ভালো থেকো মা।
লিখেছেন লিখেছেন Ruman ০৭ মে, ২০১৭, ০৩:২১:০৩ দুপুর
মাকে ভালো থাকতেই হবে। এরকম প্রার্থনা সব সন্তানেরই। মাকে ছাড়া এক মুহূর্ত যেমন শিশু থাকতে পারে না তেমনি বড় ছেলে-মেয়েরাও নিজের মাকে অনুভব করে। না করে পারে না। সন্তান যত বড়ই হোক মা বাবাকে ভুলতে পারে না। শিশু, শৈশব ও যৌবনসহ জীবনের প্রতিটি সময়ই মাকে মনে পড়ে। মনে হয়। যারা বিদেশের বাড়িতে একাকী বা মা-বাবা ছাড়া সন্তানাদী নিয়ে বসবাস করেন তারাও ভাবেন। ভাবনার মধ্যে সময় কাটান। তবুও দূরেই থাকতে হয়। কিন্তু সবুজ শ্যামলিমার এই বাংলাদেশে থেকেও আমাদের অনেকেরই মা বাবা ছাড়া থাকতে হয়। কারো বাধ্য হয়ে অথবা ইচ্ছা করেই।
কিন্তু ভাবনা, অনুভব আর মায়ের প্রতি টান তাদেরকেও বিমোহিত করে।বাংলা ভাষায় ‘মা’ অতি দরদিয়া একটি শব্দ। এ ছাড়াও আম্মু, জননী, মাতাসহ আরো নানারকম নাম নিয়ে আমরা মাকে ডাকি। ইংরেজিতে Mother, Mum, Mom ডাকা হয়। উম্মুন বলে ডাকে আরবিরা। দুনিয়ার যত ভাষাই আছে, সব ভাষাতেই মা সুন্দর। সব ডাকেই মা অতি মানবীয়, দয়ার এবং ভালোবাসার।
ইসলামে মাকে অনেক বেশি উপরে স্থান দেয়া হয়েছে, মূল্যায়ন করা হয়েছে। নবীজী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সন্তানের মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।
মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে। আর তখন থেকেই এই দিনে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৪৬টি দেশে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয় হয়। কথিত আছে, ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ, কেননা সেখানে প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রবিবারকে মাদারিং সানডে হিসেবে পালন করা হতো। তবে সতের শতকে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটান মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস।
সত্য এবং বাস্তব কথা হলো, উন্নত বিশ্বে মা দিবস বা মাকে নিয়ে এসব বাড়তি আনুষ্ঠানিকতা বেশি বেশি হলেও ‘মা’ তাদের কাছেই বেশি অপমানিত। বিশেষত উন্নত দেশেই বৃদ্ধ প্রতিপালন কেন্দ্র অনেক বেশি। নিজের পরিবার বা কাজ নিয়ে তারা এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ে— মা বাবার কোনো খোঁজই নিতে পারেন না। পারিবারিক ভিত্তি ভাঙতে ভাঙতে ইউরোপ আমেরিকায় বৃদ্ধদের প্রতি কদর এখন তলানীতে এসে দাঁড়িয়েছে।
উন্নত দেশেই বৃদ্ধ প্রতিপালন কেন্দ্র অনেক বেশি। নিজের পরিবার বা কাজ নিয়ে তারা এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ে— মা বাবার কোনো খোঁজই নিতে পারেন না। পারিবারিক ভিত্তি ভাঙতে ভাঙতে ইউরোপ আমেরিকায় বৃদ্ধদের প্রতি কদর এখন তলানীতে এসে দাঁড়িয়েছে।
কবি হবে আর মাকে নিয়ে কোনো কবিতা লিখবে না, তা কি আর হয়। মায়ের মতো এই সুন্দর নামটি কবিকেও মুগ্ধ করে। প্রাণিত করে। টানে। বারবার রাত বিরাতে কবির চোখেমুখে চিত্রকল্প হয়ে ফুটে ওঠে মা।
হুমায়ুন আজাদ ‘আমাদের মা’ কবিতায় নিজের পরিচয়টা কী দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন।
‘মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
ছায়া সরে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।’
কাজী নজরুল ইসলাম ‘মা’ কবিতায় মায়ের মতন এতো সুধা আর কোথাও মেশা নেই।
যেখানে তে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথা এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনোখানে কেহ পাইবে ভাই!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মনে পড়া’ কবিতায় মাকে মনে পড়ার অভিনব চিত্র এঁকেছেন। সত্যিই আকাশজুড়ে নিজের মাকে খুঁজেছেন।
মা’কে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন বসি গিয়ে শোবার ঘরের কোণে, জানালা দিয়ে তাকাই, দূর নীল আকাশের দিকে।
মনে হয়, মা আমার পানে চাইছে অনিমেখে।
কোলের পরে ধরে, কবে দেখতো আমায় চেয়ে?
সেই চাউনি রেখে গেছে, সারা আকাশ ছেয়ে।
ছন্দোবদ্ধ কবিতার মালা বুনেন কামিনী রায়। দারুণভাবে শিশু কীভাবে মাকে ভালোবাসার কথা বলে, শিশুর দু’চোখ জুড়ে অবিরাম মায়ের প্রতি ভালোবাসার জয়গান গায়। অতখানি আর কেউ কি বলতে পারে!
জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,—
‘মা, তোমারে কত ভালোবাসি!’
মা। যেভাবে আগলে রেখে বড় করেছিলে এর প্রতিদান দেয়ার মতো কোনো ক্ষমতা নেই। একরাশ ভালোবাসা আছে। তবুও মাঝে মাঝে বড়ই ছন্দপতন হয়। খেই হারিয়ে ফেলি। বুকের ভালোবাসাটুকু ‘ভালোবাসা’ হয়ে মাকে ছুঁয়ে যায় না।
আল মাহমুদ মায়ের সোনার নোলক খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে শেষতক সাগরের কাছেও কোনো সাড়া না পেয়ে পাহাড়ের কাছে ছুটে এলেন। কোনো জবাব না পেয়ে কবি ঘরে না ফেরার পণ করেছেন। মায়ের প্রতি এভাবেই চিত্রায়ণ করেছেন।
সবুজ চুলে ফুল পিন্দেছি নোলক পরি না তো।
ফুলের গন্ধ চাও যদি নাও, হাত পাতো হাত পাতো-
বলে পাহাড় দেখায় তাহার আহার ভরা বুক।
হাজার হরিণ পাতার ফাঁকে বাঁকিয়ে রাখে মুখ।
এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা
আমার মায়ের গয়না ছাড়া ঘরকে যাবো না।
মা। যেভাবে আগলে রেখে বড় করেছিলে এর প্রতিদান দেয়ার মতো কোনো ক্ষমতা নেই। একরাশ ভালোবাসা আছে। তবুও মাঝে মাঝে বড়ই ছন্দপতন হয়। খেই হারিয়ে ফেলি। বুকের ভালোবাসাটুকু ‘ভালোবাসা’ হয়ে মাকে ছুঁয়ে যায় না। তবু একটাই কথা বলতে চাই— ভালো থেকো মা।
বিষয়: বিবিধ
৮৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন