সড়ক দূর্ঘটনার মহোৎসব : যাত্রী নিরাপত্তা কেথায় ?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল কাইয়ূম ০৪ মে, ২০১৭, ০৮:০৯:২৫ রাত
বর্তমান সময়ে পত্রিকার পাতায় নিত্যদিনের হেডলাইন হয়ে পড়েছে সড়ক দূর্ঘটনা । প্রতিদিন কোনো না কোনো জায়গাতে সড়ক দূর্ঘটনা হচ্ছেই । চালকের অদক্ষতা , রাস্তাঘাটের বেহাল দশা , যান্ত্রিক ত্রুটি ইত্যাদি কোনো না কোনো কারণে দূর্ঘটনা হচ্ছেই ।যার কারনে মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে ।সড়ক দূর্ঘটনায় যেমন বাড়ছে অকাল মৃত্যুর সংখ্যা , তেমনি বাড়ছে পঙ্গুত্বের সংখ্যা । দুর্ঘটনার বহু কারন থাকলেও বিশেষজ্ঞরা তিনটি কারন বলেছেন। চালকের গাফিলতি , ভাঙ্গাচুরা রাস্তা , ফিটনেসহীন গাড়ী ।এই তিনটি কারনেই বেশীর ভাগ দূর্ঘটনা হয়ে থাকে।
চালকের গাফিলতি : বর্তমান সময়ে বড় গাড়ি বাস থেকে শুরু করে তিন চাকার গাড়িতে অদক্ষ চালকের সংখ্যাই বেশী ।অভাবের সংসার কোন কাজ না পেয়ে গাড়ি চালাচ্ছে অনেকেই। তাছাড়া কোনো ভাল প্রশিক্ষণ ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে ১০০% এর ৭০% ড্রাইভার পাওয়া যাবে যাদের লাইসেন্স নেই।সম্প্রতি সরকার লাইসেন্স এর উপর কঠোর আইন প্রণয়ন করলেও এসব আইন প্রশাসসনিক ত্রুটি থাকায় সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হচ্ছে না । এছাড়াও চালকরা নিয়মতি গাড়ি চালানোর নিয়ম মেনে না চলায় দূর্ঘটনা বেড়েই চলেছে ।
ভাঙ্গাচুরা রাস্তা : সড়ক দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ হল রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ।বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের জেলা মহাসড়কগুলোর ১০০% রাস্তার মধ্যে ৪০% রাস্তা ভাল আর ৬০% রাস্তা খারাপ ।যার কারনে দেশের সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফিটনেসহীন গাড়ি :ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালক গাড়ির ফিটনেস ও দক্ষ চলক তৈরিতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাব রয়েছে। দেশে চালকের লাইসেন্স রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ। এর মধ্যে পেশাদার চালকের লাইসেন্স প্রায় আট লাখ। বাকিরা অপেশাদার। এ ছাড়া দেশে বর্তমানে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ এর মধ্যে এক লাখ ফিটনেসবিহীন অটোরিকশা- অটোটেম্পো চলাচল করছে। ট্রাকের সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার। এমন বাস-মিনিবাস রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। বাকিগুলো অন্যান্য যানবাহন। বিআরটিএ সূত্র জানায়, দেশে মোট যানবাহনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২২ লাখ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল এবং এগুলোর ফিটনেস সনদ নিতে হয় না। আর কিছু যানবাহন অকেজো হয়ে গেছে। অবশ্য ফিটনেস সনদ থাকা না-থাকা প্রায় সমানই। বাস- ট্রাকের যেগুলোর ফিটনেস সনদ আছে, এগুলোর বেশির ভাগই বিআরটিএ কার্যালয়ে না গিয়েই সনদ নিয়ে থাকে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন একদিকে যেমন সড়ক নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তেমনি সরকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
আমাদের দেশে সড়ক দূর্ঘটনা এমন মহামারী রূপ ধারণ করেছে যে, বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এআরসি) গবেষণা অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আহত হয় ৩৫ হাজার। অন্য দিকে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতি দশ হাজার যানবাহনে মৃত্যুর হার ৮৫ দশমিক ৬।
গতকাল ৩ মে দৈনিক নয়াদিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা যায় চলতি বছরের গত চার মাসে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ১৫৫২ জন এবং আহত ৩৮৩২ জন।
" প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে এসব প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। এই চার মাসে মোট এক হাজার ২৩৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে; এতে ৩৮৩ নারী-শিশুসহ এক হাজার ৩১৪ জন নিহত ও তিন হাজার ৩৯৩ জন আহত হন। এই হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনার হার ১১ শতাংশ বেড়েছে। আর নিহত ও আহতের হার বেড়েছে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ ও ১২ দশমিক ৯৩ শতাংশ গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগঠনটি তাদের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২২টি বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ১০টি আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং আটটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থার তথ্য- উপাত্তের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৫০টি দুর্ঘটনায় ৫৪ নারী ও ৫৫ শিশুসহ ৪১৬ জন নিহত এবং এক হাজার ১২ জন আহত হয়েছেন ফেব্রুয়ারিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৭২টি; এতে ৫৬ নারী ও ৫৮ শিশুসহ নিহত ও আহত হয়েছেন যথাক্রমে ৪২৭ জন ও এক হাজার ৯৪ জন। মার্চে ৩৩০টি দুর্ঘটনায় ৩৬২ জন নিহত ও ৮৬৫ জন আহত হয়েছেন নিহতদের মধ্যে ৪৯ জন নারী ও ৫৪টি শিশু রয়েছে। এপ্রিলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২০টি। এতে ৪৭ নারী ও ৪৮ শিশুসহ মোট ৩৪৯ জন নিহত হয়েছেন; এ সময়ে আহত হন ৮৬১ জন। জাতীয় কমিটির পরিসংখ্যানে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা চলতি বছরের চেয়ে ২০১৬ সালে তুলনামূলক কম ছিল। গত বছরের জানুয়ারিতে দুর্ঘটনা ঘটে ২৯৫টি; এতে ৪২ নারী ও ৫৭ শিশুসহ ৩৪০ জন নিহত এবং ৯৪২ জন আহত হন ফেব্রুয়ারিতে ৩৪৯টি দুর্ঘটনায় ৪৯ নারী ও ৫৩ শিশুসহ ৩৫৬ জনের প্রাণহানি ঘটে; আহত হন এক হাজার ১২০ জন। মার্চে দুর্ঘটনা ঘটে ২৯৬টি; এতে ৩০৯ জন নিহত ও ৬২৬ জন আহত হন। নিহতের মধ্যে ৪১ নারী ও ৫১ শিশু রয়েছে। এপ্রিলে ২৯৬টি দুর্ঘটনায় ৫২ নারী ও ৩৮ শিশুসহ ৩০৯ জনের প্রাণহানি ঘটে; আর আহত হন ৭০৫ জন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য দিয়ে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে কমেছিল। তবে ২০১৭-এর শুরু থেকেই তা আবার বেড়ে যায়। "সূত্র : নয়াদিগন্ত
সড়ক দূর্ঘটনার এই মহোৎসব বন্ধ করার জন্য সরকারের অতি তাড়াতাড়ি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত । পাশাপশি জনগনকেও এক্ষেত্রে সরকারকে সর্বোচ্ছ সাহায্য করতে হবে । অদক্ষ চালকের গাড়ি চালানো যাবে না কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে , এক্ষেত্রে প্রাশসিনক ত্রুটিহীনতার দিবে নজর দিতে হবে । সড়ক উন্নয়নের জন্য জোড় দিতে হবে , প্রয়োজনে যাতায়াত খাতে বাজেট বেশী বরাদ্দ রাখতে হবে ।ফিটনেসহীন গাড়ি বাজেয়াপ্তের কঠোর কার্যকরী ব্যবস্হা নিতে হবে।
সড়ক দূর্ঘটনা এড়ানোর জন্য অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে সরকার যদি রেলপরিবহন উন্নত করেন এতে সরকারী আয়ও বাড়বে এবং জনগনের যাতায়াতের নিরাপত্তা বাড়বে ।
বিষয়: বিবিধ
৬৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন