সত্যের সন্ধানে এবং আরজ আলি
লিখেছেন লিখেছেন দাবী আদায়ের বালক ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:০০:২৮ সকাল
কী আছে আরজ আলির বই-এ – যা
পড়লেই মানুষ নাস্তিক হয়ে
যাবে? এই রকমেরই দাবী করে
নাস্তিকরা। আসলে কি তাই?
আরজ আলির লেখার সার্বিক
আলোচনা করার মতো পরিসর এই
লেখা নয়। শুধু কয়েকটা উদাহরণসহ
বইএর কতিপয় দিক নিয়ে
আলোচনা করলেই বুঝা যাবে
কোন্ দৃষ্টিভংগী থেকে আরজ
আলি ধর্ম – বিশেষ করে ইসলাম
ধর্মকে দেখেছেন।
শুরু করা যাক আরজ আলি মাতুব্বর
রচনা সমগ্র থেকে "সত্যের
সন্ধানে" নামক প্রবন্ধের ভূমিকা
দিয়েই। উনি ভূমিকায় বলেছেন –
"ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান এই তিনটি
মতবাদের সমন্বয় সাধনের
উদ্দেশ্যে চিন্তা করিতে
যাইয়া আমার মনে কতগুলি
প্রশ্নের উদয় হইয়াছে এবং
হইতেছে। আমি ঐগুলি সমাধানে
অক্ষম হইয়া এক বিভ্রান্তির আঁধার
কূপে নিমজ্জিত হইয়া আছি।"
লক্ষ্যণীয় উনি ধর্ম, বিজ্ঞান আর
দর্শনকে সমন্বয় কতে গিয়ে চরম
বিভ্রান্তিতে আছেন বলে
ঘোষণা দিচ্ছেন – যা খুবই
স্বাভাবিক – কারণ তিনটি
আলাদা বিষয়কে তুলনা করার
জন্যে তিনটি বিষয় সম্পর্কে
ভিন্নভিন্ন ভাবে স্বচ্ছ ও পর্যাপ্ত
জ্ঞান থাকা দরকার – যার তীব্র
অভাব আমারা দেখবো পরবর্তী
অধ্যায় গুলোতে। বিশেষ করে
উনি বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিকে এক
করে ফেলেছেন আর ধর্ম – বিশেষ
করে ইসলাম সম্পর্কে উনার
জ্ঞানের গভীরতা প্রচলিত মখসুদুল
মোমেনিনেই সীমাবদ্ধ যা
পরিস্কার ভাবে দেখা দেয় যখন
উনি অত্যন্ত সাধারণ মানের প্রশ্ন
করে তার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা
করছেন – যেমন – হিন্দু সম্প্রদায়ের
লক্ষী পুঁজা আর শবেবরাতকে
একটা সমান্তরাল ইভেন্ট
হিসাবে বিবেচনা করে প্রশ্ন
করেছেন – আমেরিকা-
ইউরোপের মানুষ শবে বরাত পালন
করে না – তাদের ভাগ্য
কিভাবে লেখা হয় – তারা কেন
আমাদের চেয়ে আর্থিক ভাবে
অগ্রসর?
এই প্রশ্নতো আমিও করেছি ছোট
ছিলাম যখন – যখন ইসলাম সম্পর্কে
জ্ঞান ছিলো না – যখন অনুসরণ
করতাম মাদ্রাসা থেকে
কোনভাবে পাশ করা
মৌলভীদের – যারা জীবিকার
প্রয়োজনে গ্রামের মক্তব-
মসজিদের চাকুরী করে – আর
সামান্য অর্জিত জ্ঞানের
উপরেই ভরসা করে মানুষকে
আবেগতাড়িত করেন। তারা মূলত
ইসলামের কতিপয় রিচুয়াল ছাড়া
মৌলিক বিষয়ে খুবই কম জ্ঞান
রাখেন। আর যারা সেই সকল
মৌলভীদের অনুকরণ করে অন্ধের
মতো তাদের জ্ঞানের গভীরতা
কতটুকু হবে তা নিয়ে আলোচনা
না করাই ভাল। এই ক্ষেত্রে
আমাদের করণীয় কী? সোজা
উ্ত্তর হলো – কোরান অনুসরণ করা –
কোরানে প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান
করা – আর বিস্তারিত জানার
জন্যে হাদিসের অনুসন্ধান
চালানো। কিন্তু আরজ আলি
মাতুব্বর কোরান-হাদিসে
প্রশ্নের উত্তর না খোঁজ না করে
প্রশ্নগুলোকেই নানান ভাবে
উপস্থাপন করেছে – যার বেশীর
ভাগই প্রাথমিক পর্যায়ের
জ্ঞানের মধ্যেই ঘুরপাক
খেয়েছে।
যদি শুধুমাত্র শবে বরাত বিষয়ে
উনি কোরান-হাদিস জানার
চেষ্টা করতেন তাহলে উনাকে
হয়রান পেরেশান হয়ে এতো কিছু
বলতে হতো না – শবে বরাত
বলতে যা প্রচলিত হয়ে আছে
উপমহাদেশে তার কোন অস্তিত্ব
নেই ইসলামের মূল দলিলে।
আল্লাহ মানুষকে রিজিক দেবেন
– সে বিশ্বাসী হোক বা
অবিশ্বাসী হউক তাতে কোন
হেরফের হবে না – কিন্তু
অবিশ্বাসীরা এই ক্ষেত্রে
পার্থিব জীবনে তুলনামূলক
ভাবে ভাল থাকবে কারণ
তাদের ভাল কাজের জন্যে
প্রতিদানগুলো পৃথিবীতেই
দিয়ে দেওয়া হবে।
এবার একটু নজর দেওয়া যাক অত্যন্ত
সীমবদ্ধ জ্ঞান নিয়ে উনি কোন্
দৃষ্টিতে ইসলামের নানান বিষয়
নিয়ে বিতর্ক করার চেষ্টা
করেছেন। এই প্রবন্ধের মূলকথা
নামক অধ্যায়ে বলা হচ্ছে –
"সাধারন ভাবে আমরা যাকে
ধর্ম বলি তাহা হইল মানুষের
কল্পিত ধর্ম।"
এইটা হলো একটা সুষ্পষ্ট
সিদ্ধান্তমুলক বক্তব্য। উনি নানান
যুক্তি দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা
করেছেন যে বিশ্বের প্রচলিত
ধর্মগুলো (ইসলামসহ) সবই মানুষের
তৈরী আর এখানে কোন ঐশ্বরিক
ষ্পর্শ নেই। খুবই ভাল কথা – একজন
নাস্তিক হিসাবে এই ধরণের
সিদ্ধান্তমূলক বক্তব্য প্রদান খুবই
স্বাভাবিক হিসাবে দেখা
হবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই উনি
আবারো বিভ্রান্ত হয়ে বলে
উঠলেন – "তৌরিত, জব্বুর, ইঞ্জিল,
কোরাআন, বেদ, পুরাণ, জেন্দ-
অভেস্তা ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থসমূহের
প্রত্যেকটি অপৌরুষেয় বা
ঐশ্বরিক পুঁথি কি না তাহা
জানি না, কিন্তু ইহাদের
প্রত্যেকটি গ্রন্থ এই কথাটিই
বলিয়া থাকে যে, এই গ্রন্থই সত্য।"
এবার দেখা যাচ্ছে উনি
আবারো বিভ্রান্ত হয়ে ধর্ম
সম্পর্কে উনার আগের মন্তব্য
থেকে সরে গেলেন। পুরো বই-এ
এই ধরণের অনেক পরষ্পরবিরোধী
বক্তব্য দেখা যাবে।
মূলত আরজ আলির লেখার মধ্যে
মৌলিক কোন বিষয় দেখা যাবে
না। ক্রুসেডের পর ইউরোপীয়
মিশনারীরা যখন নিশ্চিত হলো
যে যুদ্ধ করে মুসলমানদের আরো
ক্ষতি করা যাবে না – তখন তারা
সিদ্ধান্ত নিলো ইসলামের উপর
একটা বুদ্ধিবৃত্তিক
(ইনটেলেকচুয়ার) যুদ্ধ শুরু করতে
হবে। সেই অনুসারে এরা কোরান
থেকে কিছু বিষয় নিয়ে বিকৃত
প্রচার শুরু করেছিলো – যার মধ্যে
ইসলামের সম্পত্তির
উত্তরাধিকার, নারীর
স্বাধীনতা ইত্যাদি (মূলত
নারীরাই ছিলো তাদের মূল
টার্গেট) আর পরবর্তীতে
ভারতীয় বর্ণহিন্দুরাও সেই
প্রপাগাণ্ডার অনুসরণ করে।
বিষয়: বিবিধ
৭৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন