একজন পতিতার গল্প
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার সুয়েব ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:১০:২৫ রাত
.
ছোট ১০ বছরের ছেলেটি যখন রাস্তায় মার সাথে ঝগড়া করছিল তখন কিছুটা অবাক হয়েছিলাম,
.
রাস্তায় দাড়ি থাকা মানুষ গুলি দেখি প্রচন্ড হাসাহাসি করছিল বিস্তারিত জানার জন্য পাশে দাড়িয়ে থাকা
ব্যক্তিকে জিগ্যেস করলাম উওর শুনে থমকে গিয়েছিলাম, মা পতিতলায় যাবে ছেলেকে রেখে, তাই সন্তান মায়ের পিছু নিয়েছিল কোনো ভাবেই সন্তানকে বাসায় রেখে আসতে পারছে না,
১০ বছরে ছেলেটি এমন কি আর বুঝে,
.
আজকের ঘটনাটি দেখে একটি ঘটনার কথা মনে পড়লো,
.
সেদিন রাত তখন দশটা বিশ মিনিট। ফুট পাতের হোটেলের কাঠের চেয়ারে বসে আছি দুই বন্ধু; আমি আর আলী।
.
বসে চা খেয়ে আলী একটা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে টানতে লাগলো।সিগারেটের ধোয়ায় কুন্ডলী পাকিয়ে আশ পাশটা ভরে গেল।
.
আরদুষিত বায়ুতে নিঃশ্বাস টানতে হচ্ছে দেখে খুব বিরক্ত লাগলো।
.
কেন যে মানুষ সিগারেট খায় ? অযথাই কেন যে আশপাশের পরিবেশটাকে দূষিত করে ? বোকা লোকগুলো এর মাঝে কি সুখ খুজে পায় আমার বুঝে আসেনা।
.
কিছুক্ষন আড্ডা দেয়ার পরদুই বন্ধু একসাথে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম;
.
রাত তখন দ্বিপ্রহর। ঘন্টার কাটা বারোটা ছুই ছুই আকাশে ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ।”ছেড়া মেঘের ফাক ফোকর গুলিয়ে মরাজ্ যোসনা এই মধ্যরাতের প্রকৃতিকে বড় অচেনা করে আনে।
.
জলসিক্ত হাসনা হেনার গন্ধ মাদকতা ছড়ায়। এলোমেলো ভাবতে ভাবতেই হাটতে লাগলাম।
.
বন্ধু আলী, চলে গেল তার বাড়ির পথটি ধরে।
.
চারদিক তখন একে বারে নিরব নিস্তব্দ; পুরো শহর তখন গভীর ঘুমেমগ্ন। দূরে নিমগাছে একটিকুক পাখি ডেকে চলছে অবিরাম।
.
কুক পাখির ডাকটাই যেন কেমন!শুনলে গাছম ছম করে উঠে!কেমন যেনএকটা বিষাদও বিরহীভাব ডাকটার মধ্যে। সেই ডাক এই শীতের রাতের নিঃস্তব্দতাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
.
।বড় রাস্তা ছেড়ে যখন ছোট রাস্তায় পায়ে হেটে চলছি।হঠাৎ করেই; হাটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম!মনে হল, রাস্তার একটু দূরেই কদম গাছের নিচের ঝোপ-ঝাড়গুলো বড় বেশী নড়া-চড়া করছে!একটু ভয় নিয়ে আস্তে করে এগিয়ে গেলাম।তার লাইটের আলো ফেলতেই একটা তরুন দেহের মত একজন মধ্যবয়সী লোক; হাঁজার মাইল বেগে ছুটে পালালো।
.
আরো একটু এগিয়ে লাইটের আলো ফেলে দেখলাম! নাভীর উপরের অংশে কাপড় ছাড়া একটা নারী দেহ;মুখে হাত দিয়ে দুই চোখ ডেকে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।
.
তার ভরাট দেহ যেন বর্ষার নদীর ঢেউয়ের মত ফুলে ফুলে উঠছে!চোঁখ’টা সরিয়ে নিলাম।
.
কি বলবো তাকে ঠিক বুঝে উঠছিলাম না।’জোরে ধমক দিলাম! এই মেয়ে তুমিকে? কিছু বুঝে উঠার আগেই নারী দেহটি ডাইব দিয়ে দুই পা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল।
.
ভাইজান,আপনার আল্লাহর দোয়াই আমারে এই শহরের পতিতা বানাবেন না।
.
আমার কোন দোষ নাই। আবার ধমক দিলাম, চুপ করো;কাপড় পরে নাও তারপর কি হয়েছে বলো? মেয়েটি পা ছেড়ে পাশের ঝোপের আড়াল থেকে শাড়ি নামক এক বস্তু গায়ে জড়িয়ে এলো যা তার রঙ হাঁরিয়েছে অনেক আগে।
.
শাড়িতে কয়েকটি তালি লাগানোর পরেও মেয়েটির দেহ ঢাকতে ব্যর্থ হয়েছে।
.
এরপর ফুফিয়ে ফুফিয়ে মাথা নিচুকরে এসে সামনে দাঁড়াল। তাকিয়ে দেখলাম, বয়সে আমার থেকে অনেক বড় হবে তাই এবার আপনি করেই বললাম।
.
সে মাথা নিচু করেই বলতে লাগলো।সে পাশের বাড়ির মৃত বদর আলীর ছেলে সিরাজের স্ত্রী। তার স্বামী বিদেশে কি এক কারখানায় নাকি চাকরি করে।
.
আগে বছর খানেক পর পর বাড়ি আসত,কাপড় নিয়ে টাকা নিয়ে।কিছুদিন থাকত;তাকে আদর সোহাগ করে আবার চলে যেত।
.
দুই’ বছর হয়ে গেল সিরাজ আর আসেনা। ওখানে সে আরেকটা বিয়ে করেছে; এখন সে আর আসবে না।সে গৃহস্থ বাড়িতে কাজ করে।
.
অনেক যুবক এমনকি বয়স্ক বৃদ্ধরাও তাকে কুকামের প্রস্তাব দেয়। সে কোনোদিন রাজি হয়নি। অনেকবার ভেবেছে এই শহর ছেড়ে; স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যাবে সে। কিন্তু ঘরে অসুস্থ শ্বাশুড়িকে রেখে কিভাবে যাই ? একটি মায়া স্বরেই বলল সে।
.
আমি অবাক হলাম!যে স্বামী তার খোজ খবর না নিয়ে আরেকটা বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে অথচ তারি বৃদ্ধ অসুস্থ মায়ের দায়িত্বভার বহন করছে সে। আমি অবাক দৃষ্টিতে শুনতে লাগলাম তারক থাগুলো।প্রতিদিন একবেলা খেয়ে দিন কাটায় তাওআবার জোটেনা ঠিকভাবে।না খেয়ে ঘরে বসে থাকে সে।
.
বাহিরে বেরুলেই তারজন্য খারাপ প্রস্তাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকেই। সে আর যায়না কাজে। নিজে না হয় না খেয়ে মরে যাব তাতে দুঃখনেই কিন্তু বৃদ্ধ শ্বাশুড়ি ক্ষিদের জ্বালায় যখন চটপট করে তখন আরসহ্য হয়না।সবাই তাকে শাড়ি,টাকার লোভ দেখায়।কাপড়ের অভাবে অন্য কোথাও কাজের জন্য যেতে পারিনা।
.
তাই শ্বাশুড়ির চিৎকারে আজ এই লোকটির কথায়… বলতে গিয়ে………..আবার কেঁদে উঠলো।
.
এবার আর ধমক দিলাম না! কাছে গিয়ে আস্তে তার মাথায় হাত রাখলাম। মেয়েটি ভয়ে ভয়ে মাথাটা সোজা করলো। তার ঠোট দু’টো মাছির পাখারমত কাপছে;ভয় আর লজ্জায় মেয়েটি একখন আর কথা বলতে পারছে না।
.
আমি বললাম,আপনি কোন চিন্তা করবেন না।এ কথা আমি কাউকে জানাবো না। কথাটি শুনে মেয়েটা একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল।
.
মনেহল,হয়তো বুকের উপর চাপানো একটন ওজনের একটা পাথর এইমাত্র সরে গেল। জিজ্ঞেস করলাম আপনার নাম কি?
খুব বিরক্ত আর তাচ্ছিল্ল স্বরে উত্তর দিল সান্তা। আমি বললাম, চিন্তা করবেন না।এখন আপনি যান।ছিড়া,তালিযুক্ত কাপড়টাকে কোন মতে গায়ে জড়িয়ে; ক্লান্ত দেহটা বয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল মেয়েটি। আমি তবুও দাঁড়িয়ে আছি-ভাবছি নিজেকে ভীষন অপরাধী মনে হল, আমি অসাধারন কেউ নই।সমাজ সংস্কারক ও নই,অতি তুচ্ছ একজন মানূষ;তবুও মনের পর্দায় জেগে উঠলো, জীবনে দেখা অনেক মহিলার কথা। যাদের কাছে শাড়ি লজ্জা নিবারনের জন্য কোন মূল্যবান বস্তু নয়।শাড়ি তাদের জন্য ফ্যাশন। টিভির পর্দায়,খবরের কাগজে, মানুষের মাঝে নিজেকে আকর্ষন করে তোলার একউপদ্রব। কোন এক বিশেষ দিনে নিজেকে বিকশিত করে তোলার এক আবরন।
.
আলমারীতে শোভা করে রাখা এক অহংকার। তাই আজমনে পড়ল সেই সব শাড়ি পরিহিতাদের কথা; যাদের নামি-দামী বর্ণাঢ্য শাড়ির ঝলকানিতে চোঁখ ঝলসে গিয়েছে কিন্তু পানি আসেনি। অথচ আজ এই চেড়া-তালিযুক্ত আশি,নব্বই টাকার অতি সাধারন একটি শাড়ি,তা দেখে চোঁখে পানি চলে আসলো,কেন জানিনা।
.
লেখাটি অনেক আগে প্রকাশিত করা হয়েছিল বিড়ি ২৪ লাইভে,! আজ আবার নতুন করে ছাড়তে হলো নতুন এক কাহিনী দেখে
বিষয়: বিবিধ
৮৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন