রোজার উপকারিতা

লিখেছেন লিখেছেন সহীহ আমল ২৮ মে, ২০১৮, ০৪:০২:০৯ বিকাল



১-: মানবাত্মা পরিশুদ্ধির ক্ষেত্রে সমগ্র ইবাদতের তুলনায় রোজাই সবচেয়ে বেশি উপকারী। রোজার প্রভাব এ ক্ষেত্রে ব্যাপক। মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধি এবং চারিত্রক গুণাবলির উৎকর্ষতা অর্জনে রোজা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে।

রোজা মানুষের অন্তরে আল্লাহ ভীতি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপাদান এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সকল প্রকার অন্যায় অনাচার হতে বিরত রাখার পাঠশালা।

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর । যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।

[সুরা বাকারা]

মহান আল্লাহ এ আয়াতে এটিই বলছেন যে, তিনি তার বান্দাদেরকে তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত করার জন্য রোজা ফরজ করেছেন। এতে একথা স্পষ্ট হয় যে, রোজার সাথে তাকওয়ার নিভীড় সম্পর্ক রয়েছে।

তাকওয়ার অর্থ:

তাকওয়া এমন একটি শব্দ যার মধ্যে যাবতীয় উত্তম চরিত্র পঞ্জিভূত। আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া সাথে অসংখ্য কল্যাণ ও উপকারিতা যুক্ত করেছেন।

এর গুরুত্ব বিবেচনা করেই আল্লাহ বারবার তাকওয়ার আলোচনা করেছেন।

মনীষীগণ তাকওয়ার ব্যাখ্যায় বলেছেন:-

فعل أوامر الله، وترك مناهيه، رجاء لثوابه وخوفا من عقابه،

পুরস্কারের আশায় ও শাস্তি হতে বাঁচার জন্য আল্লাহর যাবতীয় আদেশ পালন করা এবং নিষেধগুলো হতে বিরত থাকা।

আল্লাহর বাণী {لعلكم تتقون} সম্পর্কে ইমাম কুরতবি রহ. বলেন, এখানে لعل মুমিনদের আশা-আগ্রহ সৃষ্টি আর (تتقون) গুনাহ হতে বিরত থাকার কথা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। মানুষের পানাহার হ্রাস পেলে কু-প্রবৃত্তির চাহিদাও হ্রাস পায়। আর কুপ্রবৃত্তির চাহিদা হ্রাস পেলে পাপ-অন্যায়ের আকর্ষণও লোপ পায়।

কারো কারো মতে আয়তের ব্যাখ্যারই প্রয়োজন নেই বরং রোজার দ্বারা মানুষ এমনিতেই মুত্তাকী হতে পারে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-- রোজা ঢালস্বরূপ এবং রোজাই তাকওয়ার অন্যতম কারণ।

২:- রোজার দ্বারা একজন বান্দার অন্তরে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি ভালোবাসা এবং গুণাহের প্রতি স্থায়ী ঘৃণা জন্ম নিতে থাকে। ফলে রোজা মানুষের চিন্তাধারাকে পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করে এবং জীবন চলার পথে তার নৈতিকতা ও আচার আচরণকে পরিবর্তন করে উন্নতির দিকে নিয়ে যায়।

৩:- রোজার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ধৈর্য্য ও সহনশীলতা ফিরে আসে। কারণ, রোজার কারণে অনেক পছন্দনীয় কাজ ছাড়তে বাধ্য হয় এবং অনেক অনিষ্টকর কাজ হতে দুরে থাকতে হয়। রোজার দ্বারা একজন গুনাহগার ব্যক্তি গুনাহ ছাড়তে সাহসী হয়। এবং রোজার কারণে অনেক গুনাহ করা সম্ভবও হয় না। রোজা একজন মানুষকে গুনাহ হতে বিরত থাকার প্রশিক্ষণ দেয়। ফলে একটি সময় এমন হয় যে, সে আর গুনাহই করে না। যেমন একজন ধূমপায়ীর ধূমপান করতে করতে তার অভ্যাস এমন হয়েছে সে ধূমপান না করলে তার মাথা ঠিক থাকে না। সেও রোজার মাধ্যমে তার এ কুঅভ্যাসটি অনেক সহজে ত্যাগ করতে পারে। কেননা, রোজা রাখার ফলে সে দীর্ঘ সময় ধূমপানের সুযোগ পায় না। এতে একমাস যাবত ধূমপান ছাড়া থাকার অনুশীলন তাকে করতে হয়। অনুরূপভাবে রোজার মাধ্যমে যাবতীয় গুনাহ থেকেই ইচ্ছা করলে বিরত থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।

রোজা মানুষের অন্তরকে নরম করে এবং আল্লাহর জিকিরের জন্য উর্বর করে।

৪:- রোজাদারের জন্য অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী করা সহজ করে দেয়া হয়। আর এ বিষয়টি দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, রোজাদার ব্যক্তিরা রমজান মাসে বেশি বেশি করে ভালো কাজের দিকে অগ্রসর হয়। বছরের অন্য সময় যেসব কাজ করতে তারা কষ্ট অনুভব ও অলসতা করে।

৫:- একজন রোজাদার তার কু-প্রবৃত্তির উপর বিজয় লাভ করতে সক্ষম। কারণ রমজানের বাইরে কুপ্রবৃত্তি তার উপর বিজয়ী থাকে এবং তাকে অন্যায় ও অশ্লিল কাজের দিকে ধাবিত করতে থাকে। আর রমজান আসলে, রমজান তার কুপ্রবৃত্তি লাগাম টেনে ধরে এবং তাকে সত্য ও নৈতিকতার দিকে ধাবিত করে।

বিষয়: বিবিধ

৬১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File