জান্নাত/ছোট গল্প
লিখেছেন লিখেছেন উদীক্ষণ ১৩ জুলাই, ২০১৭, ১১:০৩:২৯ সকাল
সোনিয়া চুপি চুপি নোমানের রুমে ঢুকে দেখে নোমান এখনো ঘুমাচ্ছে। সোনিয়া নোমানের ঘাড়ে একটু সুড়সুড়ি দিয়ে জাগিয়ে তুলে হাসতে হাসতে বলল, কি ব্যাপার নোমান সাহেব? আজ বুঝি জুম্মার নামাজের সময় বাড়ানো হয়েছে? দ্রুতো উঠো, তা না হলে জুম্মার নামাজ পাবে না।নোমান ঘুমঘুম চোখে সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলেও মনে মনে খুশিই হয়েছে।কারণ কয়েক সপ্তাহ হলো সে অফ ডে তে সোনিয়াকে কাছে পায় না। নোমান, সোনিয়ার হাতটি ধরে কাছে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করল, কি ব্যাপার রানী, তুমি আজ প্রগ্রামে যাও নি? সারা সপ্তাহ তো বাড়িতেই ব্যস্ত থাকো আবার অফ ডে তেও ফাঁকিবাজি করলে তোমার শাখা চলবে কেমনে?
নোমান আর সোনিয়ার দেড় বছরের সংসার।বিয়ের পর থেকেই নোমান সোনিয়াকে রানী বলেই ডাকে।আর সেই থেকেই সোনিয়া এখন রানীতে রুপান্তরিত হয়েছে।
নোমান একটা প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি করে।
নোমানের বাবা বেশ আগেই মারা গেছে।বাড়িতে আছে নোমানের আম্মা। আম্মাও একটা রোড এক্সিডেন্টে এখন পঙ্গু হয়ে আছে।আর একটা ছোট বোন আছে, নেহা।সে মেডিকেল হোস্টেলে থাকে।পড়ালেখার ক্ষতি হবে এজন্য নেহা হোস্টেলে থাকে, তা না হলে, সোনিয়া ওকে বাহিরে থাকতো দিতে রাজি নয়।
আর এদিকে সোনিয়া একটা শাখাতে কাজ করে । শাশুড়ি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সারা সপ্তাহ বাসাতে কন্টাক গুলো চালায় আর শুক্রবার ননদকে বাসাই রেখে শাখাতে সফর করে।
আর এজন্যই নোমান সারা সপ্তাহ অফিস শেষে সাংগঠনিক কাজ শেরে আসে এবং শুক্রবারটা পুরাই আম্মাকে দেওয়ার জন্য বাসাই থাকে।
সোনিয়া একটু মুচকি হেসে বলল দেখো আমি কোন দিনই ফাঁকিবাজ ছিলাম না, আর আজও ফাঁকি দিই নাই। আমার কাজ টা অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছি।আর ভাবলাম মহারাজকে বেশ কয়েক সপ্তাহ সেবাযত্ন কম করা হচ্ছে তাই আর কি আজ বাসাই আছি। এখন যদি মহারাজই নাখোশ হোন তাহলে আমি এখনই প্রস্তান করিব।
নোমান একটু মুচকি হেসে বলল, নাখোশ হব কেন রানী? আমাদের এই ছোট্ট জীবন শেষেইতো শুরু হবে এক অনন্ত জীবনের যাত্রা,যে জীবনের কোন শেষ নাই। তাই আমি চাই না সেই অনন্ত জীবনে আমার প্রিয়তমাকে হারাতে।
আমি চাই না আমাদের রব তাঁর নিয়ামাতের শুকরিয়া জ্ঞাপনে আমাদের অকৃতজ্ঞ হিসাবে জানুক।
সোনিয়া নোমানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর দ্বীনের ব্যাপারে নোমানের আন্তরিক সহযোগিতার কথা চিন্তা করে রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা পেশ করছে। কিছুক্ষন পর সোনিয়া বলল, অনেক দেরি হয়ে গেছে, তুমি দ্রুতো যাও, গোসল করে নাও বাথরুমে সব রেডি আছে,ততক্ষনে আমি আম্মার গোসল করিয়ে নিই। নোমান শোয়া থেকে উঠে বসল, সোনিয়ার হাত ধরে কাছে বসিয়ে বলল শুনো রানী,আমার কাজ আমাকেই করতে দিও। চলো আমিই আম্মাকে গোসল দিয়াবো, তুমি একচু সাহায্য করলেই হবে। বেশি দেরি হবে না ইনশায়াল্লাহ। মসজিদ তো বেশি দূরে না।
নোমান রেডি হয়ে দ্রুত মসজিদের দিকে ছুট দিলে সোনিয়া পেছন থেকে ডেকে ফোনটা হাতে দিয়ে বলল আমি বুড়িকে (নেহাকে সবাই বুড়ি বলে ডাকে)ফোন দিয়েছিলাম ও আসবে বলেছে, তুমি নামাজ শেষে দ্রুতো চলে এসো আজ একসাথে খাব ইনশায়াল্লাহ।
নোমান হ্যাঁ বলে একটু মুচকি হেসে সালাম দিয়ে দ্রুতো চলে গেলো। সোনিয়া নোমানের দ্রুতোগামী পথের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন আনমোনা হয়ে ভাবতে লাগল, আল্লাহ এই মানুষটাকে এতো সবর দিয়েছেন যে আন্দোলন, চাকরি সব নিয়ে এতো ব্যস্ততার মধ্যেও কখনো মা,বোন, স্ত্রীর প্রতি উদাসীন নয়।
উদাসীন মনেই সোনিয়া দোয়াটি করল,,
আল্লাহ তোমাকে সর্বদা তারই হেফাজতে রাখুন।
সোনিয়া দরজা বন্ধ করে দ্রুতো শাশুড়ির রুমে এসে তাকে নামাজের জন্য চেয়ারে বসাচ্ছে।এমন সময় শাশুড়ি জিজ্ঞাসা করছে' মা' তুমি আজ শাখাতে সফর দাও নি।শুক্রবারে বাবুতো বাসাই থাকে আবার বুড়িও আসতে পারে। এ আনন্দোলনতো একটি ফরজ কাজ , আর এ কাজের জন্য আমার সামান্য অযত্ন বাবু পুষিয়ে দেবে।সারা সপ্তাহ আমাকে নিয়েইতো তুমি ব্যস্ত থাক, আবার শুক্রবার টাও মিস করলে হবে কেমনে?
সোনিয়া একটু হেসে উত্তর দিল আম্মা মিস করি নাই অন্যকে দিয়ে করাই নিছি।
আর বেশ কয়েক সপ্তাহ একসাথে দুপুরে খাওয়া হয়না,আর অফ ডে ছাড়া বুড়িরও আসার সুযোগ হয় না তাই আর কি আজ বাসাই আছি।
শাশুড়ি বৌমার আন্তরিকতা দেখে রাজ্যের দোয়া নিয়ে বসলো।আল্লাহ আমার মা কে উত্তম জাজাহ দান করুন।
সোনিয়া শাশুড়ির কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বলল আম্মা আপনি নামাজ পড়ে নেন, আমিও
নামাজ পড়ে নিই ততক্ষনে আপনার ছেলে চলে আসবে।আজ এক সাথে খাব ইনশায়াল্লাহ
সোনিয়া নামাজ শেষ করে দেখে দুইটা পার হয়ে গেছে এখনো নোমানের খোজ নাই আবার বুড়িও আসে নাই।
তাই সোনিয়া নোমানের দেরি দেখে ভাতের প্লেট রেডি করে শাশুড়ির রুমে ঢুকবে এমন সময় কলিং বেজে উঠল।ভাতের প্লেট টা রেখে সে তাড়াতাড়ি গেট খুলে দেখে নোমান আর নেহা এক সাথে হাজির। নেহাতো ভাবিরে পেয়ে হাতে আকাশে চাঁদ পাওয়ার মত খুশি।
নোমান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল, রানী, বুড়িকে আনতে গিয়ে জ্যামে আটকে গেছিলাম তাই দেরি হয়ে গেছে। সোনিয়া একটু হাসি দিয়ে বলল আচ্ছা ঠিক আছে, এইবার তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে আসো অনেক বেলা হয়েছে,খেতে হবে।
নোমান ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে সোনিয়া আম্মাকে খাওয়াচ্ছে।নোমান রুমে ঢুকে সোনিয়ার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে হাসতে হাসতে বলল রানী,তুমি আমাকে জান্নাত থেকে এভাবে বঞ্চিত করছো কেন?আমার জান্নাত আমাকেই হাসিল করতে দাও। আমি একটা জান্নাত(বাবা) হারিয়েছি।এখন এই একটি জান্নাতই আমার শেষ অবলম্বন।আমি তাকে হারাতে চাই না। সারা সপ্তাহ তো তুমিই আম্মাকে দেখো।শুক্রবার টা আমার জন্য ছেড়ে দিবা। তুমি আমার জান্নাত প্রাপ্যের রাস্তাটা সহজ করে দিতে পার কিন্তু জান্নাত হাসিল করাতে পার না।আমার জান্নাত আমাকেই হাসিল করতে হবে।
তুমি যাও খাবার রেডি করো,বুড়ি মনে হয় ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেছে।
সোনিয়া একটু মুচকি হেসে বলল দেখো, আমার জান্নাত ও কিন্তু এখানেই লুকায়িত।কারণ আল্লাহর খুশিতে জান্নাত লাভ। আর তুমি খুশি হলে আল্লাহ খুশি হবে,আর তোমার প্রিয়জন খুশি হলে তুমি খুশি হবে। তাই পরোক্ষভাবে আমার জান্নাতও এখানে লাকায়িত আছে।
সোনিয়া পানির গ্লাস টা রেখে হাসতে হাতে বের হতে যাচ্ছে এমন সময় নোমান ডাকল, রানী এদিকে আসো শোন।সোনিয়া পেছন ফিরে শাশুড়ি পাশে দাড়িয়ে বলল, হুম, বলো।নোমান একটু মুচকি হেসে বলল হা করো।সোনিয়া একটু লজ্জা পেয়ে ইতস্তবোধ করছে আর নোমানের বোকামী দেখে মনে মনে বকাও দিচ্ছে, এই বোকাটা মায়ের সামনে কি করে?বেটারবৌর কাহিল অবস্থা দেখে শাশুড়ি হেসে দিয়ে বলল 'মা ' নাও খেয়ে নাও লজ্জা কেন? তোমার শশুর আমাকে কত খাওয়াই দিছে।এটাতো সুন্নাত!এদিকে নেহা দরজায় দাড়িয়ে থেকে সব দেখে চিৎকার করে বলছে ভাইয়া,আমাকে রেখে এসব কি হচ্ছে? নোমান একটু মুচকি হেসে বলল রানী যাও, খাবার সব এখানেই নিয়ে আসো।আজ সবাই এক প্লেটেই খাব ইনশায়াল্লাহ।
গল্পটি বেশ কিছুদিন আগে একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে লিখেছিলাম কিন্তু টাইপিং এর অলসতাই পোস্ট করা হয়নি।
আর এদানিনতো বউ শাশুরির যুদ্ধ আলোচনা বেশ ভালই চলছে।তাই মনে হলো গল্পটা পোস্ট করি।
তাই চলমান এ যুদ্ধের অবসান করার জন্য কতিপয় বোনদেরকে বলি মাসলা দিয়ে সংসার না চালিয়ে হৃদয়কে বড় করুন।সত্যের সাক্ষ্যদাতার ভূমিকা রাখুন।শাশুড়িকে শাশুড়ি না, মা ভাবতে শিখুন।আর কিছু দায়িত্ত্বশীল ভাইদেরকে বলি আপনারা শুধু বাহিরে দায়িত্ত্বশীল নয় ঘরের সব চেয়ে বড় দায়িত্ত্বশীল, তাই ঘরের প্রতিও মনোযোগী হোন।আপনার মায়ের প্রতি যত্নবান হোন। আপনার দায়িত্ত্বশীল আচরণ আপনার স্ত্রীকে দায়িত্ত্বশীল বানাতে বাধ্য।আর তার পরেও যদি কাজ না হয় তাহলে বাবা মা দ্বীনদার হলে তাদের পরামর্শ মতাবেক চৌকাঠের চুড়ান্ত ব্যবস্থা করে ফেলেন। এক নষ্ট দাঁতকে পুষে রেখে গালের সব দাঁত নষ্ট করার কোন প্রয়োজন নাই।
বিষয়: বিবিধ
৬৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন