ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বনাম মাদ্রাসার স্টুডেন্ট ও ইসলাম।

লিখেছেন লিখেছেন Ruman ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ০৭:৩০:২৬ সন্ধ্যা

কয়েকদিন আগে একজনের সাথে আলাপ হচ্ছিল। তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স করছেন। খুবই ইতিবাচক ও অগ্রসর চিন্তাভাবনা তার। আমি মুগ্ধ। ফিমেল হওয়া সত্ত্বেও সাহিত্য ও পলিটিক্সে তার প্রধান আগ্রহ। বেইসিক্যালি কওমিতে পড়েছেন, মহিলা মাদ্রাসায়। পাশাপাশি সরকারি দাখিল আলিমও দিয়েছেন। যথারীতি মেধার স্বাক্ষর রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর তিনি চেয়েছিলেন সাংবাদিকতা নিয়ে পড়তে। কিন্তু তার কথামতে ‘মাদ্রাসার স্টুডেন্ট বলে আমাকে ‘সাংবাদিকতা’ দেয়নি তারা। ঠকিয়েছে।’ তাই ইসলামিক স্টাডিজে পড়া ছাড়া কী আর করা। শুনে ‍খুব ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হলাম।

এমনটা আগেও আমরা দেখেছি। দু-তিন বছর আগে একবার ঢাবি’র ভর্তিপরীক্ষায় ইংরেজিতে পাস করা একমাত্র অংশগ্রহণকারী ছিল একজন মাদ্রাসার স্টুডেন্ট। তাকে ইংরেজি সাবজেক্ট তো দেয়া হয়ইনি, এমনকি সাংবাদিকতা ও আইআর-এর মতো সাবজেক্টগুলোও দেওয়া হয়নি। এই ইস্যুতে তখন ঢাবি’র ব্যাপক সমালোচনাও হয়েছিল। এমন ঘটনায় সেকুলার আধুনিক শিক্ষিতরা বিস্মিত হয়ে পড়েছিল। তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, কীভাবে ইংরেজিতে একজন মাদ্রাসার স্টুডেন্ট পাস করলো-- যেখানে জেনারেল লাইনের শিক্ষার্থীরা গণহারে ফেল করলো!! কোনো এক তথাকথিত সেকুলার বুদ্ধিজীবী সেদিন মন্তব্য করেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি দিন দিন মাদ্রাসায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। হাহাহাহা।

ঢাবি’র মধ্যে ছদ্মবেশী সেকুলার ইসলামবিদ্বেষী হর্তাকর্তারাই এসব বৈষম্য করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। আর পূর্ণ অধিকার থাকা সত্ত্বেও পছন্দের বা স্বপ্নের সাবজেক্টে পড়তে না পেরে বঞ্চনার শিকার মাদ্রাসার স্টুডেন্টদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। নীরবে নিভৃতে তারা সেই ব্যথা ও কষ্ট বয়ে বেড়ায়। কাকে বলবে? কে তাদের এই বঞ্চনার কথা তুলে ধরবে? কে প্রগতিশীলদের এইসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে? মিডিয়া তো এগুলো জেনেশুনেও চেপে যায়।

ঢাবি’র সেকুলার প্রগতিশীল কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা থেকে আগত এইসব মেধাগুলোকে এত ভয় পায় কেন? কারণ তারা ভালো করেই জানে, মাদ্রাসার স্টুডেন্টরা ইংরেজি, সাংবাদিকতা ও আইআর-এর মতো সাবজেক্টগুলোতে পড়ার সুযোগ পেলে এক্সিলেন্ট রেজাল্ট করবে। ফলে ভবিষ্যতে ঢাবিতে এসব বিভাগে টিচারও হতে পারবে। এরপর মেধার জোরে প্রমোশন পেয়ে প্রফেসর, চেয়ারম্যান, ডীন হওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের বেগ পেতে হবে না। অচিরেই দেখা যাবে কোনো এক সাবেক মাদ্রাসার স্টুডেন্ট ঢাবিতে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বসবে। আরে, এসব ভেবেই তো সেকুলারদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তারা অবহেলা করে এমন নয়, বরং মাদ্রাসার স্টুডেন্টদের মেধা ও যোগ্যতাকে প্রচণ্ড পরিমাণে ভয় পায় বলেই তাদেরকে ভালো ভালো আধুনিক সাবজেক্টগুলো থেকে বঞ্চিত করছে, যেন ভবিষ্যতে মাদ্রাসার স্টুডেন্টরা জাতির কর্ণধার বুদ্ধিজীবী বা নীতিনির্ধারক হয়ে উঠতে না পারে। সেকুলার পোগোতিশীলরা কোন্ জাতের হারামি এবার বুঝে দেখেন।

মাদ্রাসার স্টুডেন্টরা 'পশ্চাদপদ, গোঁড়া ও মৌলবাদী' বলে গাল দেয় সেকুলার পোগোতিশীলরা। প্রকৃতপক্ষে এগুলো সত্য নয়। কিন্তু সেগুলো তারা বলে মাদ্রাসার স্টুডেন্টদের মেধা, যোগ্যতা ও শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি ও সম্ভাবনাকে দমিয়ে রাখার জন্য। মূলত ইসলাম ও ইসলামী ভাবধারাকে ঠেকানোর জন্য। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই করা হয়েছিল শিক্ষাক্ষেত্রে এখানকার মুসলমানদের অগ্রগতির জন্য। ঐতিহাসিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী ভাবচেতনা ছিল অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে সেকুলারিজমের নামে ঢাবি’কে ইসলামী চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাল্ট হিরো স্বামী বিবেকানন্দের বিশাল বপুর ঢাউস মূর্তি এখনো আপনারা দেখতে পাবেন জগন্নাথ হলের ভেতরে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে ইসলামের নাম-নিশানা বহু আগেই নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি কেটে ‘সলিমুল্লাহ হল’ করা হয়েছিল। কাজী নজরুল ইসলাম হল থেকে ‘ইসলাম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘কাজী নজরুল হল’ করা হয়েছিল। এই বছরের পহেলা বৈশাখে কথিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ পালনকালে একটা ঘটনায় আমরা জানতে পেরেছিলাম ঢাবি’র চারুকলায় গরুর মাংস রান্না নিষিদ্ধ। এবার বাকিটা আপনারাই ভাবুন।

বিষয়: বিবিধ

৭৭৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383862
২৪ আগস্ট ২০১৭ রাত ০৮:০৮
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : Excellent
২৬ আগস্ট ২০১৭ সকাল ০৭:১৩
316757
Ruman লিখেছেন : ধন্যবাদ
383869
২৫ আগস্ট ২০১৭ সকাল ১০:২৪
হতভাগা লিখেছেন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা হয় !!! এটা নতুন জানলাম।
২৬ আগস্ট ২০১৭ সকাল ০৭:১৩
316756
Ruman লিখেছেন : খুবই অবাক করা কথা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File