পুলিশ রিমান্ড: এক ভয়াবহ আতঙ্কের নাম
লিখেছেন লিখেছেন এস এম মাহবুব হোসেন ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:৩৪:২৭ বিকাল
আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য যখন অপরাধ করে তখন তার স্বাভাবিক একটি শাস্তি হল বদলি। কিন্তু বদলিই কি এ ধরনের অপরাধীর শাস্তি হিসাবে যথেষ্ট?
আমাদের সমাজের চেতনার ঠিকা নেয়া চেতনাবাজরা বলছেন, “গুটিকয়েক লোকের জন্য পুরো বাহিনীকে দোষারোপ করা যাবে না’। আমি সেই চেতনাবাজদের উদ্দেশ্যে বলছি, অপরাধ দমন করাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। কাজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে একজন অপরাধী যতক্ষন পর্যন্ত থাকবে, ততক্ষন পর্যন্ত এর দায় গোটা বাহিনীরই। কারন, যখন অপরাধীর অপরাধ স্পষ্ট, তখন সে কোন যুক্তিতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারে??? যতক্ষন পর্যন্ত না অপরাধ করা মাত্রই পুলিশ সদস্যকে শাস্তির আওতায় আনা হবে ততক্ষন পর্যন্ত পুরো পুলিশ বাহিনীই কলঙ্কিত। কারন এক বালতি দুধ নষ্ট করার জন্য এক ফোটা বিষ্ঠাই যথেষ্ট।
অতি সাম্প্রতি অনলাইন জগতের আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি ঘটনা হল: আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন মিলনকে রিমান্ডের নামে পাষবিক নির্যাতন করে হত্যা করার ঘটনা।
গত ৬ মার্চ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিলনকে আটক করে রমনা পুলিশ। শাহবাগা থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩৩২ ও ৩৩৩ নং ধারায়। তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৮, ৯ ও ১০ মার্চ রিমান্ড শেষে আবারও আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একদিন পর অর্থাৎ ১১ মার্চ মারা যান মিলন। এর মানে রিমান্ডের পাশবিক নির্যাতনেই মিলনকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে।
গত ৬ মার্চ সুস্থ সবল মিলনকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ। সেই মিলন তিনদিন পুলিশ রিমান্ডে ছিল। আজকে ১২ মার্চ জানানো হলো মিলনের লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আছে নিয়ে যান।
কোন মিলনকে নিয়ে যাবে তার পরিবার? যে মিলনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাঁর শরীরে তো কোন দাগ বা আঘাতের চিহ্ন ছিলো না! মর্গে শুয়ে থাকা নিথর এই মিলনের শরীরে এত দাগ বা আঘাতের চিহ্ন এলো কিভাবে? এ হত্যার দায় কে নিবে, পুলিশ নাকি আদালত?
লেখাটি শুরু করার আগে খোজ নিলাম মিলনের পরিবারের। মিলনের মা ও তার স্ত্রীর করুণ আর্তনাদে বাংলার আকাশ ভারী হয়ে আসছে, বাংলার বাতাসে অক্সজেনের পরিমান কমে আসছে। মিলনের দুটি মেয়ে আছে। ছোট মেয়েটার বয়স ২বছর। আর বড় মেয়েটার বয়স ৭ বছর। মিলনের বড় মেয়েটা বাক প্রতিবন্ধী। আমি বাক প্রতিবন্ধী সেই মেয়েটিকে বাবার লাশের পাশে বসে অঝরে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি।
এই বাক প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে যারা এতিম বানিয়েছে, আমি তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আর্জি পেশ করছি। জানিনা আজ থেকে ওর মেয়ে দুটি কাকে বাবা বলে ডাকবে। পৃথিবীর আলো বাতাস বুঝে উঠার আগেই কেড়ে নিল প্রিয় বাবাকে রক্তখেকো হায়নার দল।
আমাদের দেশের মিডিয়া আজো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর টর্চার সেলের লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে সিনেমা তৈরি করছে। কিন্তু আমাদের দেশের মিডিয়া আমাদের জানায় না, মুক্তিযুদ্ধের ৪৭ বছর পরেও এই দেশের বুকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর চাইতেও ভয়ংকর একটি বাহিনী ধীরে ধীরে গ্রাস করে চলেছে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমিকে। ছিঃ ছিঃ লজ্জাহীন গনতন্ত্র আর বিচারহীন দেশ! দমন পীড়ন চালিয়ে কোন স্বৈরাচার টিকতে পারে নি, পারবেও না, ইন্শাআল্লাহ্।
স্বৈরাচারের শেষ অস্ত্র গণগ্রেফতার! আর সেটা দেশে অলরেডি শুরু হয়ে গেছে।
বিষয়: রাজনীতি
৬০৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভুল বুঝবেন না। বড় দুঃখ বড় অসহায় আজ আমরা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন