রোজার শুরু ও শেষ সময়,
লিখেছেন লিখেছেন সহীহ আমল ২১ মে, ২০১৮, ০৪:৩৩:৩৯ বিকাল
আল্লাহ তাআলা বলেন,
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর।
{সূরা বাকারা}
আল্লাহ তাআলা আয়াতটিতে রোজার শুরু ও শেষ সময় সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। এতই সুস্পষ্ট যে প্রতিটি মানুষ অতি সহজে বুঝতে পারবে। রোজা শুরু হবে সুবহে সাদিক উদিত হলে আর শেষ হবে সূর্য অস্ত গেলে। অন্যভাবে বললে, রোজার শুরু সময় হচ্ছে, সুবহে সাদিক উদিত হওয়া আর শেষ সময় সূর্য অস্ত যাওয়া। যেমনি করে তিনি রোজার মাসের সূচনা সময়টিও নির্ধারণ করেছেন প্রতিটি মানুষের বোধগম্য করে খুবই স্পষ্ট নির্ধারণীর মাধ্যমে। আর তা হচ্ছে, চাঁদ দেখা যাওয়া কিংবা পূর্ববর্তী শাবান মাসকে ত্রিশ দিনে পূর্ণ করা। আমাদের দ্বীন-ইসলাম আসলেই একটি সহজ ও বোধগম্য দ্বীন। সকল শ্রেণীর সকল পেশার মানুষই তা অনায়াসে পালন করতে পারে।
দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি।
{সূরা হজ্}
সুতরাং সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্য। একটি উল্লেখ যোগ্য সময় পর্যন্ত রোজা অতি দীর্ঘ থাকার পর এ সহজীকরণ আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর বান্দাদের জন্য (বিশেষ নেয়ামত স্বরূপ) বিধিত হয়েছে ।
ইমাম বোখারি রহ. বারা রা. থেকে উদ্ধৃত করেছেন,
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের অবস্থা ছিল যখন তাদের কেউ রোজা রাখতেন আর ইফতার করার পূর্বেই ঘুমিয়ে যেতেন, তখন তিনি সে রাত ও পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকতেন। কায়স বিন সিরমাহ নামক জনৈক আনসারি রোজা ছিলেন। কোনো কোনো রেওয়ায়াতে এসেছে, তিনি দিনের বেলায় খেজুর বাগানে কাজ করতেন। ইফতারের সময় হলে তিনি স্ত্রীর নিকট এসে খাবার চেয়ে বললেন, তোমার নিকট কোনো খাবার আছে কি? স্ত্রী বললেন: না, তবে তালাশ করে দেখি কিছু পাই কি না? তিনি দিনে কাজ করেছেন, তাই ঘুমের কোলে ঢলে পড়লেন। স্ত্রী ফিরে এসে তাকে (ঘুমন্ত) দেখতে পেয়ে বললেন, আ-হা-রে... ঘুমিয়ে গেলেন? পরদিন দুপুরে তিনি বেহুশ হয়ে পড়লেন। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়,
{أحل لكم ليلة الصيام الرفث إلى نسائكم}
অর্থাৎ, সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। এতে সাহাবারা খুবই আনন্দিত হলেন। আরো নাযিল হল,
{وكلوا واشربوا حتى يتبين لكم الخيط الأبيض من الخيط الأسود من الفجر}
আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়।
বোখারিতেই বারা রা. থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
রমজানের রোজার বিধান নাযিল হলে লোকেরা পূর্ণ রমজান মাস স্ত্রীদের নিকটবর্তী হতো না। তবে কিছু লোক এ ব্যাপারে নিজেদের সাথে খিয়ানতে প্রবৃত্ত হলেন। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন,
{علم الله أنكم كنتم تختانون أنفسكم فتاب الله عليكم وعفا عنكم}
আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন।
[সূরা বাকারা]
خان واختان এর অর্থ একই। অর্থাৎ, তোমরা রোজার রাত্রিতে মেলা-মেশার মাধ্যমে নিজেদের সাথে খেয়ানত করতে। এরপর তোমাদের তাওবা করার পূর্বেই আল্লাহ তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ অপরাধে তোমাদের পাকড়াও করেননি। বরং ব্যাপারটি খুবই সহজ করে দিয়েছেন। সূর্যাস্ত থেকে পরদিন সুবহে সাদিক উদিত হওয়া অবধি পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বৈধ করে দিয়েছেন। এখন থেকে সুবহে সাদিক হতে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপরি উক্ত তিন বস্তু (খাওয়া, পান করা ও স্ত্রী সহবাস) ও রোজা পরিপন্থী বিষয়গুলো থেকে রোজাদার বিরত থাকলেই চলবে।
কারণ আল্লাহ বলছেন, রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর।
তাই সূর্যাস্ত নিশ্চিত হয়ে রাত শুরু হবার সাথে সাথে রোজা শেষ হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
: "إذا أقبل الليل من ههنا وأدبر النهار من ههنا وغربت الشمس فقد أفطر الصائم" [أخرجه البخاري ]
যখন রাত এ দিক হতে আসে, দিন এ দিক হতে যায় আর সূর্য অস্ত যায় তখন রোজাদারের ইফতার হয়ে যায়। [ বোখারি ]
কিছু লোক ইফতার ও সেহরি বিষয়ে শরয়ি দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে। তাদের একদল বরং বলতে গেলে অনেকেই রাত জাগরণ করে, রাতের শেষ ভাগে এসে ঘুমানোর ইচ্ছা হলে ফজরের পূর্বে সেহরি খেয়ে নেয়। এরপর ঘুমিয়ে পড়ে আর ফজরের নামাজ সময়মত জামাতে পড়া হয় না। এর মাধ্যমে তারা অনেকগুলো ভুল-ভ্রান্তির শিকার হয়।
এক. তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই রোজা পালন শুরু করে।
দুই. জামাতের সাথে ফজরের নামাজ ছেড়ে দেয়।
তিন. নামাজ সময় মত আদায় করে না। বরং ঘুম ভাঙ্গার পর আদায় করে। এতে করে কখনো কখনো জোহরের সময় হয়ে যায়।
কিছু কিছু বেদআতি সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে (সময় মত) ইফতার না করে তারকা উজ্জ্বল হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করে।
বিষয়: বিবিধ
৬৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন