জামায়াত কি ব্যর্থ?

লিখেছেন লিখেছেন আফগানী ০৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০৪:৪৩ দুপুর

জামায়াত একটি ব্যর্থ সংগঠন।

১. কারণ বাংলাদেশের ফ্রন্ট লাইনের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো দল হওয়া সত্ত্বেও তারা এখনো গণমানুষের দলে পরিণত হতে পারে নি।

২. জামায়াত তার ৭৫ বছরের রাজনীতিতে এককভাবে কখনোই ক্ষমতার স্বাদ পায় নি।

৩. ৭৫ বছরে জামায়াত দু’বার নিষিদ্ধ হয়েছিল। এতে জামায়াতের অপরিপক্কতা প্রকাশিত হয়।

৪. ৭১ সালে জামায়াত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৫. এত বছর রাজনীতি করার পর তারা এখন তাদের সব মূল নেতাদের হারাতে বসেছে জঘন্য সব অপরাধের দায়ে।

এরকম আরো কারণ দেখিয়ে আপনি বলতেই পারেন জামায়াত ব্যর্থ। কিন্তু আসলে কি তাই?

বস্তুত সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করে উদ্দেশ্য-লক্ষ্যের উপর। একটি দল হিসেবে জামায়াতের চূড়ান্ত লক্ষ্য কি? সেটাই বলে দিবে জামায়াত কতটুকু ব্যর্থ।

জামায়াতের মূল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন। আর সেই সন্তুষ্টি অর্জন হবে কুরআন হাদীস অনুসারে মানুষের সার্বিক জীবনের পূনর্বিন্যাস সাধনের মাধ্যমে। জামায়াত যুগে যুগে উপমহাদেশে এমন সব জানবাজ মানুষ তৈরী করে যাচ্ছে যারা ইকামাতে দ্বীনের কাজে নিজের জীবন উৎসর্গকে সাফল্যের সিংহদ্বার মনে করে। জামায়াতের কর্মীরা মুশরিকদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে গিয়েও ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে পারে। ইসলাম সর্বযুগে প্রাক্টিক্যলি অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়ভাবে ফাংশনাল হওয়া খুবই সম্ভব তা জামায়াতের মাধ্যমে এদেশবাসী দেখেছে। জামায়াতের মাধ্যমে এদেশের মানুষ বুঝতে সক্ষম হয়েছে ইসলামপন্থী গ্রুপগুলোর (মাজহাব ভিত্তিক) মধ্যে ঐক্য সম্ভব।

জামায়াতের আছে অনন্য সাতটি বৈশিষ্ট্য যা জামায়াত কে তার লক্ষ্য অর্জনকে সহজ করে দিচ্ছে।

১. জামায়াতের বিল্পবী দাওয়াত। জামায়াত দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মানুষকে আহ্বান করে না। দুনিয়ার কোন সফলতার লোভ দেখায় না। একান্ত পরকালীন সাফল্যের কথা সামনে নিয়ে আসে, যেভাবে আল্লাহর রাসূল দাওয়াত দিয়েছেন।

২. ইসলামী সমাজ গঠনের উপযোগী ব্যক্তিগঠন পদ্ধতি। জামায়াত মনে করে ব্যক্তিগঠনের জন্য তিন ধরণের যোগ্যতা লাগবে। এক, ঈমানী যোগ্যতা। দুই, ইলমী যোগ্যতা। তিন, আমলী যোগ্যতা। যোগ্যতা হাসিলে কঠোর প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছে সংগঠনটি।

৩. জামায়াত ইসলামীর তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি একটি তাকওয়া ভিত্তিক সংগঠন। জামায়াত কোন লোককে দায়িত্ব প্রদানকালে তাকওয়ার বিষয়টি সামনে রাখে।

৪. জামায়াতের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে “নেতৃত্ব সৃষ্টির পদ্ধতি”। অসাধারণ এই পদ্ধতিতে নেতৃত্ব বা পদলোভীদের কোন স্থান নেই।

৫. ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করে না জামায়াত। জামায়াত ইসলামী সূরা নূরের ৫৫ নং আয়াতকে সামনে রেখে বিশ্বাস করে, ইসলামী সরকার চালানোর যোগ্য কর্মীবাহিনী তৈরী হলে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা সরকারী দায়িত্ব দেয়ার পথ করে দিবেন।

৬. জামায়াতের অর্থের উৎস জামায়াতের দায়িত্বশীল, কর্মী এবং শুভাকাংখীরা। জামায়াত বাইরের অন্য কারো অর্থে চলে না। কারো ক্রীয়ানক হিসেবে কাজ করে না।

৭. বিরোধীদের প্রতি জামায়াতের আচরণ।

জামায়াত তার বিরোধীদের মধ্যে যারা অশালীন ও অভদ্র ভাষা প্রয়োগ করে তাদের করুণার পাত্র মনে করে। জামায়াতের দাওয়াত আদর্শ ও কর্মসুচীর বিরুদ্ধে বেচারাদের কিছু বলার সাধ্য নেই বলে বেসামাল হয়ে গালাগালি করে মনের ঝাল মেটানোর চেষ্টা করে। জামায়াত তাদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করে।

আর যারা মিথ্যা সমালোচনা করে অপবাদ দেয়, জামায়াত প্রয়োজন মনে করলে সেই সমালোচনা যুক্তি দিয়ে খন্ডন করে।

সুতরাং যারা শুরুর কয়েকটি পয়েন্ট দেখিয়ে আমাদের ব্যর্থ বলতে চাইবেন তাদের প্রতি আমাদের বিনীত বার্তা, আপনারা যেগুলোকে সফলতা মনে করেন জামায়াত সেগুলোকে চূড়ান্ত সফলতা মনে করে না। সেগুলো জামায়াতের মূল লক্ষ্যও নয়। তবে দুনিয়াবী সাফল্যকে জামায়াত অস্বীকারও করেনা।

আর তাছাড়া জামায়াত এও বিশ্বাস করে, মুমিনের দুনিয়ার জীবনে ব্যর্থতা হল আল্লাহর আনুগত্য করতে না পারা। দুনিয়ার জীবনের কষ্ট, ক্ষমতা পাওয়া বা না পাওয়া সবগুলোকেই জামায়াত পরিক্ষা বলেই গন্য করে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে রাখুন। আমিন।

বিষয়: রাজনীতি

৯৬৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381124
০৪ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ১২:২৭
মোঃ মাকছুদুর রহমান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
381127
০৪ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০২:৫৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো লেখাটি ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করে না জামায়াতে ইসলামী ধন্যবাদ আপনাকে
381129
০৪ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০৩:০৫
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File