সিয়াম সাধনা: এক অবারিত নেয়ামত।
লিখেছেন লিখেছেন আজাদ রহমান ১৮ মে, ২০১৮, ১২:২৭:৪২ দুপুর
রোজা কেন এত তাৎপর্যপূর্ণ? দৈহিক কষ্ট সাধনের মাঝ দিয়ে আত্মিক কোন প্রাপ্তি কী রোজার মাঝ দিয়ে অর্জন করা যায়? রোজা, সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার এক নিয়মানুবর্তী এবাদত। এটা এমন একটি কর্মসূচী যা শারিরীকভাবে সক্ষম প্রতিটি মুসলিম পুরো একমাস ধরে পালন করে। এটি একটি বৈশ্বিক এবাদত।
সারা জাহানের প্রতিটি মুসলিম (মুসাফির ও অসুস্থ্য ব্যক্তি ব্যতীত) পুরো একটি মাস সিয়াম সাধনের মাধ্যমে কেবল দৈহিক কষ্টসহিষ্ণুতাই শিখেনা বরং কিছু আধ্যাত্মিক শিক্ষার হাতেখড়িও হয় এ মাসে। আসুন, আজ আমরা রমাদানের আধ্যাত্মিক শিক্ষার দিকটা কিছুটা ক্ষতিয়ে দেখি। দেখি, সারাদিন না খেয়ে থাকাটা প্রকারান্তরে কিভাবে আমাদের আত্মার খাদ্য হয়ে আমাদেরকে সফলতার নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়!
১. রোজা পশুবৃত্তিকে দমন করে:
প্রতিটি মানুষেরই ভালো এবং মন্দ দিক রয়েছে। আমাদের নফস (যেটি আমাদেরকে পাশবিক আচরণের দিকে প্রলুব্ধ করে) সব সময় আমাদের নিয়ন্ত্রনে থাকে না। মানুষ হিসেবে আমরা প্রায়শঃই খারাপ কাজের দিকে ধাবিত হই। এমতাবস্থায়, রোজা আমাদের শরীরকে খানিকটা দূর্বল করে ফেলে, আর এই দূর্বলচিত্তের মানুষ তখন আর খারাপ কাজের কথা না ভেবে বরং ভালো কাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়। হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক কিন্তু বিবাহ করতে অক্ষম তাদের উচিৎ বেশী বেশী করে রোজা রাখা। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর এই কথা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তিকে দমনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো রোজা।
২. সিয়াম সাধনা আত্মাকে সমুন্নত রাখে:
রোজা যখন আপনার পাশবিক প্রবৃত্তিকে দমিয়ে দেবে তখনই আপনার ভেতরের সুন্দর গুণাবলীগুলো প্রস্ফুটিত হবে। আর সুন্দর গুণাবলির চর্চার মাঝ দিয়ে সৃষ্টিকর্তা ও বান্দার মাঝে এক অবিচ্ছিন্ন সেতুবন্ধ তৈরী হবে। সারাদিনের সিয়াম সাধনায় আপনি যতটা না মানুষের ভয় পান, তার চেয়ে বেশী ভয় করেন সৃষ্টিকর্তাকে। লুকিয়ে এক গ্লাস পানি পান করলে কোন মানুষ না দেখলেও সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই দেখবেন এই ভয় ও বিশ্বাসই আপনার আত্মাকে অধিক বিশ্বাসী করে গড়ে তোলে। আপনার আত্মা এক নতুন জগতে প্রবেশ করে যেখানে কেবল বিশ্বাসের সিড়ি গড়ে ওঠে । অবিশ্বাস আর সন্দেহ দূরীভূত হয় সিয়াম সাধনার মাঝ দিয়ে।
৩. রোজা মানুষকে চিন্তাশীল করে তোলে:
সারা দিনের উপবাস আমাদের শরীরকে নানাভাবে দূর্বল করে ফেললেও, আমাদের চিন্তার রাজ্যে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয় রোজা পালনের মাঝ দিয়ে। সৃষ্টিকর্তার সাথে সাক্ষাত ও বিশেষ নেয়ামত প্রাপ্তির আশায় ব্যাকুল মানুষ মাত্রই ভাবতে থাকে কেমন হবে সেই দিনগুলি, যেদিন সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে রোজাদারদের পুরস্কৃত করবেন। ভাবনার রাজ্যে নতুন নতুন ধারণার জন্ম নেয় প্রতিটি বিশ্বাসী হৃদয়ে, আর এই ভাবনার ধারণাই এক সময় সৃষ্টিকর্তার খুব কাছাকাছি নিয়ে যায় মানুষকে। ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীর বাধন মুক্ত হয়ে মানুষ নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করতে শিখে রোজা পালনের মাঝ দিয়ে।
৪. মানুষকে পার্থিব চাহিদা বিমুখ করে দেয় রোজা:
যেহেতু রোজা পালনের সময় জৈবিক চাহিদা পূরণ করা যায় না, হাতের কাছে খাবারের পসরা সাজানো থাকলেও খাওয়া যায় না কোন কিছুই। তাই রোজাদার মাত্রই নিজেকে বিরত রাখে পার্থিব নানা চাহিদা থেকে। পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে চলা ব্যক্তিও চিন্তা করতে থাকে কিভাবে তার গুনাহরাজি মাফ করিয়ে নেয়া যায়। ফলে, পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে চায় সবাই। আর এই বিরত থাকার প্রক্রিয়া একসময় রূপ নেয় পৃথিবী বিমুখতায়। পার্থিব নানা চাহিদা পূরণ করতে গিয়েই মানুষ পাপের পথে পা বাড়ায়। কিন্তু রোজাদারের চাহিদাই যখন কমে যায়, তখন সে দুনিয়াকে নয়, সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে থাকে তার প্রতিটি কাজে।
একজন রোজাদার সারাক্ষণ ক্ষমাপ্রাপ্তির আশায় ব্যাকুল থাকে। ক্ষমা চেয়ে নেয়া আর ক্ষমা করে দেয়াই যেন তার প্রথম ও প্রধান ব্রত। আর তাই ক্রোধান্বিত কিম্বা রাগান্বিত হওয়া থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেন একজন রোজাদার। আর এভাবেই শান্তির নহর বইতে থাকে সমাজের চারদিকে।
আর তাই পরিশেষে বলা যায়, রোজা কেবল শারিরীক এবাদত নয়, বরং আত্মিক সমৃদ্ধি অর্জনের এক বিশাল হাতিয়ার এই রমাদান। স্রষ্টার নৈকট্য প্রত্যাশী প্রতিটি মানুষের উচিৎ, রোজার তাৎপর্য উপলব্ধি করার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা। আর তবেই পূর্ণতা পাবে স্রষ্টা আর সৃষ্টির মাঝখানে গড়ে ওঠা ইথারে ভাসমান সর্ম্পকের সেতুবন্ধটির। এ বন্ধন এক অটুট বন্ধন। প্রতিটি বিশ্বাসী মাত্রই উচিৎ এ সেতুটির মজবুতির জন্য কাজ করে যাওয়া।
বিষয়: বিবিধ
৫৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন