কওমী মাদ্রাসাগুলো আসলেই ‘টেরিবলি ডেঞ্জারাস’ (ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক)!!
লিখেছেন লিখেছেন Ruman ০৬ আগস্ট, ২০১৭, ০৭:৫৩:৫৬ সন্ধ্যা
কওমী মাদ্রাসাগুলোকে ‘টেরিবলি ডেঞ্জারাস’ উল্লেখ করে কওমী শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে একবার হীনভাবে বিষোদ্গার করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (৭ এপ্রিল, ২০১৫)। কওমী মাদ্রাসার প্রতি এত আক্রোশের কারণ আজ আর কারো অজানা নয়। কারণ কওমী মাদ্রাসাগুলো টিকে আছে বলেই এদেশের সমাজব্যবস্থা ও গণমানুষকে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে সেকুলার মৌলবাদের চেতনায় রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছেনা। কেননা কওমী মাদ্রাসাগুলো যুগ যুগ ধরে এদেশের জনমানসে ইসলামী মূল্যবোধ, ঈমান-আক্বিদা, তাকওয়া, সুন্নাহ ও নীতিনৈতিকতার বীজ বপণ করে চলছে। তাছাড়া এদেশে ইসলাম আক্রান্ত হওয়া মাত্রই লক্ষণীয়ভাবে সর্বাগ্রে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরাই আন্দোলন ও প্রতিবাদে রাজপথ কাঁপিয়ে তোলে, যা সেকুলার ইসলামোফোবিকদের জন্য অস্বস্তিকর। সেজন্যই তাদের কাছে কওমী মাদ্রাসাগুলো ‘টেরিবলি ডেঞ্জারাস’।
দেশের সরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হল দখলবাজি, মারামারি, ভর্তি বাণিজ্য, দুর্নীতি, যৌন হয়রানি ইত্যাদি সবসময় বিদ্যমান থাকলেও কওমী মাদ্রাসাগুলোতে এসবের চর্চা হয়না। নোংরা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের জের ধরে কওমী মাদ্রাসাগুলো কখনো অচল বা বন্ধ হয়ে থাকে না। সেশন জটও নেই। দেশের কোনো কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা দুর্নীতির দায়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের মুহতামিমের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করেছে--এমন ঘটনা কখনো কেউ শোনেনি (কিন্তু বুয়েট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখেছি)। কওমী মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতি বা ধস্তাধস্তি হওয়ার নজির নেই, কিন্তু কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে। এমনকি কওমীর কোনো ছাত্রের বিরুদ্ধে শিক্ষক পেটানোর অভিযোগ কখনো আমরা শুনিনি। প্রশ্নফাঁসের পরীক্ষা কখনো কওমী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হতে দেখিনি।
কোনো কওমী মাদ্রাসায় ছাত্ররূপী রাজনৈতিক ক্যাডার কর্তৃক ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপনের নজির নেই (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা কর্তৃক এমন নজির আছে)। বিশ্বজিতের নৃশংস হত্যাকারী সোনার ছাত্ররা কওমী মাদ্রাসার নয়। ইভটিজিংয়ের অপরাধে কোনো কওমী মাদ্রাসার ছাত্রকে জনসমক্ষে কানে ধরে ওঠ-বস করানোর নজির নেই। কওমী মাদ্রাসার মহিলা বিভাগের কোনো ছাত্রী ঐশীর মতো নেশা ও মাদকে আবিষ্ট হয়ে তার মা-বাবাকে খুন করেছে--এমন দৃষ্টান্ত নেই। নারী নির্যাতন মামলায় কওমী মাদ্রাসার কোনো আলেম বা শিক্ষক জেল খেটেছেন--এমন উদাহরণ কেউ দেখাতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। সামাজিক স্বস্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দিক থেকে বিবেচনা করলে কওমী মাদ্রাসার শান্তিপ্রিয় ছাত্ররা দেশের প্রথম শ্রেণির ছাত্রসমাজ হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। তবুও কিনা কওমী মাদ্রাসাগুলো ‘টেরিবলি ডেঞ্জারাস’!!
যেখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত লাখ লাখ বেকার ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে সরকার অপারগ, সেখানে কওমী মাদ্রাসা থেকে আগতরা সরকারের ওপর বিশেষ কোনো চাপ সৃষ্টি করছেনা; কারণ তারা দেশেই ছোটোবড় ব্যবসা করে নিজেদের সংস্থান নিজেরাই করছে কিংবা আরবি ও উর্দু ভাষা জানার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়ে শ্রম দিয়ে উল্টো দেশের রেমিটেন্স আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। কওমী মাদ্রাসাগুলো সরকারের কাছ থেকে কোনো অনুদান/বরাদ্দ নেয়না, এ নিয়ে সরকারের ওপর কোনো বাড়তি চাপ নেই। মাদ্রাসাগুলো ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের অর্থসহায়তা ও অনুদানে চলে। তাতেও আবার রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যাদের আপত্তি। মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবসা বসে যাওয়ায় তারা এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন। তাই দিশাহারা হয়ে তিনি উপস্থিত প্রবাসী শ্রোতাদেরকে মাদ্রাসায় টাকা না দিয়ে কথিত মুক্তচিন্তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংগঠনগুলোকে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কওমী মাদ্রাসাগুলো আসলেই ‘টেরিবলি ডেঞ্জারাস’। অর্থমন্ত্রীর বলা এই কথা খাঁটি সত্য কথা, কারণ কওমী মাদ্রাসাগুলো টিকে থাকলে এদেশের মানুষকে ইসলামবিমুখ করে বাংলাদেশকে ‘সেকুলার’ ভারতপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত কখনোই সফল হবে না। অতএব আবুল মাল মুহিত ও রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যাদের পক্ষে কওমী মাদ্রাসার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও প্রপাগান্ডা চালানো ছাড়া উপায় কী? এদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে হটিয়ে দিয়ে গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা অর্জনে তথাকথিত সেকুলার, প্রগতিশীল ও উদারবাদী গোষ্ঠীর হতাশাজনক ব্যর্থতাই মাদ্রাসা-শিক্ষাবিরোধী প্রচারণার নেপথ্য মূল কারণ। ব্যর্থ গোষ্ঠীটি আদর্শিক তৎপরতার জোরে সামাজিক ও রাজনৈতিক মোকাবেলায় মাদ্রাসা ও ইসলামী সংগঠনগুলোর সাথে কখনোই কুলিয়ে উঠতে পারেনি। তাই তারা এদেশের শিকড়ে প্রোথিত কওমী মাদ্রাসাগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাদেরকে জড়িয়ে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের প্রপাগান্ডা চালিয়ে থাকে। ঈমানি বলে বলীয়ান ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে এদেশের কওমী মাদ্রাসাসংশ্লিষ্ট ইসলামী সংগঠনগুলো বাংলাদেশকে ‘সেকুলার’ ভারতপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত বারবার নস্যাৎ করে দিয়েছে।
ইসলাম শান্তি ও সহনশীলতার ধর্ম। শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও সমকালীন যাবতীয় ফিতনা ইসলাম সমর্থন করেনা। আর ইসলাম সমর্থিত নয় এমন কোনো কিছুই কওমী মাদ্রাসাশিক্ষা ধারণ করেনা। কওমী মাদ্রাসা সবসময় তাদের স্বাতন্ত্র্যের ব্যাপারে সচেতন। তথাকথিত আধুনিকতার নামে ইউরোপ-আমেরিকার অন্ধ অনুকরণ ও গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন করার মতো আহাম্মকি তাদের মধ্যে নেই। কওমী মাদ্রাসায় যারা পড়াশোনা করেন, তারা বর্তমান ভোগবাদী পুঁজিবাদী দুনিয়ার যান্ত্রিক ক্রীতদাসে পরিণত হননা। বিনয়, নৈতিকতা, ধর্মীয় আদর্শ ও তাওহিদের জ্ঞান সাধনাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। কর্পোরেট দুনিয়ার সেবাদাস নয় বলেই আজকে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ও আলেমসমাজের বিরুদ্ধে যতসব অপপ্রচারণা ও নানাবিধ ষড়যন্ত্র চলছে। বিগত কয়েক বছরে কওমী মাদ্রাসার আলেম, ছাত্র ও শিক্ষকরা সমকালীন রাজনীতি বুঝতে শিখেছে এবং আধুনিক ও প্রগতিশীল জাহেলিয়াতকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার হিম্মত অর্জনের পথে ক্রমশ ধাবমান। ইনশাআল্লাহ সব ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে কওমী মাদ্রাসাগুলো একদিন বাংলাদেশের ইসলামী বিপ্লবের কারখানায় পরিণত হবে।
আমরা পূর্বে দেখেছি, ধারাবাহিকভাবে নিরীহ আলেমসমাজ ও কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের জড়িয়ে কথিত অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তার নাটক তৈরি করে জঙ্গিবাদের কল্পকাহিনী সাজানো হয়ে থাকে। একশ্রেণির চিহ্নিত মিডিয়া ও একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর যৌথ কারসাজিতে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা আমরা সচরাচর দেখি। জঙ্গিবাদের জিগির তুলে দেশের আলেমসমাজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরকে কলঙ্কিত করতে এবং মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে নানা ধরনের ফলস ফ্ল্যাগ অভিযান ও নাটক সময়ান্তরে তৈরি করা হয়। বিশেষ রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোকে ‘জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র’ বলে অপপ্রচারণা এবং সময় বুঝে হঠাৎ করে বিভিন্ন মাদ্রাসায় পুলিশের অভিযানপূর্বক কথিত জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ও কোরআন-হাদিস সম্পর্কিত সাধারণ ইসলামী বইসমূহকে ‘জিহাদী বই’ বলে মিডিয়ায় উপস্থাপন--এর সবই দেশের আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রমূলক প্রপাগান্ডা; এতদসত্ত্বেও দেশের কোনো কওমী মাদ্রাসায় জঙ্গিবাদের দীক্ষা ও ট্রেনিং দেওয়া হয়--এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আদৌ কেউ দেখাতে পারেনি।
বিষয়: বিবিধ
৭০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন