ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখা।

লিখেছেন লিখেছেন Ruman ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৭:২০:৫৭ সকাল

ক্রোধ একটি স্বাভাবজাত আবেগ যা বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়ে থাকে। মানুষকে কঠিন বিষয়ের মুখোমুখি হতে সাহায্য করে এবং পরিণতি বরণ করে নিতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু ক্রোধের প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ

ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু এই আবেগে মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে উদ্ধত হয়ে ওঠে ও স্বাভাবিক সীমা ছাড়িয়ে যায়। মানুষ তখন সুস্থভাবে চিন্তা করার মতা হারিয়ে ফেলে। তার দ্বারা এমন কথা ও কাজ সংঘটিত হয় যার জন্য তাকে পরবর্তী সময়ে অনুতাপে পুড়তে হয়।

আপনি যদি জীবনে সফল হতে চান এবং মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে চান, তা হলে অতি ক্রোধ ও অতি আবেগ থেকে বিরত থাকুন। আপনার চোখের সামনে কবির নিম্নলিখিত কথাটি সবসময় রাখুন :

لا يحمل الحقد من تعلو به الرتب*** ولا ينال العلا من طبعه الغضب

যার মর্যাদা ও পদ উঁচুস্তরের সে শত্রুতা ও হিংষাদ্বেষ পোষণ করতে পারে না এবং যার স্বভাব হলো ক্রুদ্ধ হওয়া সে কখনো উঁচুস্তরে পৌঁছাতে পারে না।

মনীষীগণ নিন্দার্হ ক্রোধ ও আত্মপ্রীতির প্রবণতার মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা করেছেন। ইমাম শিহাবুদ্দিন বারনাসি বলেন, ক্রোধের উৎস হলো আত্মপ্রীতি ও আত্মম্ভরিতা। ক্রোধের চিকিৎসা হলো চিন্তা ও জ্ঞানগত দিক থেকে যা-কিছু ক্রোধকে নিন্দনীয় বলে বর্ণনা করেছে সেগুলোর প্রতি সদা দৃষ্টি রাখা।

এ-কারণে ক্রোধের ঔদ্ধত্যকে দমন করার জন্য অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে। রাগ সংযত রাখতে হবে, আত্মতৃপ্তির জন্য প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যাতে অহংকার ও আত্মম্ভরিতা থেকে বেঁচে থাকা যায়।

আল্লাহ তাআলা তাঁর যেসকল বান্দা ক্রোধের সময় নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে তাদের প্রশংসা করেছেন—

وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

“...এবং যার ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালোবাসেন।” [সুরা আলে ইমরান : আয়াত ১৩৪]

রাসুলে আকরা সা. বলেছেন, ক্রোধ ও দাপটই শক্তিমত্তা নয়; বরং প্রকৃত শক্তিমত্তা হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ক্রোধের লাগাম টেনে ধরে রাখা। ইমাম বুখারী রহ. ও ইমাম মুসলিম রহ. হযরত আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন—

ليس الشديد بالصُّرَعة؛ إنما الشديد الذي يَملك نفسه عند الغضب؛ متفق عليه.

“ যে মোকাবিলায় প্রতিপক্ষকে পরাভূত করে ফেলে সে প্রকৃত বীর নয়, প্রকৃত বীর ওই ব্যক্তি যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখে।”

ব্যক্তিস্বার্থে ক্রোধ ভয়াবহ অনর্থ ঘটাতে পারে এবং ক্রোধ থেকে যা-কিছু উৎসারিত হয় তা মানুষের সৌভাগ্যকে বরবাদ করে দিতে পারে। এদিকে লক্ষ রেখেই রাসুলে আকরাম সা. বার বার ক্রোধ থেকে সংযত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। একজন সাহাবীকে উপদেশ দিতে গিয়ে তিনি এই উপদেশই দিয়েছেন। ইমাম বুখারী উদ্ধৃত করেছেন, হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে নবীজীকে বললো, আমাকে উপদেশ দিন। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, لا تغضب ‘তুমি রাগ করো না।’ বার বার একই কথা বললেন, لا تغضب ‘তুমি রাগ করো না।’

রাসুলুল্লাহ সা.— لا تغضب ‘তুমি রাগ করো না’—কথাটির অর্থ হলো রাগের কারণসমূহ থেকে দূরে থাকো এবং রাগের প্রতিক্রিয়ায় সংযত থাকো। মূল রাগ বা ক্রোধ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় নি, কারণ তা স্বভাবগত আবেগ, যা মানুষের স্বভাবে বদ্ধমূল।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ক্রোধের ভয়াবহতা ও ক্রোধ যে আত্মিক ব্যাধির গুপ্ত অনুভূতিগুলো চাগিয়ে তোলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ক্রোধের প্রধান উৎস হলো অহঙ্কার। কারণ অহঙ্কারী ব্যক্তি যখন তার মতের বিরুদ্ধে কিছু ঘটতে দেখে তখনই তার অহংবোধ তার ক্রোধ জাগিয়ে তোলে। সুতরাং যিনি বিনয়ী, অহংবোধ থেকে মুক্ত, তিনিই ক্রোধের ভয়াবহতা ও অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারেন।

এরপর তিনি বলেন, মানুষের অভ্যন্তরীণ কদর্যতা বাহ্যিক কদর্যতা থেকে বীভৎস। কারণ তা অন্তরে হিংসা ও বিদ্বেষের জন্ম দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের নোংরামির সৃষ্টি করে। এই নোংরামির প্রভাব জিভে এসে পড়ে এবং জিভ অনর্গল অশ্লীল বাক্য ও গালাগাল উচ্চারণ করে। অথচ বুদ্ধিমান ব্যক্তি গালাগাল ও অশ্লীল বাক্য থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে এবং যারা এসব বলে তারা তাদের ক্রোধ প্রশমিত হলে অনুতপ্ত হয়। যারা ক্রোধের ভয়াবহতা ও অনিষ্টতা সম্পর্কে জানে তারা সহজেই বুঝতে পারবেন রাসুলুল্লাহ সা.-এর উল্লিখিত মর্মবাণী— لا تغضب ‘তুমি রাগ করো না’—কী প্রজ্ঞা বহন করে।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381332
১৮ জানুয়ারি ২০১৭ বিকাল ০৫:১৩
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : উপকারী পোস্ট।
জাযাকাল্লাহু খাইর
381357
২০ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ০৯:৫৯
Ruman লিখেছেন : শুকরিয়া।
381555
২৯ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৮:৪৮
Ruman লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File