‘ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায়’ মায়ের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগ
লিখেছেন লিখেছেন নুর হুসাইন ২৯ জুলাই, ২০১৮, ০৫:৪৯:০৬ বিকাল
(ইউএনবি) খুলনার ডুমুরিয়ায় মেয়েকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার প্রতিবাদ করায় এক ভিক্ষুক মা শিখা ঢালীকে (৪৭) এক ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
১৯ জুনের এই ঘটনার ৩৮ দিন অতিবাহিত হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে থানায় মামলা দিতে সাহস পাচ্ছেন না বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী ও তার অসহায় পরিবার।
এলাকবাসী জানান, উপজেলার মাগুরখালী এলাকায় স্বামী পরিত্যক্তা হতদরিদ্র শিখা ঢালী ওরফে ছোট খুকু গত কয়েক বছর যাবৎ দুই কন্যা সন্তান ইতু ঢালী (১৭) ও পূজা ঢালীকে (৮) নিয়ে বাবার বাড়িতে থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সম্প্রতি পাইকগাছা চিনেমলা এলাকার সমিরন মণ্ডলের ছেলে মাগুরখালী মামার বাড়ি বসবাসরত ছাত্রলীগ নেতা লিংকন মণ্ডল (২২) ওই ভিক্ষুকের বড় মেয়ে ইতু ঢালীকে প্রায়ই কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি ইতু তার মাকে জানালে তিনি লিংকনের কাছে এর প্রতিবাদ জানান। এতে লিংকন ক্ষুব্ধ হয়ে তার দলবল নিয়ে গত ১৯ জুন রাত ৯টায় শিখার ওপর অতর্কিত হামলা চালান।
ছাত্রলীগ নেতা লিংকন তার সহযোগী সুজিত গোলদারের ছেলে আশিষ গোলদার, নিখিল মণ্ডলের ছেলে মধূসুধন মণ্ডল ও পবিত্র মণ্ডলের পিটুনিতে শিখার বাম পা ও বাম হাতের হাড় ভেঙে যায়। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য প্রসাদ কুমার মণ্ডল ও মাগুরখালী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলতাফ হোসেন তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
ইউপি সদস্য প্রসাদ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘সংবাদ পেয়েই ঘটনাস্থল থেকে শিখাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ করি।’ সে সময় শিখার বাম পা ও হাত ভেঙে ঝুলছিল বলেও জানান তিনি।
মাগুরখালী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলতাফ হোসেন বলেন, ‘রাস্তার পাশ দিয়ে আসার সময় হঠাৎ কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ভিক্ষুক শিখা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন এবং পাশে বসে তার মেয়েটিও কাঁদছে। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে খবর দিয়ে শিখাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করি।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও সার্জারি বিভাগের ১ ও ২নং ওয়ার্ডের বারান্দায় পড়ে থাকা শিখা ঢালী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘প্রথমে ২০ দিন বেডে ছিলাম, এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। হাত-পায়ের ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ ঝরছে, টাকার অভাবে বাড়ি যেতে পারছি না, ওষুধও খেতে পারছি না। ডাক্তার আমার কোনো খোঁজ খবর রাখে না।’
‘১৫ দিন ধরে ছোট মেয়ে পূজাকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বারান্দায় পড়ে আছি। আমার আর ভিক্ষা করে খাওয়া হবে না, কীভাবে বাঁচবে আমার ইতু ও পূজা’, বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন অসহায় শিখা।
শিখার মা বৃদ্ধা আল্লাদি ঢালী বলেন, ‘আমার খুকুরে যারা অন্যায়ভাবে মেরে হাত-পা গুঁড়া করে দেছে, তাদের বিচার ভগবান করবে। আমরা গরিব বলে এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আমাগোর বিচার করবে না।’
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিল হোসেন জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিষয়: বিবিধ
৬৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন