বাংলাদেশ, হিন্দুত্ববাদ ও দিল্লির আধিপত্যবাদ।
লিখেছেন লিখেছেন Ruman ১৩ আগস্ট, ২০১৭, ০৮:৩৫:১৭ রাত
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে অপরিসীম সহায়তা করেছিল, এটা অবশ্যই আমরা স্বীকার করি। কিন্তু এই বিষয়টিকে বুদ্ধিহীন ও যুক্তিহীন আবেগের জায়গা থেকে স্মরণ করা স্রেফ আমাদের জাতিগত বোকামি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শান্ত রহমান সম্প্রতি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ভারত অবশ্যই নিজের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক স্বার্থেই সেদিন বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল। পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয়ে (অর্থাৎ বাংলাদেশ জন্ম নেয়ায়) ভারতও লাভবান হয়েছে। ভারতের THREAT PERSPECTIVE/ANALYSIS-এ পাকিস্তানের সাথে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধের দুঃশ্চিন্তা দূর হয়েছে। ভারত এরপরে ভাবতে শুরু করেছে-- শুধু পাকিস্তান ও চীন নিয়ে তাদের মৌলিক নিরাপত্তা বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করলেই হবে।’ (৫ এপ্রিল, ২০১৭)।
এবার বুঝে দেখেন আপনারা, ভারতের কী উপকারটাই না আমরা করলাম!!
পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রই বিনাস্বার্থে আরেকটি জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তা করেছে--এমন নজির নেই। নিজের স্বার্থ ছাড়া কোনো রাষ্ট্রই তা করেনি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা একদিকে নিজেদের জন্য একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বানিয়েছি, আবার ভারতের ভূরাজনৈতিক কৌশলগত স্বার্থও আমরা পূরণ করেছি। সে কারণে ভারতেরও উচিত আমাদের প্রতি সকৃতজ্ঞ থাকা। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ভারতীয় বাহিনী যে-পরিমাণে বাংলাদেশে লুটপাট চালিয়েছিল এবং লুটের মাল ভারতে নিয়ে গিয়েছিল, তাতেই ভারতের ঋণ পরিশোধ হয়ে যাওয়ার কথা।
জাতিগত দিক থেকে আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল ভেঙে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জনের প্রাণান্তকর রক্তাক্ত মুক্তিসংগ্রাম। পক্ষান্তরে, ভারতের দিক থেকে সেটি ছিল পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘হাজার সালকা বদলা লিয়া।’ সুতরাং, কোনোকিছুই আর অস্পষ্ট নয়।
দুঃখজনকভাবে এখনো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নানাভাবে হেয় করে বক্তব্য দেয় ভারতের কিছু ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতৃবৃন্দ। তারা মনে করে, “Lord Rama won Lanka and gave it to Vibhishana. We did the same in the Bangladesh operation.” (Oct 2, 2016; The Times of India)
অর্থাৎ, লঙ্কা বিজয় করে রাম যেমন তা বিভীষণকে দান করেছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও ভারত তেমনটাই করেছিল। (২ অক্টো. ২০১৬, ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের বক্তব্য)।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন পর্যন্ত এহেন অবমাননাকর উক্তি ইতোপূর্বে আর কেউ করেনি।
একাত্তরে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাংলাদেশ এখনো দিল্লির আগ্রাসী ব্রাহ্মণ্যবাদ-আধিপত্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের হুমকির সম্মুখীন। কারণ ভারতে বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি ও আরএসএস এখনো বৃহৎ হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখে। বিগত ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে, ‘আমি বিশ্বাস করি, একটি ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠায় একদিন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আবার একত্রিত হবে।’ (BJP general secretary Ram Madhav has said that he believes India, Pakistan and Bangladesh will reunite one day to form an “undivided India” through “popular goodwill”. (Dec 26, 2015, The Hindustan Times)|
সুতরাং, হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসনের শিকার হতে বাংলাদেশের আর বেশি সময় লাগবে না।
বাংলাদেশের মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জাতীয় চেতনা বিনাশকল্পে আজ ইসলামকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিপক্ষ বানানো হয়েছে। ইসলামপন্থীদের নির্মূলে দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের মচ্ছব চলছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে আমাদের আত্মচেতনার কেবলাকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের দিকে ফেরানোর জোর অপচেষ্টা লক্ষণীয়। হিন্দুত্ববাদীরূপে রবীন্দ্রনাথ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন, মঙ্গলসঙ্গীত, হোলি, রাখীবন্ধন ও হিন্দি সিরিয়াল ইত্যাদির মাধ্যমে আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদ আমাদের মন-মগজে ও অভ্যন্তরে ধীরে ধীরে পরিপুষ্ট হচ্ছে। অথচ আমরা বেখবর!!
একাত্তরে পাকিস্তানি ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদকে আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে পরাজিত করেছিলাম, সুতরাং ‘পাকিস্তানি ভাবাদর্শ’ এখন শুধুই বিস্মৃত অতীত। কিন্তু আমরা এখন নয়া আধিপত্যবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের হুমকির সম্মুখীন। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদেরকে পানিতে মারা হচ্ছে, সীমান্তে গুলি করে মারা হচ্ছে, আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করে আমাদের সুন্দরবনের সর্বনাশ ঘটানোর আয়োজন করা হয়েছে, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অনধিকার হস্তক্ষেপে আমাদের দেশকে করদরাজ্যে পরিণত করার অপচেষ্টা চলছে। এই ব্রাহ্মণ্যবাদ ও নয়া আধিপত্যবাদ এবং এর অনুগত এদেশীয় পেইড এজেন্ট ইসলামবিদ্বেষী সেকুলার অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের গণলড়াই অব্যাহত রাখতে হবে, ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
৯৪৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন