ফুলশয্যার কান্নাঃ কিছুটা গল্প আমার প্রাণের প্রিয় মানুষের ওয়াল থেকে
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার সুয়েব ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০১:৪৯:৩৬ দুপুর
ঘোমটার আড়ালে মুখ লুকিয়ে বালিকাবধূ ঘামতে লাগলো। তার
চারপাশে ফুলের সুবাস। হাজার হাজার ফুল থরে থরে সাজানো রয়েছে।
গোলাপ, বেলী, রজনীগন্ধা - কি নেই এই পুষ্পশয্যায়! আচমকাই দরজা
খটমট করে খুলে গেল। বালিকা কেঁপে উঠলো। না জানি কি হবে! বর নামক অচেনা প্রাণীটি তাকে অস্বস্তি দেবে না তো?
:
:
লম্বা আলখাল্লার মত পাঞ্জাবী আর পাজামা পরে কাঁপা কাঁপা হাতে
দরজা বন্ধ করলো বর নামক যুবকটি। ধীরপায়ে এগিয়ে গেল সজ্জিত
শয্যার খুব কাছে। কিন্তু বসতে পারলো না। কে যেন পাঞ্জাবীর কোণা টেনে ধরেছে খুব করে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো ছেলেটি।
বালিকা খানিকটা সরে গিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে দিল, "আপনি বসতে পারেন।"
:
:
খাটের দু'প্রান্তে বসে দু'জন ফুলের সুঘ্রাণ নিতে লাগলো। আহা! আজ
তাদের ফুলশয্যা, যা কি না জীবনে একবারই আসে। কত জোছনা, কত সুগন্ধিমাখা স্বপ্ন নিয়ে আসে এই রাত! এর এক মুহূর্তও নষ্ট করলে
কি চলে? না, চলে না। তারা নষ্ট করলোও না। সারা রাতটাকে জেগে
জেগে চোখের উপর দিয়ে পার করলো এই নবদম্পতি। এক মুহূর্তের
জন্যও দু'জনের প্রগাঢ় নিঃশ্বাস কাউকে ছুঁয়ে দিল না।
:
: ভোরবেলায় ওদের রাঙা লাল টুকটুকে চোখ দেখে কত না মশকরা
করলো ভাবি-দাদীরা। লজ্জায় তারা আরও লাল হল। সারাদিন 'বাসর
কেমন কাটলো' প্রশ্নটা তাদের পীড়া দিল। এভাবে কেটে গেল দ্বিতীয়
রাত, তৃতীয় রাত, চতুর্থ রাত......
অবশেষে কোন এক মাহেন্দ্রক্ষণে দু'জন প্রথম ছুঁয়ে দেখলো দু'জনের
নিঃশ্বাস। বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল শতগুণ। সে রাতও চোখের উপর দিয়ে পার করলো তারা। তবে এবার পরম সুখে। আহা! এভাবে যে সারাটা
জীবনই না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায়!
:
:
বহু জল গড়িয়ে গেল পদ্মায়। বালিকাবধূ আজ বৃদ্ধা। গতরাতে তার
নাতনীর ফুলশয্যা কেটে গেছে। বৃদ্ধা শুষ্ক হাসি হেসে বললো, "কি রে বইন, কেমন কাটলো তোর বাসর ঘর, ক দেখি? ঘোমটাটা
কে আগে খুলছে? তুই, না তোর বর?"
নাতনী অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
"কি যে বলো দাদী! ঘোমটা দিতে যাবো কোন দুঃখে? ও কি আমার
কাছে নতুন নাকি?"
: :
বৃদ্ধা থতমত খেল। সত্যিই তো, এখন তো বাসর আর বাসর ঘরে আসে
না! আসে তারও বহু আগে। এখন বাসর আসে পার্ক, রেস্টুরেন্ট আর
হোটেলে। ফুলশয্যার ফুল আর শহীদ মিনারে দেওয়া ফুলের কোন
পার্থক্যই নেই এদের কাছে। আহা! সবাই কত এগিয়ে গেছে! শুধু তারাই
মান্ধাতার আমলের রয়ে গেল। :
:
বৃদ্ধা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে দীর্ঘনিঃশ্বাসের পরতে পরতে ধ্বনিত হল
ফুলশয্যার কান্না। হ্যাঁ, ফুলশয্যার পবিত্রতা, শুদ্ধ আবেগ আর
নির্মলতা হারানোর কান্না।
বিষয়: বিবিধ
৩৬৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন