এক জনের আবর্জনা, আরেক জনের সোনা
লিখেছেন লিখেছেন যথাযথ ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ০৩:৩৪:২৪ দুপুর
আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাসায় যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে একটি বাড়ির সামনে এই বৃদ্ধের দেখা। যে সমাজে সর্বশেষ মডেলের পোর্শ (মার্সিডিসের প্রতি এখন আর কোন বিশেষ আকর্ষণ নেই; যারা অপেক্ষাকৃত গরীব তারাই এখন মার্সিডিস, বিএমডব্লিউ, লেক্সাস ব্যবহার করে) কেনাটা বাচ্চাদেরও ফ্যাশন এবং অতীতের প্রতিটা নতুন মডেলের গাড়ি বিক্রি না করে বরং স্টকে রেখে নতুন মডেলের সবচে’ দামী গাড়িটা কেনার জন্য যেখানে প্রতিযোগিতা সেই সমাজে এই বয়সে সাইকেলই এই বৃদ্ধের যানবাহন। কারণ আছে – বৃদ্ধ তো এদেশের কেউ না। আলীশান গাড়ি-বাড়ির প্রতিযোগিতা তো এদেশীয়দের ব্যাপার। হয়তো বা বৃদ্ধটা অনেক আগে অন্য কোন দেশ থেকে ভাগ্যের সন্ধানে এখানে এসেছেন। ভাগ্য সন্ধানের ব্রতি এখনো তার শেষ হয়নি কিন্তু তিনি বার্ধক্যে উপণীত আজ।
লোকটি সাইকেল পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে গভীর মনোযোগে আনমনে কি যেনো তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন ওয়েস্টবিনে। এতোই মনোযোগ যে আমি পাশ দিয়ে গেলাম, আবার ফিরে এলাম, ছবি তুললাম, কিছুই তার মনোযোগ অন্যদিকে ফেরাতে পারেনি।
প্রথমে যখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আমি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি অনুধাবন করিনি। অনেক দূর এগিয়ে গিয়ে কি কারণে যেনো পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি লোকটি এখনো সেখানেই আছেন, তন্ময় হয়ে একই কাজে ব্রত। মনে ঔৎসুক্য জাগলো এতোক্ষণ যাবৎ লোকটা ওয়েস্টবিনের মধ্যে কি দেখছেন! ফিরে গেলাম দেখার জন্য। আমার পর্যবেক্ষন যাতে বাধাগ্রস্থ না হয় বা লোকটা যেনো বিব্রতবোধ না করেন সেজন্য একটু নিরাপদ দূরত্বে প্রথমে দাঁড়ালাম। পরে যখন বুঝলাম যে লোকটা এতোই বিভোর যে পাশে গিয়ে দাঁড়ালেও তার জন্য কোনো ব্যাপার না, তখন কাছে গিয়েই দেখলাম। বুঝতে পারলাম যে লোকটা ওয়েস্টবিনের ভিতর থেকে একটা একটা করে প্লাস্টিক ব্যাগ বের করে সেখান থেকে তার জন্য মূল্যবান জিনিসগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজে বাছায় করে সাইকেলের ক্যারিয়ারে জমা করছেন।
এ সমাজে অপচয়, অপব্যয় আর বিলাসবাহুল্য এতো বেশী যে আমার মন সর্বক্ষণ বিষাক্ত হয়ে থাকে আর আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করি মানুষের ভিতর আল্লাহ তায়ালা যেনো এমন শিক্ষা দেন যাতে মানুষ ভোগে নয় বরং প্রকৃত শান্তি ও প্রশান্তি পায় রোগ-শোক-দারিদ্র্য ক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণে সেবাকর্মে, ত্যাগে। যে জিনিসগুলো আজ এই বৃদ্ধ ওয়েস্টবিন থেকে সংগ্রহ করছেন, সেই জিনিসগুলো তো এসমাজেরই বিত্তবানদের বর্জ্য। বিত্তবানেরা একটু বিবেচক হলে, একটু পরহিতৈষী হলে, একটু মানবতাবাদী হলে তাদের ভোগের কমতি হবে না। তারা যদি একটু অপচয় ও অপব্যয়মুক্ত জীবনে অভ্যস্ত হন, তাতেই অনেক নিঃস্ব মানুষ উপকৃত হবে। নিঃস্ব মানুষেরা বিত্তবানদের ভোগে ভাগ বসাবে না। বিত্তবানেরা ওয়েস্টবিনে ফেলার অভ্যাস পরিহার করলে সেখান থেকে যে পরিমাণ সম্পদ বাঁচানো যাবে তা এই নিঃস্ব মানুষের জীবন যাপনের জন্য অনেক যথেষ্ট।
একই চোখে একই সমাজে বিলাসী অপব্যয় ও অপচয়ের সয়লাবের পাশাপাশি ওয়েস্টবিন থেকে বৃদ্ধের জিনিস কুড়ানো দেখাটা আমার জন্য সত্যিই এক আযাবের ব্যাপার!!!
বিষয়: বিবিধ
৬৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন