ইসলামের দৃষ্টিতে জীবনসঙ্গী কেমন হওয়া উচিত।

লিখেছেন লিখেছেন Ruman ২০ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৯:৫৭:৪৬ সকাল

মানবজীবনের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য পরিবার অপরিহার্য। নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে গড়া হয়েছে মানবসমাজ। আর নারীর প্রবল আকর্ষণ প্রকৃতিগত করে দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন মানবকুলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তানসন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মতো আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগবস্তু। আর আল্লাহর কাছেই হলো উত্তম আশ্রয়।’(সূরা ইমরান: ১৪)।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অকৃত্রিম মিলনই হলো তাদের প্রাকৃতিক দাবি। এ মিলন যদি হয় লাগামহীন পন্থায় তবে সমাজ ও সভ্যতায় বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়াই অবধারিত। বস্তুত আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-পন্থা অনুযায়ী নারী-পুরুষের সঠিক সম্পর্কের ওপরই নির্ভর করে সমাজ ও সভ্যতার সুস্থতা ও নিরাপত্তা। আর তাদের উভয়ের মধ্যে খোদায়ী বিধি অনুযায়ী এ সম্পর্ক কেবল বিয়ের মাধ্যমেই হতে পারে। বিয়ের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাতে সূচনা হয় তাদের পারিবারিক জীবনের।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, একদা নবী করিম সা. যুবকদের লক্ষ্য করে বললেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যে বিয়ের যোগ্যতা রাখে না, তার উচিত রোজা পালন করা। (বুখারী ও মুসলিম)।

পারিবারিক জীবন ছাড়া মানুষের দাম্পত্য জীবন কোনো অবস্থাতেই সুখের হতে পারে না। অতঃপর তাদের থেকে জন্ম নেয় সন্তানসন্ততি। সন্তান লালনপালন ও সুশিক্ষার জন্য পারিবারিক জীবন অপরিহার্য। মাতৃক্রোড়কে বলা হয়েছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। আল্লাহ তায়ালা প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা, দয়া, স্নেহ, সহানুভূতি মানুষের প্রকৃতিজাত করে দিয়েছেন। সন্তানের প্রতি পিতামাতার স্নেহ, দয়া এবং পিতামাতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রেমপ্রীতি মানুষের চিরন্তন প্রকৃতিজাত নিয়ম।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদেরই যুগল থেকে তোমাদের পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। অতএব, তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর অৃনুগ্রহ অস্বীকার করে।’ (সূরা নাহল: ৭২)।

আদর্শ গৃহ গড়ার প্রথম সোপান হলো, এ গৃহের জন্য আদর্শময়ী সতী-সাধ্বী স্ত্রী নির্বাচন করা। তাই দাম্পত্য জীবন আরম্ভের প্রাক্কালেই সহধর্মিণীর দ্বীনদারিতা ও ধার্মিকতা দেখে নেয়া একান্ত জরুরি।

রাসূল (সা.) বলেছেন, এমন সতী-সাধ্বী স্ত্রী বরণ করা উচিত, যে তোমাকে তোমার দ্বীন ও দুনিয়ার বিষয়ে সাহায্য করে, যা সব সম্পদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ রাসূল সা. অন্যত্র বলেছেন, ‘পুণ্যময়ী ও অধিক সন্তানপ্রসূ নারীকে বিয়ে করো। কেয়ামতে তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে সব আম্বিয়ার কাছে আমি গর্ব করব।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৩/২৪৫)।

সতী ও সাধ্বী পত্নী যেমন পুরুষের জন্য বিরাট সৌভাগ্যের বিষয় তেমনি অসতী পত্নী তার পক্ষে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়।

রাসূল সা. বলেছেন,‘সতী স্ত্রী এক সৌভাগ্যের সম্পদ। যাকে তুমি দেখে পছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করে, আর তোমার অবর্তমানে তার ব্যাপারে ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত থাকে।পক্ষান্তরে অসতী স্ত্রী দুর্ভাগ্যের আপদ; যাকে দেখে তুমি অপছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করতে পারে না। যে তোমার ওপর মানুষের হামলা চালায়।আর তোমার অনুপস্থিতিতে তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হতে পারে না।’(সিলসিলা সহিহা ১৮২, ইবনে হিব্বান)।অন্যথায় তার সোনার সংসারে সুখের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।

আল্লাহর নবী সা. বলেছেন, ‘যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের মুগ্ধ করে, তার সাথে (তোমাদের ছেলেদের কিংবা মেয়েদের) বিয়ে দাও। যদি তা না করে (শুধু দ্বীন ও চরিত্র দেখে তাদের বিয়ে না দাও বরং দ্বীন বা চরিত্র থাকলেও শুধু বংশ, রূপ বা ধন-সম্পত্তির লোভে বিয়ে দাও) তবে পৃথিবীতে বড় ফিতনা ও মস্ত ফাসাদ, বিঘ্ন ও অশান্তি সৃষ্টি হবে।’ (ইবনে মাজাহ-১৯৭)।

আল্লাহ পাক আল কোরআনে বলেছেন, তোমরা বিয়ে করো যাদের তোমাদের ভালো লাগে (সূরা মায়িদা: ৪)।এর অর্থ হলো, বিয়ে-ইচ্ছুক ব্যক্তি যেন তার ভালোলাগা বৈধ নারীকে বিয়ে করে। (তাফসির আর-রাজি: ৯/১৭১)।

আশ-শাওকানি রা. বলেছেন, যেসব নারীর প্রতি তোমাদের চিত্ত আকৃষ্ট হয় এবং যেসব নারী তোমাদের মনঃপূত হয় তোমরা তাদের বিয়ে করো (ফাতহুল কাদির: ১/৪৪৯)।

মুহাম্মাদ ইবনে মুসলিমা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, যখন মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ কোনো পুরুষের অন্তরে কোনো নারীর বিয়ের প্রস্তাব জাগরূক করে তখন তাকে দেখেশুনে যাচাই-বাছাই করা দোষনীয় নয়। (ইবনে মাজাহ: ১৮৬৪)।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখন সে যেন তার এমন কিছু দেখে, যা তাকে তার সাথে বিয়েতে উৎসাহিত করে।’ (আবু দাউদ: ২০৮২)।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখন সে যেন তার এমন কিছু দেখে, যা তাকে তার সাথে বিয়েতে উৎসাহিত করে।’ (আবু দাউদ: ২০৮২)।

কনেকে একবার দেখে পছন্দ করা গেলে একবার দেখাই বিধান। কোনো কোনো নারীকে একবার দেখে তার সাথে বিয়ের মতো গুরত্বপূর্ণ চুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে তাকে একাধিকবার দেখা বিহিত। ফিকহের ভাষ্য হচ্ছে, পাত্রের জন্য বিহিত পাত্রীকে বারবার দেখা, এমনকি যদি সে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনবারের বেশিও দেখে যাতে তার সামগ্রিক বিষয়টি পাত্রের কাছে সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয়।’ (আর-রামলি, নেহায়া: ৬/১৮৬)।

যদি পাত্র পাত্রীকে একবার দেখেই পরিতৃপ্ত হয়ে যায়, তবে তার জন্য একবারের অতিরিক্ত দেখা হারাম। কারণ এই দেখা হালাল করা হয়েছে অনিবার্য প্রয়োজনে। সুতরাং এখানে অনিবার্য প্রয়োজন বিবেচ্য।

( রাদ্দুল মুহতার: ৬/৩৭০)

বিষয়: বিবিধ

৮৪০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381365
২১ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ০৯:২৬
হতভাগা লিখেছেন : আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূলগণ আল্লাহর বিশেষ হেফাজতে থাকতেন । কারণ , আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দিয়ে উনার বানী প্রচার করাতেন ।

পবিত্র ক্বুরআনে আল্লাহ নবী ও রাসূলগণের জন্য এমন কথা বলেছেন যে তাতে বোঝা যায় যে উনারা আল্লাহর রহমতে জান্নাতই লাভ করবেন । এটা যে এক প্রকার নিশ্চিত তা আমরা মুসলমানেরা বিশ্বাস করি( আল্লাহ যদি ভিন্ন কিছু চান সেটা একমাত্র আল্লাহরই আধিপত্য)।

কোন কাজ সঠিকভাবে করতে গেলে সেই কাজের ব্যাপারে ফোকাসড থাকতে হয় এবং এর জন্য চাই ফ্রেশ মাইন্ড , পারিবারিক/দাম্পত্য সাপোর্ট ।

এটা কে না জানে যে , পরিবার বা দাম্পত্য জীবনে কাহিনী থাকলে তা ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজকর্মকে মারাত্মকভাবে হ্যাম্পার্ড করে । সঠিকভাবে কাজ বা দায়িত্ব পালন করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না ।

আল্লাহ তায়ালা তাই তার মনোনীত বান্দাদেরকে দুনিয়ার জীবনের এই মহা সমস্যা থেকে মুক্তই রেখেছেন । লুত (আঃ) এর স্ত্রী ছাড়া আর কোন নবী ও রাসূলদের পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবনে কোন কাহিনী কি শোনা যায় ? লুত (আঃ) এর জীবদ্দশায় ইব্রাহীম (আঃ)ও তার সাথে ছিল ।

তাছাড়া নবী ও রাসূলদের স্ত্রী হয়ে ঠিক মত চললে উনাদের সাথে জান্নাতও মোটামুটি কনফার্ম ।

আমরা সাধারণ মানুষেরা তো সেরকম ভাগ্য নিয়ে দুনিয়াতে আসি নাই ।

****************************************************


বর্তমান জমানায় সতী সাধ্বী নারী খুঁজতে গেলে লোম বাছতে কম্বল উজাড় হবার জোগাড় হবে ।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখন সে যেন তার এমন কিছু দেখে, যা তাকে তার সাথে বিয়েতে উৎসাহিত করে।’ (আবু দাউদ: ২০৮২)।


০ পবিত্র ক্বুরআনে আল্লাহ বলেছেন - কাফের নারীকে/পুরুষকে বিয়ে না করতে যদিও সে তোমাদের কাছে চিত্তহরনক হয়ও । এর চেয়ে বরং একজন মুসলিম দাসী/দাসও বিয়ে করা ভাল ।

ফিকহের ভাষ্য হচ্ছে, পাত্রের জন্য বিহিত পাত্রীকে বারবার দেখা, এমনকি যদি সে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনবারের বেশিও দেখে যাতে তার সামগ্রিক বিষয়টি পাত্রের কাছে সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয়।’ (আর-রামলি, নেহায়া: ৬/১৮৬)।


বিয়ের প্রাক্কালে একজন ছেলেকে দেখতে মেয়ের অভিভাবকেরা ছেলের অফিস কক্ষেও ঢুকার লাই পায় । মেয়েদের ব্যাপারে কি এরকমটা সম্ভব ?

অথচ মেয়েকে সে ভরণপোষন করবে । ছেলে/ ছেলের লোকদেরই তো এরকম খুঁতখুঁতে হবার কথা ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File