কর্পোরেট মাওলানা

লিখেছেন লিখেছেন Ruman ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৬:৩৬:১৯ সন্ধ্যা



১। ভদ্রলোকেরসাথে প্রথম দেখা আমি যখন ফ্যান্টাসী কিংডমের পাশে একটা ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতাম।আমরা মার্চেন্ডাইজিং রুমে ছয় জন মার্চেন্ডাইজার বসতাম। সেই রুমে তিনি এলেন। চেহারাদেখে মনে হয় কোন মসজিদের ঈমাম সাহেব। লম্বা দাঁড়ি, মাথায় টুপি, গায়ে জোব্বা, হাতেতসবীহ। ওনাকে এই রুমের চেয়ে বেশি মানাবে কোন মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে খোতবা দিলে। উনিএসে আমাদের সামনের একটা চেয়ারে বসলেন। উনি এসেছেন আমাদের ডিএমডি স্যারের কাছে।স্যার এখনো অফিসে পৌঁছেনি তাই এই রুমে বসে অপেক্ষা করবেন। আমাদেরকে ওনার ভিজিটিংকার্ড দিলেন। কার্ড পেয়ে তো আমাদের চোখ ছানাবড়া! উনি গার্মেন্টস সেক্টরের একজনবিখ্যাত লোক- মোঃ হেমায়েত হোসেন! বাংলাদেশের প্রথম দশটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির নামবললে একটার নাম চলে আসবে ‘পাইওনিয়ার গ্রুপ’ হেমায়েন হোসেন সাহেব এই পাইওনিয়ারগ্রুপের ডিএমডি। আজ থেকে পাঁচ বছর আগেই বেতন পেতেন পাঁচ লাখের উপরে। এখন কত জানিনা। সাথে গাড়ীর সুবিধা তো ছিলই।

যে কোন ব্যবসায়ীতার প্রতিষ্ঠান চালাতে সর্বোচ্চ পদে যোগ্য লোককেই বসান। আর যত বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানতত বড় কর্পোরেট ম্যানেজারের ডিমান্ড। তা যদি দেশ সেরা কোন গ্রুপ হয় তাহলে তো সেইগ্রুপে দেশ সেরা কর্পোরেট ম্যানেজারকে নিয়োগ দেয়া হবে। আমাদের সমাজে দাঁড়িটুপিওয়ালা লোক দেখলেই আমরা নাম সিঁটকাই। ভাবি এই লোক বেশি লেখাপড়া জানে না আরজানলেও তা আরবী লাইনে অথবা ইসলামিক লাইনে অথচ খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে অনেকেরইজেনারেল লাইনে উচ্চশিক্ষা আছে। হেমায়েত হোসেন সাহেবের চেহারা দেখে মসজিদের ঈমামমনে হলেও ওনার শিক্ষাগত যোগ্যতা শুনে আমরা অবাক হলাম। উনি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,এরপরে তিনটা এমবিএ ডিগ্রী আছে। তাও বাংলাদেশ থেকে নয় আমেরিকা ও কানাডা থেকে!

ভদ্রলোক আমাদেরসাথে এক ঘন্টা ছিলেন। ওনার মত বিখ্যাত একজন লোক পেয়ে আমরা ধন্য। উনি আমাকে একটাকাগজ দিতে বললেন। আমি কাগজ দিলাম। তিনি সেই কাগজে একটা দোয়া লিখলেন ও সবাইকেদোয়াটা মুখস্ত করতে বললেন। দশ মিনিটে সবাই দোয়া মুখস্ত করলাম। এরপর আরেকটা দোয়া,এরপরে আরেকটা। এক ঘন্টায় আমাদেরকে তিনটা ছোট দোয়া শিখালেন, কাজের মধ্যে কীভাবে জিকিরকরতে হয় তা শিখালেন। এরপরে ডিএমডি স্যারের সাথে দেখা করে চলে গেলেন। ওনার অফিসেআমার এক কলিগ জয়েন করল। সেই কলিগ জানাল ওনার অফিসের সবাইকে তিনি সূরা, দোয়া,শেখান। যাদের এমবিএ ডিগ্রী নাই তাদেরকে জোর করে এমবিএ করান। গার্মেন্টস সেক্টরেওনার এতই ডিমান্ড যে উনি চাইলেই যে কোন গ্রুপে পনের লক্ষ টাকা বেতনে চাকরি নিতেপারেন।

২। আমি ভেবেছিলামরুবাবা দৌলা মতিনের দেশে এরকম কর্পোরেট মাওলানা আর নেই। কিন্তু পরে আমি একের পর এককর্পোরেট মাওলানা দেখলাম। মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত এসব লোকের চেহারা দেখে মনে হয়না ওনারা এত বড় পদে ও স্যালারিতে চাকরি করেন। এদের মধ্যে একজনকে দেখলাম বসুন্ধরাসিটির সামনে সুবাস্ত টাওয়ারের এক কর্পোরেট অফিসে। ঐ অফিসে আমি একটা কাজেগিয়েছিলাম। পৌঁছুতে পৌঁছুতে জোহরের নামাজ শুরু হল। ঐ অফিসে ঢুকে দেখি সবাই জামাতেনামাজ পড়ছেন। আমিও অযু করে নামাজে দাঁড়ালাম। নামায শেষে ঈমাম সাহেব হাদীস নিয়েআলোচনা করলেন। আমার সাথে যার কাজ তার সাথে দেখা করলাম। আমি গিয়েছিলাম কাপড় কিনতে।কাপড়ের দাম আরেকটু কমানোর দাবী করলে তিনি বললেন “দাঁড়ান, আমি ইডি স্যারের কাছ থেকেঅনুমতি নিয়ে আসি” ইডি স্যারের রুম থেকে বের হয়ে বললেন “স্যারের সাথে দেখা করেন,অনুরোধ করলে দাম কমাতেও পারে”। ইডি স্যারের রুমে ঢুকলাম, দেখি সেই ঈমাম সাহেব! এইকোম্পানীর মালিক হল্যান্ডের। হল্যান্ডের মালিক পক্ষের একজন ‘ডাচ’ পরিচালক আর উনিএকই রুমে বসেন। ‘ডাচ’ লোকটি হয় নাস্তিক অথবা খৃস্টান কিন্তু ইডি স্যার ১০০% হুজুর।ওনার রুমে কোরআনের বিভিন্ন তাফসীর, হাদীসের বই দেখলাম। রুম থেকে বের হয়ে শুনি উনিসাড়ে তিন লাখ টাকা বেতন পান। কিছুদিন পরে মালিক নাকি ওনাকে কোম্পানীর একটা শেয়ারওদিবেন শুনেছিলাম। এটাও ছয় বছর আগের ঘটনা।

৩। বারিধারাডিওএইচএস হল বায়িং হাউজের এলাকা। এখানকার এক ব্রিটিশ মালিকানাধীন বায়িং হাউজে গিয়েভাবলাম কোন মাদ্রাসায় ভুলে চলে এসেছি। এখানকার সব স্টাফেরই দাঁড়ি টুপি।

৪। আপনারা যারাগাড়ী কিনেন বা প্রাইভেট কারে চড়েন তাদের নিশ্চয়ই ‘সালসাবিলস কারের’ নাম শুনেছেন।বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই গাড়ীর দোকানে গেলে মনে হবে এটাও একটা মাদ্রাসা।ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার, দারোয়ান, পিয়ন সবাই হুজুর। সালবালিস কারের মালিক সালসাবিলএরশাদের আমলে জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন।

এরকম আরো হাজারোউদাহরন আছে যা জানাতে অনেক সময় লাগবে।এই পোষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য হল আমরা কর্পোরেট অফিসারবা ম্যানেজার বলতে বুঝি ক্লীন শেইভ করা স্যুটেড বুটেড স্মার্ট ছেলে এবং শরীরদেখানো স্টাইলে শাড়ী পরা মহিলা। মূলত টিভিতে ওনাদেরকেই দেখানো হয়। কিন্তুবাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গেলে দেখতে পাবেন বাস্তবতা কী!

আমার এই পোষ্টেবিভিন্ন ইসলামী ব্যাঙ্ক, ইসলামী বীমা, ইসলামী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বাদদিয়েছি। সেসব স্থানে তো পুরাই হুজুর আর হুজুর।

বিষয়: বিবিধ

৮৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File