মাইসেল্ফ

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান আশরাফ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:৫১:৪৮ সন্ধ্যা

আমি মোঃ ইমরান হোসাইন আশরাফ।গ্রামের বাড়ি কুলাউড়া উপজেলা,জেলা-মৌলভীবাজার।আমরা তিন ভাই তিন বোন।তার মধ্যে আমি পঞ্চম।আমি ১৯৯৭ সালে প্রথম স্কুলে ভর্তি হই।প্রাথমিক শেষ করে ২০০২ সালে টিলাগাঁও আজিজুন্নেসা মডেল স্কুলে ভর্তি হই।মাধ্যমিকে পড়াশুনা করা কালীন আমার জীবনে শুরু হয় পারিবারিক দায়বদ্ধতা।

তখন আমি ছিলাম পরিবারে সর্বেসবা।জন্মের পর প্রাথমিক স্কুলে পড়াকালীন অনেক আদর,স্নেহ,মায়া,মমতায় বড় হয়েছি।

১৯৯৭ সালে বড় আপু এবং ২০০০ সালে মেঝ আপুর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে সেই ভালবাসা হারিয়ে যায়।

আর ২০০০ সালে বড় ভাই চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে চট্রগ্রাম চলে যান।অনেক একা হয়ে যাই।পরিবারে আমি হয়ে উঠলাম যাবতীয় দেখাশুনার পাত্র।আমার বাবা একজন মানসিক রোগী।আমার চাচা আমাদের অনেক অনেক সাহায্য করতেন।বাবা চাচার পাশাপাশি আমিও অনেক পরিশ্রমী হয়ে উঠি।২০০৪ সালে আমার ছোট আপুর বিয়ে হয়ে যায়।

তখন পরিবারে আমি আর আমার ছোট ভাই।আমার ছোট ভাই যে সে সবার ছোট।২০০৪ সালে দুর্ভাগ্যজনত কারনে এক হত্যা মামলায় সম্পুর্ন মিথ্যা মামলায় মেঝ আপার স্বামী অভিযুক্ত হন।তখন কিছুদিনের জন্য আপা আমাদের বাড়িতে থাকেন।তখন সমস্ত পরিবারের দায়িত্ব পড়ে আমার উপর।

আমি খুব সুন্দরমনে হাসিখুশিতে সেই দায়িত্ব পালন করি।

ক্লাস সিক্স থেকে শুরু করে ক্লাস এইট পর্যন্ত আমি স্কুলে ক্লাস করতে পারিনি।শুরু পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতাম।

তারপরও ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলাম না যেটা আমার পরীক্ষার রেজাল্ট বলে দিত।স্কুলে আমার নিয়মিত যাওয়া শুরু হয় ক্লাস নাইনে উঠার পর।নবম শ্রেনীতে পড়াকালীন প্রথম দিকে স্কুলে ক্লাস খুব কম হত।তখন পারিবারিক সব কাজের পাশাপাশি খেলাধুলা করতাম খুব বেশি।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৬ সালে আমগাছ থেকে আমার বাম হাতের সবগুলো হাড় ভেঙ্গে যায়।প্রায় ৩ মাস লাগে সুস্থ হতে।বড় ভাই যখন চট্রগ্রাম থেকে খবর পান তখন অনেক ক্ষেপে যান।উনি চট্রগ্রাম থেকে মনে করতেন আমি অনেক পড়াশুনা করছি,নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছি।

কিন্তু উনি কখনো বুঝতেন না আমি যে এত পরিশ্রম করছি বাড়িতে,উনাকে সময়মত টাকা পাঠাচ্ছি।

২০০৬ সালের শেষের দিকে মুলত আমি স্কুলে নিয়মিত হই।

যদিও বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করলে নিয়মিত ক্লাস করতে হয়।যাই হোক তখন থেকে মনোযোগী হই।

আমি ছোটবেলা থেকে একটু প্রতিবাদী মনমানসিকতার ছিলাম।কোন জায়গায় অসংগতি দেখলেই আমি প্রতিবাদ করতাম।তখন আমার মাধ্যমিক স্কুলে অনেক অসংগতি ছিল।

আমি এসব অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।সোচ্চার হতে গিয়ে স্কুলের একজন ছাত্র হিসেবে শিক্ষক ও গভার্নিং বডির কাছে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও আমি আমার প্রতিবাদী মনমানসিকতা থেকে বিচ্যুত হই নাই।কারন আমি জীবনে অন্যায়ের কাছে মাথা নত করি নাই।

যাই হোক সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০০৮ সালে এসএসসি পরিক্ষায় কৃতকার্যের সহিত উত্তীর্ণ হই।

ভর্তি হই বিজ্ঞান বিভাগে,লংলা আধুনিক কলেজে।

সত্যি বলতে পারিবারিক যাতাকলে কলেজেও খুব একটা ক্লাস করতে পারি নাই।তার মধ্যে আবার কলেজে যেতে যাতায়াত সমস্যা।২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আমার আমার দাদি অসুস্থ হয়ে পড়েন।দাদিকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে কলেজে যেতে পারিনি।২০০৯ সালের ১৯ এপ্রিল দাদি মারা যান।

প্রায় দেড় মাস কলেজে যেতে পারিনি।

সব সমস্যা শেষ করে কলেজে যাই।

জীববিজ্ঞান ক্লাসে যখন যাই।তখন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহোদয় আমার কাছে জানতে চান আমি কেন কলেজে আসি নাই এতদিন।আমি বলেছিলাম আমার দাদি অসুস্থ ছিলেন। দাদিকে নিয়ে আমি বিভিন্ন হসপিটালে যেতে হয়।অতঃপর দাদি মারা যান।এই কারনে কলেজে আসতে পারি নাই।

তৎক্ষনাৎ উনি বলেন,দাদি কয়দিন মারা যান?

উনি কথাটি সহ্য করতে না পেরে কথাকাটাকাটি ও বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ি।অবশেষে আমাকে কলেজ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

তারপর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়।নিয়মিত কলেজে যাই। এক বছর ড্রপ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক কৃতকার্য হই।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আমার সরকারি একটি চাকরি হয়।অন্যদিকে আমি সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স চান্স পাই।

কিন্তু আমার চাকরির কারণে অনার্স পড়া হয় নাই।

ঐ বছর ২০১১_১২ শিক্ষাবর্ষ অনার্স বাদ দিয়ে বিএসএস (পাস) কোর্স থেকে গ্রায়ুয়েশন শেষ করলাম।

সরকারি যে চাকরিতে আছি সেখানে হয়ত দুই/এক বছরের মধ্যে পদোন্নতি হবে।

আর আমার বিএসএস এর রেজাল্ট হলে এলএলবি/মাস্টার্স এ এডমিশন নিব।

সব মিলিয়ে চাকরি, লেখাপড়া ও পরিবার নিয়ে মোটামুটি ভাল আছি।

বিষয়: বিবিধ

৫৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File