বিশ্বে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ।
লিখেছেন লিখেছেন Ruman ২১ জুলাই, ২০১৯, ০৭:৫৩:৪৮ সকাল
হিংসা-বিদ্বেষ, সংঘাত-হানাহানি আর রক্তারক্তিতে জর্জরিত অধুনা বিশ্বে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ।
যদি প্রশ্ন করেন, এই সামাজিক সম্প্রীতি কিভাবে তৈরি হলো? উত্তরে বলবো, রাষ্ট্রীয় আইন কিংবা প্রশাসনিক তৎপরতার মাধ্যমে এরকম পরিবেশ তৈরি করা কেবল কঠিনই নয়, বরং অসাধ্য।
এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বাংলাদেশের লাখ লাখ মসজিদ-মাদ্রাসা, আলেম-ওলামা ও ইসলামী ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের প্রভাবে প্রভাবিত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা সবসময় সজাগ ও সচেতন। অর্থাৎ রাষ্ট্রের তদারক কিংবা আইন প্রয়োগের চেয়েও সাধারণ মানুষ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দিক থেকে বরং সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেয়ে থাকেন। বরং কখনো কখনো প্রশাসনযন্ত্রের তাদের প্রতি একপেশে দৃষ্টি এবং মাত্রাতিরিক্ত স্বজনপ্রীতি বিরক্তির উদ্রেক করলেও এটা কখনো বিদ্বেষ কিংবা সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে না।
যদিও সাংবিধানিকভাবে এ দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে 'বৃহৎ গণতান্ত্রিক' এবং 'সেক্যুলার' রাষ্ট্র ইন্ডিয়ায় প্রতিনিয়ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নানাবিধ প্রতিহিংসার শিকার হয়। এর নেপথ্যে যে কারণটি অনুঘটকের কাজ করে তা হলো, সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিয়ত মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হয় যেটা বিষবাষ্পের মত সাধারণ মানুষকে গ্রাস করে, ফলে তারা পৈশাচিক উগ্রতা ও হিংস্রতায় সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
প্রয়াত বাবু সুরঞ্জিতের মতো প্রবীণ রাজনীতিবিদের ভাষায় কথিত 'ইসলামী মৌলবাদীদের' কেটে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়া অথবা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতাপশালী নেতা রানা দাশগুপ্ত আর পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়রা দিল্লির দুয়ারে ঘুরে 'বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের দাবি জানানো'র মতো রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতার মাধ্যমে বরং এই দেশে বারংবার সংঘাতের উস্কানি, বিভাজন, বিভক্তি আর হানাহানির দুয়ার খুলে দিতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের এরকম অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্রান্তের মুখেও ইসলামপ্রেমী জনতা ও নেতৃবৃন্দ ধৈর্যের চূড়ান্ত দেখিয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, যারা কথায় কথায় 'বাংলাদেশ উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে' বলে অভিযোগ করে, দেশের কোথাও বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই যারা শাহবাগ, প্রেসক্লাব, ভার্সিটি ক্যাম্পাস অথবা লাইভ টকশো গরম করে ফেলে, তারা কেন এখন কথা বলছে না?
বাবু শ্যামল দত্ত, নাইমুল আহসান খান, মুন্নী সাহা আর সুলতানা কামালরা কেন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে?
এতো ভয়াবহ, জঘন্য, অসত্য এবং নজিরবিহীন রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কথা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের সামনে বলা হলো, অথচ সেক্যুলার বামপাড়া, প্রিয়া বালার দোসর রাশেদ খান মেনন, খুশি কবির, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুনরা একদম নিরুত্তাপ, নিরুদ্বিগ্ন, নির্বিকার।
সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা যে হাসানুল হক ইনু 'স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গী আর উগ্রবাদী' জপে জপে মুখে ফেনা তুলে ফেলে, সেই কুলাঙ্গারটাও এখন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।
এখন কেনো চেতনা ব্যবসায়ী প্রথম আলো, সমকাল, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালেরকণ্ঠের মন্তব্য প্রতিবেদন, সম্পাদকীয় অথবা সময় নিউজ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ৭১ টিভির টকশোতে ঝড় উঠছে না?
কারণ জাতির বিবেক নামধারী মেকি, ছদ্মবেশী, মুখোশধারী দেশপ্রেমী দাবিদার ভিনদেশী দালালগুলো নিজেদের আত্মা আর বিবেক ভিনদেশে বন্ধক দিয়ে রেখেছে।
যেকোনো ছুতোয় যারা 'দেশ গেল দেশ গেল' রব উঠায়, এই মুহূর্তে তাদের নির্লজ্জ নিরবতা প্রমাণ করে যে, কথিত দেশপ্রেমের সবক নিয়ে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যেই তারা মাঝে মাঝে জাতির সামনে দৃশ্যমান হয়। সে কারণেই অনেকের মনে হচ্ছে, এই দেশবিরোধী চক্রান্তের সাথে তাদের কোনো না কোনো সম্পৃক্ততা আছে।
এই দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিচয়ের কারণে কেউ নির্যাতিত-নিপীড়িত এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য অনেকে দেশ-বিদেশে এই ইস্যুতে আত্মঘাতী মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে। এখন যেহেতু দেশে সর্বাধিক সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী সম্প্রদায়ের একজন প্রিয়া বালা সরাসরি দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, সুতরাং এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে অভিযোগ না করে বরং সরকারকেই অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সাম্প্রতিককালে ইন্ডিয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে ভয়ানক হিন্দুত্ববাদের উত্থান ঘটেছে, যারা 'জয় শ্রীরাম' স্লোগানের জন্য কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত কোথাও না কোথাও প্রতিদিন মুসলমানের রক্ত ঝরাচ্ছে, তারা দূর থেকে কলকাঠি নেড়ে এই দেশে বিশৃংখল পরিবেশের সৃষ্টি করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চক্রান্তের কোন কিছু বাকি রাখবে না, এটা হিন্দুত্ববাদের ঘৃণ্য রাজনীতি সম্পর্কে নূন্যতম অবগতি ও সচেতনতা রাখে এমন যে কেউ সহজেই বুঝবে। সে কারণে সমাজের সচেতন প্রতিটি ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং মহলকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা, সতর্কতা ও সাবধানতার পরিচয় দিতে হবে।
রানা দাশগুপ্তদের আত্মা এবং শেকড় দেশের বাইরে, তারা বিদেশি প্রভুর রিমোট কন্ট্রোলে উঠবস করে, তাদের অপতৎপরতাকে কোনোভাবেই দৃষ্টির বাইরে নেওয়ার সুযোগ নেই। তারা এ কথা বলে কোনভাবেই পার পেতে পারে না যে, 'প্রিয়া সাহা বালার বক্তব্যের দায় দায়িত্ব হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেবে না।' সত্যিকারার্থেই দেশের প্রতি তার বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা থাকলে, কোনরকম কমিটমেন্ট বা দায়বদ্ধতা অনুভব করলে দুদিন আগে এই ভয়ানক ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সে প্রিয়া বালার বক্তব্যের প্রতিবাদ করতো। কিন্তু উল্টো দেখলাম মিডিয়ায় ১৯৪৭ থেকে এইসময় পর্যন্ত তার সম্প্রদায়ের কল্পিত, মনগড়া, অসত্য সংখ্যাতত্ত্ব তুলে ধরার মাধ্যমে রানা দাশগুপ্ত প্রিয়া বালা সাহার জঘন্য বক্তব্যকে সত্য প্রমাণে কূটকৌশল অবলম্বন করেছে।
পারস্পরিক দোষারোপ আর কাদা ছোড়াছুড়ির কদর্য খেলায় কালক্ষেপণ না করে সরকার তার দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রিয়া বালা এবং ইসকন চক্রান্তের সামনে এবং পেছনে যারা রয়েছে তাদেরকে জাতির সামনে চিহ্নিত করে শক্ত এবং কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে আইনের আওতায় আনবে, সেই প্রত্যাশায় জাতি তাকিয়ে আছে।
বিষয়: বিবিধ
৮২৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন