ত্রিমাত্রিক স্থানাংক
লিখেছেন লিখেছেন venus ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:০২:৪৫ রাত
ত্রিমাত্রিক স্থানাংক
_____________________________
__শুনেন,বিয়ের পর কিন্তু আমাকে
পড়াতে হবে।
__সমস্যা কি,নীলক্ষেত থেকে অনেক
গুলি গল্প উপন্যাসের বই কিনে
দিব,সারাদিন পড়বেন।
__ঐ পড়া না,আমি অনার্স কমপ্লিট
করতে চাই!
,
ফোনের ওপাশ থেকে মোটামোটি
হুঙ্কার দিয়ে উঠে সূচীর হবু বর শাওন
এই কথা শুনে।
"রাত হলে তো সেই বিছানায়ই
যেতে হবে,সকালে চুলার
পাড়ে....এত পড়ে কি লাভ?
যদি পড়তেই চায় তাহলে নাকি
শাওন মাদ্রাসায় পড়াবে সূচিকে!
,
যে ছেলে বিয়ের আগেই হবু বউ এর
কাছ থেকে বিভিন্ন অশ্লীল
ছবি,ভিডিও,কথা শুনা ও দেখার
জন্যে জরাজরি করে,ধমকের উপরে
রাখে,এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না
সেই ছেলে যে বিয়ের পর সূচীকে
মাদ্রাসায় পড়াবে তা ভেবে
যতটা অবাক হয় তার থেকে বেশি
অবিশ্বাস লাগে সূচির শাওনের উপর।
,
বিয়ের পর নাকি স্মার্টফোন
চালাতে দিবে না,দিবে না ঘন ঘন
বাপের বাড়ি যেতে,পড়ালেখা
তো করতেই দিবে না,এরকম আরো
ডজনখানেক শর্ত জুড়ে দেয় শাওন
সূচীকে।
বিয়ের আগেই মাস খানেকের
ভিতর সূচী শাওনের অভ্যন্তরীণ
নাড়ি নক্ষত্র ধরে ফেলে।
মা-বাবা কে বলে দেয়,বিয়ে সে
করবে না।করলেও অনন্ত এই ছেলেকে
না!!
,
কিন্তু,কে শুনে কার কথা।মেয়েকে
সাত
রাজার ধন দিয়ে সুখি
রাখবে,মেয়ে যখন যা ইচ্ছা তাই
করবে ইত্যাদি রসালো কথার
মায়াবী প্রলাপে সূচীর মা কে
ভুলাতে শাওনের খুব একটা সময়
লাগে না।
দিনে দুই বার করে হবু শ্বাশুড়ীর
কাছে ফোন দিয়ে বলে ঠিকমত ওষুধ
খেয়েছে কি না,খাওয়া দাওয়ায়
গাফলতি যেন না হয় ইত্যাদি।
হবু মেয়ের জামাই এর এরকম বাহ্যিক
কর্তব্য পালন দেখে সূচীর মা তো
গদগদ।
,
তিনটা মেয়ে তার।বড়টা বিয়ে না
দিলে উপযুক্ত ছোটটা কেও বিদায়
দেওয়া যাবে না।
সাধু ভাব নেওয়া শাওন কে তাই
সূচির বাবা মায়ের পচ্ছন্দ হয়ে যায়
নিমিষেই।
কিন্তু সূচী তো বলতে পারছে না
শাওনের লজ্জাকর অশ্লীল কথাগুলি,
যেটুকু
বলছে তাও পাত্তা দিচ্ছে না ওর
মা।বলে,বিয়ে হলেই আর এমন
থাকবে না! কয়লা ধুইলে কি আর
ময়লা যায়,,,, কে বুঝাবে তাদের।
.
নরম না শক্ত,টিপ দিয়ে না দেখে
বাহ্যিক রং দেখেই যে কলা কিনে
সে কিন্তু অধিকাংশ সময়ই ঠকে।
সূচীরর মাও কিন্তু টিপ না দিয়েই
কলা কিনতে যাচ্ছে।যদি শক্ত বের
হয়,সূচী কি পারবে হজম করে বাকি
জীবন থাকতে? না কি হাল ছেড়ে
অকূল দরিয়ায় সাতড়াবে?????
