সত্য ঘটনা অবলম্বনে! (ছোট গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন Ruman ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ০৩:৪৫:৪৮ দুপুর
হঠাৎ বিয়ে হয়ে গেল মনিকার! ভাল ঘর আর ভাল ছেলে দেখে বাবা আর দেরি করেনি।তাই হুট করেই বিয়ে দিয়ে দিল।মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের বেশি বয়েসে বিয়ে দেয়া হয় না।এসব বড় লোকদের চল।আর বিবাহযোগ্যা মেয়ে ঘরে থাকলে বাবার যে কি দুশ্চিন্তা হয় তা শুধু সেই বাবাই জানে যার মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত কিন্তু বিয়ে দেয়া যায় না।ছেলে হুজুর বিধায় যৌতুক দাবী করেনি।এই বেশ আলহামদুলিল্লাহ। নয়ত খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির কোন আবদার পূরন করা ছিল প্রায় অসম্ভব ।শ্বশুরগৃহে বেশ ভালই যাচ্ছিল দিন গুলি।বছর ঘুরতে না ঘুরতে মাহিনের জন্ম হল।
মাহিনের বাবা শহরে চাকরিরত।সে অফিসের দেয়া রুমেই থাকত!অফিসেই খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সেই চাকরি হঠাৎ চলে যাওয়ায় অন্য চাকুরী নিতে হল।সেখানে নিজের বাসা ভাড়া এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হল।সারাদিন চাকরী করে আবার বাজার করা, রান্না করা কঠিন হয়ে গেল। চাকরির সুবাদে তাই স্ত্রীকে ওখানে নিয়ে গেল, বাসা ভাড়া করে।কিন্তু বেতন তো কম।বাড়িতে থাকতে ভালই চলত।এখন ঘরের প্রোয়জনীয় জিনিস কিনে বাড়তি আর কিছুই কেনা হয় না।কত কিছুই না প্রোয়জন! মাসের প্রথম বেতন পেলে মাসের শেষের দিকে বাজার খরচা চালাতেই হিম সিম অবস্থা!সেখানে অন্য কোন আবদার করাই অন্যায়!কিন্তু কিছু করাও দরকার। এক টু বাঁচোয়া, মনিকার দর্জির কাজ জানা ছিল।এখন একটা সেলাই মেশিন প্রোয়জন।কিন্তু কেনার টাকা?বাবার কাছে চাবে!নয়ত আর কে দেবে? নতুন মেশিনের দাম অন্তত কয়েক হাজার টাকা।তাই পুরাতন এক টা কিনবে ভাবল।এজন্য বাবার কাছ থেকে এক হাজার ও স্বামীর থেকে বাদ বাকি টা নিয়ে পুরাতন একটা সেলাই মেশিন কিনল।প্রথমত টুকটাক কাজ হচ্ছিল।কাজ বাড়ল কিন্তু কাজের চিন্তায় নামাজ পড়াও হচ্ছিল না নিয়মিত।আর তা নিয়ে কোন অনুশোচনাও হচ্ছিল না তার!তার যে অনেক টাকার দরকার সেই চিন্তা শয়তান মাথায় প্রবেশ করালো!
সেই অল্প অল্প টাকা জমাতে শুরু করল।বেশ কিছু টাকা হলেই ঘরের এটা ওটা কিনত! অনেক কষ্টে সৃষ্টে দিন চালাত। তবুও ঘরের যাবতীয় ফার্নিচার কেনা ছিল তার শখ।তাই এক এক করে খাট, আলনা,ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, টিভি,টিভির জন্য ডিশের লাইন নেয়া তো জরুরী! তারপর পুরাতন ফ্রিজ পর্যন্ত কিনে ফেলল।এমন ও করত ফ্রিজে তার স্বামীর এনে রাখা মাছ,গোশত নিজেরা কম কম খেয়ে অন্য কারো কাছে বিক্রি করত! এভাবে কয়েক বছর চলে গেছে অবশ্য।তবুও তো শখ পূরণ করা হল!এখন বয়স যেহেতু কম দুনিয়া নিয়েই চিন্তা তার। বুড়ো হয়ে নেই আখিরাত নিয়ে পরেও চিন্তা করা যাবে।সুযোগ পেলেই কাজ নয়ত টিভি দেখেই সময় পার করত। কিন্তু কপালে বুঝি এই সুখ, শান্তি আর সইল না!আবার গর্ভবতী হল মনিকা!বাচ্চার যখন তিন চার মাস হঠাৎ কিছুও খেতে পারছেনা সে,সর্ব শরীর হলুদ হয়ে গেছে। প্রথমে সাধারণ জন্ডিস ভেবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।আর তাতেই পড়ে এমন পস্তাতে হল যা আর ফিরানো গেল না!
পরবর্তীতে বাচ্চার ছয় মাসের সময় পর্যন্ত ও কোন উন্নতি না হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেল লিভার সিরোসিস!
হাসপাতালে কিছুদিন ভর্তি ছিল। তারপরে এক টু সুস্থ্য বোধ করলে দেশের বাড়ি বাবা মায়ের কাছে চলে গেল।কিন্তু সেখানে বেশিদিন থাকা হল না,বিশ থেকে পচিঁশ দিন পরে এমন স্থানেই গর্ভের বাচ্চা সমেত চলে গেল যেখান থেকে আর কেউ ফেরেনা!তার শখের সব কিছুই পড়ে রইল!শুধু সেই থাকতে পারল না!এভাবেই যে হয়,যা হওয়ার চিরন্তন!কিন্তু কোথায় পড়ে রইল তার ফার্নিচার? ঘরের যাবতীয় জিনিস? যা থেকে সে উদাসিন ছিল শুধু তাই তো তার সাথে গেল! কি হল এত দুনিয়া দুনিয়া করে? দুনিয়া কি সাথে গেল তার? এভাবেই ঘরের গৃহিণী থেকে দুনিয়ার সবাই একের পর এক দুনিয়ার জিনিস পত্রের পিছনেই ছুটে চলছে অবিরাম।আরো চাই আরো প্রোয়জন এটা সেটা, সোনা -দানা! প্রোয়জনের কি শেষ আছে। কিন্তু যখন হঠাৎ মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়! কিচ্ছু কি সাথে যায়?সবই তো পড়ে রয় অন্য কারো জন্য।এবং তাকেও কিছুদিন ভোগী বানায়!
তাই তো শিল্পী গায়...
"পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়
মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রংগীন পরিচয়।"
ইয়া আল্লাহ আমাদের সময় ফুরানোর আগেই বোধদ্বয় দান করুণ।
আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২২৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন