হেফাজতের রাজনৈতিক মৃত্যু ও অন্যান্য
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র সাঈজী ০৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:৩৩:০৬ দুপুর
গতদিন ''বাংলাদেশ প্রতিদিন'' এর একটা সংবাদ হয়ত সবার চোখ এড়িয়ে গেছে। যেখানে বলা হয়েছে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে চারটা ইসলামি দল। nullClick this link। আপাত দৃষ্টিতে সংবাদটা খুবই নিরীহ কারন সামনে সরকার কিছুটা হলেও একটা নির্বাচনী হাওয়া আনার চেষ্টা করছে তাই এরকম একটা জোট হওয়া মোটেও অস্বাভাবিক নয়। বিশ্ব বেহায়া এরশাদও যখন ত্রিশের বেশি ইসলামি দল নিয়ে জোটের স্বপ্ন দেখছে তখন চারটা ইসলামি দল কি এমন করতে পারে? এর সাথে হেফাজতেরই বা কি সম্পর্ক? রাজনৈতিক মৃতুই বা কি? বাংলাদেশের রাজনীতিতেই বা এর প্রভাব কি?
উপরের প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে হলে আপনাকে এগে হেফাজতের স্বরুপ বুঝতে হবে। একাত্তর টিভির দেখানো হেফাজত নয় বরং এই দেশের লাখো মানুষের আবেগের হেফাজত। হেফাজতে ইসলাম মুলত কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক সংগঠন আর কওমি মাদ্রাসার রয়েছে শত বছরের সংগ্রামের ইতিহাস। সহজ ভাষায় বলতে গেলে হেফাজত হল কওামী মাদ্রাসার শিক্ষকদের সংগঠন যার নেতা হলেন কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আহমদ শফি। কওমি শিক্ষকরা ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর যেকোন ধরনের আঘাত আসলে রাজপথে নেমে আসার চেষ্টা করেন কারন তাদের ঐতিহ্য এটাই বলে। এই জন্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হেফাজতে ইসলাম যাদের কেন্দ্র ছিল হাটহাজারিতে।
এইবার আসা যাক সংবাদের উল্লেখ্য দল্গুলোর ব্যপারে। সংবাদে উল্লেখ্য ''ইসলামী ঐক্যজোট'', ''খেলাফতে মজলিস'' ও ''খেলাফত আন্দোলন'' নামক দলগুলো আসলে কি ধরনের দল? ইসলামী ঐক্যজোট মূলত কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। মুফতি আমিনীর নেতৃত্বে এই দলটি চারদলের অংশ হয়ে ক্ষমতার স্বাদও নিয়েছিল। এই দলটির কেন্দ্র ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে এই দলটির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এমনকি দলটির সাবেক নেতা মুফতি আমিনীর জনপ্রিয়তা কওমি মাদ্রাসা গুলোতে আহমদ শফির চেয়ে কোন অংশে কম নয়। বররতমান হেফাজতের সিংহভাগ কেন্দ্রিয় নেতায় এই দলটির কর্মি। ইসলামী ঐক্যজোট ২০১৫ সালে সরকারের ক্রমাগত চাপে ২০দল থেকে বের হয়ে যায় তবে দলটির একটি ক্ষুদ্র অংশ ২০ দলে উপস্থিত আছে।
এবার আশা যাক ''খেলাফত মজলিস (মামুনুল)'' এর কথায়। উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা আজিজুল হকের নিজ হাতে গড়া সংগঠন হল খেলাফত মজলিস। এই দলটিও কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক। কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে দলটির জনপ্রিয়তা কোন অংশে কম নয়। আল্লামা আজিজুল হকের মৃত্যুর পর উনার পুত্র মামুনুল হক দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেও একজন কওমি শিক্ষক। নতুন প্রজন্মের কওমি শিক্ষিতদের মাঝে তার জনপ্রিয়তা আছে। খেলাফত মজলিস ২০০৬ সালে আওয়ামি লীগের সাথে চারদফা চুক্তি করেছিল কিন্তু তা টিকেনি। হেফাজতের নেতৃত্বে তাদেরও বড় মাত্রায় অংশিদারিত্ব আছে।
সবশেষ আশা যাক এদের সকলের মাতৃ সংগঠন অর্থ্যাত খেলাফত আন্দোলনের কোথায়। খেলাফত আন্দোলনও মুলত কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠক। কামরাংগীচরের জামিয়া নুরিয়াকে কেন্দ্র করে এটি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রখ্যাত কওমি আলেম হাফেজ্জি হুজুর এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তার পুত্র মাউলানা আতাউল্লাহ এটির আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন। কওমি মাদ্রাসাগুলোর কাছে হাফেজ্জি হুজুরের জনপ্রিয়তা অপরিসীম। তিনি ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেন এবং পরাজিত হন। এই দলটিও হেফাজতের নেতৃত্বের অংশিদার।
এছাড়া রয়েছে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন। আমার ব্যক্তিগত ভবিষয়তবানী হচ্ছে ইসলামি আন্দোলন এই জোট থেকে এর হয়ে যাবে। ইসলামি আন্দোলন রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ পন্থী রাজনীতি করে থাকে। বাংলাদেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠির মাঝে তাদের জনপ্রিয়টা আছে কিন্তু আধুনিক শিক্ষিত কিংবা ধর্মিয় শিক্ষিতদের ভেতর তাদের নিয়ে যথেষ্ট এলার্জি আছে। তাই তাদের নিয়ে কওমি মাদ্রাসার দল্গুলো আসলে কতটুকু এগোবে সেটা সময় বলে দেবে।
সুতরাং এই চারট দল মুলত হেফাজতকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর এরা যখন ভোটের রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছে তখন বোঝা যাচ্ছে তাঁরা মুলত রাজনীতির ময়দানে কাগজে কলমে না হলেও প্রতিনিধিত্ব করবে। ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি হেফাজতের সমর্থনের জন্য প্রধান দুই দলের লুঙ্গি খোলা ততপরতা। এমন কি বিশ্ব বেহায়া নিজেও নিজেকে ইসলামের সেবক প্রমানের চেষ্টা করছিলেন হেফাজতের সমর্থন পাওয়ার জন্য। তবে সবচেয়ে মজার ব্যপার হল হেফাজত এইসব টানা হেচড়ায় না গিয়ে নিজেরাই নির্বাচণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। সুতরাং প্রধান দুই দলের এখন দীর্ঘশ্বাস গোপন করার চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে বলা যায়। হিসাব খুব সহজ কওমি শিক্ষকরা নিশ্চয় নিজেদের জাতভাইদের রেখে আর কাউকে ভোট দিবেন না। সুতরাং কওমি সনদের মুলাটা আর কাজ করল না বলা ছলে।
এবার আসি ভোটের হিসাবে। অবাক হলেও সত্য কওমি দলগুলোর কোন ভোট নেই। ভোটের রাজনীতিতে তাঁরা এখনো নবিস বলা চলে। সম্মলিত কওমি জোট মিলেও এক শতাংশ ভোট পাবে কি না টা সন্দেহ আছে এবং অতিত পরিসংখ্যাণ সে কথায় বলে। জোটগতভাবে নিজেদের ইসলামপন্থী প্রমান করাটা ভোটের রাজনীতিতে অনেক বেশি প্রভাব রাখলেও জনগন এখনো ''কওমি হুজুরদের'' নেতা বানানোয় স্বচ্ছন্দ্য বোধ করে না। সুতরাং হেফাজত যে ভোটের রাজনীতিতে হোচট খাবে সেটা চোখ বুজে বলা যায়। তবে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকগন শুধু হয়ত ভোট দেবেন।
সুতরাং ২০১৩ সালের পরে যেই হেফাজত প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুড়াচ্ছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বলা চলে। এখন তাঁরা হয়ত আবারো ফিরে যাবে মাদ্রাসাগুলোতে। নব্য প্রগতিশীলরা হেফাজতকে ঘৃণা করে জাতে ওঠার চেষ্টা করবেন, মিডিয়ার রিপোর্টে তাদের ভিলেন দেখানো হবে কিন্তু সবাই ভুলে যাবে একদল লুঙ্গী পড়া পান খাওয়া সহজ সরল ''হুজুর'' যারা তাদের প্রাণপ্রিয় ইসলামের জন্য সরল বিশ্বাসে ঢাকায় এসে ''প্রগতিশীল''দের চেতনায় আঘাত দিয়েছিল। আর তাদেরকে নিয়ে শুরু হয়েছিল ''আধুনিক শিক্ষিত''দের নোংরা রাজনীতি।nullClick this link
বিষয়: রাজনীতি
৪৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন