‘বাংলাদেশে আসা প্রতি দুই রোহিঙ্গা শিশুর একজন মা-বাবা হারিয়েছে’

লিখেছেন লিখেছেন নুর হুসাইন ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:১৩:০১ রাত

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসা প্রতি দুই রোহিঙ্গা শিশুর একজন মা অথবা বাবাকে হারিয়েছে এবং পরিবারহীন হয়েছে। এর মূল কারণ সহিংসতা। দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের নতুন গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় ছয় হাজারের বেশি পিতৃ-মাতৃহীন রোহিঙ্গা শিশু কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছে। এসব শিশু খাদ্যের অভাব, শোষণ ও নির্যাতনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করার সময় প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, এসব শিশু হয়তো তাদের মা-বাবা কিংবা অভিভাবককে হারিয়েছে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পথে। কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ শিশুই মিয়ানমারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে মা-বাবা বা অভিভাবককে হারিয়েছে।Eprothomalo

সেভ দ্য চিলড্রেনের এই গবেষণা ১৩৯ জন অভিভাবকহীন রোহিঙ্গা শিশুকে নিয়ে করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, যে সব শিশু এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল, তাদের ৭০ শতাংশই অভিভাবকহীন এবং তারা অভিভাবক হারিয়েছে মিয়ানমারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে। ৬৩ শতাংশ শিশু অভিভাবকদের হারিয়েছে তাদের গ্রামে সরাসরি আক্রমণের সময়। আর ৯ শতাংশ শিশু তাদের পরিবার ও অভিভাবকদের হারিয়েছে বাংলাদেশে আসার পথে।

সংস্থাটি বলছে, গবেষণায় অংশ নেওয়া অর্ধেক শিশু জানিয়েছে, তাদের অভিভাবক ও পরিজনদের হত্যা করা হয়েছে। এতে তারা মা-বাবা হারিয়েছে এবং অনেক শিশুই এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।

সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশে কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্ক পিয়ারস বলেন, ‘১২ মাস আগে আমাদের কর্মীরা স্বচক্ষে দেখেছেন এসব শিশুকে বাংলাদেশে আসতে। তারা ছিল দুর্দশাগ্রস্ত, ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত। কথা বলার শক্তিটুকুও অবশিষ্ট ছিল না তাদের। আমরা এসব বিচ্ছিন্ন শিশুর জন্য জায়গা তৈরি করছি যেখানে তারা ২৪ ঘণ্টা সুরক্ষিত থাকতে পারে এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের খোঁজ করেছি। এক বছর পর এটি মোটামুটি পরিষ্কার যে, তারা তাদের পরিবার-পরিজন সবাইকে হারিয়েছে। তারা এখন অনাথ।’

মার্ক পিয়ারস আরও বলেন, ক্যাম্পের পরিবেশে এসব শিশুরা পাচার, বাল্যবিয়ে ও অন্যান্য নানা ধরনের নির্যাতনের ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গা শিশুদের সুরক্ষা, উন্নত ও উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

মিয়ানমারে সংঘটিত এমন ঘটনাকে ‘নিয়মানুগ, নিষ্ঠুর ও ইচ্ছাকৃত হামলা’ বলে অভিহিত করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন। এসব ঘটনায় অপরাধীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন অনুযায়ী শাস্তির আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে জাতিসংঘে সব দেশের প্রতিনিধিদের এ উদ্যোগকে সমর্থন জানানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের মিয়ানমারে কান্ট্রি ডিরেক্টর মিসেল ম্যাকগ্রাথ বলেন, এই শিশুদের শৈশব ছিন্নবিচ্ছিন্ন হওয়ার এক বছর হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকার বের করতে হবে, যা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে একটি নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের সুযোগ

বিষয়: বিবিধ

৫০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File