,
নরম মনের মানুষ সূচির বাবা
বলে,"ছেলে না পড়াক,আমি
পড়াবো।"
কিন্তু সূচীর বাবা মনে হয় বিখ্যাত
লাইন টা ভুলে গেছে,"অধিকার
ছাড়িয়া দিয়ে অধিকার রক্ষা
করার মত বিড়ম্বনা আর নাই।"
বিয়ের পর যে মেয়ে অন্যের হাতের
পুতুল হয়ে যায়,তাদের অনুমতি ছাড়া
কেও চাবি ঘুড়াতে পারে না এই
বোধ টুকু মনে হয় জামাই সম্পর্কে ওর
মায়ের কাছ থেকে অতি প্রশংসা
শুনে সূচির বাবা ভুলে গেছে।
,
জীবন ভর যাকে নিয়ে এক কাথার
নিচে থাকতে হবে,এক সঙ্গে পথ
চলতে হবে জেনে শুনে কি কেও
সেই কালো মনের মানুষ কে অর্ধাঙ্গ
বানায়????
,
সূচীর বারবার না বলাতে শাওন তার
আগ্রাসী ভাব পরিবর্তন করে।আকুতি
করে বলে,"সুচি, একবার তোমার পরশ
পেলে আমি আমূল পাল্টে যাবো।
কথা দিচ্ছি,ভালোবাসার নৌকায়
আমরা ভেসে বেড়াবো, এতটুকু কষ্ট এর
আচঁড় লাগতে দিবো না,আগলে
রাখবো জীবন ভর।"
,
সূচি কান পেতে শুনে যায় সব।
শাওনের কাছে দুটি মাস সময় চায়
শাওন কে আরো ভালো ভাবে
বুঝতে।কিন্তু শাওন কোনভাবেই
রাজি হয় না,এখনই বিয়ে করবে সে।
"যে ছেলে এত করে বলছে ভালো
হবে,তাহলে সে কেন আর দুটি মাস
অপেক্ষা করতে পারবে না?
শাওনের প্রতি বিশ্বাসে আরো
মরিচা ধরে সূচির।"
.
বিয়ের নির্ধারিত তারিখের এক
সপ্তাহ আগে এক রাতে সূচি,ওর ছোট
বোন,বাবা মা এক সাথে বসে।শেষ
মতামত জানতে চায় ওর কাছ থেকে।
,
একদিকে বাবা মায়ের আদেশরুপী
অনুরোধ, অন্যদিকে নিজের কাছে
উন্মোচিত শাওনের কুমূর্তি।আবার,
শেষ সময়ে এসে শাওনের
ভালোবাসার নৌকায় উঠার
কড়জোড় মিনতি।
,
পঞ্চইন্দ্রিয় স্তব্দ হয়ে আসছে।অন্তিম
আশায় বসে থাকা সকল মুখকে সে কি
বলবে? ত্রিমাত্রিক স্থানাংকের
মূল বিন্দুতে বসে সূচি হাপাচ্ছে
ক্রমাগত......।
,
ঠোঠের সামনে যে সিদ্ধান্ত টা
এসে দাপড়াদাপড়ি করছে তা বললে
উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকা সব গুলি
মুখ কালো হয়ে যাবে,চুপসে যাবে
তাদের সব আশা।
আবার, শতচেষ্টাতেও যে সিদ্ধান্ত
এর কথাটা মনের ভিতর তালাবন্ধ,
মুখফুটে বলতে পারছে না, তা বললে
মুহূর্তেই সব গুলি মুখ হাজার
পাওয়ারের বাতির মত জ্বলে উঠবে।
,
শরৎ চন্দ্রের নায়িকাদের মত কি
এখনও সব মেয়েদের নিজের সুখকে
জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যদের মুখে
হাসির ফোয়াড়া ফুটাতে হবে?
নিজের জলন্ত সূর্য্য কে অন্যের
ভালো লাগা জোসনার জন্যে
তড়িঘড়ি করে ডুবাতে হবে?
,
জানি না....আপনারাই ভালো
বলতে পারবেন।
বিষয়: সাহিত্য
৮৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন