কওমি মাদ্রাসার প্রতি অভিযোগ:সেখানে নাকি বাংলাভাষার চর্চা হয়না।
লিখেছেন লিখেছেন Ruman ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৬:৪৬:০১ সকাল
কতটা সত্য এই অভিযোগ?
সাধারণত সেকুলার প্রগতিশীল ও আধুনিক শিক্ষিতরাই এই অভিযোগ বেশি করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
দেশব্যাপী অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদ্রাসায় নিয়মিত মাসিক পত্রিকা বের হয় (বাংলা ভাষায়)। এগুলোর গ্রাহক ও পাঠকের সংখ্যাও মোট হিসাবে লক্ষ লক্ষ। এগুলোতে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক এমনকি ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন অনেক আধুনিক শিক্ষিতরাও লেখালেখি করেন। কবিতা, গল্প, ছড়া, উপন্যাস, রচনা, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের প্রত্যেকটি শাখার ছাপ পাওয়া যায় এসব পত্রিকাগুলোতে। তাহলে কওমি মাদ্রাসায় বাংলা ভাষার চর্চা হয়না-- এটা একটা ভুয়া অভিযোগ। অজ্ঞতাবশত এই অভিযোগ।
আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, দেশজুড়ে কওমি মাদ্রাগুলোতে যতসংখ্যক মাসিক ও পাক্ষিক পত্রিকা বের হয়, ততসংখ্যক পত্রিকা সেকুলার প্রগতিশীল ও বামপন্থীরাও এখনো বের করতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, বিলিভ ইট অর নট, কওমি মাদ্রাসাগুলোর বেশ কয়েকটি পত্রিকা ৫০ থেকে ৬০ বা ৭০ বছর ধরে এখন পর্যন্ত নিয়মিত বের হচ্ছে। বিশ্বাস না হলে সরেজমিনে অনুসন্ধান করুন। প্রমাণ পাবেন।
এমনকি কয়েকটি মাদ্রাসায় আরবি ও ইংরেজি পত্রিকাও বের হয়। সেকুলার ভাইবোনেরা, প্লিজ একটু খোঁজখবর নিয়ে কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে কথা বলুন। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে অভিযোগ থাকতেই পারে; কিন্তু সেটা বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক হওয়াই বাঞ্ছনীয়। অবজ্ঞাসূচক ভিত্তিহীন অভিযোগ করা অনুচিত।
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিযোগ করার আগে আমি জানতে চাই, আধুনিক জেনারেল লাইনের কয়জন শিক্ষার্থী শুদ্ধ বাংলায় লিখতে পারে? এছাড়া স্কুল-কলেজে ১০ বছর ইংরেজি পড়েও এবং A+ পেয়েও বেশিরভাগেরই ‘আই এম জিপিএ ফাইভ’ অবস্থা!! আর ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্টরা তো জানেই না আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা কে। বাংলা তো দূর কি বাত। তবুও তাদের নিয়ে কোনো অভিযোগ শোনা যায়না সেকুলারদের মুখে। আর কিনা সব দোষ কওমি মাদ্রাসার? আসলেই যত দোষ নন্দ ঘোষ।
নিজেদেরকে আয়নায় না দেখে যারা কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অজ্ঞতাবশত অভিযোগ করে থাকে, তাদের উচিত আগে নিজেদের শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক করা। তথাকথিত সৃজনশীল জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থার আজকে যে-দুর্দশা, সেই সংকট আগে দূর করেন। অয়েল ইউর ওউন মেশিন।
আর হ্যা, প্রশ্নফাঁসমুক্ত ও নকলমুক্ত অবস্থায় কীভাবে পরীক্ষা নিতে হয়, সেটা আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কওমি মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেনিং বা অভিজ্ঞতা নিতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে সেকুলার প্রগতিশীল বামপন্থীরা কওমি মাদ্রাসার ইতিহাস ও অবস্থা সম্পর্কে প্রায়-অজ্ঞ। আর অজ্ঞতা যেখানে, বিভ্রান্তি ও গোঁড়ামিও সেখানে। অজ্ঞতার কারণেই তারা কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। তাদের উচিত কওমি মাদ্রাসার সাথে বোঝাপড়ার সম্পর্ক গড়ে তোলা। পারস্পরিক জানাশোনার মাধ্যমেই সমাজে সুস্থ ও প্রোডাক্টিভ চিন্তাচর্চার পরিবেশ তৈরি হবে।
আর বিশেষত এটা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, কওমি শিক্ষা হচ্ছে একটি কমিউনিটি এডুকেশন, জেনারেল ফর্মাল এডুকেশনের মতো নয়।
বিষয়: বিবিধ
৬৯৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন