পুরুষের কোন মন নেই

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবদুল্লাহ ১৭ অক্টোবর, ২০১৭, ০৪:৩৬:৩১ বিকাল

বিয়ে সিরিজ

গল্পঃ পুরুষের কোন মন নেই



রাজু আজ বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে। বয়সটাও বেড়ে গেছে। কি আর করা নষ্ট সমাজ ব্যবস্থায় চাকরী পেতে গিয়ে বার্ধক্য এসে যায়। রাজুর মাথার কয়েকটা চুলেও পাক ধরেছে। দূর থেকে বুঝা যায় না। পাত্রীপক্ষ মাথার কাছে এসে নিশ্চয়ই চুল দেখবে না। ভয়ের কারন নেই। তারপরও শরীরের বয়সত বেড়েছে। লুকাও আর না লুকাও এটাই সত্য। তার ৫ বছরের ছোট বোন মিনার ৭ বছর আগেই বিয়ে হয়েছে। দুটা মেয়েও হয়েছে। আর রাজু এখনো বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে। দেখছে বললে ভুল হবে। সঠিক হল সবে মাত্র শুরু করেছে। রাজু ভাবে, পুরুষরা আসলে কতটাইনা পিছিয়ে। অথচ পৌরুষত্ব দেখাতে গিয়ে সব নিরবে সহ্য করতে হয়। ব্যথা পেলেও “অ্যা” করা যায় না। কারন সমাজ তাকে নাম দিয়েছে পুরুষ। সে কাদতে পারে না, সে অধিকার চাইতে পারে না। সমাজ শিখিয়েছে এসব চাওয়া পুরুষদের জন্য লজ্জাকর।

রাজু বহু কষ্টে বার্ধক্যের প্রথমাংশে মাদ্রাসার শিক্ষকতার চাকরী পেল। বেতন যা পাবে তা দিয়ে ছোট পরিবার চলে যাবে। যদিও মানুষ মাদ্রাসা শিক্ষকদের কেন যেন দাম দিতে চায় না। মানুষের দাম দিয়ে কি হবে, আল্লাহর কাছে সম্মানিত হলেই হবে, রাজু ভাবে। থাকুক না জীবনটা ঝাকঝমকতা মুক্ত। সাদামাটা জীবন মন্দ কি। চক্ষু শীতলকারি একটি স্ত্রী থাকলেই এখন জীবন পরিপূর্ণ। সস্তা মাছ- শাকসবজিই হয়ত তার হাতের ছোয়ায় অমৃত তুল্য হবে। মোটা কাপড়েই হয়ত তাকে লাগবে রানীর মত। দামি মানেই সুন্দর তাত না।

পাত্রীর বাবার সামনে বসে আছে রাজু। মেয়েদের অবস্থা প্রতিপত্তি ভালোই। মধ্যবিত্ত গোছানো ড্রয়িং রুম। রুমে একটা চে গুয়েভারার ছবিও ঝুলছে। এই জিনিসটা রাজুর ভালো লাগে নাই। এভাবে ছবি ঝুলানো ঠিক না। বিয়ের পর শ্বশুরকে বুঝাতে হবে ইসলামে এর অনুমোদন নাই।

পাত্রীর বাবাঃ তা তুমি কি কর?

রাজুঃ জি, মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করি। বায়োডাটাতে বিস্তারিত বলেছি।

পাত্রীর বাবাঃ হুম। তা এত দেরিতে বিয়ে করছ কেন?

রাজুঃ জানেনইত বর্তমান সময়ে লেখাপড়া শেষ করে চাকরী পেতে পেতে অনেক বয়স হয়ে যায়। চাকরী না থাকলে বিয়ে কিভাবে করব। আল্লাহর দয়ায় মাদ্রাসায় চাকরীটা পেলাম। নাহলেত এখনো বিয়ের কথা চিন্তা করতে পারতাম না।

পাত্রীর বাবাঃ তোমার বয়সত একটু বেশি।

রাজুঃ স্যার, এখন উপার্জনশীল পুরুষ মাত্রই বেশি বয়সি। অল্প বয়সিকে কেউ চাকরীর পরীক্ষাও দিতে দেয় না। আমি ছাড়া অন্যদেরও একই অবস্থা। আমার অনেক বন্ধু এখনো বেকার।

পাত্রীর বাবাঃ বুঝলাম। তা, স্ত্রীর ভরণপোষণ করতে পারবে?

রাজুঃ জি, ইন শা আল্লাহ পারব।

পাত্রীর বাবাঃ তা, কত বেতন পাও?

রাজু একটু বিব্রত বোধ করল। সরাসরি কেউ ছেলেদের বেতন জিজ্ঞেস করে না। মেয়েদের যেমন বয়স জিজ্ঞেস করতে হয় না তেমনই ছেলেদের বেতন।

রাজুঃ জি, ১৫ হাজার।

পাত্রীর বাবাঃ মাত্র! এ টাকা দিয়ে কিভাবে হবে? এ দিয়েত আমার মেয়েরই হবে না। তুমি কিভাবে চলবে?

অপমানে রাজুর চোখে পানি এসে যাচ্ছিল। অনেক কষ্টে সংবরণ করে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে মুক্ত আকাশের নিচে চলে আসল। এখন একটু স্বাধীন লাগছে। বিয়েটা হল না। তাও অপমান থেকে মুক্তি পেয়ে ভালো লাগছে। কি আজব এক সমাজ তার ছোট বোন তার চেয়ে ৫ বছরের ছোট হয়েও সাত বছর আগেই বিয়ে করে ফেলেছে। সংসার করছে, সন্তান আছে। আর সে এত বছর পরে চাকরী করেও বিয়ে করতে পারছে না। পুরুষদের কি মন বলতে কিছু নেই? সে কি শুধুই টাকার মেশিন? নারীর রুপ খুটিয়ে খুটিয়ে যাচাই করলে হয় অবমাননা আর পুরুষের বেতন, বংশ খুটিয়ে খুটিয়ে যাচাই করলে??? পুরুষের চরিত্র, সুন্দর মনের কি কোনই মুল্য নেই? সে কি শুধুই টাকার মেশিন?- আবদুল্লাহ

#বিয়ে_সিরিজ

গল্পঃ #পুরুষের_কোন_মন_নেই

বিষয়: বিবিধ

৯৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File