ভালবাসি তোমাকে চকলেট!!

লিখেছেন লিখেছেন মহারাজা ১৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৩৯:০৪ রাত

প্রায় এগারোট বাজতে চলল... ১ ঘন্টার উপরে

ট্রাফিকে আটকে আছি.... ঢাকা শহরের

সবচেয়ে দীর্ঘ জ্যাম বোধহয় আজই পরেছে....

বিরক্তির চরম সীমায় পৌছানোর পর ও বসে

থাকতে হচ্ছে.... ৩০+ মিসড কলস... ভয়ে ফোন

তুলছি না... ফোনটা তুললেই বকাবকি করবে

আর বকাবকি করতে করতে কেঁদে ফেলবে

মেয়েটা.... ওর বকায় আমার কোন প্রবলেম

নেই... শুরুতে যখন রং নাম্বারে ওকে ফোন

দিতাম তখন ও আমাকে বকতো...কিন্তু সেই

বকার ভিতরে অজানা এক ভালবাসা খুজে

পেতাম... এখনতো ইচ্ছে করে রাগিয়ে দিয়ে

বকা খাই.... ওর বকা ছাড়া আমার পেটের

ভাত হজমই হয় না.... কিন্তু ওর চোখের জল

আমি সহ্য করতে পারি না.... ওর এক একফোঁটা

চোখের জল যখন ওই লাল টুকটকে গাল গড়িয়ে

মাটিতে পরে মনে হয় আমার দেহ থেকে এক

এক বিন্দু রক্ত মাটিতে পরছে... পাগলীটা

বোধ হয় আজ একটু বেশিই রেগে আছে... এর

কারণও আছে নিশ্চই.. আজ ওর আর আমার 1st

Anniversary.... আর এগারো টা বাজতে চলল

আমি ওর পাশে নাই.... বন্ধুবান্ধবরা হয়তো

সবাই চলে গেছে.... আমার রক্ষে নেই আজ...

মহারণীর হাতে জীবন দিতে হতে পারে

আজ... আমায় বড্ড ভালবাসে মেয়েটা.... ওর

সারা দুনিয়া জুড়েই আমার অস্তিত্ব.....

যেমনটা আমার.... এসব কথা ভাবতে ভাবতে

আবার হাতের মধ্যে রিংটোন বেজে

ঊঠলো.... MAHARANI

Calling.... এক বুক সাহসের সঞ্চার করে

রিসিভ করলাম ফোনটা.... বুঝতে পারছি

কান্না করছে.... ---প্লিজ মহারণী রাগ করে

না.... চকলেট আমার.... কানে ধরেছি...

sry..sry... sry...

--- থাক হয়েছে.... আর আসতে হবে না... আমি

কে তোমার???

--- প্লিজ এভাবে বলো না....রাস্তায় প্রচুর

জ্যাম... কথাটা শেষ হতে না হতেই ফোনটা

রেখে দিল.... বড্ড অভিমানি মহারণী

আমার..... ওর এই অভিমান ভরাই ভালবাসা

আর ভালবাসা.... কিন্তু আমি যে নিরুপায়....

২৪/৭ প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করার এই

অসুবিধে... রাত ৮টা অব্দি ডিউটি... আর কোন

কলিগ যদি না আশে তাইলে তো হইছেই... আজ

সেই ঝামেলায় পরতে হয়েছিল...

পাগলীটা মনে হয় বাসায় একা বসে

কাঁদছে.... নিজের উপরই নিজের রাগ হচ্ছে

খুব... বাসায় গেলে আমার সাথে কথাই বলবে

না মেয়েটা.... মেয়েটাকে আমি চরম

ভালবাসি... এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে পরিচয়...

কয়েকদিন কথা বলেই বুঝেছিলাম, এই

অগোছালো ছেলেটার জীবনে এই

মেয়েটারে ভীষণ দরকার....যখন সব প্রায়

ঠিকঠাক এক হারমী ফোন করে আমার সমন্ধে

বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে সব শেষ করে

দিয়েছিল... তারপর থেকে ও আমার নাম

শুনলেই ফোনটা রেখে দিত.... মাঝে মাঝে

ফোন করে ওর ভয়েসটা শুনেই রেখে দিতাম...

৩ বছর পরে আবার ওর সাথে আমার আবার

দেখা... সেখান থেকেই নতুন করে শুরু... ৩ বছর

ওর সাথে যোগাযোগ না হওয়া, আবার দেখা

হওয়া.... হয়তো সবই ভগবান মহেশ্বরের

ইচ্ছেতেই.... ওর জন্য খুব মন খারাপ হচ্ছে...

মাঝে মাঝে বলতো, তুমি চাকরি পেলে আর

আমাকে এমন ভাবে সময় দিবা না.... হয়তো

সেই কথাটা আজ অনিচ্ছাকৃত ভাবে সত্যি

হচ্ছে.... আমাদের বিয়েটা নিয়ে অনেক

ঝামেলা হয়েছিল....ওদের ফ্যামিলি থেকে

মেনে নিতে চায় নি... অনেক কষ্টে সবাইকে

রাজী করিয়ে ঠিক এক বছর আজকের এই

দিনে পাগলীটাকে এই পাগলের বউ করে

আনি.... ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে

জ্যাম ছেড়ে বাসায় সামনে এসে গেছি

বুঝতেই পারি নি...

বাসায় আসতেই মহারণী দরজাটা খুলে দিয়েই

আমার সামনে থেকে চলে গেল।আমাকে কিছু

বলার সুযোগই দিল না।বুঝতে পারলাম চরম

রেগে আছে।

বারান্দায় চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। আমি

গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম

--- প্লিজ মহারণী রাগ করে না। চকলেট

আমার...। আমি কি ইচ্ছা করে দেরী

করেছি...?

---উফ্!! রুদ্র, ছাড়ো তো আমাকে...। এই বলে

আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে

গেল।একটা অন্ধকার রুমে গিয়ে বসে আছে।

বুঝতে পারলাম ওখানে বসে ও কাঁদছে হয়তো।

অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ওকে।যেয়ে

অনেক সরি বলে বলে রাগটা ভাঙ্গাতে হবে।

আর গিফ্টটা দিতে হবে। অন্ধকার রুমে গিয়ে

লাইট টা অন করলাম। লাইট অন করার সাথে

সাথেই অনেক গুলো কন্ঠের চিৎকার শুনতে

পেলাম-" সারপ্রাইজ... হ্যাপি ম্যারেজ ডে"

আমি শুধু অবাক হয়ে দেখলাম আমাদের একদল

বন্ধুবান্ধব। সবাই হাসছে.. সাথে মহারণীও!

আমি বোকার মত বললাম

---মানে কি? তোরা সব কোথা থেকে আসলি?

মহারণী বলল-

---তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এই

প্ল্যান। আর আমি রাগ করিনি। আমিতো

জানি প্রবলেম না থাকলে তুমি কখনও এমন

করতে না। আমি তোমাকে না বুঝলে কে

বুঝবে বলো...

---- তাহলে আমি বাসায় আসার পর কথা

বলোনি,বারান্দায় গিয়েও কেমন করলে...

--- আরে বোকা ওটা তো শুধু অভিনয় করেছি।

সারপ্রাইজ দিব বলে.... অনেক ভালবাসি

তোমাকে রুদ্র।

আমার ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে পৃথিবীকে

বলি আমি এই "লক্ষ্ণী" মেয়েটাকে অনেক

অনেক বেশী ভালবাসি...।

আমি গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম ---

আমিও তোমাকে চরম ভালবাসি চকলেট। তখন

সব বন্ধুরা একসাথে যক্ষা রোগীর মত কাশি

দিয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দিল। তারপর

ও আমার কাছ থেকে নিজেকে তাড়াতাড়ি

ছাড়িয়ে নিলো। এবার অবশ্য কোন

অভিমানের অভিনয়ে নয়। লজ্জা পেয়ে।

লজ্জা পেলে যেন অনেক বেশী সুন্দর লাগে

আমার টুনটুনিটাকে। আমি মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখছি

আমার মহেশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া আমার

জীবনের শ্রেষ্ট অর্জনটাকে... আর মনে মনে

ভাবছি....

হয়তো তুমি তোমার মতই আমিও ঠিক তাই...

তবুও আমার মন বলে,

আমারো পরাণো যাহা চায় তুমি তাই.....তুমি

তাই.... —

বিষয়: Contest_priyo

৮০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File