জমি লিখে দেন না মা, তাই গোয়ালঘরে আটকে রাখেন ছেলে

লিখেছেন লিখেছেন নুর হুসাইন ২৯ মে, ২০১৮, ০৭:১৭:০৯ সকাল

ছেলেকে জমি লিখে না দেওয়ায় দিনের বেলায় বৃদ্ধ মাকে নির্যাতন আর রাতে গোয়ালঘরে তলাবদ্ধ করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামে এ অভিযোগ ওঠে।

নির্যাতনের শিকার ওই মায়ের নাম ফসর বানু (৮৫)। তাঁর ছেলে সবুজ মিয়া ও পুত্রবধূ সাহেদা খাতুনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে আজ সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুজ্জামান লোক পাঠিয়ে ফসর বানুকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

ইউএনও কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে ফসর বানুর স্বামী আমজত আলী মারা যান। তাঁদের ঘরে পাঁচ মেয়ে ও তিন ছেলে রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর ফসর বানু তাঁর বড় ছেলে সবুজ মিয়ার সঙ্গে থাকেন। গত দুই বছর আগে ফসর বানুর অংশে থাকা ১০ কাঠা জমির একটি জাল দলিল দেখিয়ে ছেলে সবুজ মিয়া তা জোর করে দখলে নিতে চান। এতে তাঁর অপর দুই ভাই হান্নান মিয়া ও আক্কাস মিয়া বাধা দেন। তাঁদের মা ফসর বানু বাদী হয়ে এ বিষয়ে আদালতে মামলা করেন। এরপর থেকে সবুজ মিয়া ও তাঁর স্ত্রী মায়ের ওপর মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁরা বৃদ্ধ মায়ের ওপর শারীরিক নির্যাতনও চালান এবং রাতের বেলায় গোয়ালঘরে আটক করে তালাবদ্ধ রাখেন।

এ খবর পেয়ে ইউএনও আরিফুজ্জামান পুলিশ ও বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ওই বাড়িতে পাঠিয়ে বৃদ্ধ মাকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনেন। বর্তমানে তাঁকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাদিচ্ছুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ফসর বানুর নামে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে। সেই টাকাও তাঁর ছেলে সবুজ মিয়া নিয়ে যান বলে জানা গেছে।

ফসর বানু সাংবাদিকদের বলেন, ‘জমি লিখে না দেওয়ার আমার ছেলে সবুজ ও তার স্ত্রী বিভিন্ন সময় মারধর করে। সঠিক সময় খাবার দেয় না। ঘরে ঢুকতে দেয় না। রাতের বেলায় গোয়ালঘরে রেখে তালা মেরে রাখে।’

পরিষদের সদস্য মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আমরা সবুজকে বুঝিয়েছি। কিন্তু তিনি কারও কথা শোনেননি। তাঁকে আইনের আওতায় আনা উচিত।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সবুজ মিয়া মুঠোফোনে সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি মিথ্যা। মাকে আমি মারধর ও গোয়ালঘরে রাখি না। মা পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। আমিই আমার মাকে প্রতিপালন করি। অন্য দুই ভাই কেউ রাখতে চায় না। আজ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি চিকিৎসা করাতে।’ অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে একটি মামলা আছে। তবে ওই জমিটি আমারই পাওয়ার কথা। কিন্তু অন্য দুই ভাইও দাবি করে।’

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ সত্য হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফসর বানুর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

আরও সংবাদ

বিষয়:

নেত্রকোনাঅপরাধকলমাকান্দা

লাগেজের ভেতরে গলাকাটা লাশ

বিষয়: বিবিধ

৪৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File