কিন্তু দিনশেষে আমি "বোন"।"।
লিখেছেন লিখেছেন আফিফা আমাতুল্লাহ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:৪০:৩৮ রাত
চুম্বক অংশ- এই পৃথিবীতে একটা মেয়ে ততদিন পর্যন্ত আদরের থাকবে যতদিন সে "মেয়ে" থাকবে।
এসএসসি পরীক্ষার সময় পরীক্ষার সেন্টার পড়েছিল আমার ভাইয়াদের স্কুলে। অনেকদূর ছিল স্কুলটা।
একদিন পরীক্ষার পর ছোটভাইয়া রিকশাতে তুলে দিয়ে বললো তুই আজকে একা বাসায় যা আমি একটু কাজে যাচ্ছি। জীবনের প্রথম আমার একা একা রিকশাতে চড়া ছিল সেটা।
হঠাৎ রিকশাওয়ালা বললো "এই ছেলেটা তো হুজুরের ছেলে তাই না? হুজুরকে চিনেন?" বলেই হুজুরের বয়ান শুরু করলো।জানতে পারলাম হুজুর মানে- আমার আব্বার উছিলায় তিনি হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছেন। বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর চাষের জায়গাজমিও হারান তখন আমার আব্বা তাকে কয়েকমাস অর্থ সাহায্য, দ্বীনশিক্ষা তারপর বিয়ে এবং উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
বয়ান শেষ করে আবার জিজ্ঞেস করলেন আমাকে "দেখছেন কখনো হুজুরকে?" বললাম দেখেছি। আপনার হুজুর আমার আব্বা। আর এই ছেলেটা আমার ভাই। রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে উল্টে আমাকে দেখলো।তারপর যে অবাক করা মন্তব্য করেছিল তা আমি এখনো শুনতে পাই।
আল্লাহ আমাকে ৩টা ভাই দিয়েছেন। আমি ছোট থেকে আমার ভাইদের উপর ত্যক্ত বিরক্ত ছিলাম। যেখানেই যেতাম কোন না কোন ভাইয়ের বন্ধু আমাকে দেখতো আর গিয়ে কানপড়া দিত।
ক্লাস সেভেনে থাকতে অংক পরীক্ষার দিন সামনের মেয়েটাকে অংক দেখাচ্ছিলাম তাও আবার কি,নিজের পরীক্ষার খাতাটা তাকে দিয়ে একটা এক্সট্রা পেজ নিয়ে অংক করছিলাম। ম্যাডাম সেটা দেখে ফেললেন। ২জনকেই বললেন কান ধরে উঠবস করতে নইলে সব অংক কেটে দিবে।ওই মেয়ে তো করে ফেলল ১০বার কিন্তু আমি তো কিছুতেই করবো না এদিকে ম্যাডামও জেদ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমিও আছি। চোখের পানি দিয়ে আমার পা ভিজে গেল তবুও কারো জেদ কমে না। ম্যাডাম সব অংক কেটে দিলেন।
আমি বাসায় পৌঁছার আগেই খবর পৌঁছে গেল ছোটভাইয়ার কাছে কিভাবে আমি জানিনা। খুব বকলো কিন্তু আড়ালে গিয়ে আম্মাকে বললো আপনার এই মেয়ে একদম আলাদা। ও আমার বোন ভেবে গর্ব হয়। সেবার অংকে ২টা শুন্য পেয়েছিলাম।
সেদিন থেকে আমার বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল আমার ভাইয়াদের হাজার হাজার চোখ আছে। আমি স্বপ্নে কোথাও গেলে ওরা তাও জেনে যায়।
এমন একটা দিন যায়নি যেদিন বাসায় ফিরেছি আর ৩ ভাইয়ের কাছে আমার দস্যিপনার জন্য বকা খাইনি। কোথায় কোথায় কি কি সব করে বেড়াতাম ওরা ঠিকই সব জেনে যেত।
আমার স্কুলে যাওয়া, বর্ণমালা শেখা, আমার কলেজে যাওয়া এমনকি আমার ভার্সিটিতে যাওয়া সবকিছুতে আমার ভাইয়ারা। আমাকে কলেজে দিয়ে আসতো আবার নিয়ে আসতো যতদিন না একা একা রিকশা ঠিক করা শিখেছি। এমনকি আমি যেদিন ভার্সিটিতে প্রথম ক্লাসে যাই সেদিনও আমার ভাইয়া ছিল সাথে। বাসা থেকে ক্লাস পর্যন্ত এগিয়ে দিত। দোতলা বাসের নিচতলায় কেবল মেয়েরা বসে, ভাইয়া ছেলে তাই বসা যাবেনা আবার আমি ভাইয়াকে ছাড়বো না। বেচারা দেড় দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভার্সিটি যেত। বাসের সবাই জেনে গিয়েছিল এই স্টপেজ থেকে এক ভাই ওঠে যে তার বোনের হাত ছাড়ে না।বেচারার কত ক্লাস মিস দিয়েছে আমার জন্য।
শর্ত দিতাম -তুমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে।আমি তোমাকে না দেখলে বের হয়ে যাবো ক্লাস থেকে"। সে দাঁড়িয়ে থাকতো। যা কিছু আবদার সব বড় ভাইয়াকে করতাম। আর মেজ ভাইয়া ছিল আমার চিকিৎসা সহকারী। এসএসির পর থেকে চোখের সমস্যা শুরু। প্রতি মাসে চেকআপে যেতাম। অদ্ভুত ছিল আমার সমস্যা। ৩/৪ মাস পর পর পাওয়ার বদলানো রুটিন ছিল। কি যে কষ্ট দিতাম।বাসে উঠাতো না একটা দিনের জন্য। ৫০০ টাকা ডাক্তারের ভিজিট ছিল আর রিকশা ভাড়া দিত ৪০০
বিষয়: বিবিধ
৭৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন