প্রেম নামক নোংরামির শেষ কোথায়?
লিখেছেন লিখেছেন জুনেদ আহমদ ২৭ অক্টোবর, ২০১৬, ০৬:৫০:১৮ সন্ধ্যা
স্বল্প বয়স্ক তরুণ তরুণীদের প্রেম নামক নোংরামি সমাজে এক মহামারী আকারের ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, এখনই এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে ধ্বংস হবে সমাজ ও দেশ ।
প্রথম আলোর এক নিউজে দেখলাম, মেয়েটির পর ছেলেটিও আত্মহত্যা করলো ! নিউজ দেখে প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভিতরে ঢুকে বিস্তারিত পড়ে রীতিমত চমকে গেলাম । গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কতুবদিয়া গ্রামের মো. শহিদের মেয়ে মুন্নি আক্তার (১৪) গত সোমবার দিবাগত রাতে আত্মহত্যা করে। সে চাপাইর বি বি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। মুন্নির আত্মহত্যার একদিন পর মুন্নির প্রেমিক আরাফাত সরকার (১৫) আত্মহত্যা করে।
বছর দুয়েক আগে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে, সেই প্রেম ভাঙ্গাতে দুই পরিবার শত চেষ্টা করেও সফল হয়নি। প্রেমের সম্পর্ক পরবর্তীতে দৈহিক মিলনে চলে যায় । গত সোমবার আরাফাত মুন্নির বাড়িতে অবস্থান নেয়, রাতে দুজন একসাথে একই রুমে ঘুমায় । মুন্নির পরিবার দেখে ফেলায় মুন্নি ও আরাফাতকে মারধর করে মুন্নির পরিবার । পরবর্তীতে আরাফাত চলে আসার কিছুক্ষন পর মুন্নি গলায় ফাঁস নেয় , এর একদিন পর আরাফাত ও সুইসাইড করে ।
ইদানিং কালে দেখা যায়, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার উপর প্রতিশোধ, প্রেম প্রত্যাখ্যানে তরুণীর উপর আক্রমন , প্রেম চলাকালীন সময়ে রেশারেশির জেদ ধরে গোপন ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া দিন দিন বেড়েই চলছে । প্রেমের সম্পর্ক এখন আর প্রেমেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, খুব সহজেই এই সম্পর্ক দৈহিক মিলনে চলে যায়, সেখান থেকেই শুরু হয় দুটি জীবনের ঘাত প্রতিঘাত, এক পর্যায়ে এ সকল সম্পর্ক সমাজে নোংরামির শেষ অব্দি দেখে নেয় । কখনও কখনও দুটি কিংবা একটি জীবন ও কেড়ে নেয় ।
মুন্নি ও আরাফাতের বয়স খুব বেশী নয়, ১৪/১৫ বয়সের দুটি বালক বালিকা দৈহিক সম্পর্ক পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে । এর জন্যে কাকে দায়ী করবেন ? সমাজ নাকি পরিবারকে ? তারা কোত্থেকে এই অশ্লীল সম্পর্কের শিক্ষা পেয়েছে ? পার্শ্ববর্তী কারো থেকে নাকি ঘরে রাখা বিনোদনের বাক্স থেকে ?
** সমাজের ধংসের অন্যতম এক কারণ হল পর্ণ সাইট , আজকাল খুব সহজেই পর্ণ মুভি দেখা যায়, ইন্টারনেট ঘাঁটলেই বিভিন্ন স্প্যামিং লিংকের মাধ্যমে পর্ণ সাইটে চলে যাওয়া যায় । ৫/৬ এমবির পর্ণ ভিডিও ডাউনলোডও করা যায় খুব সহজেই । বিভিন্ন পর্ণ সাইটের বিজ্ঞাপন ও দেওয়া হয় । ছোট ছোট বালক বালিকারা এসব সাইটে আগ্রহ নিয়ে প্রবেশ করে দৈহিক মিলনের সম্পর্কে জ্ঞান নিয়ে ফেরে একসময় নিজেরাও এসব বাজে কাজে লিপ্ত হয়ে যায় ।
** সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আজকাল খুব সহজেই সেক্সুয়াল ব্যাপারে ধারনা পাওয়া যাচ্ছে । সানি লিওন , পুনম পান্ডে, ণায়লা নাইমের মতো সমাজ ধ্বংসকারী কিছু উঠতি বয়সের মডেলরা নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতায় নগ্ন ছবি ও নগ্ন ভিডিও আপলোড দেওয়াতে খুব সহজেই এসব ভিডিও ও ছবি তরুন তরুণীদের নাগালে পৌঁছে যায় । অনেক সময় সম্পর্কের রেশারেশি ধরে প্রফেশনাল কিছু তরুণ- তরুণী নিজেদের করা দৈহিক মিলনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়, এসব ভিডিও উঠতি বয়সের তরুন তরুণীদের হাতের নাগালে পৌঁছে যায় ।
ভারতীয় চ্যানেলগুলা তরুন তরুণীদের নষ্ট হওয়ার অন্যতম এক কারণ । স্বল্প মুল্যেই ভারতীয় সকল চ্যানেল বাংলাদেশে উন্মুক্ত । মাসিক ২০০/৩০০ টাকায় ডিশ লাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই সকল ভারতীয় চ্যানেল পাওয়া যাচ্ছে । ভারতীয় চ্যানেলগুলাতে যেসকল মুভি দেখানো হয় তার বেশীরভাগ মুভিই থাকে বি গ্রেডের মুভি । যেখানে থাকে সীমাহীন নোংরামি । বর্তমান কালে ভারতের কিছু কিছু মুভিতে দৈহিক সম্পর্কের সম্পূর্ণ দৃশ্য পট দেখানো হয়। আর ভারতীয় চ্যানেলগুলা যেহেতু হাতের নাগালের মধ্যেই থাকে সেহেতু এসব নোংরামি খুব সহজেই শিখছে উঠতি বয়সের বাচ্চারা । ভারতীয় চ্যানেলগুলাতে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তার প্রতিশোধ নেওয়া , প্রেম প্রত্যাখ্যানে তরুণীর উপর আক্রমন এসব খুব সুন্দরভাবেই অতি সহজেই দেখানো হয় । কিছু কিছু অনুষ্ঠানে খুব সহজেই কিভাবে একজন তরুণীকে বশে আনা যায় সেসব ও শিক্ষা দিচ্ছে ।
বর্তমানে বাংলাদেশেও কিছু অভিনেতা অভিনেত্রী আছেন যারা নিজদেরকে আধুনিক জগতের রোলিং মডেল ভাবেন, তারা বর্তমানে নিজেদের উন্মুক্ত বক্ষ বিভিন্ন মুভিতে প্রকাশ করছেন । কিছু কিছু মুভিতে অপ্রীতিকর দৃশ্যের ধারন করছেন । এই তো সেদিন জয়া আহসান কলকাতার এক ছবিতে নিজের লজ্জাস্থানকে এমন ভাবে প্রকাশ করলেন যা দেখে বাচ্চারাও নোংরামি শিখে যাবে খুব সহজেই । অথচ এ সকল মুভির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে হুরদমে ।
সমাজ থেকে নোংরামি দূর করতে হলে বন্ধ করতে হবে ভারতীয় টিভি চ্যানেল, বন্ধ করতে হবে বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি সাইট।পাশাপাশি অভিভাবক মণ্ডলীদের সচেনত হতে হবে।নিজেদের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১০৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন