ছাত্রদের চোখে জল, স্বজনেরা উদ্বেগাকুল

লিখেছেন লিখেছেন নুর হুসাইন ১০ আগস্ট, ২০১৮, ০২:২২:২৭ দুপুর

প্রিজন ভ্যানের ফাঁক গলে বাবা-বোন ও বন্ধুদের দেখতে পেয়েই কেঁদে ফেলেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের ছাত্র জাহিদুল হক। স্বজনেরা বাইরে থেকে আশ্বাস দেন—চিন্তা করিস না। জামিন করে নিয়ে আসব। জাহিদুল স্বজনদের কিছু বলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কান্নার তোড় আর চারপাশের উচ্চ শব্দের মাঝে তাঁর কণ্ঠটি হারিয়ে গেল। গতকাল বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের জেরে গ্রেপ্তার হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছাত্রদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। পুলিশি হেফাজতে ছাত্রদের নির্যাতন করা হয়েছে বলেও আদালতকে জানান। তবে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার আবেদন নাকচ করে ছাত্রদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গুজব ছড়ানো ও ভিত্তিহীন খবর প্রচারের অভিযোগে গত বুধবার ঢাকায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ইউসুফ চৌধুরী (৪০) অনলাইন সংবাদমাধ্যম জুম বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং দাইয়ান আলম (২২) বুয়েটের ছাত্র। তাঁদের দুজনকেই এর আগে রমনা থানায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান গতকাল বলেন, ২৯ জুলাইয়ের ওই দুর্ঘটনার পরে গতকাল পর্যন্ত ১৬টি থানায় ৩৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪২ জনকে। এর মধ্যে ছয়টি মামলা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে। এই ছয় মামলায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এবং অভিনয়শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদও রয়েছেন।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা পৃথক মামলায় আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে ‘অশোভন’ মন্তব্য করায় গ্রেপ্তার হন বগুড়ার শিবগঞ্জের এক কলেজছাত্র।

২২ ছাত্র কারাগারে

রাজধানীর ভাটারা ও বাড্ডা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো ২২ জন ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথইস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাঁদের রাখা হয়েছিল আদালতের হাজতখানায়। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে বিকেলে তাঁদের প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় বন্দী ছাত্র ও বাইরে থাকা অভিভাবকদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

১৪ ছাত্রের জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে আবেদন জানায় বাড্ডা থানার পুলিশ। এতে তদন্তের প্রয়োজনে আবার এঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হতে পারে উল্লেখ করা হয়।

বাকি আট ছাত্রের বিষয়ে ভাটারা থানার পুলিশ আদালতকে জানায়, গ্রেপ্তার আসামিরা পুলিশের ওপর হামলা করার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

নির্যাতনের অভিযোগ

ছাত্রদের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর কিংবা পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত নন। যারা এদের ওপর হামলা করেছিল, তাদের গ্রেপ্তার না করে নিরীহ এসব ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে মারধর করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ছাত্র ফয়েজ আহম্মেদ আদনানের আইনজীবী এ কে এম মুহিউদ্দিন ফারুক আদালতে বলেন, তিনি নিজে দেখেছেন, পুলিশ কীভাবে ছাত্রদের নির্যাতন করেছে। গ্রেপ্তার সবাই ছাত্র অথচ পুলিশ মামলায় তা উল্লেখ করেনি। মামলার এজাহারের বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করেন তিনি।

বিষয়: বিবিধ

৪৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File