গ্রাম্য সালিশ ও গ্রাম পঞ্চায়েতের একাল-সেকাল

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান আশরাফ ১১ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৯:০৭:৪০ রাত

"এমন একটি সমাজ চাই,

যেখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য নাই।"

বাংলাদেশ একটি গ্রাম প্রধান দেশ |

আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক গ্রামে

বাস করে | গ্রামের অধিকাংশ লোক

সাদামাটা জীবনযাপন করে| তাদের এই

সাদামাটা/সহজসরল জীবনযাপনে

মাঝেমাঝে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়/

দিত | সেই সকল সমস্যা সমাধানে সবার

আগে এগিয়ে আসত গ্রাম্য মুরব্বি/কর্তা

ব্যক্তিরা |

কোনো এক সময় গ্রাম বাংলার

সালিশ,গ্রাম পঞ্চায়েত এবং গ্রাম্য বিচার

ব্যবস্থার অনেক সুনাম ছিল | প্রত্যেক

গ্রামে ২/৪ জন মুরব্বি/কর্তা ব্যাক্তি

হিসেবে মনোনিত থাকতেন | এসব

মুরব্বি,কর্তা ব্যক্তির সিদ্ধান্তেই গ্রামের

উন্নয়ন,একতা,ঐক্য,গ্রামের ঝগড়া বিবাদ

নিষ্পত্তি হতো | ঐ সকল মুরব্বি ব্যক্তিদের

দ্বারা বিচার সম্ভব না হলে কিংবা বিষয়

জটিল হলে বিভিন্ন এলাকার গণ্যমান্য

মুরব্বি বা বিচারী আমন্ত্রিত হতেন | এই

সকল বিচারকদের সিদ্ধান্ত উভয়পক্ষ

অনায়াসে মেনে নিতেন |

এর পিছনে অন্যতম কারণ হল তখন সময়ের

বিচারী/সালিশদার,গ্রাম্য বিচারক

সৎ,সাহসী,নিরপেক্ষ ও স্পষ্টভাসী থাকতেন |

তারা মেক্সিমাম ছিলেন বিবেক সম্পন্ন |

তাদের বিচার/সালিশ ফেয়ার হওয়ায়

গ্রামবাসীর মধ্যে কোন মামলা-মোকদ্দমা

ছিলনা বললেই চলে |

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য,গ্রাম্য সালিশ

ব্যবস্থা এখন অর্থহীন মানুষকে শোষণের

অন্যতম হাতিয়ার | গ্রাম্য সালিশে

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত বিচার

হয়না| আগের সেই চিত্র এখন হারিয়ে গেছে

| এখন যেমন ন্যায়সঙ্গত বিচার হয়না তেমনি

এই সকল কথিত বিচারকদের বিচার মেনে

নেয়না এমনকি এদের কেউ সম্মান প্রদর্শণ

করেনা |

এখন গ্রামে ২/৫ জন কর্তা ব্যক্তি নেই এখন

ঘরে ঘরে কর্তা | এই কর্তৃত্বের পিছনে

রয়েছে অনেকগুলো কারণ |

গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থা ন্যায়সঙ্গত না

হওয়ার কারণে আমাদের সমাজজীবনে

প্রতিহিংসা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে | যা

কখনো বংশ পরষ্পর হয়ে যায়,কখনো কখনো

রাজনৈতিক আবার কখনো সামাজিক

অবস্থানের উপর ভিত্তি করে |

(উদাহরণঃধনী-দরিদ্র বৈষম্য)

ক্ষমতার দাপট এবং টাকার কারনে মানুষ

ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হয়|

বাস্তবতা হল গ্রাম্য সালিশগণ যে পক্ষ

হতে টাকা বেশি পায় সেই পক্ষে বিচার

চলে যায় | অনেকসময় দেখা যায় যে সমস্যা

একদিনে সমাধান করা যায় তা না করে

বারবার বিচার বসে | অনেকসময় দুই পক্ষ

হতে টাকা আত্ব্যসাৎ করে |অনেকসময়

সালিশদারগণ অন্য গ্রাম হতে সালিশদার

ভাড়া করে আনে | অনেক জায়গায় এমন

রেওয়াজ আছে যাদের এক একজনের

সালিশের রেট একেকরকম |

৫০০-৫০০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে |

মিথ্যাসাক্ষী, বংশপ্রীতি,এলাকা

প্রীতি,সালিশ হওয়ার পূর্বে দুই পক্ষ হতে

টাকা জমা নেওয়া, অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা

সালিশ করা ইত্যাদি সমস্যা তো আছেই |

এই সকল কারণে গ্রামের ছোটখাট ঝগড়া-

বিবাদ,পারস্পরিক দ্বন্দের বিষয়গুলো

সালিশী বৈঠকে সমাধান করা গেলেও

এদের উদাসীনতার কারনে এগুলো এখন

থানা ও আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে | এতে

সাধারন মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার

হতে হয় |

একসময় চুরি-ডাকাতি,জমি-জমা সংক্রান্ত

বিরোধের মীমাংসা ইত্যাদি সমস্যা

মুরব্বিরা করতেন | সবাই এসব বিচার মেনে

নিতেন |

কিন্তু সেটি এখন হয়না | আজ গ্রাম্য

সালিশের দুর্নীতি,তালবাজ ও

আস্থাহীনতার কারণে গ্রাম্য সালিশ

ব্যবস্থা বিলুপ্তির পথে |

পরিশেষে একটি কথা বলা যায়, আমাদের

গৌরব গ্রাম পঞ্চায়েত ও গ্রাম্য সালিশের

ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রেখে সন্মিলিতভাবে

সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে

দুর্নীতি ও কলুষতামুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে

অবদান রাখা সকলেরই কর্তব্য |

বিষয়: বিবিধ

৮৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File