অহঙ্কারী আল্লাহর দুশমন......
লিখেছেন লিখেছেন Ruman ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:২৬:২৮ দুপুর
অন্তরে যত রোগ রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে তিকর রোগ হলো অহঙ্কার। তা খুব দ্রুত মানুষের সর্বনাশ ডেকে আনে। তাই বলা হয়, ‘অহঙ্কার পতনের মূল’। নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে অন্যকে তুচ্ছ মনে করার নামই অহঙ্কার। অহঙ্কারী মানুষকে সবাই ঘৃণা করে, তাদের কেউ দেখতে পারে না। আল্লাহ তো তাদের ভালোবাসেনই না, তাঁর বান্দারাও ভালোবাসে না।
অহঙ্কার হচ্ছে আল্লাহর চাদর। আল্লাহর চাদর ধরে টানাটানির ফল ভয়ঙ্কর। হজরত আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ অহঙ্কার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জনৈক ব্যক্তি আরজ করলেনÑ আমার পোশাক, জুতা ইত্যাদি উত্তম ও পরিচ্ছন্ন হলে এটাও কি অহঙ্কার হবে? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, না! আল্লাহ তায়ালা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে তাঁর নিয়ামতের বিকাশ দেখতে চান। টাকা থাকা সত্ত্বেও গরিবদের মতো চলা আল্লাহ পছন্দ করেন না। আর অন্যকে ছোট ও তুচ্ছ মনে করার নাম হলো অহঙ্কার।’ রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জুতা নিজে মেরামত করে, কাপড়ে পট্টি লাগায়, আর আল্লাহকে সিজদা করে, সে অহঙ্কারমুক্ত হয়।’ রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুকালে তিনটি বিষয় থেকে মুক্ত থাকবে, সে জান্নাতি হবে, ১. অহঙ্কার ২. খেয়ানত ৩. ঋণ।’ আল্লাহ তায়ালা অহঙ্কারীকে অপছন্দ করেন কিন্তু অহঙ্কারী গরিবকে খুব বেশি অপছন্দ করেন। কারণ তাদের অহঙ্কার করার কোনো বিষয়ই নেই। আর বিনয়ী ব্যক্তিকে তিনি ভালোবাসেন এবং সম্পদশালী বিনয়ীকে খুব বেশি ভালোবাসেন।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রিয় নাতি হজরত হাসান ইবনে আলী রা: একবার একদল গরিব মানুষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা মাটিতে চাদর বিছিয়ে সেখানে রুটি রেখে খাচ্ছিল। হজরত হাসান রা:-কে দেখে সবাই খানায় শরিক হতে দাওয়াত দিলো। তখন তিনি বাহন থেকে নেমে এই বলে আহারে অংশ নিলেন যে, ‘আমি অহঙ্কারকারীদের পছন্দ করি না।’ আহার শেষে সবাইকে নিজের সাথে নিয়ে গেলেন এবং ঘরে যা ছিল তা সবাইকে খাইয়ে দিলেন।
একবার হজরত মুসা আ: আল্লাহ তায়ালার কাছে জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন! মাখলুকের মধ্যে আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় ব্যক্তি কে? আল্লাহ বললেন, যার অন্তর অহঙ্কারী, ভাষা কর্কশ, বিশ্বাস দুর্বল এবং হাত কৃপণ হয়।’ হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের সৈন্যদলের সদস্য মাহলাব ইবনে মুগিরা হজরত মাতরাফ ইবনে আবদুল্লাহ রহ:-এর পাশ দিয়ে উত্তম পোশাকে অহঙ্কার করে যাচ্ছিল। হজরত মাতরাফ বললেন, ‘হে আল্লাহর বান্দা! এ ধরনের চাল-চলন আল্লাহ তায়ালার পছন্দ নয়। মাহলাব বলতে লাগল, আমাকে চেন না? আমি কে? হজরত মাতরাফ বললেন, খুব ভালো চিনি! তুমি প্রথমে নাপাক বীর্য ছিলে এবং শেষে দুর্গন্ধময় মৃতদেহ হয়ে যাবে, আর এখন তুমি দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা বহন করে চলেছ।’ মাহলাব এ কথা শোনামাত্র তার চলনভঙ্গি শুধরে নিলো।
হজরত ওমর ফারুক রা: বলেন, ‘বিনয়ের সর্বোচ্চ স্তর হলো, তুমি প্রত্যেক মুসলমানকে সালাম করবে, মজলিসে যৎসামান্য জায়গা পেয়েই সন্তুষ্ট থাকবে এবং নিজের জন্য কৃত প্রশংসার প্রতি ঘৃণা করবে।’ ফকিহ আবুল লাইস রহ: বলেন, ‘বিনয়ী হওয়া নবী-রাসূল ও নেককারদের নীতি, আর অহঙ্কার করা কাফের ও ফেরাউনের মতো লোকদের অভ্যাস।’
পবিত্র কুরআনে বিনয়ী ও অহঙ্কারীদের আলোচনা এভাবে করা হয়েছে যেÑ ‘রহমান তথা আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা জমিনে বিনয় ও গাম্ভীর্যতার সঙ্গে চলে।’ ‘হে আল্লাহর রাসূল সা:! মুমিনদের সাথে বিনয়সুলভ আচরণ করুন।’ যখন ওদের (কাফের) বলা হয় যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তখন ওরা অহঙ্কার করে।’ ‘যারা অহঙ্কারের বশে আমার ইবাদত করে না, তারা নিশ্চিতই অপমানিত হয়ে অতি সহসাই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ ‘জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে প্রবেশ করো, সেখানে চিরদিন থাকবে, অহঙ্কারীদের ঠিকানা নিতান্তই নিকৃষ্ট ও কষ্টকর।’ ‘নিশ্চিয়ই আল্লাহ তায়ালা অহঙ্কারকারীদের ভালোবাসেন না।’ ‘এভাবেই আল্লাহ প্রত্যেক দাম্ভিক-অহঙ্কারীর অন্তরে মোহর মেরে দেন।’
বিনয় হলো চরিত্রের শীর্ষতম বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ সা: অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। তিনি কখনো অহঙ্কার করেননি। তাই তো তিনি সাধারণ গাধায় সওয়ার হয়ে কোথাও গমন করতেন, গোলামের দাওয়াত কবুল করে নিতেন। তাঁর সান্নিধ্য লাভে ধন্য সাহাবায়ে কেরামও বিনয়ের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে গেছেন। তাই আমরা কখনো বংশ, সম্পদ, সৌন্দর্য, মেধা ইত্যাদির গর্ব-অহঙ্কার করব না, বরং অহঙ্কারমুক্ত পবিত্র জীবন গঠনে সচেষ্ট হবো।
বিষয়: বিবিধ
৭৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন