বন্দী শিবির থেকে পিলখানার এক অপরাজেয় বীরের কথা।
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার সুয়েব ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৫:০৩ সকাল
সেই ছেলেবেলায় থেকে সামরিক বাহিনীর
প্রতি একটা অদম্য আকর্ষণ ছিল?
অবশেষে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পর বাংলাদেশে, রাইফেলসে( বিডিআর) যোগ দিই। বেসিক ট্রেইনিং শেষে পোস্টিং হলো
পিলখানায়, ঢাকায়! এখানে আসার কয়েক মাস পর নাটকীয়ভাবে, জীবনে এলো প্রেম এলো ভালোবাসা! বিস্তারিত পরে কখনও বলবো!
.
( কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, পৃথিবীর ভয়কে যদি কেউ, সম্পূর্ণ অতিক্রম করিতে পারে, বিপদকে তুচ্ছ করিতে পারে ক্ষমতাকে অগ্রাহ্য করিতে পারে, মৃত্যুকে উপেক্ষা করিতে পারে তবে তাহা প্রেম!)
.
কবির এই বাণীটিকে হৃদয়ে ধারণ, করে এমনই ভাবে ভালোবেসেছিলাম আমার স্বপ্নকন্যাকে!
রি আমার সেই স্বপ্নকন্যা।
সত্যি সে সময়কার দিনগুলি খুব সুখের ছিল।
ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিতে ফৌজি জীবন পবিত্র শৃঙ্খলাপূণর্, শান্তিময় সম্মানের একটি জীবন!
তবে স্বীকার করি একঘেয়েমির কারণে কখনো কখনো এ জীবনকে চিড়িয়াখানায় খাচায় বন্দী পশুর মতো মনে হতো।
ছুটি পেলেই ছুটতাম রি-র সঙ্গে
নিজর্ন, দেখা করতে!
দুজনে হাতে হাত রেখে কতো হেটেছি!
পাশাপাশি বসা কথায় কথায়........আর তাকে বাহুবদ্ধ করে আলিঙ্গনে কাটিয়ে দিতাম ঘন্টার পর ঘন্টা।আমার অনেক যত্নে গড়া ভালোবাসার তরীটি তার মন সাগরে নিজ গতিতে বয়ে চললো....।
কিন্তু ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৯-এ
পিলখানায় ঘটে যাওয়া ঘটনার মাধ্যমে থেমে গেল আমার ভালোবাসা তরীটি! রি-র সঙ্গে বন্ধ হলো আমার সব ধরনের যোগাযোগ। সবাই অপরাধী না হলেও সঠিক তদন্তের জন্য আমাদের নজরবন্দী করে রাখা হলো।
আমি কিংবা আমার তখন যে সময়টা পার করেছিলাম তার ব্যাখ্যা কিভাবে দেব ঠিক
বুঝতে পারছিলাম ন। ভবিষ্যৎহীন একদল মানুষ! কি করুণ চাহনি এক একটা মানুষের
প্রথম পযর্ায়ে দুবেলা সামান্য দুচামচ পাতলা খিচুড়ি খেয়ে সারাটা দিন পার করেছিলাম।
টানা প্রায় তের দিন ভাত না খেয়ে থাকার কস্ট এখনো মনে দাগ কাটে।
বুঝতে পারলাম অনাহারী মানুষ কেন পেটের আগুন নেভাতে দোজখের আগুনেও খাপ দিতে ভয় পায় না।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সারাক্ষণ নির্দিষ্ট একটা গন্ডিতে থাকতে হয়েছিল!
কখনো শুয়ে কখনো বসে আবার কখনো পায়চারি করে সময় পার করতাম! কখনো নিহের অস্তিত্বটাকেই ভুলে যেতাম। মাঝে মধ্যে এ জীবন অসহ্য মনে হতো!
সেই সময়ে রি-কে ভাবলে ভালো লাগতো।
রাতে ঘুম না এলে বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখতাম! তারাগুলো যখন লজ্জাবনত মুখে আকাশের কোলে বের হতো
তখন সেদিকে তাকিয়ে আমি যেন আমার স্বপ্নকন্যার মাঝে হারিয়ে যেতাম! ভাবতাম রি-র মুখচ্ছবি তার ভয় মেশানো....মু!
এমনি ফেলে আসা সব সুখের মুহূর্তে....। যতোবারই তাকে ভাবতাম দেখতাম তার বিষাদ ভরা !
কাদতে পারলে বোধ হয় একটু শান্তি পেতাম।
আকাশে পাখি উড়ে যেতে দেখলে বলতে ইচ্ছা করে, পাখি তোর পায়ে করে নিয়ে যা
আমার স্বপ্নকন্যার কাছে!
রি-কে ঘিরে হাজারও স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম... ।
জানি না হয়তো আজো সে আমার পথ পানে চেয়ে আছে কিংবা হয়তো অনিচ্ছাসত্বেও সে অন্য কারো স্ত্রী হয়ে গিয়েছে ধোয়ার সঙ্গে আকাশে উরিয়ে দিতাম।
এ জন্য কাকে দায়ী করবো তাও তো ঠিক বুঝতে পারছি না!
একাই এ পৃথিবীর ছেড়ে চলে যেতে হবে।
এ চিন্তা আমার মনে বিষাদ এনে দেয় না।
আমার মন থাকে শান্ত স্থির । জানতে ইচ্ছা করে আমার আয়ুর সীমারেখা । কেউ যদি বলে দিত আমি আর কত ঘন্টা বাচবো অথবা কতো দিন বা কতো মাস.....?
রি, আমার জীবন তে এমন জটিল একটা অধ্যায় আসবে তা শুরুতেই বুঝতে পারিনি এখন মনের মাঝে সেসব জটিলতার স্কৃতি রয়ে গেছে।
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
তাই যদি হয়,তাহলে কেন এতো সংঘাত বিদ্রোহ, রক্তক্ষরণ??আর কেনই বা এতো অধিকারের প্রশ্ন....?
নিয়মের এ পৃথিবীরতে অনেক অনিয়ম লুকিয়ে আছে। এ কারণে যেমন কমর্ তেমন
ফল সব সময় পাওয়া যায় না! ভেবেছিলাম
তোমার বুকে মাথা রেখে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ফেলবো! কিন্তু এই ছোট চাওয়াটাও
বোধ হয় আর পূরণ হবার নয়। তাই জীবনের ওপর দিয়ে যা ঘটে গেল তা মেনে নিয়েছি।
তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা তেমনিই আছে একটুও কমে যায়নি।
আমি তোমার মাঝে অমর হতে চাই না!
গভীর রাত দুঃস্বপ্ন ভেবে, পারলে আমাকে ভুলে যেও।
তবে এতোটুকু দোয়া করো যাদের কারণে তোমাকে আজ হারাতে বসেছি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে একদিন যেন তাদের বিচার হয়।
বেচে থাকুক আমার মতো অসহায় নিরপরাধ কিছু মানুষ । তারা ফিরে পাক হারানো সব ভালোবাসা।
সবশেষে বলবো সুখ যেন তোমার পিছু না ছাড়ে॥
বিষয়: বিবিধ
৭৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন