাধারণ মানুষও যেখানে অনর্থক এবং উদ্দেশ্য বিহীন কিছু করে না, সেখানে মহাবিজ্ঞ, মহাজ্ঞানী ও পরাক্রমশালী আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া তায়ালা অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীনভাবে কোন কিছু করবেন তা কিভাবে আশা করা যায়।
আলোচ্য ঘটনার বিবরণ থেকে আমরা জানতে পারছি যে, হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশেই হযরত খিযির (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন এবং তিনি (হযরত খিযির) হযরত মূসা (আঃ) কে সাথে নিয়ে সফর করা অবস্থায় যে সব কাজ করেছিলেন তাও আল্লাহর নির্দেশেই। কাজেই আমরা সামগ্রিক বিয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে শতঃসিদ্ধভাবে দৃঢ়তার সাথে এই বিশ্বাস পোষন করতে পারি যে, তিনি (আল্লাহ) উদ্দেশ্যমূলক ভাবেই উক্ত ঘটনা সংঘটিত করেছেন। আর উদ্দেশ্যটা হলো এই যে, এই মহাবিশ্ব পরিচালনায় জাগতিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থাও যে লোকচক্ষুর অন্তরালে কাজ করছে তদসম্পর্কে হযরত মূসা (আঃ) কে বুঝ-সমঝ দান করা। তিনি যে পরিবেশ পরিস্থিতিতে রেসালাতের দায়িত্ব পালন করছিলেন সেই প্রেক্ষাপটে হয়ত তাঁর জন্য এই জাতীয় জ্ঞান লাভ করার প্রয়োজনও ছিল। এই প্রসঙ্গে বিশ্বের মানুষের জন্য গুরুত্বের সাথে যে বিষয়টি লক্ষনীয় তা হলো এই যে, মহাজ্ঞানী আল্লাহ উক্ত ঘটনাকে শুধু হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত খিযির (আঃ) এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং কুরআন মজীদে এটাকে অন্তর্ভূক্ত করে সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন যাতে বিশ্বের জ্ঞানী ও অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তিগণ যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করেন এবং এতে বিবৃত বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেন তারাও যেন এঘটনা থেকে সবক প্রহন করতে পারেন। আল্লাহ তায়লা বলেন, “কুরআন মজীদতো হচ্ছে মানজাতীর জন্য সঠিক বর্ণনা এবং মুত্তকীদের জন্য হিদায়াত ও উপদেশ (৩:১৩৮)।” আমি রসূলকে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং ইহা তাঁর পক্ষে শোভনীয় ও নহে। ইহা তো কেবল একটি নসিহত ও স্পষ্ট পাঠযোগ্য কিতাব যাতে সতর্ক করতে পারে জীবিতগণকে এবং যাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা সত্য হতে পারে (৩৬:৬৯-৭০)। ইহাতো এক বরকতময় কিতাব যাহা (হে নবী) আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন মানুষ ইহার আয়াতগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিগণ উহা হতে সবক/শিক্ষা গ্রহণ করে (৩৮:২৯)। আসুন এখন আমরা দেখি উক্ত ঘটনা থেকৈ মানুষ কি শিক্ষা গ্রহন করতে পারে।
অনুধাবন যোগ্য ও শিক্ষনীয় বিষয় সমূহ :
(১) হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত খিযির (আঃ) দুজনেই আল্লাহ তায়ালার অনুগত বান্দা। আল্লাহর হুকুম পালনে উভয়েই সচেতন ও তৎপর। লক্ষ্যও দেখা যায় উভয়েরই অভিন্ন।
(২) তাঁরা উভয়েই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত।
(৩) কিন্তু তাঁদের উপর অর্পিত স্ব স্ব দায়িত্ব পালনের প্রক্রিয়া পদ্ধতি ভিন্ন। আর এ ভিন্নতার কারনে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হযরত খিযির (আঃ) কে যে জ্ঞান দিয়েছেন তা হযরত মূসা (আঃ) কে দেননি। তাঁকে দেয়া হয়েছে ইসলামী শরীয়া সংক্রান্ত জ্ঞান।
(৪) হযরত খিযির (আঃ) কে প্রদত্ত জ্ঞান অনুযায়ী যে কাজটি যুক্তি সংগত। বৈধ সে কাজটিই আবার হযরত মূসা (আঃ) কে প্রদত্ত ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী অযৌক্তিক ও অসংগত। যার ফলে তিনি (হযরত মূসা) তাঁর (হযরত খিযির) কাজে প্রতিবাদ না করে চুপ থাকতে পারেননি।
(৫) এখানে এ শিক্ষাটাও রয়েছে যে, সম্পূর্ণরূপে নিঃস্বার্থ ভাবেই মানবতার কল্যানে কাজ করতে হবে।
(৬) বড় কোন ক্ষতি থেকে বাচার সুবিধার্থে ছোট-খাট ক্ষতি মেনে নেয়াই শ্রেয়। অন্যভাবে বলা যায় বড় কোন সুবিধা লাভের সার্থে সাময়িকের জন্য ছোট-খাট সুবিধা ত্যাগ করাই শ্রেয়। এটাও এ ঘটনার একটা শিক্ষা।
(৭) এ কাহিনী থেকে একথা তো সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, হযরত খিযির (আঃ) যে তিনটি কাজ করেছিলেন তা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে করেছিলেন। একথাও অতি পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনটি কাজের মধ্যে প্রথম দুটি কাজ এরূপ ছিল যার অনুমতি কোন শরীয়তে কখনও দেয়া হয়নি। একারনে একথা না মেনে উপায় নেই যে, হযরত খিযির (আঃ) একাজ শরীয়তের বিধান অনুসারে করেননি বরং তিনি একাজ করেছিলেন আল্লাহর মশিয়ত (....................................ইচ্ছা/আকাঙ্খা) অনুসারে। তাছাড়া এজাতীয় নির্দেশাবলী পালনের জন্য আল্লাহ তায়লা মানুষ ছাড়া অন্য এক প্রকার সৃষ্টি দ্বারা কাজ নিয়ে থাকেন। কাহিনীর প্রকৃতি থেকে একথাও পরিষ্ফুট হচ্ছে যে, পর্দার অন্তরালে আল্লাহ তায়ালার মশিয়তের কারখানায় কিরাপ মসলেহাত ( ........................................ কল্যাণ, বিভাগ) অনুযায়ী কাজ হয়ে থাকে- যা বোঝা মানুষের সাধ্যের অতীত। পর্দা অপসারিত করে মূসা (আঃ) কে একনজর তা দেখানোর জন্য তিনি (আল্লাহ) হযরত মূসা (আঃ) কে হযরত খিযির (আঃ) এর কাছে প্রেরন করেছিলেন। [টীকা নং-২০, সূরা কাহাফ, তরজমায়ে কুরআন মজীদ, আধুনিক প্রকাশনী পৃঃ নং-৫০৬]
(৮) আলোচ্য ঘটনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মনোনিবেষ সহকারে চিন্তা-ভাবনা করলে এ বিষয়টি বুঝতে আদৌ বেগ পেতে হয়না যে, পৃথিবীতে অবস্থিত দেশ/জনপদসমূহ পরিচালনার জন্য যেমন জাগতিক সরকার/প্রশাসনিক ব্যবস্থাও রয়েছে তেমনিভাবে এই মহাবিশ্বযগ্য পরিচালনার জন্য লোক চক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি ফেরেশতা ও হযরত খিযির (আঃ) এর মত বান্দাগণের মাধ্যমে তাঁর সামগ্রিক কর্মকান্ড সম্পাদনের ব্যবস্থা করছেন। এতদসম্পর্কে আমাদের কোন জ্ঞান না থাকার কারনে এ বিষয় গুলো আমাদের কাছে রহস্যাবৃতই থেকে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়লার কর্মকান্ডের মূল রহস্যগুলো আমরা বুঝতে পারছিনা, আমরা শুধু তাঁর কাজের ফলাফল দেখতে পাচ্ছি, হা-হুতাশ করছি, বিষ্ময়াভিভূত হচ্ছি, কোন কোল-কিনারা করতে পারছিনা। আমরা হঠাৎ করে শুনি অমুক জায়গায় ভূমিকম্প হয়েছে, এতলোক হতা-হত হয়েছে, এই এই ক্ষতি হয়েছে ইত্যাদি। আবার এক সময় শুনি বা দেখি সড়ক দূর্ঘটনায় দুটি বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে, এত লোক প্রাণ হারিয়েছে। আবার এরই মধ্যে অন্যান্য গুরুতর আহত লোকদের সাথে এক শিশুকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে অথচ এ শিশুটি যে মায়ের কোলে ছিল তিনি মৃত্যু বরন করেছেন। আবার একসময় শুনি অমুক জায়গায় নদীর ভাংগনে অমুক জনপদ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অমুক এলাকায় টর্নেডুর আঘাতে অমুক জনপদ বিধ্বস্ত হয়েছে ইত্যাদি। এরকম আরো অনেক দৃষ্টান্ত এ পৃথিবীতে আছে। এজাতীয় দূর্ঘটনায় কে নিহত হবে, কে আহত হবে, কে বেঁচে যাবে, কি কি ক্ষতি হবে এ বিষয়গুলো আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা অনুযায়ীই হয়ে থাকে। এক কথায় ভাল হোক, মন্দ হোক কোন কিছুই আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের বাহিরে নয়। তিনি বলেন, “গায়েবের চাবি গুলো সব তাঁর হাতেই নিবদ্ধ রয়েছে, সেই (অদৃশ্য) খবর তো তিনি ছাড়া আর কারোই জানা নেই; জলে-স্থলে যা কিছু আছে তা শুধু তিনিই জানেন। (গাছের) একটি পাতা (কোথাও) ঝরে না, যার খবর তিনি জানে না। মাটির অন্ধকারে একটি শস্যকনাও নেই যার (পূর্ণাঙ্গ) বিবরণ একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই (৬:৫৯)।”
(৯) আলোচ্য ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারছি যে, নাফরমান/বিদ্রোহী সন্তানের কষ্ট থেকে মোমেন মুত্তাকী মাতা-পিতাকে হেফাজত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা হযরত খিযির (আঃ) এর মাধ্যমে তাদের কিশোর সন্তানকে হত্যা করিয়ে তার পরিবর্তে তাদের জন্য সুসন্তানের ব্যবস্থা করেছেন। এই ঘটনা থেকে প্রত্যেক মাতা-পিতার জন্য শিক্ষনীয় বিষয় হলো এই যে, তারা যদি মুমেন-মুত্তাকী হন তবে তারা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে এজাতীয় নেয়ামত লাভের আশা করতে পারেন। এমতাবস্থায় প্রত্যেক মাতা-পিতার কর্তব্য হলো আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজীদে মুত্তাকীদের যেসব বৈশিষ্ট/গুনাবলীর কথা বর্ণনা করেছেন তা অর্জন করার জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ।
বিষয়: বিবিধ
৬১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন