পথশিশুর ভাষাপ্রেম
লিখেছেন লিখেছেন আশফাক জুনেদ ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ০৩:১০:৩৭ দুপুর
সেদিন ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সাল। কন কন ঠান্ডার শিশিরভেজা সকাল। শহরের কোন এক বস্তিতে ঘুম ভাঙল একটি শিশুর।বয়স ১০-১২ হবে।নাম অর্নব। বাবা দেখেনি। মায়ের কাছে বড় হয়েছে। মাও কিছু দিন হল মারা গেছেন। এখন সে একাই ওই বস্তিতে থাকে, রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে আর প্লাস্টিক, পুরনো ফেলে যাওয়া বোতল কুড়ায়, এক কথায় পথশিশু। তো প্রতিদিনকার মতো সেদিনও সে সূর্যের আলো পড়ার সাথে সাথে দৈনন্দিন কাজে বের হলো শহরের আনাচে কানাচে।সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। মাতৃভাষা
বাংলাকে রক্ষার আন্দোলন চলছে
চারিদিকে। মিছিলের নগরীতে পরিণত ঢাকা শহর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে শহরের অলি-গলিতে খন্ড খন্ড মিছিল হচ্ছে। ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা।ভেঙে মিছিল বের করেছে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগানে মুখরিত করে তুলছে ঢাকার রাজপথ। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের মিছিলে বাধা দেয়া এমনকি গুলি করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই তারা বিভিন্ন খন্ড মিছিলে গুলি করছে বাধা দিচ্ছে, কিন্তু ছাত্র-জনতা তা মানছে না। তাদের একটাই দাবি রাষ্ট্রভাষা বাংলা হতে হবে, এতে যদি জীবন যায় দেবো। তাইতো নিশ্চিত মৃত্যু হাতছানি দিচ্ছে জেনেও বুলেটের সামনে মায়ের ভাষাকে রক্ষা করবে বলে বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছে।তা দূর থেকে এক পলকে চেয়ে দেখছে সেই ১০ বছরের ছোট্ট শিশু অর্নব। আর ভাবছে এসব কী? আর লোকেরা কেন এমন করছে? ভাষার জন্য কি কেউ জীবন দেয়? নানান প্রশ্ন জাগে তার কোমল মনে।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তার ভেতর জাতীয়তাবোধ জেগে ওঠে। সে বলে, হ্যাঁ দেয়, এ যে মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা।জন্মের পর থেকে যে ভাষায় কথা বলছি, সে ভাষা কী করে ভুলে যাই? আর কী করে অন্য একটা ভাষাকে গ্রহণ করি? না ওরা যা করছে ঠিক করছে।কিন্তু আমি এখনও দাঁড়িয়ে আছি কেন? আমিও তো এ দেশের ছেলে! আমিও তো মায়ের ভাষায় কথা বলি। সেই ভাষাকে তো আমাকেও রক্ষা করতে হবে।এই ভেবে সে দৌড় দিতে চায় মিছিলের দিকে, কিন্তু হঠাৎ সে কি যেন দেখে থমকে দাঁড়ায়, এক পলকে চেয়ে।থাকে।মিছিলের ওই সামনের লোকটির দিকে যার।বুকে সাদা চুন দিয়ে লেখা রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। সেও ভাবে তার বুকে লিখতে, কিন্তু কিভাবে লিখবে তার কাছে যে তেমন কিছু নেই।কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর হঠাৎ কি যেন ভেবে কাঁধ থেকে বস্তা নামালো, হাতড়ে দেখলো তার ভেতর একটা বোতল আছে । সে বোতলটি একটা দেওয়ালে আছড়ে ভাঙল এবং ভাঙা অংশ দিয়ে ভাষার প্রতি কোঠি ভালোবেসা জমিয়ে বুকের মধ্যেখানে চিরে চিরে লিখলো রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।লেখার পর বস্তা ফেলে দৌড় দিল মিছিলের দিকে। দাঁড়ালো মিছিলের সামনে। সবার সাথে সুর মিলিয়ে চিৎকার করে স্লোগান তুললো রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। তার কোমল কণ্ঠের এমন স্লোগান যেন ঢাকার রাজপথ কম্পিত হচ্ছিল।দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয়ে যেন ফিরে আসছিল।তকে যে জীবন দিতে হবে।হ্যাঁ তাই ঘটল মুহুর্তের মধ্যে নরপিশাচের একটা বুলেট তার বুক বরাবর এসে লাগল এবং সে মুহুর্তেই রাজপথে লুটিয়ে পড়ল, তার তাজা রক্তে রঙিন হল পথ,তৈরি হল রক্ত নদী। সে সেই নদীর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হেসে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো। তবে, এ হাসি কেনো?এ হাসি বুজি তার রক্তে বাঙালি জাতির মায়ের ভাষা রক্ষা পেল বলে।
বিষয়: বিবিধ
৭৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন