নিম্নবিত্ত শ্রমিকদের শোষণ নির্যাতন করা অনেক সহজ। কারণ তাদের হয়ে প্রতিবাদ করার কেউ নেই।

লিখেছেন লিখেছেন Ruman ০৭ অক্টোবর, ২০১৭, ০৩:০৩:২৭ দুপুর

নিম্নবিত্ত শ্রমিকদের শোষণ নির্যাতন করা অনেক সহজ। কারণ তাদের হয়ে প্রতিবাদ করার কেউ নেই। রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ কেউই তাদের নিয়ে কথা বলেন না।

গত বুধবার সকাল ১১টায় বগুড়ায় যানজট নিরসনে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের দ্বিতীয় দিনে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মুক্ত করতে এক অভিযানে নামেন জেলা প্রশাসক।রাস্তায় ১৭টি অটোরিকশা আটক করেন এবং বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেন। এ অভিযানে নেতৃত্বদেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা হাকিম মোহাম্মদ হালিমুল রাজিব। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু কেন? আইন কি সবার জন্য সমান নয়? নাকি শুধু নিম্নবিত্তদের জন্য।

যে লোকটি সারাদিন রিকশা চালিয়ে তার পরিবারের জন্য বাজার করে সন্ধ্যা সময় ঘরে ফিরত। আজকে কি পারবে? পরিবারের মুখের খাবার কেন আপনারা কেড়ে নিচ্ছেন? পারেন শুধু গরিবের পেটে লাথি দিতে। তাদের খাবারের থালা কেড়ে নিতে। এসব কাজ বন্ধ করুন। মানবিক হোন। বিবেককে জাগ্রত করুন।

আরেকটি ঘটনা ঘটেছে গত ৬ জুলাই ঢাকায়। সেখানে গায়ের গামছাতে কেরোসিন দিয়ে তা গায়ে জড়িয়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এক রিকশাচালক। ঘটনাটি ঘটেছিল ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের এক রিকশাচালকের অটোরিকশা জব্দ করার অভিযানের সময়। রিকশাচালকের অপরাধ সে হাইওয়ে দিয়ে রিকশা চালিয়ে ছিল। আয়ের একমাত্র অবলম্বন নিজ অটোরিকশা পুলিশের কাছে জব্দ করার ঘটনা মেনে নিতে পারেননি ওই চালক শামিম। তাই তো তিনি বেছে নিয়েছিলেন আত্মহত্যার মতো কঠিন এক পথ। কিন্তু তিনি মরে যেতে পারেননি। স্থানীয় জনগণ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু তাঁর শরীরের মুখ, হাত, পা, বুকসহ ২৫ শতাংশ অংশ পুড়ে যায়।

অটোরিকশাটি জব্দ করার পর পুলিশের কাছে শামিম অনেক কাকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁর রিকশা না দিয়ে বরং ব্যাটারি খুলে নেয়। ব্যাটারি ফিরত নিতে গেলে পুলিশের সদস্য তাকে লাঠিপেটা করেন। তখন ব্যাটারি না দিলে পুলিশকে তিনি বলেন শরীরের আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করবেন।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য তখনো পুলিশের মন গলেনি।রাগে ক্ষোভে তিনি তখন পাশের দোকান থেকে কেরোসিন এনে গামমছাতে লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

একজন রিকশাচালক দৈনিক কতটাকাই বা আয় করেন। সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা। তার কাছ থেকে পুলিশ ২০০০ টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন। নিজের পরিবারের ছয় সদস্যের তিন বেলা খাবার জুটাতেই হয়তো হিমশিম খেতে হয় শামিমকে। কত রাত হয়তো না খেয়ে ঘুমাতে হয় তার পরিবারকে।

একজন প্রশাসকের কাছে মানুষ কি চায় ? পুলিশ যেখানে মানুষের পাশে দাঁড়ায় সেখানে শামিমের মুখের অন্ন কেড়ে নিচ্ছে পুলিশ। হয়তো শামীম একটু অপরাধ করেছে তাই শামিম তো কোনো অন্যায় করেনি। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়নি।ঘুষ খায়নি। কিন্তু শামিমের এই অবস্থা কেন?

গত বুধবারের ঘটনাটা পুলিশ না করলে প্রশাসনের দ্বায়িত্ববানরা করিয়েছেন। তাঁরা পারতেন রিকশা জব্দ করতে। একটু জরিমানা করতে। বিকল্প কোনো শাস্তি দিতে। এটা তো গুরুতর অন্যায়। কেউ ঋণ করে রিকশা কিনেছিলেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। এই কান্না শুধু হাতে গোনা কয়েকজনের কান্না নয়। হাজারো শ্রমিকের কান্নার প্রতিধ্বনি শুনতে পাই এই কান্নায়। কিন্তু প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা শুনতে পান না। কারণ তাঁরা শাসক।

বিষয়: বিবিধ

৬৯৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384182
১১ অক্টোবর ২০১৭ সকাল ১০:৪০
হতভাগা লিখেছেন : আইন সবার জন্য সমান না ।

উপরে বর্নিত রিক্সাওয়ালার যে অপরাধটি করার ফলে পুলিশের কাছে সাজা পেল সে একই রকম অপরাধ রমনা পার্কের পাশে মিন্টো রোডে হরহামেশা দেখা যায় । দেখা যায় যে পুলিশই বরং এদেরকে কর্ডন দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
384212
১৬ অক্টোবর ২০১৭ সকাল ০৬:৪৯
Ruman লিখেছেন : শ্রমিকদের শোষণ নির্যাতন করা অনেক সহজ। কারণ তাদের হয়ে প্রতিবাদ করার কেউ নেই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File