দেশপ্রেম ও সংস্কৃতি
লিখেছেন লিখেছেন আমি ছায়ানট ০২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:৪৩:১১ রাত
দেশপ্রেম ও সংস্কৃতি
-আমি ছায়ানট
(পত্রিকায় প্রকাশিত )
বিজয় দিবস ২০১০ সকাল, কাজ করছিলাম বাসায়, মনে মনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ কানে বেসে আসলো মাইকের আওয়াজ। বুঝা যাচ্ছিলনা আওয়াজটা কিসের, মনোযোগ দিয়ে শুনলাম বুঝা মাত্র অবাক হয়ে গেলাম, বিজয় দিবসেও? পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কি জন্য আমি অবাক হয়েছি। বিজয়ের মাস এবং বিজয় দিবস এই দিনে বিজাতীয় সংস্কৃতির আওয়াজ শুনব এত কল্পনা করতে পারিনি। রওয়ানা হলাম মাইকের আওয়াজের দিকে, আওয়াজটা আসছিল একটি স্কুল থেকে। স্কুলে অফিসে গিয়ে ঢুকলাম দেখলাম একজন কর্মচারী তার মেবাইল থেকে গানগুলো ছাড়ছেন। তাকে বললাম ভাই বিজয় দিবসেও হিন্দি গান? সে আমার দিকে তাকিয়ে গান বন্ধ করে দিল এবং দেশীয় গান খুজা শুরু করলো দেখলাম, অনেকক্ষন সে মোবাইল টিপল কিন্তু কোনো গান ছাড়লোনা । স্কুল থেকে বের হয়ে আসতে আসতে নিজের অজান্তেই হাসি উঠল মনে মনে বললাম ও দেশীয় গান ছাড়বে তো দূরের কথা ওর কাছে দেশী গান থাকলে তো?
এই হচ্ছে বাংলাদেশের অবস্থা। আমরা যে হারে আমাদের সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে অন্য দেশের সংস্কৃতিকে লালন করছি তাতে করে আমরা আমাদের জাতিকে ধ্বংস করছি। কবি মতিউর রহমান মল্লিক বলেছেন - সত্যিকার অর্থে কোনো জাতি যতক্ষন পর্যন্ত তার জাতীয় আর্দশ এবং জাতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে সতর্ক থাকে ততক্ষন পর্যন্ত সেই জাতিকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনা কেউ কেড়ে নিতে পারেনা তার দেশকে তার স্বাধীনতাকে।
এই মাসেই ১০তারিখে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে এসেছিলেন ভারতের কিছু শিল্পী। ওই অনুষ্ঠানের সর্বনি¤œ টিকিট মূল্য ছিল ৩০০০/- এবং সর্বোচছ ১০,০০০/- এর উপরে, আমাদের দেশের অনেক মানুষ গিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠান দেখতে অনেকে টিকিট কেটেও জায়গা পাননি। আবার অনেক কর্তাব্যক্তিরা জায়গা না পেয়ে মাটিতে বসে পরেছেন। এই অনুষ্ঠান যারা আয়োজন করেছেন তাদের কিরকম দেশপ্রেম আছে তা চিন্তার বিষয় কেননা যেই দেশে আমার দেশের একটি টিভি চ্যানেল দেখানো হয়না, আমার দেশের মানুষদেরকে যারা প্রতিনিয়ত গুলি করে হত্যা করছে, যাদের সংস্কৃতি আমাদের ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক ওই সংস্কৃতি যারা দেখেন তাদের দেশপ্রেম ও ঈমান নিয়ে যতেষ্ট সন্দেহ আছে। আমরা আমাদের জাতীয় আর্দশ এবং জাতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে সতর্ক নই এবং আমরা বিজাতীয় সংস্কৃতিকে লালন করার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতাকে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছি।
স্বাধীনতা দিবস স¦াধীনতা কি সৃতি সৌধে বা শহীদ মিনারে ফুল দেয়া ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন’ এই কথার বাস্তবতা আমাদের দেশে শুরু হয়ে গেছে গত রোজার ঈদে পাখি ড্রেসের বিষয় আপনারা ভালো করেই জানেন সংসার বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা থেকে মানুষ মারা যাওয়া ঘটে গেছে। এই বিষয়গুলো কেন হলো কি বা বিষয় কাজ করেছে? আবেগ ছাড়া কিছুই না। আমরা আমাদের পোষাকে যে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে লালন করি, আমাদের মাথার চুলে যে সংস্কৃতিকে তুলে ধরি তা কি আমার দেশের সংস্কৃতি? কি দেখার মাধ্যমে এই সংস্কৃতিকে লালন করছি এর জবাব একটাই ভারতের এই সব চ্যানেল ।
মুক্তিযোদ্ধের মাধ্যমে যোদ্ধারা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এক স্বাধীন বাংলাদেশ কিন্তু আমরা স্বাধীনতাকে পরাধীনতার শংখলে ভেধে রেখেছি। আমরা বিজাতীয় সংস্কৃতি লালনের মাধ্যমে আমাদের দেশকে এবং আমাদের সমাজকে ধ্বংস করছি।বাংলাদেশ ৯০% মুসলমানের দেশ কিন্তু আজ বিশ্বের কিছু ইসলামীক স্কলারদের বাংলাদেশে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে আর অন্য দিকে আবারও বিজয়ের মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অর্থাৎ সরকারী ভাবে আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে ভারতের কিছু শিল্পী, যাদের পরিচয় ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পেয়েছেন। এখন চিন্তা করুন আমরা কোন দেশে বাস করছি,। কবি মতিউর রহমান মল্লিক বলেছেন - আমরা মুসলমান, আমাদের জাতীয় আদর্শ ইসলাম, ইসলামী সংস্কৃতিই আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি। সুতরাং আমাদের দেশ এবং আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে আমাদেরকে আদর্শিক লড়াই ও সংস্কৃতিক লড়াই যে কোনো মুল্যে অব্যহত রেখে যেতে হবে।
যদি আমরা আমাদের জাতীয় আর্দশ এবং জাতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে সতর্কই থাকতাম তাহলে কিভাবে ১০ডিসেম্বর ২০১০বিজয়ের মাসে আর্মি স্টেডিয়ামে বিজাতীয় সংস্কৃতি প্রদর্শিত হয় আর আমরা কি রকম বিবেকবান যে আমরা ঐ অনুষ্ঠান দেখছি আমাদের বিজয়ের মাসের কোন অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছেনা। আজ ভারতীয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশের সিনেমা হলে দেখানোর জন্যে একটি কোম্পানি ৩টি ভারতীয় চলচ্চিত্রের মূল কপি বাংলাদেশ নিয়ে আসে। বিমান বন্দরে এই সিনেমাগুলো আটকানো হয় এবং বলা হয় হাইকোটের নির্দেশ পেলে ছাড়া হবে। এই খবর পরেরদিন পত্রিকাতে আসার পর ভাবছিলাম হাইর্কোট কি নির্দেশ দিবে কয়েকদিন পর হাইর্কোটের নির্দেশ আসলো যে “ভারতীয় চলচ্চিত্র সিনেমা হলে দেখানো কেন অবৈধ নয়” যাক এ লেখা পড়ার পর মনে একটু শান্তি আসলো কিন্তু ঞ২০ বিশ্বকাপ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমার দেশের সংস্কৃতিকে যে ভাবে দেখানো হয়েছে আর ভারতীয় নোংরা সংস্কৃতি যেভাবে দেখানো হয়েছে দেখে মনে হয় আমরা কোনো দেশের আমন্ত্রনে গিয়ে গান করছি। স্টেডিয়ামে দর্শকদের আনন্দ দেয়ার জন্য গান শুনানু হয় কিন্তু দেশ বা খেলার গান হয়না অধিকাংশ গান হয় প্রেমের। আমরা মুখে দেশপ্রেমের কথা বলি কিন্তু আমাদের মনে নূন্যতম দেশপ্রেম নেই। এরপরও আমাদের স্বাধীনতার মাসে বিবেক জাগ্রত হবেনা। আজ আমারদেশে সন্ধ্যা হলে আমাদের ৮০% মা-বোনেরা স্টার জলসা, জি বাংলা নিয়ে বসে থাকেন এই চ্যানেল গুলোর মাধ্যমে আমাদের পরিবারের এবং সমাজের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা এই সমস্যা ধারা আক্রান্ত হচ্ছি এই কারনে আমরা বিয়ে করছি কারন বলছি নবীজির সুন্নত সেই দিকে বিয়ের ক্যাসেট করছি হিন্দি গান দিয়ে। আমরা যদি তাদের সংস্কৃতিকে এই ভাবে লালন না করতাম তাহলে এই সমস্যা ধারা আক্রান্ত হতামনা।
ভারতীয় কোম্পানি সাহারা গ্রুপ ‘মাতৃভূমির উন্নয়ন’ এই স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশে আসে। এই কোম্পানির কথা কয়েকদিন আগে পত্রিকায় এসেছে যে শেয়ারদের মূনাফা না দিতে পারায় কোম্পানির মূল সুব্রতকে গেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয় এবং গেফতার করা হয়। কথা এইখানে যেই কোম্পানি শেয়ারদের মূনাফা দিতে পারেনা ‘মাতৃভূমির উন্নয়ন’ এই স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশের কি উন্নয়ন করবে আর ক্রিকেট খেলার জার্সির কথা নাই বললাম কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই কোম্পানির হাতে ১লাখ একর আবাদযোগ্য ভুমি তুলে দেয়া হচ্ছে। এটা মূলত ইষ্ঠ ইন্ডিয়া কোম্পানি সর্বগ্রাসী ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি মাত্র। আমরা আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য কি রেখে যাচ্ছি একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
এই লেখা দেখে কেউ কেউ ভাববেন আমি ভারত বিদ্বেষী, কিন্তু না আমার দেশের সীমানা রক্ষার স্বার্থে এই লেখা। এই বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া ঘটনা,এই বিষয় গুলো চোখের সামনে ঘটে যাওয়ার কারণে দেখেছি এবং মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার জন্য লিখেছি।
আমাদের তরুন প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ না বুঝে আমরা এমন কোনো কাজ করবোনা যাতে করে আমাদের দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয় আমাদের জাতীয় আদর্শের উপর আঘাত পরে। স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ। তাই দেশকে ভালোবাসবো অন্তর দিয়ে কথা নয় কাজ দিয়ে প্রমান করবো আমরা দেশকে ভালোবাসি। যে কোনো মূল্যে দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করব আজ থেকে করি শপথ।
বিষয়: বিবিধ
১১৩২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন