সরকারের বর্তমান অবস্থা
লিখেছেন লিখেছেন কমরেড মাহফুজ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০২:৫২:৩৪ দুপুর
শেখ হাসিনার তৃতীয় সরকারের প্রথম তিন বছর বলতে গেলে ‘হেসেখেলে’ কেটেছে। বিরোধী দলের কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল না, বিএনপি জোটের তিন মাসের ‘অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী’ অবরোধ ছাড়া। গণমাধ্যমও মোটামুটি আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নিয়েছে, সমালোচনার ধার বাড়িয়ে সরকারের কোপানলে পড়তে চায়নি। তারপরও একটু এদিক-ওদিক হলেই সরকার ঘাড়ের ওপর খাঁড়া ঝুলিয়ে বলছে, ‘নড়চড় করা যাবে না।’
কিন্তু চতুর্থ বছরে না-পড়তেই সরকারের সামনে একের পর এক বিপদ এসে হাজির, যার বেশির ভাগ মানবসৃষ্ট, কিছুটা প্রাকৃতিক। চলতি বছরের এপ্রিলে হাওরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানিতে ডুবে গেলে ক্ষতি হয় লাখ লাখ একর জমির ফসল। তদন্তে দেখা যায়, ফসলডুবির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং দলীয় ঠিকাদারেরাই দায়ী। অনেকে সময়মতো বাঁধের কাজ না করেই টাকা তুলে নিয়েছেন। রাঘববোয়ালদের হদিস না পেলেও দুর্নীতি দমন কমিশন কয়েকজনকে পাকড়াও করেছে।
হাওরের বিপর্যয় না কাটতেই চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ধস দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। উন্মূল উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও মূলত মানবসৃষ্ট। প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেবেই। আবার পাহাড়ধসের ক্ষত না শুকাতে ভয়াবহ বন্যার প্রকোপে বিপন্ন হয়ে পড়ে গোটা উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। হাওর ও উত্তরাঞ্চলের বন্যায় ধান উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং চালের মজুত তলানিতে এসে ঠেকে। কয়েক মাসের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। গত বছরের হিসাব ধরলে এই বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। এরপর মন্ত্রী-আমলারা দেশ-বিদেশে দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। অবস্থা এতটাই নাজুক যে যখন মিয়ানমার সরকার জাতিগত নিপীড়ন চালিয়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে, তখন সেই সরকারের কাছেই চাল কিনতে খাদ্যমন্ত্রীকে ধরনা দিতে হলো। এখন তারা বলছে, আগের দামে চাল দেওয়া যাবে না। বেশি দাম দিতে হবে।
সংকট উত্তরণে গত সপ্তাহে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তিন মন্ত্রীর বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ব্যবসায়ীরা যেভাবে মন্ত্রীদের ওপর হম্বিতম্বি করলেন, তাতে মনে হলো সরকার আসলেই অসহায়। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো তাঁদের মানতে হয়েছে। এরপরও বাজারে চালের দাম কমবে কি না, কিংবা কমলেও কতটা কমবে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কেননা ব্যবসায়ীরা যখন সরকারকে চালের মজুত নিয়ে চ্যালেঞ্জ করছেন, তখনই বিভিন্ন আড়তে অভিযান চালিয়ে চাল উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বন্যার জন্য উত্তরাঞ্চলে এবার আমনের ফলন কম হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাহলে বাড়ল কেন? এর পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকলে তাঁদের ধরা হচ্ছে না কেন? সেই অসাধুদের পেছনে কোন সাধুরা আছেন, তা খুঁজে বের করুন। অতীতে চালের দাম বৃদ্ধি কোনো সরকারের জন্যই স্বস্তিকর হয়নি। এখন লোকজন বলাবলি করছে, আওয়ামী লীগ ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলে ক্ষমতায় এলেও এখন মানুষ ৫০ টাকা কেজি চাল (মোটা) খাচ্ছে। চিকন চালের দাম আরও বেশি, ৭০ টাকা। আর চালের দাম বাড়লে নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষগুলোই বেশি কষ্ট পায়।
বিষয়: রাজনীতি
৬৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন