মায়ের বদদোয়া থেকে সাবধান!!!

লিখেছেন লিখেছেন Ruman ১৪ মে, ২০১৭, ০৭:১০:১১ সকাল

জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বাবা-মায়ের হক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, তারা দুইজন তোমার জান্নাত-জাহান্নাম। (সুনান ইবনে মাজাহ : ৩৬৬২)। একজন আদর্শ সন্তান মা-বাবাকে খুশি করে জান্নাত অর্জন করতে পারে। পক্ষান্তরে তাদের অবাধ্যতায় রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। মা-বাবার অবাধ্যতা করা কবিরা গোনাহ।

বাবার সাম্মান বেশি আর মায়ের অধিকার বেশি। জনৈক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কার সংস্পর্শে বেশি লাভ করব? নবীজি (সা.) এর জবাব, তোমার মায়ের। সে বলল, তারপর? নবীজি (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। তৃতীয়বার একই প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, তোমার বাবার। (জামেউল আহাদিস : ৪২৬৬৭)। 

অন্য হাদিসে আছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। (জামে সগির : ৩৬৪৩)। মায়ের খেদমত ও দোয়ায় মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভূত কল্যাণ লাভ করতে সক্ষম হয়। হজরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহ.) এর বড় প্রমাণ। মায়ের দোয়ায়ই তিনি পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে রয়েছেন। তামাম দুনিয়ার মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। মায়ের দোয়া অর্জন করা যেমন একজন আর্দশ সন্তানের জন্য অত্যন্ত জরুরি বিষয়, ঠিক তেমনি তার বদদোয়া থেকে বেঁচে থাকাও একান্ত প্রয়োজন। মায়ের বদদোয়া কুড়িয়ে বহু মানুষ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

ভয়ের বিষয় হলো, মায়ের বদদোয়া সন্তানের শুধু আখেরাতই বরবাদ করে না, বরং দুনিয়ায়ও সে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি ইবাদত-বন্দেগিও তা থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে না। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল প্রচীন আমলে, বনি ইসরাইলের এক আবেদের বেলায়। জুরাইজ ছিলেন বনি ইসরাইলের একজন প্রসিদ্ধ আবেদ লোক। তার একটি মাটির তৈরি ইবাদতগাহ ছিল। 

তিনি সেখানে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। একদিন জুরাইজ নামাজ পড়ছেন, এমন সময় তার মা এসে তাকে ডাকলেন। কিন্তু নামজের কারণে তিনি জবাব দিতে পারলেন না। তিনি আসলে এ মুহূর্তে নিজের করণীয় কী, তা নির্ধারণ করতে পারছিলেন নাÑ নামাজ ছেড়ে মায়ের ডাকে সাড়া দেবেন, নাকি নামাজেই নিমগ্ন থাকবেন। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে রবের দরবারে মনে মনে বললেন, হে আমার রব! একদিকে আমার মা, আরেক দিকে নামাজ। আমি এখন কী করব? কোন দিকে যাব? অবশেষে তিনি নামাজেই মগ্ন রইলেন। জবাব না পেয়ে মা ফিরে গেলেন। ৩ দিন ঠিক একই ঘটনা ঘটল। শেষবার তার মা রাগান্বিত হয়ে ছেলের প্রতি বদদোয়া করলেন। বললেন, ও আল্লাহ! ব্যভিচারী নারীর মুখ দেখার আগে যেন জুরাইজের মৃত্যু না হয়!  কিছুদিন পরের ঘটনা। একজন নারী জুরাইজের কাছে নিজেকে পেশ করল। কিন্তু তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করলেন না। পরে ওই নারী একটি মেষ-রাখালের সঙ্গে নিজের ইচ্ছা পূরণ করল। কিছুদিন পর সে একটি সন্তান প্রসব করল। লোকরা তাকে বাচ্চাটির পিতৃপরিচয় জানতে চাইলে সে বলল, জুরাইজ ওর বাবা। লোকজন তো রেগে আগুন। জুরাইজের কোনো কথা না শুনে শুধু তার ইবাদতগাহ ভেঙে চুরমার করেই ক্ষান্ত হলো না, তাকেও বেদম প্রহার শুরু করল। সে সময় জুরাইজের প্রশ্ন ছিলÑ আমাকে মারছ কেন? আমার ইবাদতখানাটিইবা কেন ভাঙলে? লোকেদের জবাব, তুমি এ নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিলে। এ নবজাতক তার প্রমাণ। নারীটিও এ কথাই স্বীকার করেছে। এবার জুরাইজ বললেন, শিশুটিকে আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি তাকে দেখব। শিশুটিকে নিয়ে আসা হলো। জুরাইজ কয়েক রাকাত নামাজ পড়ে শিশুটির পেটে মৃদু খোঁচা দিয়ে বললেন, বাবু তোমার বাবা কে? ওই নবজাতক বলে উঠল, অমুক মেষ-রাখাল! তখন উপস্থিত ব্যক্তিরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে জুরাইজের কাছে ক্ষমা চাইল এবং স্বর্ণ দিয়ে ইবাদতখানা নির্মাণ করে দিতে চাইল। জুরাইজ তখন বললেন, না, আগরে মতো মাটি দিয়েই সেটি তৈরি করে দাও। পরে তারা তা-ই করল। (মুসলিম শরিফ)।

নামাজে থাকার পরও মায়ের ডাকে সাড়া দিতে না পারায় তার অভিশম্পাতের পরিণতি যদি এই হয়, তাহলে অন্য ক্ষেত্রে কী পরিণতি হতে পারে, তা ধারণারও অতীত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মা-বাবার বদদোয়া থেকে বেঁচে থেকে তাদের হক আদায়ে ব্রতী হওয়ার তৌফিক দিন।

বিষয়: বিবিধ

৯৩৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382973
১৪ মে ২০১৭ সকাল ০৮:৩৬
হতভাগা লিখেছেন : মামা'স বয় হয়ে চললে বউ বেজাড় হয় (মানে বউয়ের কাছে উত্তম হওয়া যায় না ) আর বউ পাগলা হলে মায়ের বদদোয়া পাবার সম্ভাবনা থাকে (পায়ের তল থেকে জান্নাত সরে যাবার ভয় থাকে)। আবার কারও জন্যই কোন কিছু না করলে কর্তব্যে অবহেলার ট্যাগ লেগে যায়।

যেটাই করুক না কেন জাহান্নাম নিশ্চিত।

পুরুষ মানুষদের আসলে ফাঁপড়ের শেষ নেই- দুনিয়াতে তো নেইই , আখেরাতেও মনে হয় পার পাবে না ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File