বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা- ১৯৮১
লিখেছেন লিখেছেন বাংলারকথা ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০১:৫১ রাত
১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার উপর নেমে এসেছিল এক ভয়াল রাত এবং তাঁদের পরিবারকে নিমজ্জিত করেছিল অন্ধকারে। সেইসাথে পুরো জাতির কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছিল কলঙ্কের বোঝা।
জীবন-বাজী রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীনের ১০ বছরের মাথায় ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ষড়যন্ত্র ও প্রহসন মূলক বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এই অসীম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের ফাঁসির দিনে নজিরবিহীন-ভাবে সব সেনানিবাসে কারফিউ দেয়া হয়, যাতে সেনাসদস্য বা কর্মকর্তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে না পারেন। এ ষড়যন্ত্র ও প্রহসন মূলক বিচারের নির্দেশ-দাতা ছিল- মুক্তিযুদ্ধ ও মানবতা বিরোধী পাকিস্তান ফেরত কোলাবরেটর তৎকালীন সেনাপ্রধান হু মু এরশাদ। এ অন্যায়-অবিচারের আজ ৩৬ বছর। এই সূর্য-সন্তানদের পরিবারের সদস্যরা ৩৬ বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন- এ রহস্য উদঘাটনের, এর পুনঃ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের। ষড়যন্ত্র ও অবিচারের শিকার ঐ ১২ জন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের আমরা আর ফিরে পাবো না, কিন্তু প্রকৃত সত্যটা জানলে সবাই শান্তি পাবো। যে অন্যায় ও মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে যাঁরা মাটির নিচে শুয়ে আছেন, সত্য উদঘাটিত হলে তাঁদের পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও ঘনিষ্ঠরা স্বস্তি পাবেন, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন, স্বাধীন জাতি ও মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত উত্তরসূরি হিসেবে আমরাও কালিমা মুক্ত হতে পারব।
দেশ-মাতাকে স্বাধীন করা ও মুক্ত রাখার জন্য যাঁদের জীবন ছিল সর্বদা প্রস্তুত, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হলো পাকিস্তানি কোলাবরেটর হু মু এরশাদের ষড়যন্ত্রে। এর পুনঃ তদন্ত ও প্রচলিত আইনে বিচার চাই।
ঠিক ৩৬ বছর আগে ষড়যন্ত্র ও প্রহসন মূলক বিচারের মাধ্যমে ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন কারাগারে অসীম সাহসী ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়। ২ বছর পর ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৩ সালে আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় (লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মোহাম্মদ ফজলে হোসেন ওই সময় অসুস্থ থাকায় তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয় দুই বছর পর, ১৯৮৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর)। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল ‘সেনাবিদ্রোহে’র অভিযোগ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছিলো তথাকথিত অভিযোগ। কঠোর নিরাপত্তা আর গোপনীয়তার মধ্যে চট্টগ্রাম কারাগারের অভ্যন্তরে গঠিত এক সামরিক আদালতে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে পূর্ব থেকে তৈরি করা জবানবন্দীতে বলপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে তড়িঘড়ি করে মাত্র ১৮ দিনের এক প্রহসনমূলক বিচারে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় এদেশের ১৩ জন সূর্য-সন্তান মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে। এই ষড়যন্ত্র ও প্রহসন মূলক বিচারের মূল হোতা ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও মানবতা বিরোধী পাকিস্তান ফেরত পাকি কোলাবরেটর, তৎকালীন সেনাপ্রধান লে জে হু মু এরশাদ। সে এই প্রহসন মূলক বিচারের নির্দেশদাতা ও রায় প্রয়োগের স্বাক্ষরকারী।
বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর বহুসংখ্যক সদস্য বিভিন্ন সময়ে আর্মি এ্যাক্টের অপপ্রয়োগের শিকার হয়েছেন। অনেক সময় সামরিক কর্তৃপক্ষ আর্মি এ্যাক্টের অপব্যবহার করেছেন। নিজেদের সুবিধা যখন যেভাবে মনে হয়েছে তখন সেভাবেই ব্যবহার করেছেন; আর যাদের উপর ব্যবহার করা হয়েছে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে প্রাপ্য সমস্ত অধিকার থেকে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলারও সুযোগ হয়নি কারও। ফলে একটি নিয়মিত বাহিনীতে বিশৃঙ্খলার উদ্ভব ঘটেছে বার বার, ঘটেছে রক্তাক্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে‘র জিয়া হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঐ বৎসর জুলাই মাসে একটি ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শাল অনুষ্ঠিত হয়। আদালতটি বসে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে। ঐ কোর্ট মার্শালের পাঁচ সদস্যের বিচারকদের চারজনই ছিলেন পাকিস্তান ফেরত সেনা কর্মকর্তা; চেয়ারম্যান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বিদ্বেষী পাকিস্তান ফেরত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান খান (অব পিএসসি। অন্য চারজন সদস্য ছিলেন- ব্রিগেডিয়ার কোরায়েশী, লেঃ কর্নেল (পরে ব্রিগেডিয়ার) মকবুল হায়দার, লেঃ কর্নেল হারিস (অবঃ) এবং কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল) মতিউর রহমান বীর প্রতীক। কোর্ট মার্শালের পরপরই মতিউর রহমান ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পেয়ে কুমিল্লায় ব্রিগেড কমান্ডার হয়েছিলেন। কোর্ট মার্শালের ৫ সদস্য বা বিচারকের মধ্যে কর্নেল মতিউর রহমানই ছিলেন একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুক্তিযোদ্ধা হলেও মতিউর রহমানের নানা কর্মকাণ্ড ছিল মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কর্নেল আয়েন উদ্দিন বীর প্রতীক মতিউর রহমান সম্পর্কে বলতে গিয়ে যে অভিযোগ করেন তাহলো- “কর্তৃপক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে এমন একজনকে (মতিউর রহমান) বেছে নিয়েছিলেন যার কাছ থেকে মন মতো ব্যবহার পাবে। বিচারটি ছিল নীল নকশা বাস্তবায়নের। যার মূল উদ্দেশ্যে ছিল সেনাবাহিনীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নিধন ও সেনাবাহিনী থেকে বিদায়।”
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো এই যে, ঐ কোর্ট মার্শালকেই জিয়া হত্যার বিচারের কার্যক্রম বলেই অনেকে জানেন; এমনকি জ্ঞানী ব্যক্তিরাও। অথচ এ ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল। জিয়া হত্যার কোনো বিচার হয়নি। এটি ছিল সেনা বিদ্রোহের কোর্ট মার্শাল।
অভিযুক্তদের জন্য সেনা আইনে ডিফেন্ডিং অফিসার নিয়োগ করার বিধান আছে। রেওয়াজ আছে যে, অভিযুক্তদেরকে জিজ্ঞাসা করা- তাঁরা কাকে ডিফেন্ডিং অফিসার হিসেবে চান। সম্ভব হলে কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের পছন্দসই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে ডিফেন্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিবেন। এ রেওয়াজ ছিল এবং আছে। ১৯৮১’র জুলাইতে তিনজন কর্মকর্তাকে ডিফেন্ডিং অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তাঁরা হলেন-
(১) ব্রিগেডিয়ার আনোয়ার হোসেন (পরবর্তীতে মেজর, জাতীয় গোয়েন্দা নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান এবং রাষ্ট্রদূত হন),
(২) কর্নেল মুহাম্মদ আয়েন উদ্দিন, বীর প্রতীক, (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার ও মেজর জেনারেল, ময়মনসিংহের জিওসি হন এবং ২০ মে ১৯৯৬’র ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে প্রথমে চাকরি থেকে বরখাস্ত হন, পরবর্তীতে অবসরে যান) এবং
(৩) মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক, (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নামক রাজনৈতিক দলের প্রধান)।
ডিফেন্ডিং অফিসার হিসেবে যে তিনজন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করা হয় তাঁদের দায়িত্ব ছিল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্দোষ প্রমাণে সাহায্য করা এবং বিচারের প্রক্রিয়া যেন সঠিক ও আইনানুগ হয়, তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তাঁরা যে সেটা করতে পারেননি, তার মুল কারণ হয়তো ছিল তখনকার পরিবেশ-পরিস্থিতি। অভিযুক্তদের সকলেই থাকতেন চট্টগ্রাম কারাগারে। ডিফেন্ডিং অফিসারদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ ছিল অপ্রতুল। নিদারুণ মানসিক চাপের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়েছিলো ডিফেন্ডিং অফিসারদের। তৈরি করা হয়েছিল ভীতিকর-বৈরী-অসহযোগিতামূলক পরিবেশ। অভিযুক্তদের পক্ষে ডিফেন্ডিং অফিসারদের সীমাবদ্ধতার আরও কারণ হলো- সময় ও সুযোগের স্বল্পতা। এছাড়া আদালতের কার্যক্রমের পরিসমাপ্তিও ঘটেনি সুষ্ঠ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে। কোর্টটি ছিল ক্যামেরা ট্রায়াল। দর্শক হিসেবে বাইরের কারও প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ, যদিও ঠিকই কোর্টে থাকতেন কর্নেল আশরাফ (ডিজিএফআই প্রধান)। কোর্টের কার্যক্রমের উপর ছিল প্রচণ্ড রকমের বিধি-নিষেধ। কোর্টের কার্যক্রমের উপর প্রকাশ্যে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশে ছিল নিষেধাজ্ঞা। যদিও আসামী পক্ষের কৌঁসুলিগণ এর আওতায় পড়েন না, তবুও নিয়ম বহির্ভূতভাবে লিখিত আদেশের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের নিষেধ করা হয়। কোর্টের সময়ের পর তাঁদের কাছে থেকে কোর্ট প্রসিডিংয়ের সমস্ত কাগজাদি ফেরত নিয়ে নেয়া হয়। ফলে তাঁদের কাছে কোর্টের কোন কাগজ-পত্রাদিও আর থাকেনি।
অভিযুক্তদের সাথে তাঁদের আত্মীয়-স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত ছিল চট্টগ্রাম শহরের মাঝখানে অবস্থিত দেওয়ান হাট ওভারব্রিজের উত্তর মাথায় একটি টিলার ওপর অবস্থিত এমইএস ইন্সপেকশন বাংলো। অভিযুক্তদের প্রতি আচরণ ছিল অমানবিক। প্রচণ্ড মার, দু’হাতের সবকটা নখ উপড়ে ফেলা, বৈদ্যুতিক শক, জননেন্দ্রিয় দিয়ে কাঁচের রড প্রবেশ করানো, হেন কোনো নির্যাতন নেই যা করা হয়নি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রতিষ্ঠিত কোর্টে যখন অভিযুক্তদের হাজির করা হতো, তখন তাঁদের পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে আনা হতো। বিচারের আগে ও পরে তাঁদেরকে রাখা হতো কনডেম সেলে- যেন অভিযুক্তরা বিচারের রায়ের আগেই মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী। এতেই বুঝা যায়- বিচারের রায় আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল; বিচারটা ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
১৯৮১ সালের ১ জুন থেকে ৩ জুন পর্যন্ত – এই সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হয়। বিচার শুরু হয় ১০ জুলাই ৩১ জন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে। ১৮ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৮ জুলাই কোর্ট মার্শাল শেষ করে ঐদিনই অভিযুক্তদের বিভিন্ন কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রথমে ১২ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয় ১১ আগস্ট। এই মৃত্যুদন্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয় ৩ সেপ্টেম্বর এবং আবেদন খারিজ করে দেয়া হয় ৭ সেপ্টেম্বর। ঐদিনই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে শুনানি। একইভাবে আপীল বিভাগেও রিট অগ্রাহ্য হয়। ২২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে দ্রুততার সাথে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, যশোর ও রাজশাহী কারাগারে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এভাবেই ফাঁসির মঞ্চে একে একে নিভে গেল ১২টি তারুণ্যদীপ্ত মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ। অসুস্থ পঙ্গু অবস্থায় থাকার ফলে অপর একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ একইভাবে হরণ করা হয় ১৯৮৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন:-
১.ব্রিগেডিয়ার মহসীন উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), কমান্ডার, ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড।
২.কর্নেল নওয়াজেশ উদ্দিন, কমান্ডার, ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেড।
৩.কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ (বীর প্রতীক), কমান্ডার, ৬৫ পদাতিক ব্রিগেড।
৪. লেঃ কর্নেল এ ওয়াই এম মাহফুজুর রহমান (বীর বিক্রম), সর্বাধিনায়কের সচিবালয় থেকে রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব।
৫.লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন (বীর প্রতীক), সহকারী পরিচালক, অর্ডিন্যান্স সার্ভিসেস, ২৪ পদাতিক ডিভিশন।
৬.লেঃ কর্নেল শাহ মোহাম্মদ ফজলে হোসেন, অধিনায়ক, ৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
৭.মেজর এ. জেড গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, উপঅধিনায়ক, ১১ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
৮.মেজর রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া (বীর প্রতীক), ব্রিগেড মেজর, ৬৫ পদাতিক ডিভিশন।
৯.মেজর কাজী মুমিনুল হক, উপঅধিনায়ক, ২৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
১০. মেজর মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান, অফিসার কমান্ডিং, ৫৭৫ ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
১১.ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, ৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
১২.ক্যাপ্টেন জামিল হক, ২১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
১৩.লেঃ মোহাম্মদ রফিকুল হাসান খান, ৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
(৬ নং তালিকার লেঃ কর্নেল শাহ মোহাম্মদ ফজলে হোসেনের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয় ১৯৮৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।)
বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্তরা ছিলেন:-
১. মেজর শওকত আলী বিপি ৭ বছর,
২. মেজর লতিফুল আলম চৌধুরী, ১০ বছর,
৩. মেজর ফজলুল হক ১৪ বছর,
৪. মেজর রেজাউল করিম রেজা ১০ বছর,
৫. মেজর মারুফ রশীদ ৭ বছর,
৬. ক্যাপ্টেন ইলিয়াস ১৪ বছর,
৭. ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন ১৪ বছর,
৮. ক্যাপ্টেন সৈয়দ মুনীর ১৪ বছর,
৯. ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন-৭ বছর ও
১০. লেঃ মোসলেহউদ্দিন আহমদ-৭ বছর।
১০ বছরের কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্ত দুইজনকে পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মওকুফ করে দেন। কিন্তু তাঁদের চাকুরী ও সুবিধাদি কেড়ে নেয়া হয়। সেই দুইজন হলেন-
১. মেজর দোস্ত মুহাম্মদ (Dost Mohammad Sikder),
২. মেজর কাইয়ুম।
দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার কারণে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন- মেজর খালেদ, মেজর মঈনুল ইসলাম ও মেজর মোজাফফর। মেজর খালেদ ১৯৯১ সালে ব্যাংককে মৃত্যুবরণ করেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। মেজর মঈনুল ইসলাম ২০০৬ সালে দেশে এসে মামলা নিষ্পত্তি করেন। এবং মেজর মোজাফফর আজও ফিরতে পারেননি দেশে।
বাকি তিনজনকে প্রলোভন দেখিয়ে রাজস্বাক্ষী করে মুক্ত করে দেয়া হয় অভিযোগ থেকে। এ মামলার পর বহু সংখ্যক সেনা কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাগণ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ পেয়েছিলেন কিনা, বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কেননা, কোর্ট মুলতবি হওয়ার কারণে কেউই জানতেন না মৃত্যুদণ্ডাদেশ সম্পর্কে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়া হত্যার পর সেনা বিদ্রোহের এ বিচারটি সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ে দ্রুততার সাথে শেষ করা হয়। ১৮ দিনে বিচার শেষ করে ঘটনার চার মাসের মধ্যে ফাঁসি দেয়া হয়। তখন সেনা প্রধান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পাকি কোলাবরেটর, পাকিস্তান ফেরত সেনা কর্মকর্তা লে: জে. হু মু এরশাদ। তিনিই ঐ সামরিক আদালতের আদেশ দেন এবং শাস্তি নিশ্চিতকরণে স্বাক্ষর করেন। যদি কোনো সামরিক কর্মকর্তা সামরিক বাহিনীর চাকরি হতে বরখাস্ত হন বা জেল হয় কিংবা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন, সে ক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিতে হয়। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।
এখানে যে বিষয়টি পরিষ্কার করা জরুরী তাহলো- এটি ছিল জেনারেল কোর্ট মার্শাল (জিসিএম-GCM, General Court Martial)। যা সেনা বিদ্রোহ বা রাষ্ট্রপতি হত্যাকান্ডের মতো মারাত্মক অভিযোগের ক্ষেত্রে এ রকম জেনারেল কোর্ট মার্শাল (জিসিএম-GCM, General Court Martial) হতেই পারে না এবং নীতিগতভাবে উচিতও নয়, পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নাই। সামরিক বাহিনীতে এরকম আদালতকে নিম্ন আদালত হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তা ছোট ছোট অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে করা হয়। এসব ক্ষেত্রে করতে হয় ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শাল (এফজিসিএম- FGCM, Field General Court Martial)। এ ক্ষেত্রে হু মু এরশাদ তাঁর গোপন ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য এ কুট-কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এর পেছনের মূল কারণ হলো- প্রথমত, জেনারেল কোর্ট মার্শাল (জিসিএম-GCM, General Court Martial) হলে সামরিক বাহিনীর প্রধানই সব নির্দেশ ও তা বাস্তবায়নের এখতিয়ার রাখেন। রাষ্ট্রপতির অনুমতি ও অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে না। হু মু এরশাদ তা করেছে তার অসৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। দ্বিতীয়ত, ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শাল (এফজিসিএম- FGCM, Field General Court Martial)-এর ব্যাপারে সমস্ত বিষয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমতি, অনুমোদন ও তা নিশ্চিতকরণের প্রয়োজন একটি অত্যাবশ্যক বিষয়। রাষ্ট্রপতি ছিলেন একজন সাবেক বিচারপতি এবং তিনি ভাল করেই জানতেন- এরকম বিচার ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শাল (এফজিসিএম- FGCM, Field General Court Martial) ছাড়া হয় না। এরশাদ তা এড়িয়ে জেনারেল কোর্ট মার্শাল (জিসিএম-GCM, General Court Martial)-এর ব্যবস্থা করেছে ঐ মামলায় তার ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে। এরশাদ হয়তো এটা করেছে তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে এবং তা করেছে তার গোপন উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য। তার প্রমাণ তো মিলে পরের বছর ১৯৮২’র ২৪ মার্চ সামরিক আইন জারি করে তার ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে।
জিয়া হত্যাকান্ডের পর সেনা বিদ্রোহের বিচারের নামে গঠিত কোর্ট মার্শালটি ছিল সামরিক বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা ক্লিনজিং মিশন। আর এর নেতৃত্বে ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও মানবতা বিরোধী পাকি কোলাবরেটর, পাকিস্তান ফেরত সেনা কর্মকর্তা তৎকালীন সেনা প্রধান লে জে হু মু এরশাদ। জিয়া হত্যাকান্ডের অল্প কিছুদিন আগে লেঃ কর্নেল মতিউর রহমান ঢাকায় সেনা সদরদপ্তরে তৎকালীন সেনা প্রধান এরশাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং এদের মধ্যে ঘন্টারও উপর রূদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছিল। এই মতিউরই স্বয়ংক্রিয় অস্র দিয়ে একঝাঁক গুলি করে জিয়াকে হত্যা করে। জেনারেল মঞ্জুরকে অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী করে প্রচারিত এরশাদের ভাষ্য প্রমাণ করে না- জেনারেল মঞ্জুরই অভ্যুত্থানের মূল নায়ক। কারণ অভ্যুত্থান পরবর্তী মঞ্জুরের কথাবার্তা ছিল যথেষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ ও অস্পষ্ট। আরও যে বিষয়টি বিবেচনায় আনা দরকার তা হলো, কেন অভ্যুত্থান পূর্ব সময়ে অন্যান্য সেনানিবাস থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছিল? সেটা কি মঞ্জুরের ইচ্ছা বা আগ্রহে হয়েছিল, নাকি কারও অসৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে? জেনারেল মঞ্জুর বেঁচে থাকলে হয়তো এসব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যেতো। আত্মসমর্পণের পরপরই মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। পুলিশের কাছে মঞ্জুরের আত্মসমর্পণের খবর পেয়ে তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সদরুদ্দিন সেনাপ্রধান এরশাদকে বলেছিলেন, মঞ্জুরকে যেন হত্যা করা না হয়। মঞ্জুর হত্যার পর সদরুদ্দিনকে এরশাদ জানিয়েছিলেন, একদল উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক মঞ্জুরকে হত্যা করেছে। প্রতি উত্তরে ক্ষব্ধকন্ঠে সদরুদ্দিন এরশাদকে বলেছিলেন, ‘এ গল্প অন্য কাউকে বলুন। অ্যাট লিস্ট ডোন্ট আস্ক মি টু বিলিভ ইট।’ এর ক’দিন পর এই মুক্তিয়োদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকেও বিমানবাহিনীর প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। যদিও এরশাদের ভাষ্য ছিল, একদল উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করেছে; কিন্তু মঞ্জুরের মাথায় একটি মাত্র পিস্তলের গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।
শহীদ মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সেনাবাহিনীর চিকিৎসক কর্নেল এ জেড তোফায়েল বলেছেন, “মাথায় একটি গুলি লেগেই জেনারেল মঞ্জুর মারা যান; অনেকগুলো গুলি তাঁর শরীরে লাগেনি। ‘ক্ষুব্ধ মানুষ’ বা তাঁর গার্ডদের সঙ্গে এদের বন্দুকযুদ্ধের সময় তাঁর শরীরে একাধিক গুলিবিদ্ধ হয়নি।”
‘ক্ষুব্ধ সৈনিকেরা’ নাকি উত্তেজিত হয়ে জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করেছে- এরকম অবিশ্বাস্য গল্প ফেঁদেছিল এরশাদ। সে এই ‘গল্প’ তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড টি স্নাইডারকেও বলেছিল। মঞ্জুর হত্যা সম্পর্কে স্নাইডার লিখেন, “মঞ্জুর হত্যাকান্ড সম্পর্কে এরশাদ বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে উল্লেখ করেন যে, ‘চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কোনো কমান্ড কাঠামো না থাকায় একদল ক্রুদ্ধ সৈনিক (অ্যান অ্যাংগ্রি মব) তাঁকে প্রথমে মারধর এবং পরে গুলি করে হত্যা করে।”’ তবে এরশাদের এই ’গল্প’ মার্কিন মেনে নেয়নি। এর প্রমাণ মিলে ৫ জুন’ ১৯৮১’তে ওয়াশিংটনে পাঠানো দূতাবাসের তারবার্তায়- “কী প্রেক্ষাপটে মঞ্জুর খুন হলেন, তা অস্পষ্ট। মঞ্জুর হত্যাকান্ড বিরাট সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করেছে। তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে বহু ধরনের গল্প চালু আছে। অনেকেই সন্দেহ করেন যে, তাঁকে সেসব মহল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে যাঁরা শঙ্কিত ছিলেন যে মঞ্জুর যদি তাঁর অভ্যুত্থানের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করেন, তাহলে তাদেরও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মঞ্জুর হত্যা সম্পর্কে দুই ধরনের ভাষ্য এই সংশয়কে তীব্রতা দিয়েছে।” মঞ্জুর হত্যা সম্পর্কে ৩ জুন, ১৯৮১’তে সরকারি প্রেসনোটে বলা হয়েছিল- “’কতিপয় উত্তেজিত সশস্র ব্যক্তি’ এবং মঞ্জুরের দেহরক্ষীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে আহত হয়ে মঞ্জুরের মৃত্যু ঘটেছে। এই যুদ্ধ হয় মঞ্জুর ও তাঁর সহযোগীদের ‘ছিনিয়ে’ নেওয়ার চেষ্টাকালে। তাঁর দুই সহযোগী লে. কর্নেল মতিউর রহমান ও লে. কর্নেল মেহবুবুর রহমান কথিত মতে ‘ঘটনাস্থলেই’ নিহত হয়েছেন।”’ ১ জুন, ১৯৮১ আপত্মসমর্পণের পর মঞ্জুরকে রাখা হয় চট্টগ্রাম শহরের বাইরে, হাটহাজারী থানায়। তখন মঞ্জুর পুলিশকে অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য তাঁকে যেন সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া না হয়। ওই সময় এয়ার ভাইস মার্শাল সদরউদ্দীন ও আইজিপি এ বি এম জি কিবরিয়া উভয়েই ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক উত্তপ্ত বৈঠকে রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে অনুরোধ করেন, মঞ্জুরকে যেন সেনা হেফাজতে তুলে দেয়া না হয়। ওই বৈঠক চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট বের হয়ে হাটহাজারী থানায় প্রবেশ করে মঞ্জুরকে তাদের হেফাজতে নেয়ার চেষ্টা চালায়। সে সময় পুলিশের আইজিপি এ বি এম জি কিবরিয়ার নির্দেশে হাটহাজারী থানার পুলিশ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাত্তারের নির্দেশ ছাড়া মঞ্জুরকে সেনা হেফাজতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এয়ার ভাইস মার্শাল সদরউদ্দীন ও আইজিপি কিবরিয়া মঞ্জুরের নিরাপত্তা নিয়ে যে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, রাষ্ট্রপতি সাত্তার তাতে কর্ণপাত না কেরে কথা রাখেন জেনারেল হু মু এরশাদের। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত- যেভাবেই হোক না কেন, সাত্তারের কর্ম মঞ্জুরের বিধিলিপি নির্ধারণ করে দেয়। ১জুন থেকে ৩ জুন, এই তিনদিনের মধ্যে হত্যা করা হয়- মেজর জেনারেল মঞ্জুর, দুই লেঃ কর্নেল মতিউর রহমান ও মেহবুবুর রহমানকে। প্রশ্ন হলো, এঁদের বিচারের সম্মুখীন না করে কেন হত্যা করা হয়েছিল?
সেনা বিদ্রোহের নামে ষড়যন্ত্র ও প্রহসন মূলক কোর্ট মার্শালে যাঁদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তাঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা। সে সময় চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ব্রিগেড কমান্ডার চারজনের তিনজনই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। আর এই তিনজনকেই অভিযুক্ত করে কোর্ট মার্শাল করা হয় এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এই তিনজন হলেন- ব্রিগেডিয়ার মহসীন উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, কর্নেল নওয়াজেশ উদ্দিন এবং কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বীর প্রতীক। অপর ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার আবদুল লতিফ। তিনি পাকিস্তান ফেরত সেনা কর্মকর্তা এবং তাকে কোর্ট মার্শালে অভিযুক্ত করা হয়নি। এছাড়া ব্রিগেডিয়ার আজিজুল ইসলাম জিয়া হত্যাকান্ডের পর যিনি জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে ছিলেন, তাঁকেও অভিযুক্ত করা হয়নি এবং তিনিও ছিলেন পাকিস্তান ফেরত সেনা কর্মকর্তা। ব্রিগেডিয়ার মহসীন, কর্নেল নওয়াজেশ, কর্নেল রশীদ, লেঃ কর্নেল মাহফুজ, লেঃ কর্নেল দেলওয়ার, মেজর রওশন ইয়াজদানী, মেজর মুমিনুল হক প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা সেনা বিদ্রোহে জড়িত ছিলেন- আদালতে প্রমাণ না হওয়ার পরও এঁদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
সামরিক আদালতে সেনা বিদ্রোহের এই ষড়যন্ত্র ও প্রহসনের বিচারের পরে সাধারণ আদালতে জিয়া হত্যার আর বিচার হয়নি। বিচারের জন্য বাদীপক্ষ, পরিবার কিংবা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আগ্রহ না দেখানোর কারণে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন, যা ২০০১ সালের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে গৃহীত হয়। ১৯৮১ সালের ১ জুন সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনারের দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা ছিল ১০ জন। কোর্ট মার্শালে যাঁদের ফাঁসির মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজন ছিলেন এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
জিয়া হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সেনা বিদ্রোহের বিচারের নামে কোর্ট মার্শালের গোপন বিচারে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাকে। ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ১২ জন, দুই বছর পরে ১৯৮৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকিস্তান প্রত্যাগতদের মধ্যে ওই সময়ে যে দ্বন্দ্ব ছিল, তার পরিণতিতেই জিয়া হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সেনা বিদ্রোহের বিচারের নামে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এই কোর্ট মার্শাল ছিল বিচারের নামে নিছক প্রহসন। এটার উদ্দেশ্য ছিল, জিয়া হত্যার মূল নায়ক ও সহযোগীদের রক্ষার ব্যবস্থা এবং সেনাবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাশূণ্য করা।
কোর্ট মার্শালের বিচার-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুর রহমান বীর উত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আইন উদ্দিন বীর প্রতীক, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকও মনে করেন, জিয়া হত্যার বিচারে দণ্ডিতরা ন্যায়বিচার পাননি। নিরপরাধ কর্মকর্তাদের বিচারের নামে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম সেনা বিদ্রোহ মামলার জন্য গঠিত কোর্ট মার্শালের কোর্ট অব ইনকোয়ারির তিন সদস্যের কমিটির অন্যতম মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুর রহমান বীরউত্তম তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা তদন্ত আদালতে ঘটনা উদঘাটন করতে পেরেছি, কিন্তু এ ব্যাপারে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা বা যারা দায়ী ছিল তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা কিন্তু আমরা জানতে পারিনি। যে ত্বরিত ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরো বিচারকার্যটি সমাধা করা হয় এবং প্রথমদিকে জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়, তাতে মনে হয়, পুরো জিনিসটিকে আড়াল করার একটি চেষ্টা ছিল। পুরো ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনের জন্য আবার নতুন করে বিচার, বিবেচনা এবং পর্যালোচনা করার প্রয়োজন আছে। যারা দণ্ডিত হয়েছেন, তাঁদের সন্তানরা যে কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছেন, তা কি সত্যি তাঁদের প্রাপ্য? এসবের জন্য আমি মনে করি, এই পুরো জিনিসটিই আবার নতুনভাবে তদন্ত হওয়ার প্রয়োজন আছে।”
সেনা আইনে অভিযুক্ত প্রত্যেককে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও ৩১ জনের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল মাত্র তিনজন সেনাকর্মকর্তা। এই তিন সদস্যের টিমের দুইজন ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আইন উদ্দিন বীর প্রতীক ও মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। তাঁরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে গিয়ে তাঁরা হৃদয়বিদারক দৃশ্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বন্দিদের ওপর যে অত্যাচার করা হয়েছিল তা বর্ণনা করার মতো নয়। প্রত্যেকেরই গায়ের চামড়া প্রায় উঠিয়ে ফেলা হয়েছিল, নখ উপড়ানো ছিল এবং তাঁদের হাতে-পায়ে বেড়ি বাঁধা ছিল। নির্যাতন করে অভিযুক্তদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। অভিযোগ প্রমাণের আগেই তাঁদেরকে ফাঁসির আসামিদের জন্য তৈরি কনডেম সেলে রাখা হয়। কৌঁসুলি হিসেবে তাঁদেরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা যখন বন্দিদের সাক্ষাৎকার নিতেন, তখন ডিজিএফআইয়ের লোকেরা উপস্থিত থাকত।
মেজর জেনারেল (অবঃ) মোহাম্মদ আইন উদ্দিন বীরপ্রতীক তাঁর এক সাক্ষাতকারে বলেন, “অভিযোগ প্রমাণের জন্য সাক্ষী হিসেবে যাদের আনা হয়েছিল তাদের মধ্যে যে কয়েকজন মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে, তা আমরা জেরার মাধ্যমেই প্রমাণ করতে পেরেছিলাম।” তিনি এও বলেন, “এত তড়িঘড়ি করে এত বড় একটি কোর্ট মার্শাল করা হয়েছে! এতজন অফিসারের একসঙ্গে কোর্ট মার্শাল বিশ্বের ইতিহাসে নেই।” ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বিচার পাবে কি না সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি এক সাক্ষাতকারে কালের কন্ঠকে বলেন, “যিনি ঐ বিচারের কলকাঠি নেড়েছিলেন তিনি তো সরকারে রয়েছেন। রাষ্ট্রপতির এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা মুক্তিযোদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিতে পারে।”
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বক্তব্য, “আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, সেনাবাহিনীর আইন মোতাবেক তাঁরা ন্যায়বিচার পাবেন। কিন্তু আমরা এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, সবাই ন্যায়বিচার পাননি। আমি দাবি করছি, আরেকবার কোর্ট মার্শাল করুন। এটি রিভিউ করুন।”
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে যে রিট হয়েছিল, তার আইনজীবী হিসেবে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ড. এম জহির (প্রয়াত), অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক (প্রয়াত), অ্যাডভোকেট আমিনুল হক প্রমুখ। আপিল আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ওই রাতেই রিভিউয়ের আবেদন নিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের বাসায় গিয়েছিলেন আইনজীবীরা। ড. কামাল হোসেন তাঁর এক সাক্ষাৎকার বলেন, প্রধান বিচারপতি তাঁদের বসিয়ে রেখে দোতলায় যান। কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলে এসে তাঁদের আবেদন রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে জানান। ড. কামাল মনে করেন, আজ পর্যন্ত এই মামলার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই মামলা পুনর্বিবেচিত হওয়া উচিত।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোও এই গোপন বিচারের জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান লেঃ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেই দায়ী করেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের লেখা কারাগারের চিঠিতেও এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ফাঁসিতে হত্যার শিকার একজন মেজর কাজী মমিনুল হক। জিয়াউর রহমান হত্যার সময় চট্টগ্রামের ঘাঘরা রাঙামাটিতে ২৮ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। কালের কণ্ঠকে দেয়া মমিনুল হকের ছোট ভাই কাজী মোজাম্মেল হকের বক্তব্য, “আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ অফিসার ছিলেন। আমিও মুক্তিযুদ্ধ করেছি। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমরা জানি, আমাদের ভাই নিরপরাধ। আমরা ভাইকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু মানুষ জানুক, আসলে কী ঘটেছিল। তাঁদের হৃত গৌরবটা ফিরে আসুক।”
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় কর্নেল এম এ রশিদ বীর প্রতীক কাপ্তাইয়ে ৬৫ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কোর্ট মার্শালের বিচারে তাঁরও ফাঁসি হয়। কর্নেল রশিদের ছেলে ইকবাল রশিদ রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, “জিয়া হত্যার বিচারের সময় যে ক্যামেরা ট্রায়াল হয়েছে, তা ছিল বিচারের নামে প্রহসন। সেই হত্যাকাণ্ডের রাতে আমার বাবা রাঙামাটিতে ছিলেন। তারপরও তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা অফিসার হওয়ার কারণেই তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।' তিনি বলেন, তৎকালীন সেনাপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসাররা ছিলেন পাকিস্তান প্রত্যাগত। মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের প্রতি তাঁদের আক্রোশ ছিল। বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদেরই হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে যাঁর যত বড় অবদান ছিল, তাঁকে তত বড় শাস্তি দেওয়া হয়েছে। অথচ পাকিস্তান প্রত্যাগত একজন অফিসারেরও সাজা হয়নি, চাকরিও যায়নি।” ছোট ছেলে ইমরান রশিদ খান তাঁর এক স্ট্যাটাসে বলেন, “আশায় আছি এ হত্যাকাণ্ডের একদিন বিচার হবে । আমরাও আমাদের বাবার হত্যাকারীর কঠিন শাস্তি চাই।”
ব্রিগেডিয়ার মহসীন আহমেদের মেয়ে ফারাহ মহসীন কবিতা বলেন, “চোখ ওঠার কারণে আব্বু বাসায় ছিলেন এবং ছুটিতে ছিলেন। অথচ উনাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।’ কষ্ট করে দেশ স্বাধীন করলো অথচ তাঁদেরকেই অপমানিত করে মেরে ফেলা হলো। এই ১২জন আর্মি অফিসারের একটাই দোষ ছিল তাঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা।”
ফাঁসির শিকার হওয়া মেজর এ জেড গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদের মেয়ে মাহিন আহম্মেদ সুমী কালের কন্ঠকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, “ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে আদালতে যাওয়ার জন্য আমরা মরিয়া হয়ে আছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাবা জাতির জনক হত্যার বিচার পেলেন; আমাদের আরজি, তিনি এখন আমাদের জন্য কিছু করবেন।”
বিচারের নামে দেওয়া 'মিথ্যা' কলঙ্ক থেকে মুক্তি এবং হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এই মামলার রিভিউ চায়।
২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার, বিকাল ৪ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘২৩ সেপ্টেম্বর স্মৃতি সংসদ’-এর উদ্যোগে “১৯৮১ সালের তথাকথিত সেনাবিদ্রোহের প্রহসনমূলক সাজানো বিচারে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়” শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই বিচার ছিল অবৈধ। সেনাবাহিনীর যথার্থ নিয়মে এই বিচার হয়নি। বর্তমান সরকার এবিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। ১৩২ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে এই প্রহসনমূলক বিচারকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট উত্থাপন করবো। যাতে করে প্রতিহিংসার স্বীকার হওয়া পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং আইনের শাসন বাস্তবায়ন করা হয়। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা নিধনকে প্রচণ্ড ঘৃণা করি। এই বিচার ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই বিচার ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।’ ঐ সেমিনারে সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ বলেছিলেন, ’১৩ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যার বিচার হওয়া উচিত।’ উল্লেখ্য সেনা কর্মকর্তাদের কোর্ট মার্শালে বিচারের বিষয়ে ২০০১ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছিল- কোর্ট মার্শাল ও ফাঁসির রায় অন্যায্য ও আইন বহির্ভূত ছিল। তাই কোর্ট মার্শালের রায় বাতিল করে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন ও ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার সুপারিশ করেছিল। ঐ কমিটির সভাপতি ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ১৬ বছর এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ৩ বছর পার হলো, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ আজও নেয়া হয়নি।
৩৬ বছর পূর্বে সেনা বিদ্রোহের বিচারের নামে ঐ সূর্যসন্তানদের উপর যে কালিমা লেপন করে দেয়া হয়েছিল, ৩৬ বছর যাবত স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরাও যে কলঙ্কের বোঝা বয়ে চলেছি- তা অবসানের লক্ষ্যে আসুন আওয়াজ তুলি- সামরিক আদালতের এই ষড়যন্ত্র ও প্রহসনমূলক বিচারের পুনঃতদন্তসহ দায়ী ব্যক্তিদের বিচার চাই। এবং সুবিচার নিশ্চিত করে স্বাধীন জাতি হিসেবে কলঙ্ক-মুক্ত হই।।
বিষয়: বিবিধ
৯০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন